somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"তখন কে বলে গো সেই প্রভাতে নেই আমি"--- জানি আমি চলে গেলেও এই হল, রুম, জানালা সব আগের মতোই থাকবে। :|| :|| :( :(

১৪ ই জুন, ২০১৩ রাত ৯:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মন খারাপ করে ভাবছি যে আমাকে হল ছেড়েই দিতে হবে। মাকড়সার জালটা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। তাতে ধুলো পড়ে এমনই অবস্থা যে সকালবেলা চোখ খুললেই দেখি পরাক্রমশালী সূর্য্যদেবতার অস্তিত্ত্ব সে জালে চীনের প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে। ও জালের ছায়া মুখে নিয়েই ঘুম ভাঙ্গে আমার। ‘কেহেরমান’- নাম দিয়েছি মাকড়সা টার, তার গার্লফ্রেন্ড সারারা গুল কে নিয়ে কোন রকম গোল না করে জালের উপর বসে কোয়ান্টামের মেডিটেশন করছে। আর তাদের বাচ্চা গুলো দুর্ধর্ষ প্যারাট্রুপারের মতো বাতাসে ভর করে নামছে আমার সাধের কনভোকেশন হ্যাটে। আমি ওদের সংসার ভাঙ্গিনি, কোন দিন তছনছ করিনি এদের তন্তুজ এপার্টমেন্ট! তার বদলে প্রতি সন্ধ্যায় ওরা আমাকে জ্বালাতন করা কয়টা মশাকে জালে আটকায় আর শাস্তি দেয় যাবতজীবন কারাদণ্ডের। গত কয়েক বছর ধরে দেখছি ওদের ভরা সংসার।

আমার জানলার সবুজ রঙ এখন ধূলো আর মরিচা মিলে ধূলোট লাল। জানলাটার নাম দিয়েছি ‘আকাশের বায়োস্কোপ’। পাঁচটা বছর ধরে নীল, সাদা, লাল, হলুদ, কালো, ছাই রঙ আকাশ দেখিয়ে চলেছে সে আমাকে। দিনে পাখি, কাঁচা-পাকা বড়ই, তণ্বী সজনে ডাঁটা, পুরুষ পায়রার অহংকার আর রাতে তারা ঝকমকে অন্ধকার, ফ্যাল-ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকা একটা চাঁদ, ল্যাম্পপোস্টের বিষাদগ্রস্থ সোডিয়াম বাতি এবং একটা পথ ভোলা জোনাকীর উদ্ভ্রান্ত ছোটাছুটি দেখিয়েছে সে।
আমার চারকোণা পৃথিবী; ভালোবাসা হারানোর পর কে জানি পাকা রেজিস্ট্রী করে লিখে দিয়েছিলো আমাকে এই পয়ত্রিশ স্কয়ার ফিটের আকাশটা।

রোজ সকাল আট-টায় সবুজ আসে। নিখুঁত লিপস্টিক দেয়া ঠোঁটে পরিপাটি বেশভুষা। শাড়ির সবুজ জমিনের পাড়ে হালকা নীলের ছটা। সবুজ একটা টিয়া। বকফুলের মৌসুমে রোজ সকাল আট-টায় নিয়ম করে চলে আসতো আমার জানলার পাশের বকফুলের ডালে। ঠোঁটে ছিঁড়তো বকফুল তারপর দু’পায়ে ধরে ঠোঁট দিয়ে চিরে ফেলতো পাঁপড়ি আর খুঁটে খুঁটে খেতো শাঁসালো গর্ভাশয়ের অংশটা। শালিকের সাথে মিলে মিশে চেঁচাতো সমাল তালে আর জানিয়ে দিতো- ‘রাস্তা মাপো, এখানে সুবিধা হবেনা’। একটু পরে উড়ে যেতো কোন পরিচিত ঝাঁকের সাথে। সে ছিলো নিতান্তই আমার অতিথি। প্রথম দিনে ক্যামেরায় ধরতে পারিনি। দ্বিতীয়-তৃতীয় দিনেও না। দিনে দিনে যখন বুঝেছে যে আমি স্রেফ খাঁচাবন্দী এক মানুষ তখন তার শখ হয়েছে কোন ফরাসী মডেল হবার। উদ্ধত পোজ দিয়ে মনে মনে বলেছে-“ আমি কি ডরাই সখী ভিখারী রাঘবে ”? চড়ুই গুলো সদাব্যস্ত। আমি মুড়ি ছিটালেই ইমার্জেন্সী ল্যান্ডিং করে ঠুকরে ঠুকরে খেয়ে নিচ্ছে সাদা মুক্তোর মতো মুড়ির দানা। ওদের ব্যস্ত ঘাড় নাড়াই বলে দিচ্ছে খাওয়ার ব্যাপারে ওরা কতটা সিরিয়াস!

১২; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে পঞ্চাশ জনের একটা বিশাল গনরুমে আমার বেড নম্বর। অমসৃণ চুন টানা দেয়ালে খুবই অযত্নে লেখা এই ১২ সংখ্যাটি-ই এতোদিন ছিলো আমার ঠিকানা। গত পাঁচ বছর এই রুমের উড়ে বেড়ানো ধুলোর সাথে আমি বড় হয়েছি। আমার চিন্তা-চেতনা-ভাবনা সব কিছুর সাথে জড়িয়ে আছে এই রুম। জীবনের অনেক ভালো লাগা, খারাপ লাগা সময়ের সাক্ষী এই রুমের প্রতিটা জীব আর জড়। অনেক কাঁচা স্বপ্নকে আমি তারে ঝুলিয়ে রেখেছি আমার ভেজা গামছার পাশে। অনেক স্বপ্নই শুকিয়ে ঝুপ করে পড়ে গেছে আমার অজান্তেই। কতগুলো কবিতার জন্ম হয়েছে যে এইখানে তা শুধু আমি-ই জানি!

আসল কথা এই যে আমাকে এসব কিছু ছেড়ে চলে যেতে হবে। ফ্লোরে পেতে রাখা আপাত নশ্বর ধূলোময় কার্পেট-টাও আমার চেয়ে বেশি দিন টিকে যাবে এই রুমে। কারন আমাকে যে যেতেই হবে! সময় আমাকে থাকতে দেবেনা। ভিন্নচিন্তার প্রেমিকার মতো সেও স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে- “ আই থিংক, ইটস নট ওয়ার্কিং এনি মোর ”। তাই শুভবিদায়। শিঘ্রী আমার জায়গা দখল করে নেবে অন্যকেউ। তাকেও মুগ্ধ করবে কেহেরমানের সংসার, চৌকোণা আকাশ, দিগভ্রান্ত একক জোনাকি বা পূর্বসুরীর ধূসর মানচিত্র। সেও হয়তো অনুভব করবে জানালার মোহ, আমারই মতো। “তখন কে বলে গো সেই প্রভাতে নেই আমি”; আমি ফিরে ফিরে আসবো অন্য কেউ হয়ে। আমার মতো অনেকেই লিখে যাবে একটা অসাধারন সময়ের কথা। প্রাকৃতিক বিদায় নাকি এমনই হয়! তবে তাই হোক।।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×