রাত ১২:৫৯ ...
ক্রীং ক্রীং
>> ( ঘুম ঘোর চোখে অন্তু ফোন তুলে) হ্যালো
-- মিঁয়াও
>> কে ?
-- আমি মিঁয়াও
>> আরে বিলাইপু এদ্দিন পর ভাইয়ের খোঁজ নিতে ইচ্ছে হলো বুঝি ?
-- নাহ , তুমি তো শুনি অনেক দৌড়ের উপর থাকো তাই সেই ফাঁকে একটু ফাকিবাজী করার চেষ্টায় ছিলাম ....
>> মানে ? ... আমার জন্য রান্না করবা না এই যড়যন্ত্র করছিলে ?
-- নাহ মানে , তোমার তো আমার বাড়ী আসার সময় ই নাই , তাই আর রান্না করে কি করবো ?
>> আমি তোমার বাড়ী যাবোনা মানে ? আমি তো কাল সকালে রওনা হচ্ছি তোমার বাড়ী ...
-- কালকে ? এত্ত অল্প সময়ে আমার কোনো গোছগাছ ই তো হবে না ... রান্না বান্না তো দুরের কথা
>> আরে তুমি আমার জন্য রান্না করবা গোছগাছ করে বাড়ী ছেড়ে পালানোর কোনো দরকার নেই , আমি তোমাকে বেশী যন্ত্রনা করবো না তো ...
-- অভয় দিলে যখন তখন তোমার জন্য ইদুর ভাজি করেই ফেলবো নে , কোনো চিন্তা নাই ...
>> সে দেখা যাবে , কিন্তু তোমার বাড়ী যাবো ক্যামনে ? কোন বাসে যাব ?
-- শোনো বাসা থেকে সোজা গাবতলী যাবা , এর পর দেখবা কাউন্টার আছে " গোল্ডেন মিঁয়াও " বাস এর ... সেটায় চড়ে স্বপ্নে খেতে খেতে চলে আসবা আমার বাসায় এরপর দেখা করে ভাগবা যত জলদি পারো ....
>> আচ্ছা ঠিকাছে , সেটা পড়ে দেখা যাবে , এখন ঘুমাই , সকালে আসছি ...
-- আচ্ছা ... শুভ মিঁয়াও
পরদিন সকালে ------- বিলাইপুর জন্য নিয়ে আসা হাড্ডি নামের টক-ঝাল-মিষ্টি মাছের কাটাগুলো ব্যাগে ভরে অন্তু রওনা হয় গাবতলীর দিকে ... মনে মনে বলে -- বিলাইপু তো নিজের নাম বড় বিলাই বলে তাহলে সে নিশ্চয়ই হালুমপুর এ থাকে , যাই হোক গোল্ডেন মিঁয়াও বাসে করে সোজা হালুমপুর চলে যাব , এর পর খুজে বের করবো ওর বাসা কোন চিপায় ... কিন্তু বিধিবাম ! ... বাস তো হালুমপুর যায় না সে তো যায় মিঁয়াওপুর ... তাহলে উপায় ? সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে টিকেট কিনেই ফোন দিলাম বিপাইপু কে ...
>> হ্যালো
-- মিঁয়াও
>> তোমার বাড়ী আসলে কোথায় ? এ বাস তো হালুমপুরে যায় না ... তুমি যদি বড় বিলাই হও তবে তো হালুমপুরে ই যাওয়ার কথা তাই না ? ...
-- ( ফিসফিসিয়ে ) আরে চুপ চুপ ! এই কথা সবাইকে বলতে নাই , আমি বড়-বিলাই হইসি তো কি হইসে ... আমি কিন্তু থাকি মিঁয়াওপুরে ... চুপচাপ বাসে উঠে সোজা চলে এসো এখানে ... তোমায় আমি বাস স্ট্যান্ড থেকে বাসায় নিয়ে আসবো নে , খবরদার নতুন বাস স্ট্যান্ডে নামবা না, তুমি চারিদিকে দেখে-শুনে পুরানা বাস স্ট্যান্ডে নামবা সেখানেই তোমার সাথে আমার দেখা হবে ...
>> ক্যান ? নতুনটায় নামবো না ক্যান ?
-- ক'দিন আগে একটা হাড়-চিবানোর সেমিনারে সবার সামনে হালুম করতে গিয়ে মিঁয়াও করে ফেলেছিলাম , এর পর থেকে একটু গা - ঢাকা দিয়ে আছি , বুঝোই তো ... সবাই এই সব ভুলতে একটু টাইম নেয় ততদিন ... একটু রয়ে সয়ে .... হালুম !!!
>> বুঝেছি বুঝেছি , আমার সামনে হালুম না করলেও চলবে ... বাসে উঠলাম , আসছি আমি
-- আচ্ছা , মনে করে পুরোনো বাস স্ট্যান্ডে আসবা , আর নতুন বাস স্ট্যান্ড পার হয়ে আমার থাবা-ফোন এ একটা গুতা দিও , তাতক্ষন আমি একটু কাঁটা-ঘুম স্যরি হাড্ডি-ঘুম দিয়ে নেই , আচ্ছা ?
>> আচ্ছা ঠিকাছে ...
( পথের কথা আর নাই বললাম ... তা লিখতে গেলে তো আরেক কাহিনী শুরু হয়ে যাবে ... এর চেয়ে বরং চলে যাই বিলাইপুর পৌছানোর পরে কি হলো সেই পর্বে ... )
ক্রীং ক্রীং ....
-- কে রে ?
>> ঘুমায়ে ছিলা নাকি ? মিয়াও বলতে ভুলে গেছ দেখি ...
-- হালুম ... মিয়াও ... ধুর-ছাই ... স্বপ্নে কেমন সুন্দর ফরমালিন ছাড়া একটা মাছ ধরেছিলাম আর খাওয়ার আগেই দিলা তো ঘুম ভাঙ্গায়ে ... তুমি কৈ এখন বলোতো ?
>> আমি তো পুরান বাস স্ট্যান্ডে পৌছে গিয়েছি , তুমি আসোনাই ক্যান এখনো ?
-- একটু অপেক্ষা করো আমি দশ মিনিটের মধ্যেই আসছি ... তুমি ফেরত যাওয়া টিকিট কাটো ঝটপট, নাইলে কিন্তু পরে ফেরার বাস পাবা না , হেটেই ঢাকা যাওয়া লাগবে ... এর মধ্যেই আমি পৌছে যাবো ...
কল টা কেটে যাওয়ার পর আগে পিছে কিছু চিন্তা না করেই কাউন্টারের মামা কে বললাম -- ঢাকার ফিরতী বাসের টিকেট দেন দেখি মামা ... মাত্র বাস থেকে নামা প্যাসেন্জারের ঢাকা ফিরতী টিকেট চাওয়ার কথা শুনতেই বাস-মামা কটমটিয়ে তাকিয়ে বললেন ... এত সহযে বিলাইপুর থেকে বেরুনোর কোনো উপায় নেই , তবে কাল বিকেলে একটা "বরফের চাঁঈ" বাসের টিকেট আছে ...ঠান্ডা লাগলে কারো দোষ নেই , ডাক্তারের খরচ নিজে বহন করিবেন এই মর্মে সাড়ে পাঁচশ টাকার বন্ড সই করলেই তবে এই যায়গা ছেড়ে যাওয়া যাবে ... চলবে ? মনে মনে বললাম --- এসি বাস এ আসলাম সমস্যা হলো না , কিন্তু "বরফের চাঁঈ" বাসে গেলে কি হয় কে যানে , তবে আর কোনো উপায় না পেয়ে বলেই বসলাম ... আচ্ছা দেন ...
বাস-মামা বন্ড সই নিতে বাকী , হাত থেকে হাজার টাকার নোট টা থাবা দিয়ে নিতে মোটেই দেরী করলো না , অমনি সিনেমার মতই চার দিকের লাইট ফট্টাস করে বন্ধ হতেই অন্ধকারে চারপাশ যেন এক ভুতুড়ে পরিবেশে আচ্ছন্ন হয়ে গেল ... চ্যাপা-শুটকী-বাতির আলোয় বাস-মামার থাবা থেকে ভাঙতি গুলো নিবো নিবো করছি অমনি পিছন থেকে কে যেন রীতিমত খাঁমচী দিয়ে একটানে গরর-গরর বাহনে ( শব্দ ছাড়া কিছুই দেখার অবস্হা নেই তখন) চড়িয়ে দিলো ... ভাগ্যিস ততক্ষনে বাস-মামার কাছ থেকে ভাঙতিগুলো কোনো রকমে নিয়ে নিতে পেরেছিলাম , নাইলে ওগুলো পাওয়ার আর কোনো আশা ছিলো না ... চারপাশে কি হচ্ছে না হচ্ছে বুঝে উঠার আগেই দেখি পরিচিত এক গলা পাশ থেকে বলে উঠলো
-- নামো এইবার , এসে গেছি আমার গর্তে ...
>> আরে বিলাইপু , এমনে ক্যান নিয়ে আসলা আমাকে ?
-- তুমি বুঝবা না, নিজে তো হালুম না, এই সব তোমার মাথায় ঢুকবে না ...
>> বলো ই না ...
-- একটু পরে থাবা-ফোনে বলে দিলেই ঈদুর বাত্তি জ্বালায়ে দিবে , আগে ঘরে ঢুকে নেই ... এরপর সেই ব্যাবস্হা করছি ...
>> কিন্তু ... এমন টা করছো ক্যান ?
-- কোনো কিন্তু নাই , ঢুকো ভিতরে ... তোমায় আমি এই বাড়ীর কিছু নিয়ম কানুন শিখায়ে দেই ... যদি ঠিক মতো সেগুলো মানো তাইলে ঠিকাছে , আর যদি না মানো তাইলে কিন্তু ফরমালিন দেয়া মাছ খাওয়ায় দিবো ...
>> আর যদি সব কথা মানি ?
-- তাইলে তোমার পছন্দের খাবার খাওয়াবো
>> আচ্ছা ঠিকাছে , এইবার তাইলে নিয়ম কানুন গুলো বলো ...
-- প্রথম কথা হলো আমার গিফট গুলো দেও , ওগুলো পছন্দ হলে বাড়ী থাকতে দিবো , নাইলে বেল-কাঁটার গেটের সামনে সারা রাত দাঁড় করায়ে রাখবো ... আমি দিনের বেলা বাড়ী থাকিনা রাতেও কম থাকি তাই আমার মশা গুলো ঠিকভাবে রক্ত খেতে পারে না বলে অপুষ্টি তে ভুগছে, ওদেরকে ঠিকঠাক খাবার খেতে দিতে হবে , ঠাস-ঠুস করে ওদের মারলে কিন্তু খামচি খাবা ... বাথরুমে গিয়ে উঁচু গলায় গান গাইবা , নাইলে বোকা আইলস্যা মশাগুলো তোমাকে খুজে পাবে না ... আর যদি গানের ভলিউম কমাইসো তাইলে কিন্তু ... খামচি খাবা ... আর ...
>> আচ্ছা , ঠিকাছে তোমার সব কথাই মানবো পরে ... এখন আমার চরম ক্ষিধে পেয়েছে ঘরে খাবার আছে কিছু ?
-- দিতে পারি এক শর্তে ...
>> কি শর্ত ?
-- তুমি বিয়ে করবা ... তোমার বৌ এসে আমার বাসায় রান্না করে দিবে আর আমি লেজ দুলায়ে দুলায়ে খাবো ... আর তুমি চেয়ে চেয়ে দেখবা ...
>> সেইটাও দেখা যাবে .... আগে খাবার দেও জলদি ...
-- আচ্ছা অপেক্ষা করো .... আনছি
এই হলো সেই সব খাবার যা বিলাইপু অনেক অনেক আদর আর ভালোবাসা দিয়ে সেদিন রান্না করেছিলো ... কেমন হয়েছিলো তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না ... আর ওর বাসা থেকে ফেরার আগ পর্যন্ত যা ঘটেছিলো তার জন্য না হয় আরেকদিন লিখতে বসবো ... আজ এ পর্যন্তই .... শুভ রাত্রী
( প্রথম ছবিটি --- বিলাইপুর বাড়ী যাওয়ার পথে এই ঝাল-মুড়ি মামা আমার পকেট থেকে ৩০ টাকা ডাকাতী করেছিলো , তাই ফেরীর উপরে উঠে ওকে ক্যামেরায় বন্দী করে এনেছি ...)
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মার্চ, ২০১২ ভোর ৪:৫০