*~*| |* জীবন বদলে দেয়া চিরকুট (শেষ পর্ব ) *| |*~*
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
প্রথম পর্ব -- Click This Link
দ্বিতীয় পর্ব -- Click This Link
তৃতীয় পর্ব -- Click This Link
এবার সত্যি সুমনার কান্না পেতে লাগলো ... সামনে রাখা ডিনার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে কিন্তু তনুর কি হলো না জানলে যে খেতেও পারছে না, অন্যরকম এক মায়ার বাধনে জড়িয়ে পড়েছে সে তনুর সাথে ... যেভাবেই হোক ওকে জানতে হবে এর পরে তনুর সাথে কি হয়েছিল ... মনে মনে নতুন এক বুদ্ধি এঁটে সে গপাগপ খেয়ে নিলো ঠান্ডা হয়ে যাওয়া ডিনার ... ডিং ডং ঘন্টা বাজিয়ে খাবারের ট্রে ফেরত পাঠানোর সময় নার্সকে জিজ্ঞেস করলো রাতে ক্ষিদে পেলে কি সে কিছু চাইতে পারে ? ... হাসিমুখে হ্যা বলেই স্বল্পভাষী নার্সটা চলে গেল ... সে যেতে না যেতেই ওর কেবিনে বাবা ঢুকে ওর শরীরের অবস্হার কথা যেনে বসেই রইলেন ওর পাশে ... তনুর জন্য অস্হিরতা অথবা অন্য কোন কারনে এখন কেন যেন বাবার সাথে অভিমান করতে মন চাইছে না সুমনার ... শুধু একবার জিজ্ঞেস করলো -- তুমি এখানে ? ওপাশের মানুষটা কি ঘুমিয়ে পড়েছে নাকি ? ... ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আদরের মেয়েটিকে বুকে টেনে নিয়ে কিছুক্ষন বসে থাকার পরে বললেন -- শুভ্রর অবস্হা বেশী ভাল না, এজন্য ওকে ইন্টেনসিভ কেয়ারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ... সুমনা এই প্রথম শুভ্রর জন্য হঠাৎ করেই বেশ কষ্ট অনুভব করতে লাগলো ...
কিছুক্ষন পর রাউন্ডে আসা ডাক্তার ওকে পরীক্ষা করে বেশ খুশী মনে বললেন, আপনার শরীরের যথেষ্ট উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করার কারনেই আপনি অনেক সুস্হ হয়ে উঠেছেন, আশা করি কাল সকালেই আপনি বাড়ী যেতে পারবেন ... কথাটা শুনে যে কারো মনে আনন্দের সূচনা হওয়াটা স্বাভবিক হলেও সুমনার ঘরে ফেরার এক বিন্দু ইচ্ছে নেই ... বরং মনে মনে সে ঠিক করে ফেলেছে, এর পর তনুর কি হয়েছিল না জেনে সে এখান থেকে বেরুবে না ... আদরের মেয়েটাকে এভাবে চুপ করে মন খারাপ করতে দেখে ওর বাবা জিজ্ঞেস করলেন, কি হয়েছে মা এমন করে আছিস কেন ? ... কষ্টগুলোকে আর ধরে রাখতে না পেরে বাবার বুকে ঝাপিয়ে পড়ে হু হু করে কেঁদে উঠে সুমনা তাকে সব ঘটনা খুলে জানালো ... সেই সাথে এটাও বললো - তনুর কি হয়েছে আর কে এই গল্প লিখে লিখে তাকে খাইয়েছে না জানা পর্যন্ত সে হাসপাতাল ছেড়ে যাবে না ... মেয়ের এই ইচ্ছেটাকে পূরনের লক্ষ্যে সুমনার বাবা চললেন এ দুটি প্রশ্নের খোজে ... কিছুক্ষন পর ফিরে এসে বললেন , তোমার দুটি উত্তর পেয়েই তুমি কাল সকালে বাড়ী ফিরতে পারবে ...
তখন মধ্যরাত পাশের চেয়ারে বসে ওর বাবা ঘুমুচ্ছেন ... কিন্তু সুমনার চোখে ঘুম নেই, তনুর কি হয়েছিল এর পরে ? ... না জানলে যে ওর ঘুমই আসবে না আজ রাতে ... ডিং ডং ঘন্টা বাজিয়ে কিছু হালকা খাবারের কথা জানানোর কিছুক্ষন পরেই এক মমতাময়ী নার্স এসে ট্রেতে কিছু কুকিজ আর এক গ্লাস গরম দুধ দিয়ে গেল, যাওয়ার সময় ওর কপালে চুমু দিয়ে যেতে যেতে বললো -- শুনলাম কাল সকালে চলে যাবে তুমি ... আর কখনো যেন এমন কোরোনা , আচ্ছা ? ... কথা শেষ হওয়ার আগেই ডিউটিতে থাকা ডাক্তার এসে বললেন -- আপনি রাতে ঘুমানোর চেষ্টা করেন, তা না হলে আপনার শরীরের যতটুকু উন্নতি হয়েছে তার চেয়ে বেশী খারাপ হয়ে যেতে পারে ... ট্রের দিকে তাকিয়ে এরপর তিনি বললেন -- ওগুলো খেয়ে শুয়ে পড়ুন, ঠিকাছে ? শুভরাত্রী .... ওরা দুজনেই চলে যাওয়ার সাথে সাথে ট্রে তে রাখা চিরকুট টা তুলে নিয়ে ও পড়তে লাগলো ...
"ঝড়ের পর থেমে তনুর মনে এক ফোটা আনন্দ নেই, নেই সেই আনন্দের উচ্ছলতা ... ভেজা চোখে চুপচাপ বসে থাকা জানালায় ... কারো সাথে কথা বলে না ... পাখিদের ঠিক যে সময় খাবার দিতো , অভ্যাস বশত রান্নাঘর থেকে কিছু খাবার এনে জানালায় ছড়িয়ে দিয়ে চুপ চাপ অপেক্ষা করতে লাগলো কখন আসবে ওরা, কখন খাবে ওর দেয়া খাবারগুলো ... মেয়ের এই কান্ড দেখে আর বাবা মা কারো সহ্য হয় না ... ফুপিয়ে কেদে উঠে দুজনেই অন্য রুমে চলে যায় ...যেখানে নিরবে ফেলতে পারবে ওদের দু ফোটা চোখের জল ... হঠাৎ ছোট্ট দুটি হাতের ছোয়ায় দুজনেই চমকে উঠলো তাকিয়ে দেখলো হাসিমুখে দাড়িয়ে আছে তনু ... ওরা তার দিকে তাকাতেই ফিসফিসিয়ে বললো -- এদিকে এসো, দেখে যাও ... গুটি গুটি পায়ে ওরা তিনজনে তনুর ঘরের দরজার দাড়িয়ে দেখতে লাগলো এক অপূর্ব দৃশ্য ... জানালার উপরে বসে একমনে টুক টুক করে খেয়ে চলেছে কয়েকটি ছোট্ট চড়ুই পাখি ।।"
আপনি জানতে চেয়েছেন -- গল্পটা আপনাকে কে শুনালো, এর উত্তর পাবেন কাল সকালে... ডিসচার্জ হওয়ার সময় আমার শেষ চিরকুটে... শুভ রাত্রী ।"
চিরকুট টা পড়ে সুমনার মনে যেন আর আনন্দ ধরে না ... তনুর গল্পটা শেষ হয়েছে, সকালে যে জানতেও পারবে কে তাকে গল্পটা শুনিয়েছে ... এই খুশীতে কখন যে তার চোখ লেগে এসেছিল সে নিজেই জানেনা , সকালে তার আব্বুর ডাকাডাকিতে চোখ খুলতেই তিনি বললেন ,সকাল হয়ে গিয়েছে নাও চলো বাসায় যাই ... সে উঠে ফ্রেস হয়ে আসতে না আসতেই ওর বাব বললেন , তোমার ডিসচার্জের সব পেপার রেডি করে এনেছি ... এবার চলো যাই ... বাবার পাশে দাড়িয়ে সুমনা বললো, এর মাঝে কোন চিরকুট নেই বাবা ? শেষ একটা আসার কথা ছিল ... খুশীর ঝিলিক তোলা চোখে ফাইলের ভিতর থেকে সুমনার জন্য আসা শেষ চিরকুট টা সুমনার হাতে দিয়ে তিনি দাড়ালেন তার অতি আদরের মেয়ের পাশেই ... আর সুমনা পড়তে থাকলো --
" ছোটবেলায় তোকে যে প্রতিদিন গল্প শুনাতাম আর তুই মায়ের হাতে ভাত খেতি মনে আছে ? না হয় অনেক দিন তোকে গল্প শুনাইনি, তাই বলে কি ভেবেছিস বাবা টা অনেক বোকা হয়ে গিয়েছে ? সে কি পারবে না তার মেয়ের অভিমান ভাঙ্গিয়ে গল্প শুনাতে শুনাতে খাবার খাইয়ে দিতে ? এবার বল, এমন একটা গল্প লেখার জন্য আমাকে কত নম্বর দিবি ? "
চিরকুট টা পড়া শেষ করতেই বাবার বুকে ঝাপিয়ে পড়ে তার সেই ছোট্ট আদরের মেয়েটা ফিক করে হেসে বলে উঠলো -- তোমাকে একশ তে একশ দশ দিলাম বাবা....
২৯টি মন্তব্য ২৯টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।
এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?
সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী
বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন
=বেলা যে যায় চলে=
রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।
সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন