somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

*~*| |* জীবন বদলে দেয়া চিরকুট (পর্ব - ২) *| |*~*

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৪:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রথম পর্ব -->> Click This Link


হাসপাতালের নার্সদের অনেক ধৈর্য্য, না হলে ওর মতো সব কিছুতে না বলা রুগীদের সাথে এমন করে সুন্দরভাবে কথা কেউ বলার কথা না ... ওর ঘুম ভাঙ্গার পর, সকাল থেকে দু জন ডাক্তার এসেছেন আর গোটা তিনেক নার্স ... সবার মুখেই হাসি... অমায়িক ব্যাবহার ... এদের মাঝে ডাক্তার দুজন আর দুজন নার্সকে ওর বেশ লেগেছে ... ঘর পরিষ্কার করতে আসা মহিলাটাও ওর বকা খেয়েও হাসি মুখে নিজের কাজ শেষ করে গিয়েছে, তার আচরনও ওর বেশ ভাল লেগেছে ... ডাক্তার দুজন সকাল থেকে কয়েকবার ওকে দেখে গিয়েছে ... দুজনেই বেশ সুদর্শন, মিষ্টিভাষী ... আর বেশ জলদি মিশতে পারেন ... অনেক ভাবে বুঝিয়েছেন উনারা, এই মুহুর্তে খাবার আর ঔষধ খাওয়াটা ওর জন্য খুবই জরুরী, কেবল মাত্র বেশ বড় একটা বিপদ কাটিয়ে উঠেছে সে, এখন যদি তার শরীরের ঠিকমত যত্ন না নেয়া হয় তবে আরো অসুস্হ হয়ে পড়বে ... উনাদের দুজনের কথা শুনতে তার বেশ ভাল লাগে, কিন্তু সে তো রাগ করে আছে না হলে কখন উনাদের কথা মত খাবার আর ঔষধ খেয়ে ফেলতো ... উনাদের দুজনেরই কয়েকটা কমন মুদ্রাদোষ আছে, যেমন " ঠিকাছে" " বুঝতে পারছেন" " তাইনা" "তাহলে" ... এগুলো যখনই ওরা বলে তার খুবই হাসি পায় কিন্তু অভিমানের সময় হাসতে নাই এ জন্য হাসি চাপতে সে ঐসময়গুলো উনাদের কথার উত্তর হ্যা, হু বলে দেয় ... যে দুজন নার্সকে ওর ভাল লেগেছে উনারা একেবারে গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে আম্মুর মতই আদর করে বুঝাতে চেয়েছেন , অন্য সময় হলে যে আদর উনারা করেছেন তার একশভাগের একভাগ করলেই সে যে কোন কাজ করতে রাজি হয়ে যেত ... আরেকজন খুবই সল্পভাষী, খেয়ে নিন না খেলে শরীর খারাপ করবে বলে চলে গিয়েছে ... তাকে তার সেইভাবে পছন্দ না হলেও অপছন্দ হয়নি ... তবে একটা ব্যাপার সবাই আলাদা আলাদাভাবে ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে তাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করেছে ... এবং শেষ পর্যন্ত বিফল মনোরথে ফেরত গিয়েছে ...

কিছুক্ষন থেকে তার মনের অবস্হা আরো খারাপ হয়ে আছে , তার প্রিয় মানুষ, তার আব্বু যিনি তার পাশে থাকার জন্য হাসপাতালে এসেছেন উনাকে শুভ্রর ডিস্টার্ব করার কথা বলাতে সেই যে ঐপাশে গিয়ে বসেছেন আর উঠে আসার নামই নাই ... একটু পর পর আবার ওরা দুজন কি নিয়ে যেন হো হো করে হেসে উঠছে, এমন অসভ্য একটা ছেলের পাশে বসে কি যে গল্প করে চলেছে আল্লাহ ই জানে ... এর মাঝে ৫ - ৭ মিনিটের জন্য তার পাশে এসে ওকে দেখে আব্বু বললেন -- মা, তুই কিছু খাবি ? ... ঝটকার সাথে "না" বলার পরে উনি দ্বিতীয়বার আর জিজ্ঞেস না করে ফলের ঝুড়ি থেকে ছুরি আর কয়েকটা আপেল, আঙ্গুর, বেদানা, কমলা নিয়ে আবার বেরুচ্ছেন দেখে সে জিজ্ঞেস করলো কৈ যাও ? তিনি একমুখ হাসি দিয়ে বললেন -- শুভ্রকে খাওয়ায়ে আসি ... চট করে যেন মাথায় রক্ত চড়ে গেল সুমনার ... ধীরে ধীরে সেটা ভয়ংকর রাগে পরিনত হতে থাকলো যখন ঐপাশ থেকে দুজন মিলে খাওয়ার কথা বলতে শুনলো ... উফফ ! এমন মিষ্টি কমলা খুব কমই খেয়েছি আংকেল ... আরে কালো আঙ্গুর, আমার খুব প্রিয় আপনিও নেন আঙ্কেল ... বেদানা এখন না পরে খাই, এমন খেলে তো আমার পেট ফেটেই যাবে, সুমনার বাবা বলেন -- আরে খাওতো, না হলে পিট্টি দিয়ে খাওয়াবো তোমাকে ... এ সবের মাঝেই দুপুরের খাবার নিয়ে স্বল্পভাষী নার্সটা হাজির হলো সুমনার কাছে, খাবারের ট্রে টা টেবিলের উপরে রেখে যাওয়ার সময় বলে গেল, একটু পরে আপনার ঔষধ দেয়া হবে ... বলেই সে চলে গেল

বেশ কিছুক্ষন থেকে সুমনার কাছে কেউ আসছে না, কোন ডাক্তার নার্স কেউ না, ওর বাবাও শুভ্রর কাছে বসে আছে ... জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতে তাকাতে চোখ ব্যাথা হয়ে গিয়েছে মনে হয়, টিভি চালিয়ে ৩৭টার মধ্যে দেখার মত একটাও চ্যানেল খুজে পেল না বলে বিরক্তে চোখ কুঁচকে পাশে রাখা খাবারের ট্রের দিকে তাকাতেই এতক্ষনে খেয়াল করলো সেখানে খাবারের সাথে একভাজ করে রাখা একটা ছোট্ট চিরকুট পড়ে আছে ... কি মনে করে সেটা তুলে চোখ বুলাতেই দেখলো, তাতে লেখা --

" মেয়েটার নাম তনু, পড়তো শহরের নামী একটা স্কুলে ক্লাস টু তে, বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে হওয়াতে তারা কখনোই তার কোন কিছুর অভাব না রাখার চেষ্টা করেছেন, তবুও তার মনে সারাক্ষন এক বিষাদের ছায়া লেগেই থাকতো, স্কুল আর মায়ের সাথে শপিং ছাড়া তার বাকিটা সময় কেটে যেতে নিজেদের ফ্ল্যাটেই ... হয়ত কাছের কোন বন্ধু অথবা খেলার সাথী না থাকার কারনে অথবা ছোট্ট একটি গন্ডিতে আবদ্ধ হয়ে থাকার কারনেই সে আস্তে আস্তে বিষন্নতা নামক কঠিন অসুখে পতিত হচ্ছিল ....

পরবর্তি খাবারের ট্রেতে পাঠানো চিরকুটে জানতে পারবেন এরপর তনুর অবস্হাটা ঠিক কতটা খারাপ হয়েছিল, ঠিকাছে ?"


গল্পের বই এর পাগল সুমনার জন্য এটা কি পরিমান ভয়ংকর টর্চার তা সে ছাড়া আর কেউ জানে না, বুঝবেও না ... হঠাৎ করে দেখলো তার কুঁচকানো ভ্রু দুটো আরো বেকে রয়েছে, মাথাটা ভয়ংকর রকমভাবে ধরেছে , জানালা দিয়ে তাকাতেই যেন আকাশ পাতাল এক করে ঘুরে উঠলো সবকিছু .... কেন এমন হচ্ছে তার সাথে ... এ কি না খাওয়ার কারনে নাকি তনুর পরবর্তিতে কি হয়েছে তা জানার জন্য ? নাহ ! তার আর অপেক্ষা সহ্য হচ্ছে না ... বেল বাজিয়ে নার্সকে ডেকে বললো খাবার ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে আরেকবার দেয়া যাবে প্লিজ ? ... হাসিমুখে স্বল্পভাষী নার্স কয়েক মিনিটের মধ্যে তাকে গরম খাবারের ট্রে দিয়ে বের হওয়ার সাথে সাথে সেখান থেকে ছোঁ মেরে পরবর্তি চিরকুট টা তুলে নিয়ে খুলতেই সুমনার মেজাজটা চরমরকম খারাপ হয়ে গেল, সেখানে লেখা আছে

" একটুও খাবার না খেলে তো তনুর পরবর্তি ঘটনাগুলো বলা যাবেনা তাই কিছুটা হলেও আপনাকে খেতে হবে ... কিছু না হলেও অন্তঃত চিকেন স্যুপ এক গ্লাস পানি আর ঔষধগুলো যদি খান তো পরের অংশটা দেয়া যেতে পারে, ঠিক না ? "


এটা পড়তে পড়তে সুমনার যেন কান্না চলে এল, কি করবে সে ... একদিকে পাহাড়ের ন্যায় অটল অভিমান অন্যদিকে তনুর কি হয়েছিল জানতে অসম্ভব ইচ্ছে করছে ... অগত্যা হাফ বাটি স্যুপ, হাফ গ্লাস পানি আর ঔষধগুলো খেয়ে বাকি খাবার ফেরত দিতে দিতে জিজ্ঞেস করলো ... পরের খাবার কখন দেয়া হবে ? স্বল্পভাষী নার্সটা বললো -- বিকেলে নাশতা দেয়া হবে .... অতঃপর কি হলো তনুর সে চিন্তা করতে করতে কখন যে সে ঘুমিয়ে পড়েছে নিজেও জানে না ... তার ঘুম যখন ভাঙলো তখন বিকেলের নাশতা দিয়ে একজন নার্স আস্তে আস্তে চলে যাচ্ছিলেন ... ট্রের উপরে রাখা ছোট্ট চিরকুট টা দেখতে পেয়েই সে আবার এক নিঃশ্বাসে পড়া শুরু করে দিলো --

" তনুর বিষন্নতা আস্তে আস্তে বাড়তেই লাগলো, দিনের পর দিন এভাবে চলতে চলতে এক সময় দেখা গেল তার খাওয়া দাওয়া, ঘুম, পড়ালেখা সবকিছুর উপর অনিহা চলে এসেছে... দিনে দিনে তার ওজন কমতে লাগলো, নিজের ঘর থেকে বের হতো না, ঘরের লাইট ও জ্বালাতে দিতো না, সেই সাথে সবার সাথে কথা বলাও বন্ধ করে দিয়েছিল ... কত ডাক্তার, প্রফেসর দেখানো হলো কেউ বুঝেই উঠতে পারছিলো না ওর কি হয়েছে, কেন হয়েছে... এমনকি একদিন একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বলেই বসলেন এমনটা চলতে থাকলে হয়ত তাকে আর বেশি দিন বাঁচিয়ে রাখাই সম্ভব হবে না ... তনুর জন্য দুঃশ্চিন্তায় অস্হির বাড়ির প্রতিটি লোক ... ওর বাবা মা থেকে শুরু করে কাজের লোক, বাবুর্চি, ড্রাইভার এমনকি দারোয়ানও ... এমন একদিন, উদ্ভ্রান্তের মত ছুটতে ছুটতে মায়ের কাছে এসে সে বললো -- মা আমদের অনেক খাবার তো ফেলে দেয়া হয় সেখান থেকে কিছুটা আমাকে দিবা ? .....

এর পরে কি হয়েছিল জানতে পারবেন পরের চিরকুটে, তবে এর জন্য আপনাকে অবশ্যই বিকেলের নাশতার পুরোটুকু খেতে হবে, ঠিক আছে?"



চলবে .......


(লেখাটি পোষ্ট করার সময় বেশ সমস্যা করছে, এডিটের সময় বার বার প্রথম পাতা থেকে সরে যাচ্ছে, এজন্য নতুন করে দেয়া হলো)
২২টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×