আলবার্ট আইনস্টাইন বললেই, সবার মনে যে ব্যাপার টি প্রথমে আসে তা হলো "আপেক্ষিকতা তত্ত্ব"।
আজ ১৪ মার্চ, এই মহান বিজ্ঞানীর ১৩৪ তম জন্মবার্ষিকী, ১৮৭৯ সালের এই দিনে, Ulm, Württemberg, Germany তে তাঁর জন্ম হয় । পৃথিবী বিখ্যাত E = mc ²সূত্রের জন্যে যাকে সবাই এক নামে চেনে। ১৯২১ সালে তিনি তাত্ত্বিক পদাথবিদ্দ্যা বা Theoretical Physics এর উপর নোবেল পুরস্কার লাভ করেন, বিশেষ করে "আলোক তড়িৎ ক্রিয়া বা Photoelectric effect" আবিস্কারের জন্যে।
ক্যারিয়ার শুরুর প্রথম দিকে, আইনস্টাইন চিন্তা করলেন যে নিউট্রনিয়ান মেকানিক্স এখন আর ক্লাসিক্যাল মেকানিক্স কে তড়িৎচুম্বকীয় তত্ত্বের সূত্রের দ্বারা ব্যাখ্যা করতে অপারগ, নতুন কোন তত্ত্বের প্রয়োজন। আর এই চিন্তাই তাকে আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব পরিবর্ধনে ভুমিকা রাখে।
১৯৩৩ সালে, যখন "অ্যাডলফ হিটলার" ক্ষমতায় আসে, তিনি যুক্তরাষ্ট্র সফরে আসেন, কিন্তু আর ফিরে যান নি জার্মানিতে, যেখানে তিনি "বার্লিন একাডেমী অব সায়েন্স" এর একজন প্রফেসার ছিলেন। ১৯৪০ সালে মার্কিন নাগরিকত্ব গ্রহন করে ওখানেই স্থায়ী ভাবে বাস করতে লাগলেন।
কিন্তু, আইনস্টাইন এর ব্যক্তিগত জিবনে এমন কিছু বিতর্কিত ব্যাপার ছিলো যা বিজ্ঞান জগতের আমুল পরিবর্তন কারি তত্ত্ব থেকেও বিস্ময়কর। তেমনি কিছু বিষয় আজ তুলে ধরবো-
যখন বালক ছিলেন, তখন একটি কম্পাস এর কাটা তাঁকে বিস্মিত করে রেখেছিলো। তাঁর বয়স যখন ৪ বছর, তাঁর বাবা তাঁকে একটি পকেট কম্পাস দেখিয়েছিলেন, আর তখন থেকেই আইনস্টাইন অনুভব করেছিলেন - " এর পিছনে অনেক রহস্যময় কিছু একটা রয়েছে"; আর এই ভাবনার ক্রমবিকাশ পরবর্তী জিবনে তাঁকে একজন বিখ্যাত পদার্থবিদ, দার্শনিক ও লেখক তথা সর্বকালের একজন প্রভাশালি বিজ্ঞানী এবং গবেষক হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে অবদান রাখে।
আলবার্ট আইনস্টাইন যখন শিশু ছিলেন, তাঁর মস্তক তা ছিল একটু অস্বাভাবিক রকম বড়। বলা হয় যে, জন্মের পর তাঁর মা যখন তাঁকে প্রথম দেখেন, তিনি ভেবেছিলেন তাঁর শিশু টি হয় তো বিকলাঙ্গ, পরিবারের সবাই ও ধরে নিয়েছিল যে তা এক রকম অঙ্গবিকৃতি। যাই হোক, ডাক্তার এই বলে তাদের সান্ত্বনা দিলেন যে এটা অস্বাভাবিক কিছু না, কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তা স্বাভাবিক হয়ে যাবে। আর প্রকৃতপক্ষেই, তা স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিল এবং আইনস্টাইন একটি স্বাভাবিক শিশুর মতো বেড়ে উঠতে লাগলেন, বরং অনেক ধীরে ধীরে।
শিশু অবস্তায়, আইনস্টাইন অনেক কম কথা বলতেন, অস্বাভাবিক রকম কম, আর একটু আদটু যখন বলতেন, তা বলতেন অনেক ধীরে ধীরে। তাঁর বয়স ৯ পর্যন্ত তাঁর মা-বাবা ভাবলেন যে তাদের এই শিশু টি হয় তো অবিশপ্ত। কিন্তু তারা যে কতো টুকু ভুল ছিলেন, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আর এর পেছনে আছে একটি গল্প।
একদিন ছোট্ট আইনস্টাইন বলে উঠলেন যে- " স্যুপ অনেক বেশি গরম" সেখানে তাঁর মা-বাবা ও ছিলেন, তারা বললেন, অবশ্যই; তারা বাচ্চার এর স্বাভাবিক জ্ঞ্যান দেখে খুশিই হলেন, জিজ্ঞেস করলেন- " তুমি আগে কেন তা বলো নি?", "কারন এই পর্যন্ত সব কিছু ঠিকঠাক ছিল, এই ছিল আইনস্টাইন এর উত্তর।
আপনি কি বিশ্বাস করতে পারেন, ১৮৯৫ সালে আইনস্টাইন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেন নি । যখন তাঁর বয়স ছিল ১৭, আইনস্টাইন অগ্রিম ভর্তির জন্যে "Swiss Federal Polytechnical School (Eidgenössische Technische Hochschule or ETH)" -তে আবেদন করেছিলেন। দুরভাগ্যবশতঃ, তিনি গণিত ও বিজ্ঞানের বিষয় গুলো তে পাশ করলেও ফেল করে ফেলেন ইতিহাস ও ভূগোলে। ফলশ্রুতিতে, নতুন সেশনে ভর্তি হতে তাঁকে আরও একটি বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিলো, এবং দ্বিতীয় বার কিন্তু সব বিষয়েই পাশ করেন, স্থান পেয়ে যান "ETH" তে।
১৮৯৮ সালে তরুন আইনস্টাইন Mileva Maric এর প্রেমে পড়েন, সার্বিয়ান বংশদ্ভুত এই তরুণীই একমাত্র মেয়ে স্টুডেন্ট ছিলেন আইনস্টাইন এর ক্লাসে যিনি গণিত পড়ছিলেন, তাঁরই সাতে যার একটি অবৈধ সন্তান, একটি মেয়ে রয়েছে। মেয়ের জন্ম ১৯০২ সালে, মিলেভা'র পিত্রালয়ে, নভি সাদ-এ, মেয়ের নাম ছিল Lieserl, আইনস্টাইন যখন পত্র মারফত জানতে পারলেন তা তখন সত্যি লজ্জাজনক হয়ে দাঁড়ালো যে তিনি কখন এই মেয়ে কে দেখেন নি। জখন মেয়েটির ভাগ্য ছিল অনিশ্চিত। Michele Zackheim তার বইয়ে বলেন যে- আইনস্টাইন এর এই মেয়ের জন্ম হয় তো অবৈধ ভাবেই হয়েছিলো, কিন্তু ১৯০৩ সালে ও মৃত্যুবরন করে।
যাইহোক, আইনস্টাইন ও মিলেভা বিয়ের পিড়ি তে বসেন এবং পরবর্তীতে তাদের আরও দুটি ছেলের জন্ম হয়, Hans Albert ও Eduard। আইনস্টাইন এর আকর্ষণীও একাডেমিক কার্যকলাপ ও সুনিয়ন্ত্রিত পদচারনা মিলেভা'র সাতে তাঁর সম্পর্ককে অনেক তা নেগেটিভ ভাগে প্রভাবিত করে। বলা হয়ে থাকে যে- আইনস্টাইন মিলেভা কে কিছু শর্ত দিয়ে দেন যে তাঁর সাতে থাকতে হলে এই গুলো মেনে থাকতে হবে। আর একটি আশ্চর্যজনক শর্ত ছিলে যে- "আইনস্টাইন কোন কোন সময় অনুরধ করলে তাঁর সাতে কথা বলা যাবে না"- মেলিভা মেনে নেন।
তাসত্ত্বেও, বিচ্ছেদ কিন্তু আসন্ন ছিলো, যার একটি প্রধান কারন ছিল তাঁর নাস্থিকবাদ। আইনস্টাইন ১৯১৯ সালে আবার বিয়ে করেন তাঁর কাজিন, Elsa Lowenthal কে। কিন্তু, বলা হয় যে- তিনি চেয়েছিলেন বিয়ে করতে Elsa Lowenthal এর মেয়ে, Ilse কে, যে কি না তাঁর চেয়ে ১৮ বছর বড় ছিলো। দুর্ভাগ্যবশতঃ Ilse বলল যে, সে আইনস্টাইন কে তার পিতার মতোই সম্মান করে এবং তাঁর প্রতি আকৃষ্টও নয়।
১৯৫৫ সালে আইনস্টাইন এর মৃত্যু হলে তাঁর "ব্রেইন" চুরি করে ফেলেন তাঁরই ডাক্তার Thomas Stoltz Harvey দ্বারা, যিনি তাঁকে Princeton Hospital এ অটপসি করেছিলেন, তিনি এই অমুল্য সম্পদ কে তার ঘরে নিয়ে এসে একটি জার এ রেখে দেন এবং কর্তৃপক্ষ কে ফিরিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানান। ফলস্বরূপ চাকরি থেকে তাঁকে বরখাস্ত করা হলো তাকে। যাইহোক, অনেক বছর পরে, Harvey আইনস্টাইন এর পুত্র Hans Albert এর কাছ থেকে অনুমতি পেলেন এই ব্রেইন নিয়ে কিছু গবেষণা করতে। Harvey এর কিছু অংশ বিশ্বের কয়েক জন খ্যাতনামা গবেষক দের কাছে পাঠিয়ে দেন, আইনস্টাইন এর ব্রেইন এর রহস্য বের করতে। তত্ত্ব ছিলো অনেক, কিন্তু সম্পূর্ণ ভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। যার কারনে রহস্য অসমাপ্তই থেকে গেলো।
শতাব্দীর এ মহান বিজ্ঞানীকে আবারো শুভ জন্মদিন!
Happy Birthday Mr. Einstein !