জেনেশুনে ভর্তির পরামর্শ ইউজিসির
সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব (স্থায়ী) ক্যাম্পাসে যেতে ব্যর্থ হবে, তারা আগামী সেপ্টেম্বর মাসের পর নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারবে না। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত আটটি বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাওয়ার বিষয়ে কোনো উদ্যোগই নেয়নি।
ইউজিসি বলছে, এসব বিশ্ববিদ্যালয় সেপ্টেম্বরের পর আর শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবে না। তবে নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাওয়ার বিষয়ে ইতিমধ্যে উদ্যোগ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো ছাত্র ভর্তি করার সুযোগ পেতে পারে।
এই আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা নিজস্ব ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে জমি নিবন্ধন করার কথা জানান কেউ কেউ। একটি বিশ্ববিদ্যালয় এ বিষয়ে কথা বলতেই রাজি হয়নি।
সদ্য প্রকাশিত এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের একটি অংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে। এ জন্য ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সম্পর্কে জেনেশুনে ভর্তি হওয়ার জন্য শিক্ষার্থী ও তাঁদের অভিভাবকদের পরামর্শ দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইউজিসির চেয়ারম্যান এ কে আজাদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘যারা এখনো নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাওয়ার বিষয়ে কোনো উদ্যোগই নেয়নি, তাদের সেপ্টেম্বরের পর আর ছাত্র ভর্তির সুযোগ নেই। তাদের বিষয়ে ‘সরি’ (দুঃখিত) বলা ছাড়া আর কিছুই করার নেই। তবে এ ধরনের আটটি বিশ্ববিদ্যালয় বাদে যারা কোনো না কোনোভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, তাদের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।’
চেয়ারম্যান জানান, শিক্ষামন্ত্রীও উদ্যোগ গ্রহণকারীদের বিষয়টি বিবেচনার কথা বলেছেন। তিনি শিক্ষার্থীদের ভর্তি হওয়ার আগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান ও অবস্থা সম্পর্কে জেনে নেওয়ার পরামর্শ দেন।
আইন অনুযায়ী, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাময়িক অনুমোদন পাওয়ার পাঁচ বছরের মধ্যে নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার কথা। কিন্তু সিংহভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ই এই সময় পার করলেও নিজস্ব ক্যাম্পাসে যায়নি। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ আছে।
গত বছরের ডিসেম্বরে সংবাদ সম্মেলন করে শর্ত ভঙ্গকারী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। ওই সম্মেলনে জানানো হয়, আইন অনুযায়ী যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি, তারা আগামী সেপ্টেম্বরের পর নতুন করে শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারবে না।
উদ্যোগই নেই আট বিশ্ববিদ্যালয়ের: ইউজিসির তথা সরকার-অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয় ৫১টি। এগুলোর মধ্যে আটটি বিশ্ববিদ্যালয় এখন পর্যন্ত নিজস্ব ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়নি। এগুলো হচ্ছে: সমস্যাকবলিত দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইম ইউনিভার্সিটি, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি, রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা ও বাংলাদেশ ইসলামিক ইউনিভার্সিটি। এর বাইরে অতীশ দীপংকর ইউনিভার্সিটি এক বিঘা জমি কিনলেও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জন্য বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে।
সাময়িক অনুমোদন পাওয়ার পাঁচ বছরের মধ্যে নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাওয়ার কথা থাকলেও এই আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সবকটিই সেই সময় পার করেছে বেশ আগেই। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একাধিক মালিকানায় বিভক্ত দারুল ইহসানের বিরুদ্ধে সনদবাণিজ্যসহ নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দারুল ইহসানের ধানমন্ডি ক্যাম্পাসের কোষাধ্যক্ষ এম এ রশীদ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। ট্রাস্টি নিয়ে বিভক্তি থাকায় সাভারের ক্যাম্পাস অন্যদের দখলে আছে। আমরা সমঝোতার চেষ্টা করছি। সমঝোতা হলে সেখানেই আমাদের ক্যাম্পাস হবে।’
রয়েল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য এম বদিউল আলম বলেন, জমি নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ঢাকার তেজগাঁও এবং গাজীপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকপক্ষের জমি আছে। কিছুদিনের মধ্যে নিবন্ধনের কাজ শেষ করার কথা জানান তিনি।
ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপাচার্য আবদুল মান্নান চৌধুরী বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমরা নিজস্ব ক্যাম্পাসের জন্য উদ্যোগ নিয়েছি।’
প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার আবুল কাশেম মোল্লা বলেন, রাজধানীর জোয়ারসাহারায় জমি কেনার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে নিবন্ধন হবে।
বাংলাদেশ ইসলামিক ইউনিভার্সিটির কোষাধ্যক্ষ রেজা-ই রাব্বী বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই শর্ত পূরণের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রারের দায়িত্বে থাকা রাশিদা আক্তার বলেন, তাঁরা নিজস্ব ক্যাম্পাস স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছেন। প্রাইম ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার আরশাদ আলী বলেন, জমি কেনার বিষয়টি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটির ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়া নয়টি বিশ্ববিদ্যালয়: ইউজিসি জানিয়েছে, নয়টি বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে গেছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো: নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রামের ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, আহ্ছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি, বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ও স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি (লিজ নেওয়া জমিতে)। এ ছাড়া ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় সাভারে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করেছে। তবে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণসংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য কমিশন পায়নি বলে জানিয়েছেন ইউজিসির একজন কর্মকর্তা।
জমি কিনে অবকাঠামো নির্মাণ করছে সাতটি: স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য জমি কিনে অবকাঠামো নির্মাণ করছে সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়। এই তালিকায় থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো: ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, গণ বিশ্ববিদ্যালয়, সাউথ-ইস্ট ইউনিভার্সিটি, সিটি ইউনিভার্সিটি, দি ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক, ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি।
জমি কিনলেও অবকাঠামো নির্মাণ শুরু করেনি ১৬ বিশ্ববিদ্যালয়: এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হচ্ছে: আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ ও উত্তরা ইউনিভার্সিটি, ইবাইস ইউনিভার্সিটি, শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ, লিডিং ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি-সিলেট, গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।
ভবন থাকলেও নির্ধারিত জমি নেই সাত বিশ্ববিদ্যালয়ের: এই তালিকায় থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো: দ্য পিপলস ইউনিভার্সিটি, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, স্টেট ইউনিভার্সিটি, নর্দান ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি, দ্য মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি ও সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। তবে নর্দান ইউনিভার্সিটির একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ১৩ আগস্ট সাভারে তাঁরা নিজস্ব ক্যাম্পাসের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।
এ ছাড়া আইন অনুযায়ী নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ হয়নি আশা ও ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির। এই দুটি বিশ্ববিদ্যালয় সাময়িক অনুমোদন পেয়েছিল ২০০৬ সালের ২৩ অক্টোবর।
৫১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও শর্ত ভঙ্গের কারণে ২০০৬ সালে বন্ধ করে দেওয়া আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি ও কুইন্স ইউনিভার্সিটি আদালতের রায়ে পরিচালিত হচ্ছে। সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির নামে আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে আদালত রায় দিলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এখন পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন পায়নি।
সূত্র- দৈনিক প্রথম আলো ,তারিখ: ০২-০৮-২০১১
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০১১ সকাল ১০:১৬