somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

——অতি আশ্চার্যজনক দুটি ঘটনা——

১৯ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৪:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১ :
সুইডেনে আমাদের পরিচিত এক বাংলাদেশী ছেলে বিয়ে করবে। বাবা মায়ের ইচ্ছে ছিল বাংলাদেশে বিয়ে দিতে। কিন্ত ছেলে বাংলাদেশে বড় হয়েছে বা এখনো বাংলাদেশে থাকে এমন মেয়ে বিয়ে করবে না । তখন বাবা,মা ছেলেকে বলেছে যে দেশেই বিয়ে কর মেয়েটা যেন অন্তত বাংলাদেশী হয় । তাদের দুর সম্পর্কের এক আত্বীয় অনেক বছর ধরে দুবাই থাকে, উনার মেয়ে আছে, মেয়ের জন্ম ওখানেই । বাবা, মা সেই মেয়েকে ছেলের বৌ হিসেবে পছন্দ করে । একদিন হঠাৎ আমরা জানলাম মা-বাবা ছেলেকে নিয়ে দুবাই গিয়েছে মেয়ে দেখাতে ।

ছেলে ইথিওপিয়ানদের মত কালো হলেও ফ্রেঞ্চকাট দারিতে বেশ ভালই লাগে। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো সে সিভিল ইন্জিনিয়র, পড়াশুনা শেষ করে ভালো জবও শুরু করেছে । কয়েকদিন আগে শপিং মলে সেই ছেলের সাথে দেখা ।
-হাই হ্যালো বলার পর জিগেস করলাম। দুবাইতে যে মেয়ে দেখতে গিয়েছিলে তার কি খবর?'
-'মেয়েটা বেশ সুন্দরী আর ষ্মার্ট ছিল কিন্ত তার একটা মূর্দ্রাদোষ আছে সেটা আমার পছন্দ হয়নি' ।
-'কি এমন মূদ্রাদোষ' ?
-'মেয়ে কথায় কথায় “ইনশা আল্লাহ” বলে !
এ'কথা শুনার পর আর কোন কথাই বলতে পারিনি । আল্লাহ হাফেজ বলে চলে আসি।
২:
আমার এক পাকিস্থানি ক্লাসমেটের বড় বোন যখন কলেজ শেষ করে ইউনির্ভাসিটিতে ভর্তি হয় তখন তার বাবা,মা তাদের পরিচিত এক ফ্যামেলীর ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ের কথাবার্তা শুরু করে । ছেলে ও তার ফ্যামিলি থাকে ইংল্যান্ডে । গার্জিয়ানরা কথা বার্তা বলে দুই পরিবার সিন্ধান্ত নেয় এখন ছেলে মেয়ে কথা বার্তা বলে তারা পরস্পরকে জানুক, তারপর তারা ওকে বললেই, ছেলে পক্ষ সুইডেন আসবে আর তখন আকদও হবে। পর পর কয়েকবার ছেলে মেয়ে কথা বলেছে দুইজনেই মোটামুটি পজেটিভ।শেষবার যখন ছেলে ফোন দেন তখন মেয়ে স্কুল থেকে বাসায় ফিরছিল, মেয়েটা দরজার তালা খুলে সালাম দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে ।
কিন্ত কেউ সালামের জবাব দিচ্ছে না দেখে ছেলেটা জানতে চায় ।

-'তুমি যে সালাম দিলে কেউ তো জবাব দিল না’?

-'কেউ তো নেই ঘরে জবাব দিবে কে!' উত্তরে মেয়েটা বলে ।

-'তাহলে তুমি সালাম দিলে কেন ?'

-'ঘরে মানুষ না থাকুক ঘরে ফেরেশতা আছে । তাই সালাম দিয়েছি' !

-'পাগল কোথাকার তুমি ফেরেস্তাদের সালাম দাও!' বলেই খটাশ করে ছেলে ফোন কেটে দেয়। ছেলে তার গার্জিয়ানদের জানায় এই মেয়ে পাগল সে তাকে বিয়ে করবে না !

এই দুটো ঘটনাতেই আমি এতটা অবাক হয়েছি, আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না আসলে কতটা!!

‘ইনশা আল্লাহ’ বলাটা যে কারো মূদ্রাদোষ হতে পারে বা এ'রকম কেউ মনে করতে পারে সেটা আমি কখনো কল্পনাও করতে পারিনি।

আলহামদুলিল্লাহ ! জাজাকাল্লাহ, ইনশাআল্লাহ ! মাশাআল্লাহ, সুবহানাল্লাহ সেই ছোট বয়সে কত কষ্ট করে আম্মু এগুলো শিখিয়েছে। প্রথম প্রথম এগুলো আম্মুর সাথে বলতাম । আস্তে আস্তে একাই বলা শুরু করি কিন্ত অনেক সময়ই বলতে ভুলে যেতাম বা উলটা পাল্টা বলতাম আম্মু ঠিক করে দিতেন আর এভাবেই বলতে বলতে অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। আর এতটাই অভ্যাস হয়েছে অনেক সময় বা অনেকের সাথে কথা বলার সময় বলতে চাই না তবু বলে ফেলি।
এতদিন জানতাম এগুলো বল্লে যেমন আল্লাহর প্রশংসা করা হয় তেমনি ভাষার সৌন্দর্যও বৃদ্ধি পায় আর এতদিনে জানলাম এগুলো নাকি মূদ্রাদোষ !!

আর সালাম দেয়াও শিখেছি সেই ছোট বেলা থেকে । ছোট বেলা দেশে যখন বাইরে থেকে বাসায় ফিরতাম তখন আম্মু দরজা খুলে আমার আগেই সালাম দিতো । এরপর শিখলাম যে বাহির থেকে ঘরে আসবে, সে সালাম দিবে আর যে দরজা খুলবে সে সালামের জবাব দিবে। দেশে এটা কোন সমস্য হত না । ঘরে কেউ না কেউ থাকত । বেল টেপার পর কেউ দরজা খুললে সালাম দিয়েই ঘরে ঢুকতাম । এছাড়া আমাদের বাসায় সালামের প্রচলন সব সময়ই ছিল । যেহেতু আমাদের ভাইবোনদের যার যার রুম আলাদা ছিল তাই দিনে যতবার আমরা ভাইবোন বা আব্বু আম্মুর মুখামুখি হতাম তখনই একে অপরকে সালাম দিতাম ।
এখনেও আমাদের বাসায় এটা আমরা করি, আমাদের বাসার পিচ্চিগুলো তো প্রতিযোগীতা করে কার আগে কে সালাম দিবে।কিন্ত প্রথম যখন ভাইয়া ভাবীর সাথে আমি ছাড়া আর কেউ ছিল না, ভাইয়া, ভাবীর সামনা সামনি দিনে যতবার হতাম ততবারই সালাম দিতাম।
কিন্ত এখানে পরিবারের সবাই বাইরে চলে যায় । সবার হাতেই ঘরের চাবি থাকে। সবাই যার যার সময় মত বাইরে যায়, যার যার সময় মত বাসায় ফিরে।আমাদের বাসাতেও তাই হয়। অনেক সময় আমি যখন বাসায় ফিরি কেউই তখন থাকে না । তাছারা হাতে চাবি থাকলে বেল টিপে অন্যকে কেন বিরক্ত করব। আমি নিজেই তালা খুলে ঘরে ঢুকি, সামনে কেউ থাকে না সালামও দেই না ।
তো ভাইয়া, ভাবি একদিন বলে দিল দরজা খুলে সালাম দিয়ে ঘরে ঢুকবে। আমরা কেউ থাকি বা না থাকি । ভাইয়া ভাবীর কথা শুনে শূন্য বাসাতে ঢুকেও সালাম দেই মাঝে মাঝে । আবার দেইও না অনেক সময়ই । এমন ভাবেই চলছিল ।

আমাদের বাসায় গল্প,উপন্যাসের বই বেশি না থাকলেও হাদীস, কোরআনের বই এর অভাব নেই। যখনই সময় সুযোগ পাই হাদীস কোরআন পড়ি। হাদিস পড়তে পড়তেই ঘরে প্রবেশ করার আদবের ব্যাপারে কয়েকটাই হাদীস পেলাম । কিন্ত যেই হাদীসটা শুনে সবচেয়ে বেশী আলোড়িত হয়েছি , আমি এই হাদীসের রেফারেন্স দিতে পারব না তবে হাদীসটা এখনো মনে আছে ।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন” “আল্লাহতায়ালা তিন ব্যাক্তিকে গ্যারান্টি দিয়েছেন, দুনিয়াতে রিজিকের ও আখেরাততে জান্নাতের। সেই তিন ব্যাক্তি হল:
১: যে ব্যক্তি সালাম দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে।
২: যে ব্যক্তি মসজিদে যায় নামাজ পড়তে ও দ্বীনি এলেমের চর্চা করতে ।
৩: যে ব্যক্তি দ্বীনের কাজ করার উদ্দেশ্য ঘর থেকে বের হয়।

এই হাদীসটা আমি প্রায় পাঁচ বছর আগে একজন ইসলামী স্কালারের মুখে শুনেছি। সেদিন থেকেই পণ করেছিলাম ২/৩ নাম্বার পারি বা না পারি ১ নাম্বারটা আর কখনো মিস করবো না ।

সেদিন থেকেই সালাম দিয়ে ঘরে ঢোকার চর্চাটা আমার চলছে। এর জন্য কেউ যদি আমাকে পাগল বলে বলুক না, তাতে আমি কাউকে কেয়ার করি না।


ছবি আমার তোলা ।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৪৪
৪০টি মন্তব্য ৪০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গল্প: অপেক্ষা (১ম পর্ব)

লিখেছেন শামীম মোহাম্মাদ মাসুদ, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪৭

ফকির আবদুল হাই সাহেবের সাথে পরিচয় হয় যখন আমি অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি তখন। খুবই আধ্যাত্মিক আর রহস্যময় মানুষ। পেশায় একজন অধ্যাপক। অধ্যাপনা ছেড়ে আধ্যাত্মিকতা করেন, ফকির নামটি তার নিজস্ব... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেন বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:০৮

কেন বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার.....

হোয়াটসঅ্যাপে আমাদের ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক এবং অরাজনৈতিক ১০ জনের একটা গ্রুপ আছে। আমরা বেশীরভাগ সময়ই সমসাময়ীক বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করি। গত তিনদিনের আলোচনার বিষয়বস্তু ছিলো বিএনপির... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের মডেল মসজিদ প্রকল্প: রাজনীতি, প্রতারণা ও সমাজের প্রতিচ্ছবি

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:২৪


২০১৪ সালের প্রহসনের নির্বাচনের পর শেখ হাসিনার সরকার একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেয়। ইসলামপন্থীদের সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে তারা ধর্মীয় আবেগকে কাজে লাগানোর পথ বেছে নেয়। ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরের ঘটনা সরকারকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মনের অসুখ

লিখেছেন দানবিক রাক্ষস, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:১৮

আমার মনে অসুখ ধরেছে
নদীর ওপারে কাশফুল ফুটেছে,
কলাহলের মাঝে একলা আমি,
নিরজন রাতে স্বপ্নের আত্মহুতি,

স্মৃতির জোয়ের আবেগী আমি,
যেথায় শুধু তুমি আর আমি!

চোখে আমার ছানি পড়েছে,
অস্পষ্ট এখন সবই লাগে,
কোমাতে এখন স্বপ্ন,
যা দেখেছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি সন্তুষ্ট না

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৩:০২




নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ জানার জন্য বিএনপি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সংগে বৈঠক করে বলেছে ডিসেম্বর নির্বাচনের কাট অফ সময়। প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো রোডম্যাপ না দেওয়ায় অসন্তুষ্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×