মৃত্যু একটি নির্মম সত্য । যে মৃত্যুবরন করে সে তো চলে যায় , আপনজন যারা থাকে তারাই এর কষ্ট , যন্ত্রনা অনুভব করে। এসময় অনেকেই সমব্যাথী হলেও এটা আসলে কতটা কষ্টকর, কতটা যন্ত্রনাদায়ক যার যায় সেই বুঝে । আমার আম্মু মারা যাবার পর কারো মৃত্যু খবর শোনার পর আমার ভিতর কোন অনুভূতি কাজ করে না কিন্ত এ মাসে দুটি মৃত্যুর খবর আমাকে ভীষন ভাবে নাড়া দিয়েছে ।
১ : রমজানের প্রায় মাস খানেক আগে আমাদের এখানে বাংলা মসজিদে একজন ইমাম নিয়োগ দেয়া হয়। উনি বাংলাদেশী হলেও উনি ইটালীতে ছিলেন । ওখানেও উনি একটা মসজিদে ইমামের জব করতেন। মসজিদের ইমাম হলেও উনি জেনারেল লাইনেও উচ্চ শিক্ষিত ছিলেন।
রামাদানের এক মাস আগে উনি প্রেগন্যান্ট স্ত্রী, ও তিন বছরের ছেলেসহ এখানে চলে আসেন।অল্প কিছুদিনেই সবাই উনাকে পছন্দ করে আগের ইমামের তুলনায়।
রামাদানের এক সপ্তাহ পর উনার পেটে ব্যাথা হলে উনি হাসপাতালে যান। প্রাথমিক টেষ্টের পর বলা হয় উনার গলব্লাডারে স্টোন আছে। আরো কিছু টেষ্টের পর বলা হয় উনার ক্যানসার। ক্যানসার গলব্লাডারে শুরু হয়ে এখন উনার সারা শরীরে ছড়িয়ে পরেছে । উনি বড়জোর তিন, চার মাস বাঁচবেন।
এরপর উনাকে প্রায় এখানে একমাস হাসপাতালে রাখা হয় কিছু আইনগত কারনে এখানকার হাসপাতাল উনাকে ইটালীতে হাসপাতালে ফেরত পাঠান।
দিন দিন উনার অবস্থা খারাপ হতে থাকে কারন উনার ক্যানসার যে অবস্থানে ছিল তার কোন চিকিৎসা ছিল না। এদিকে উনার স্ত্রীরও ডেলিভারীর সময় ঘনিয়ে এসেছে।উনার স্ত্রীকে একই হাসপাতালে উনার পাশের রুম দেয়া হয়।
সবই আল্লাহর ইচ্ছা, গত সাত তারিখে উনার স্ত্রী একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন তার সাত মিনিট পরই উনি মারা যান।
আমরা আল্লাহর কাছ থেকে এসেছি আবার আল্লাহর কাছেই ফিরে যাব খুবই সত্যকথা, কিন্ত যতবারই ভাবি পাশাপাশি রুমে, একরুমে স্বামী মৃত্যু যন্ত্রনায় ছটফট করছে আরেক রুমে স্ত্রী প্রসব বেদনায় কাতরাচ্ছে এই সংকটময় মূহুর্তে কেউ কারো পাশে থাকতে পারলো না, কেউ কাউকে দেখতে পেল না
।মেয়ের জন্ম হল বাবার মৃত্যু হল। বাবা দেখে যেতে পারলেন না প্রিয় সন্তানের মুখ আর মেয়েটা কখনো দেখতে পাবে না তার জন্মদাতা বাবাকে। যতবারই একথা গুলো ভাবি আমার চোখে পানি চলে আসে।
২য় : এটা আপনারা সবাই আমার চেয়ে ভালো জানেন কারন আমি এই ব্লগ থেকেই জেনেছি, আর কিছুটা আমাদের বাসার খাবার টেবিলের আলোচনা থেকে । সেটা হল আবরার ফাহাদের মৃত্যুর ঘটনা ।
বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে আমার তেমন জানা নেই খুব একটা জানার আগ্রহও নেই ।কিন্ত যতবারই ভাবি একটা ছেলেকে কয়েকটা ছেলে মিলে পিটিয়ে পিটিয়ে মেরেই ফেল্ল। মানুষ কতটা নির্মম নিষ্ঠুর হলে এটা করতে পারে। একটা ছোট পোকা পিপড়া মারতে গেলে ও ভয় হয় এই পিঁপড়াটাকে আমার আংগুলের ডগা দিয়ে কয়েক সেকেন্ডেই মেরে ফেলতে পারব কিন্ত তার জীবনটা কি আমি শত চেষ্টাতেও ফিরিয়ে দিতে পারব! আর একটা ইয়ং ছেলেকে ওরা পিটিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেল্ল। একটু পানি খেতে চেয়েছিল তাও তাকে দেয়া হয়নি। আহারে- না জানি কত আকুতিই না আবরার ওদের কাছে করেছিল আমাকে মেরো না, আমাকে ছেড়ে দাও, কত কান্নাই না করেছিল, কত কষ্ট না জানি সে পেয়েছে। সে আমার আপন কেউ না,তাকে চিনিও না জানিও না তবু যতবার এই নির্মম হত্যার কথা মনে হয় চোখের পাতা ভিজে যায়।
মানুষ মরনশীল, কোন না কোন ভাবে মানুষ মরবেই কিন্ত এরকম মরন যেন কারো না হয়।যদি আবরারের এই মৃত্যু তাকে অমর করেছ শুধু দেশ নয় বিদেশেও মানুষ তার জন্য চোখের পানি ফেলছে তার জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া কামনা করছে।
আর তার হত্যাকারীরা এই দুনিয়াতে তাদের বিচার হোক বা না হোক, বিচারে তারা শাস্তি পাক বা না পাক, তারা নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস করেছে, এই জীবন নিয়ে বেঁচে থাকলে তাদের জন্য আছে ল্যান্ছনা, গন্জনা আর পরকালে তো আছেই ।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ভোর ৫:৪৫