সারা বছরে মানুষ কত রকম অসুখবিসুখেই না ভোগে ! ছোটখাটো হাঁচিকাশি থেকে হাত পা ভাঙ্গা পর্যন্ত (এরপরে আর না-ই বা গেলাম) আমারও ভাংতি এইসব রোগের লিস্টিটা ছোট না; কিন্তু নিজে নিজেই এমবিবিএস জ্ঞান প্রয়োগ করে বিশেষ কিছু রোগের বিশেষ বিশেষ প্রতিষেধক আবিষ্কার করেছি। আবিষ্কার বলাটা অবশ্য ভুল হবে [চামে দিয়া ভাব নিলাম আর কি!
কিঞ্চিত জ্ঞানের ব্যবহার করে এখন পর্যন্ত সেইসমস্ত পিচ্চি রোগ এখনও ঠেকায় যাচ্ছি প্রতিদিন। চলুন দেখে নিই আমার জ্ঞানের কিঞ্চিত ব্যাবহার--
ঘাড় ব্যাথা - এই ঝামেলায় ভোগেন নাই এমন মানুষ দুনিয়ায় কমই আছে; রাতে আরাম করে শুলেন আর সকালে উঠে দেখেন এক দিকে সুক্ষ ব্যাথা। এরকম হলে আমি কি করি ?
সকালে উঠি, যদি টের পাই কোন একদিকে মাথা ঘুরালে ব্যাথা করছে; ব্যাস, ভুলে যাই যে আমার মাথা ওইদিকে ঘোরানো সম্ভব। এরপরের ৪/৫ ঘণ্টা ভুলেও মাথা এদিক ওদিক নড়িয়ে চড়িয়ে গবেষণা করা পুরোপুরি বাদ। মনে রাখবেন, যতই আপনি মাথা নাড়াচাড়া করবেন, ততই ব্যাথা আপনার ঘাড়ে জেঁকে বসবে। দুপুর কিংবা রাত্রে দেখবেন ব্যাথা ৯০% ফিনিশ !
গরমের জ্বর- প্রচণ্ড গরমে অনেকেরই জ্বর আসে, আর সাধারণত সিজন চেইঞ্জের সময় এই জ্বর হয়ে যায় মহামারী !আমরা সবাই কিন্তু জ্বর আসার আগমুহূর্তে টের পাই, শরীরের কিনাকাঞ্চিতে ব্যাথা, চোখের পাতায় খুন্তির ছ্যাকা দেওয়ার মত গরম হয়ে যাওয়া। জ্বর যখন এমন করে দরজায় টোকা দিচ্ছে, তখন আমি যাই বাথরুমে। কমপক্ষে ৩০ বার ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুই, চোখ ধুই!
আহ, কি শান্তি ! জ্বর বাবাজি কে এইবার বিদায় করা গেল ! তবে জ্বর চলে আসলে এই সিস্টেম চলবে না ! তখন নাপাই ভরসা !
নখে ছ্যাচা খাওয়া - দরজা, ড্রয়ার, গেট লাগানোর সময় নখে ধুমসে ছ্যাচা খান নাই এরকম লোক দুনিয়ায় পাওয়া দুষ্কর। বড়ই পেইনের জিনিস, কলম ধরা যায়না, আঙ্গুলে চাপ দেওয়া যায়না, নখের মধ্যে রক্ত জমে লাল হয়ে যায় !
তাই আমি নখে ছ্যাচা লাগলে ইনস্ট্যান্টলি দাঁত দিয়ে নখে প্রচণ্ড জোরে চাপ দেই; তাতে করে ব্যাথাটা পার্মানেন্ট হতে পারেনা [আমার যুক্তি ] এরপর আরেক হাতের দুই আঙ্গুল দিয়ে নখটা জোরে চাপ দিয়ে টেনে ধরে রাখি। আহ, ব্যাথা কমে যাচ্ছে ! এরপরে ইচ্ছা হইলে বরফ লাগাই, নাইলে নাই ।
পার্টিতে অতিভোজ- এইটা অবশ্য উদরাময় সংক্রান্ত জটিলতা না। অনেকে পার্টিতে গিয়ে ইচ্ছেমত হাড্ডিগুড্ডি, মাছের লেজ মাথা চুষে চিবিয়ে একাকার করে ফেলেন, এরপর দাঁতের কিনাকাঞ্চিতে ইয়ে- মানে বুঝতেই তো পারতেছেন। তারপর টুথপিক নিয়ে জটিল অপারেশন, এইদিক দিয়ে গুঁতা- ওইদিক দিয়ে গুঁতা ব্যাপারটা বড়ই নির্মম! এইজন্যে কি করবেন?
দোকানে যান, একটা চিউইংগাম কিনেন, এরপর আচ্ছামত চাবাইতে থাকেন, সব বাইর হইয়া যাবে শুধুশুধু টুথপিক দিয়ে টুথের ক্ষতি করা লাগবেনা !
বিঃদ্র-- উপরোক্ত উপদেশনামা অনুসরণের দায়দায়িত্ব সম্পূর্ণ রোগীর নিজের, কোনরূপ দুর্ঘটনার জন্যে মহান এই উপদেশকারি কোনক্রমেই দায়ী থাকিবেন না !
আর একটা কথা, রোগশোককে কখনোই অবহেলা করবেন না, যেকোন ডাক্তারের কাছে গেলেই হবে না, ভালো ডাক্তারের কাছে যাবেন ! আর উলটাপালটা ঔষধ খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন !
আগাম শুভ নববর্ষ ২০১৩!!!
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ২:৫২