১.
এই নীল শোনো
-হুম শুনছিতো বল?
- চলো না কাল ঘুরে আসি
- কোথায়?
- কাশফুল দেখতে যাব। চল না যাই। আমি কখনো কাছ থেকে কাশফুল দেখিনি। আর আমি চাই আমার মনের মানুষটাকে সাথে নিয়ে
কাশফুল দেখতে।
- কাল পারবনা।
- তাহলে পরশু?
- আরে এখন নানান টেনশনে আছি, এখন পারবনা। বিকেলে এক বন্ধুর বাসায় যাব।
আর সব বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিব। সবাই মিলে ঘুরতে যাব আমরা তাই প্ল্যান করছি।
- ও ও ও
- মন খারাপ করলে?
- নাহ!
- মেঘ তোমাকে নিয়ে সামনের বছর যাব কেমন?
- চোখ দুটি জলে ঝাপসা হয়ে আসল মেঘের। নীলের এই না করা একদম মেনে নিতে পারছেনা মেঘ, কারন ওর নীলের কাছ থেকে না শুনতে ভালো লাগেনা। নীলকে এতো ভালবাসে ও। কষ্ট পেলেও মেঘ নীলকে একদম বুঝতে দিল না যে ও কষ্ট পেয়েছে। কন্ঠটা ক্রমশঃ ভাড়ী হয়ে আসছে মেঘের । তাই দেখে মেঘ নীল কে বলল
-আচ্ছা ঠিকাছে ফোন রাখছি।
মেঘ আর নীল কাশফুল দেখতে গেল। মেঘতো কাশফুলের কাছে গিয়ে চিৎকার শুরু করল। বাচ্চাদের মত দৌড়াতে লাগল। নীল এই দেখে হাসছিল আর বলছিল
- আরে তুমিতো পাগল হয়ে গেছ?
- হুম আমি পাগল হয়ে গেছি আমি পাগল হয়ে গেছি। এই নীল তোমার হাত দুটি দাওনা?
- ওরে বাবা! এই মেয়ে তোমার মাথা ঠিক আছে?
- ধরো না আমার হাত দুটি! নীলের হাত দুটি ধরে চিৎকার দিয়ে বলে মেঘ “ আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি নীল অনেক ভালোবাসি”।
ফোন বাজার শব্দে মেঘের ঘুম ভেঙ্গে যায়। একি এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিল নাকি? এতো সুন্দর একটা স্বপ্ন ইস! নষ্ট হয়ে গেল। ফোন হাতে নিয়ে দেখে লিসার কল।
-হ্যালো
- হ্যালো আপু।
-হুম! বলো সোনা।
-একি আপু তুমি কি ঘুমাচ্ছিলে?
- হুম! তোমার ফোন পেয়ে ঘুম ভাঙল।
- সরি আপু।
- আরে ধুর! সরির কি আছে?
- কেমন আছ আপু?
- ভালই আবার ভালো নেই ।
-কেন কি হয়েছে? ভাইয়ার সাথে সব ঠিক থাক আছেতো?
- হুম! তা আছে।
- তোমারা কোথাও ঘুরতে যাওনা।
- নাহ! ওকে আজ বলেছিলাম কাশফুল দেখাতে নিয়ে যেতে কিন্তু রাজি হয়নি।
বলেছে আগামী বছর নিয়ে যাবে ।
- কি বল? ভাইয়াকে আবার বলে দেখ।
- নাহ , আর বলব না। অনেক বলেছি আমি। আর সময় ও পাচ্ছেনা।
কিন্তু বিশ্বাস করো আমার না খুব যেতে ইচ্ছে করছিল।
ও যখন না করল আমার চোখ দুটি জলে ভিজে উঠেছে। ও জিজ্ঞেস করছিল যে আমার মন খারাপ হয়েছি কিনা? আমি কি বলব আমার মন খারাপ হয়েছে? ও কেন আমাকে বুঝে না? আমি কি খুব বেশি কিছু চেয়েছি ওর কাছে? ছোট্ট একটা আবদার করেছি।
সারাদিন মেঘ মন খারাপ করে থাকল। ভালোবাসার মানুষটির কাছ থেকে না শুনতে একদম ভালো লাগেনা। কত আশা করে ছিল ওকে নিয়ে কাশফুল দেখতে যাবে কিন্তু নীল মেঘের মন টাকে একটুও বুঝেনা। শুধু বলে এই কাশফুল টুল দেখার কি আছে, শুনি? তাই শুনে মেঘ অবাক হয়ে বলে কি বল এসব? কত সুন্দর লাগে জানো?
- হুম! শোনো মেয়ে আমি তোমার মত রোমান্টিক নই। ওসব আমাকে টানে না। হিহিহি
- একদম হাসবেনা তুমি। কি বিচ্ছিরে করে হাসছ। তুমি কি আমাকে ব্যঙ্গ করে হাসছ?
- নাতো যান। ওকে যাও মন খারাপ করোনা আগামী বছর নিয়ে যাব।
- না তোমাকে নিয়ে যেতে হবেনা। আর কোনদিন আমি বলব না।
২.
-সব বন্ধুরা বাসায় আসছে কাল আমরা সবাই মিলে বেড়াতে যাচ্ছি।
- আচ্ছা খুব ভালো কথা। ইস তোমরা ছেলেরা কত মজা করো। ইচ্ছে হলেই যেদিকে ইচ্ছে চলে যেতে পারো।
- কেন মেয়েরাও যেতে পারে। আর আমার বান্ধবীরাও কিন্তু যাচ্ছে আমাদের সাথে।
-ও ও , তাই নাকি?
- অনেকদিন পর বন্ধুরা এক হচ্ছি।
-আচ্ছা। আমাকেও সাথে নিয়ে যাও না।
- আরে আগে বান্ধবীরা সকালে আসুক , তারপর সিদ্ধান্ত হবে যাব নাকি?
- মানে? এই না বললে যাচ্ছ?
-হুম যাব, তবে সেটা সকালে দেখা যাবে। রাত হইছে তুমি ঘুমাও।
-আর একটু কথা বলি? আমার ফোন রাখতে ইচ্ছে করছেনা।
- আরে সবাই আছেতো। রাখছি।
- আচ্ছা। আল্লাহ হাফেয।
নীলটা এতো বেরসিক কেন? আমাকে সাথে নিলে কি হয়?
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই নীল কে ম্যাসেজ দিল মেঘ। “ আমাকেও সাথে নিয়ে যাওনা? তোমাদের সাথে যেতে খুব ইচ্ছে করছে”।
নীল- আচ্ছা আমি এখনও উঠিনি। আগে উঠি ওরা ফ্রেশ হবে। আর এছাড়া আমাদের বান্ধবীরাও আসেনি। আমি তোমাকে জানাচ্ছি”
মেঘ মনের আনন্দে রেডি হয়ে বসে রইল নীলের ম্যাসেজের জন্য। আধঘন্টা হয়ে যাওয়ার পর মেঘ নীল কে ফোন দিল কিন্তু নীল ফোন ধরল না। ম্যাসেজ দিল তাও উত্তর নেই কোন। মেঘের মনে হটাৎ এক রাশি মেঘ এসে জমা হল। চোখ দুটি ঝাপসা হয়ে আসছে।
মেঘের বোন বার বার বলছিল
- কিরে নীল কিছু বলল?
- মেঘ কোন জবাব দিল না।
সব সাজসজ্জা মুছে ফেলল। যা বুঝার বুঝে গেল মেঘ। মেঘের এই ভেবে খারাপ লাগছে যে আমাকে সাথে নিবে না ভালো কথা কিন্তু একটা বার কি ওর বলা উচিত ছিল না যে ‘তোমাকে নেয়া যাচ্ছেনা বা নিতে পারছিনা”
সারাটা দিন কাঁদল মেঘ। নিজেকে কিছুতেই বুঝাতে পারল না। এর মাঝেই লিসার ফোন । লিসা মেঘের পরিচিত ছোট একটা বোন।
- হ্যালো আপু
- হুম! বলো
- একি! আপু তুমি কি কাঁদছ? কথা বলছ না কেন আপু?
- হুম বলো শুনছি
- কি হয়েছে আপু? ভাইয়ার সাথে কিছু হয়েছে?
লিসা কে সব বলল মেঘ। সব শুনে লিসা মন খারাপ করল, আর বলল
- আপু তুমি ভাইয়াকে অনেক ছাড় দাও। আর দিবেনা। এই আচরনটা তার করাটা কি ঠিক হইছে? তুমি কিন্তু ভাইয়া কে আচ্ছা করে বকে দিবে কেমন?
- ও ফোন দিয়েছিল। আমি ধরিনি। আমার এতো কষ্ট লাগছে। ও যদি আমাকে বলত যে নিবে না তাহলে খারাপ লাগত না। এমন আচরন কেন করল?
- তুমি কিন্তু অনেক রাগ করবা ভাইয়ার সাথে
- আমি ওকে অনেক ভালোবাসি কিন্তু আমি জানি ওকে দেখলে , ওর সাথে কথা বললে আমার সব রাগ পানি হয়ে যাবে।
- আপু তোমাকে দিয়ে না কিচ্ছু হবেনা। মেজাজ খারাপ লাগে।
- হিহিহি
- যাক অবশেষে কন্যার মুখে হাসি ফুটেছে।
৩.
একদিন নীল বলেছিল তার পরিবার থেকে খুব কম ভালোবাসা পেয়েছিল। সেটা মেঘ খুব মনে রাখল। আর তাই সে সব সময় নীল কে অনেক ভালোবাসে। নিজে হাজার কষ্ট পেলেও নীলের সাথে ঝগড়া বা রাগ করতে মেঘের ভালো লাগেনা। নীলের সবসময় খোঁজ খবর রাখত, কি করলে ভালো হবে তা বলত, নীলও লক্ষী ছেলের মত সব শুনত।
আজ নীল আর মেঘের দেখা হল। মেঘতো মুখটা গম্ভীর করে রাখল। নীল একটু ভয় পাচ্ছিল।
-কি রাগ করে আছ?
-জানিনা।
- হুম! তার মানে রেগে আছ। হাহাহা
- হাসবানা বলেই মেঘ নিজেও হেসে দিল
নীল হটাৎ বলে –
-এই এতো ভালোবাসো কেন? কিভাবে বাসো? তুমি পাগল না হয় ভণ্ড। তাই শুনে মেঘ হেসে বলেছিল
- হুম! পাগলতো তোমাকে ভালোবেসে পাগল হয়েছি তবে ভন্ড নই। হিহিহি
-হুম। সত্যি মেঘ তুমি আরো আগে কেন এলেনা আমার জীবনে? আরো আগে আসলে আমার জীবনটা অনেক সুন্দর হত।
- হিহিহি! তাই নাকি?
- আমি জানি তোমাকে পেলে অনেক হ্যাপি হবো।
-হুম! আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি নীল। আমাকে কখনো ছেড়ে যেওনা।
- এই তোমার হাত ধরে বলছি, বিশ্বাস করো আমি তোমাকে কোনদিনও ছেড়ে যাবনা। প্রমিজ।
মেঘের চোখ দুটি খুশিতে জলে ভরে উঠে।
- এই মেয়ে কি হচ্ছে এসব?
- নাহ কিছুনা
- তুমিতো পচা খালি আমাকে কষ্ট দাও। তুমি জানো যে তোমার ম্যাসেজ না পেলে আমার ভালো লাগেনা। ব্যস্ত থাক আর যাই থাকো অন্তত আমাকে একটা উত্তরতো দিতে পারো?
- -হুম।
- তোমার চুপ করে থাকাটা আমাকে কষ্ট দেয়। আমার বুকের ভেতর যন্ত্রণা হয়। বিশ্বাস করো নীল আমি পাগল হয়ে যাই সেই যন্ত্রণায়।
- তোমাকে আর কষ্ট দিবনা সোনা। সরি।
- কান মলা
- আহ লাগছেতো ছাড়! আমার ডান কানে সমস্যা আছে ।
- ও তাই নাকি। সরি।
৪.
-মেঘ কি করো
- টিভি দেখছি
- মেঘ জানো আজ বাস থেকে কাশফুল দেখলাম, এতো সুন্দর মাই গড। আমি আগে কখনই এভাবে দেখিনি আর ভাললাগেনি। খুব সুন্দর লাগছিল। আর তখন তোমার কথা মনে হচ্ছিল।
- ঢং! তোমার না কাশফুল ভালো লাগেনা, তো এখন ভালো লাগল কিভাবে?
- সত্যি অনেক ভালো লেগেছে। আর তখন আমি তোমাকে কল্পনা করছিলাম। তুমি থাকলে পাশে খুব ভালো লাগত।
- তাই বুঝি?
- হুম! তোমাকে নিয়ে আসব একদিন। তবে এসব জায়গায় গাড়ি ছাড়া আসা যায়না।
- গাড়ি লাগবেনা সোনা। আমাকে নিয়ে যাও প্লিজ?
- আচ্ছা দেখি, কারন সময় পাচ্ছিনা। আর তোমার নিরাপত্তার একটা ব্যপার আছেনা? জায়গায়টা কতটা নিরাপদ মেয়েদের জন্য সেটাও দেখতে হবে। আমার বান্ধবী থাকলে চিন্তা করতাম না । কিন্তু তুমি বলে কথা। তোমার নিরাপত্তা আমার কাছে সবার আগে। আর জানোতো আমার ব্যবসা ভালো যাচ্ছেনা। খুব বাজে সময় যাচ্ছে। আমার জন্য দুয়া করো।
- তোমাকে এটা বলতে হবেনা। নামাজ পড়ে আমি দুয়া করি। ( মনে মনে বলে মেঘ – নীল তোমার জন্য কতটা দুয়া করি আমি জানি আর আল্লাহ জানে। প্রতিটা মুহুর্ত আমি দুয়া করি তোমার জন্য, তোমার মঙ্গলের জন্য)
নীল ভেবনা আমি রোজা রেখে দুয়া করব।
- আরে পাগল নাকি তুমি?
- তোমাকে রাখতে হবেনা। আমিই রাখব দেখি
- কেন আমি আছিনা। আমি রোজা রাখব।
- আরে প্রব্লেম আমার তুমি রোজা রাখলে হবে?
- আমিতো তোমাকে আলাদা কেউ ভাবছিনা। তুমিতো আমার। তোমার ভালো মন্দ তো আমারো ভালো মন্দ, তাই না? আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রোজা রাখব আর তোমার জন্য দুয়া করব। আল্লাহ ভরসা টেনশন করো না। নামাজ পড় সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
৫.
আজ নীলের বার্থডে। হরতাল থাকাতে মেঘ নীলের সাথে দেখা করতে পারিনি। কিন্তু একটু পর পর ফোন দিয়ে উয়িশ করছিল। নীল ও খুশি হচ্ছিল। নীলের বাসায় ছোটখাট একটা পার্টির আয়োজন করা হল। সারাদিন নীল ব্যস্ত থাকল কাজে। এদিকে মেঘ ওকে আর ফোন দিচ্ছিল না। রাতে সব মেহমান যাওয়ার পর নীল ফোন দিল। বলল কি মহারানী রাগ করেছেন নাকি?
- নাগো রাগ করিনি। আমিতো জানি তুমি ব্যস্ত ছিলে।
- সবাই মাত্রই গেল। খুব ক্লান্ত লাগছে। শোনো তোমার জন্য কেক রেখেছি।
- তাই? রাখতে হবেনা।
- হুম! আমার জন্মদিনের কেকে আর তুমি খাবে না এটা হয়? আমি সব খাবার রেখে দিয়েছি তোমার জন্য।
- তোমার গিফট কেনা হয়নি। হরতালে দোকান সব বন্ধ।
- তো গিফট এখন দাও
- মানে?
- মানে গিফট দাও এখন
- পাজি ছেলে!
- কি বললাম? হাহাহা
- আচ্ছা বলো নীল তুমি কি সাইজের শার্ট পরো?
- আরে তুমি ওইসব কিনতে যেয়ো নাতো? আমার কারো কিছু পছন্দ হয়না।
- এটা কিছু হল? গিফট দিবনা?
- দেয়া লাগবেনা কিচ্ছু ঝামেলা করবানা। আচ্ছা একটা গান শোনাও না?
মেঘ নীল কে গান শোনায়
“ তুমিতো এখন আমারি কথা ভাবছ
দুটি চোখের তারায় শুধু আমাকেই দেখছ
তুমিতো এখন আমারি কথা ভাবছ
আমি হাজার কথার মালা গেঁথে চেয়ে আছি
শুধু তোমারি পথে
এই প্রহরগুলো জানি তুমিও গুনছ
.......................................”
-চমৎকার মেঘ। তুমিতো ভাল গান করো। এতো রাতে মিষ্টি লাগল গানটা। যদিও এসব গান আমি বুঝিনা। কিন্তু সত্যি এখন ভালো লাগল খুব । থ্যাংক ইউ ।
- শোনো নীল, আমাদের বিয়ের রাতে মানে বাসর রাতে একটা গান শোনাবো।
- কি মানুষ শুনবেতো। হাহাহা
- শুনলে শোনবে। আর চাঁদনী রাতে বাসার ছাঁদে উঠে চাঁদ দেখব।
- তোমার কোলে মাথা থাকবে
- হিহিহি। হুম! আর আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিব। আর মিষ্টি করে গান শোনাবো।
- মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেতো ঘুম পাবে। আর আমি ঘুমালে তোমাকে ভুত এসে ধরবে। হাহাহা
- ধ্যাৎ কিজে বলনা?
- তুমি যেই রোমান্টিক ! আল্লাহই জানে আমার কপালে কত মাইর আছে?
- কেন?
- কারন আমিতো তোমার মত না । তুমি গান করবা আর আমি দেখা যাবে ঘুমিয়ে পরেছি। আর তারপর তুমি পরদিন কইবা বালিশ নিয়া ড্রয়িং রুমে যাইয়া ঘুমাতে।
- হিহিহিই। পাজি ছেলে।
খুব সুন্দর কিছু মুহুর্ত মেঘ আর নীল কাটিয়েছিল। ভালোবাসার স্রোতে দুজন ভাসছিল। কিন্তু নিয়তি বলে যে একটা কথা আছে।
৬.
ইদানিং নীল একদম ফোন ধরেনা মেঘের । মেঘ শুধু কাঁদে। তীব্র যন্ত্রণা হতে থাকে বুকের মাঝে। রিং হয় কিন্তু নীল ধরেনা। ম্যাসেজের উত্তর মাঝে মাঝে দেয় ।
নীল জানায় ওর ব্যবসা পুরোটাই লস হয়েছে। একদম শেষ হয়ে গেছে সব। নীল একদম ভেঙ্গে পড়ে। কিছুদিন নিজের মত করে কাটায় নীল। আর মেঘ শুধু কাঁদে আর কাঁদে। নীল মেঘ কে বলে নিজেকে নিয়ে ভাবতে। তোমাকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করব না।
মেঘ শুধু বলে তুমি ছোট খাট কিছু করলেই হবে । আমার এতো চাওয়া নেই নীল। তোমাকে চাই আমি। আমার চাওয়া খুব বেশি না।আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করব নীল।
নীল শুধু বলে মেঘ তোমাকে বলার মত কিছু নেই আমার তাই তোমার ফোন ধরিনা, উত্তর দেই না। ভুলে যাও, আর নিজেকে নিয়ে ভাবো।
আমাকে যদি পারো ক্ষমা করো।
এখনও প্রতিটাক্ষন মেঘ ভাবে নীল আসবে ফিরে তার কাছে। মধ্য রাতে প্রায়ই ঘুম ভেঙ্গে যায় মেঘের । চোখের জলে বুক ভাসায়। প্রতিটা রাত মেঘ স্বপ্ন দেখে নীলকে। নীল ফিরে আসে তার স্বপ্নে। স্বপ্নে নীল মেঘের কাছে ম্যাসেজ লিখে। ঘুম ভেঙ্গে পাগলিনীর মত মেঘ মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে নীলের কোন ম্যাসেজ আসল কিনা।
মেঘের বন্ধুরা মেঘকে অনেক বুঝাল কেঁদে লাভ নাই। যত শক্ত হতে পারবে ততই নাকি লাভ নিজের। মেঘও ভাবে শক্ত হবে। কিন্তু পারেনা।
মিথ্যে জবাব দেয় বন্ধুদের ‘ভালো আছি আমি’ ।
কিন্তু বুকের ভেতর যে যন্ত্রণা হয় সেটা কাউকে বলেনা মেঘ। অভিনয়ে সে এখন দক্ষ হয়ে উঠছে।
মেঘ সেদিন রোজা রাখল আর অফিস শেষে বাসায় ফেরার পথে সারাটা পথ কাঁদল। কারন এখন কেউ তাকে বলে না ইফতার নিয়ে গাড়িতে উঠ। এখন কেউ তাকে জিজ্ঞেস করেনা ‘ বাসায় পৌছাইছ, কেউ বলে না ভালোবাসি জান, কেউ বলে না ভালো থাক’ কেউ বলেনা অনেক রাত হইছে ঘুমাও, সকালে অফিস আছে শরীর খারাপ করবে রাত জাগলে”।
বেদনার নীল রঙ্গে সেজেছে মেঘ। বুকের ভেতর বড় বড় ক্ষত হয়েছে। সামনের বছরে আদৌ মেঘের কাশফুল দেখা হবে কিনা জানেনা। তবে সব ইচ্ছা যেন মরে গেছে এখন। মেহেদি রাঙ্গা হাতে বধু সেজে প্রিয় মানুষটির ঘরে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল। সে ইচ্ছে এখন নেই আর। তার হাতটি ধরে সমদ্রের পাড়ে হাঁটার ইচ্ছে টাও মরে গেছে। তার চোখে চোখ রেখে ভালোবাসি আর বলা হবেনা।
বেদনার বালুচরে কি বাসা বেধেছিল মেঘ? মেঘের জীবনে এখন শুধুই কালো মেঘের বিচরন। কালো মেঘ শুধুই কালো মেঘ চারপাশে। হয়ত একদিন মেঘ সরে গিয়ে নীল আকাশ দেখা যাবে। সব আধার সরে গিয়ে হয়ত সুর্য উঠবে একদিন মেঘের জীবনে।
তীর বেধা পাখি আর গাইবেনা গান
ভুলে গেছে জীবনের হাসি কলতান
হাসি ছিল , গান ছিল সাথী ছিল সাথে
বুঝিনিতো তীর ছিল নিয়তির হাতে
দুদিনের মধুমেলা হল অবসান।