এদেশ নাকি স্বাধীন হয়েছে নতুনভাবে, এদেশের মানুষ নাকি স্বাধীনতার আস্বাদ পাচ্ছে। রিসেন্টলিই কিছু পোস্ট ভাইরাল হয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে, কক্সবাজারে রাতে সমুদ্র সৈকতে একা ঘোরাফেরা করা কিছু মেয়েকে বেশ্যা, পতিতা বলে আখ্যায়িত করে তাদের হেনস্তা করা হচ্ছে। কেউ কেউ দেখলাম লাঠিসোটা নিয়ে পুরোদস্তুর মারামারি পর্যায়ে চলে গিয়েছেন। বাহ! খুব স্বাধীনতা!
এ বিষয়ে আমি কয়েকটা কথা বলব।
প্রথমত, অবশ্যই মেয়েগুলোরই দোষ ছিল। ওদের এতো সাহস হয় কি করে একা একা সমুদ্র সৈকতে ঘোরাফেরা করে? দেশ হইল মুসলিমপ্রধান দেশ, সেখানে ওরা ধর্ম না মেনে রাতবিরাতে ঘোরাঘুরি করবে তাও একা একা! অশ্লীলতার চরম মাত্রা যারে কয়! ওরা অন্য ধর্মের হইলেও ওদের উচিত ছিল ইসলাম ধর্ম অনুসরণ করা। ধর্মকর্ম মানব না এতো বড় সাহস হয় ক্যামনে? আসতাগফিরুল্লাহ! প্যান্ট টি শার্ট পড়ে সৈকতে ঘোরাফেরা করে সৈকতের পরিবেশ নষ্ট করার অধিকার ওদের কে দিয়েছে? ওদের অবশ্যই উচিত ছিল হেজাব নেকাব পড়ে স্বামীর সহিত ঘোরাফেরা করা। ( যদিও এর পূর্বে হাজবেন্ডের সাথে ঘুরতে গিয়ে মেয়েকে রেপ করার কাহিনীও এদেশে ঘটেছে)। ওইখানেও মেয়েটিরও কোন দোষ ছিল এ নিয়ে আমি নিশ্চিত।
দ্বিতীয়ত, মেয়েগুলো নিশ্চিত বেশ্যা অথবা পতিতা ছিল। ভালো মেয়েরা তো সন্ধ্যার পর বাসার বাইরে বের হয়না। ওরা সৈকতে খদ্দের ধরার জন্য বসে ছিল। এইসব মেয়েলোকের জন্য ভালো ছেলেগুলো নষ্ট হয়ে যায়। তাই ওদেরকে শক্ত হাতে দমন না করলে এদেশের হাজারও সোনার ছেলেরা বিপথগামী হয়ে যাবে, তাতে ছেলেদের কোন দোষ নেই। সব দোষ ওই সৈকতে বসে থাকা বেশ্যা, পতিতা মেয়েগুলোর। তার উপর এতো টাইট ফিট প্যান্ট শার্ট পড়লে ছেলেদের নজর তো পড়বেই। ছেলেদের আর দোষ কি! সব দোষ ওই মেয়েদেরই।
তৃতীয়ত, সবচেয়ে বড় দোষ ওরা মেয়ে হয়ে জন্মাইল কেন?? ছেলে হয়ে জন্মাইলে তো এই বেশ্যা, পতিতার ট্যাগ নিয়া লাগতো না। সৈকতে একা বসে থাকার জন্য খদ্দের জোটানোর অভিযোগ আসতো না। এইযে মেয়ে হয়ে ওরা পাপটা করছে, এই পাপস্খলনের উপায় কি??
এ পৃথিবীতে বরাবরই সব দোষ মেয়েদের, সব পাপের একমাত্র পাপী মেয়েরাই। যুগে যুগে মেয়েদেরই তাদের সতীত্বের অগ্নীপরীক্ষা দিয়ে হয়, নিজের চরিত্র পরিষ্কার রাখার দায়ভার বয়ে বেড়াতে হয়। এদেশে সেই মাত্রাটা চরম। এদেশের মানুষ বরাবরই অন্যের বিষয়ে নাক গলাইতে পছন্দ করে, অন্যের জীবন নিয়ে গসিপ করা বা বানানো, কে কোন ধর্ম বিশ্বাস করে বা আদৌও সে ধর্মে বিশ্বাসী কিনা না জেনেই তাকে ধর্মের জ্ঞান দেয়া এবং জোরপূর্বক নিজের ধর্মে অন্যকে বিশ্বাস করানোর চেষ্টা করাকে তাদের নিজ স্বাধীকার চর্চা হিসেবেই ভাবে। ধর্ম একটি বিশ্বাস, আপনার ধর্ম আপনার বিশ্বাস, আপনি ডিফাইন করে দিতে পারেন না আপনার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটি কোন ধর্মে বিশ্বাস করবে বা সে কোন ধর্ম পালন করবে। আপনি শুধুমাত্র মেয়ে বলেই তাকে নষ্টা, পতিতা, বেশ্যা হিসেবে আখ্যায়িত করতে পারেন না। আপনি নিজ ধর্ম নিয়ে থাকুক, নিজের পছন্দমতো পোশাক পরিধান করুন, অন্যকে তার নিজের মতোন ধর্ম পালন করতে দিন, তার নিজের মতোন পোশাক পরতে দিন। মেয়েদেরকে মানুষ ভাবতে শিখুন। কক্সবাজারের ওই মেয়েগুলো যদি পতিতাও হয় ধরে নিলাম, তাও সে মানুষ। সে মেয়েগুলো পতিতা, বেশ্যা, তাই তারা অচ্ছুৎ, তাদের সৈকতে বসা পাপ, কিন্তু রাতের আধাঁরে ওই মেয়েগুলোকে যারা হোটেলে নিয়ে যায় তারা পাপী হয়না? তাদের চরিত্রহনন হয়না?? কখনও দেখলাম না হোটেলের রেটে ওই ছেলেগুলোর মুখ দেখাইতে, সব মুখ দেখায় এই নষ্টা মেয়েলোকদের। কেন??
সে মেয়ে তার আগে সে একজন মানুষ এইটুকু ভাবতে আপনাদের এতো কষ্ট হয় কেন বলেন তো?? মেয়ে ভাবার আগে মানুষ হিসেবে ভাববেন এইটুকু কি খুব বেশি চাওয়া???
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৪০