যা কিছু গড়িয়া দিস ভেঙে ভেঙে যায়,
সব-তাতে হাত দেয় মৃত্যু সর্বভুক।
- অক্ষমা,সোনার তরী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
বছরশতেক ধরিয়া আমার অবস্থা কবিগুরুর অক্ষমার এই দুই লাইনের মতোন হইয়া দাঁড়াইয়াছে। বছরশতেক কহিলাম তাহার দুইটি কারণ। প্রথমত, ছোটবেলা হইতেই আমি হিসাবে বড়ই আনাড়ি। সেই কারণেই হয়ত বছরের হিসাব করা হইয়া উঠেনাই। দ্বিতীয়ত, যেই বছরগুলো অতিবাহিত করিয়াছি তাহা আমার নিকট শতবর্ষ সমান। ঠিক এইকারণে ইহাকে আমি বছরশতেক কহিয়াই সম্বোধন করিব।
এই বছরশতেকে যে কাজেই হাত দিয়াছি, তাহাই কেমন স্থবির হইয়া গিয়াছে, হয়ত সেখানে বারংবার নিষ্ফল হইয়া ফিরিয়াছি। যেই স্বপ্নগুলো বুনিয়াছি উলের কাটাঁয় মমতায় আর যত্নে বোনা সোয়েটারের মতোন, সেইগুলো ঠিক হাত থেকে বেভুলে পড়িয়া যাওয়া থার্মোমিটারের মতোন ভাঙিয়া গিয়াছে, আর ছড়াইয়া গিয়াছে থার্মোমিটারের ভেতরে থাকা পারদগুলার মতোন, যেইগুলিকে শতইচ্ছা থাকিবার স্বত্ত্বেও আগের মতোন একত্র করিতে ব্যর্থ হইয়াছি। পুরাতন সম্পর্কগুলোর কোথাও যেন একখান সুর কাটিয়া গিয়াছে, ঠিক যেমন একতারার তার ছিড়িয়া গেলে আর সুর উঠানো যায় না। তবে সুর যে কিভাবে, কোথায় আর কখনই কাটিলো তা ঠিক ঠাওর করিতে পারি নাই। এখনও মাঝিমধ্যে সেই কাটা সুর খুঁজিবার চেষ্টা করি, সেইখানে সফলতা আমার দিকে উলটাপিঠ দেখাইয়া বসিয়া থাকে। এমন নয় যে আমি নতুন করিয়া নানান মানুষের সাথে সম্পর্ক নতুন করিয়া গড়িবার প্রয়াস করিনাই, করিয়াছিলাম বটে, তবে হঠাৎই দেখিতে পাই সেইগুলোরও মাদলের মতোন হুটহাট তাল কাটিয়া যায়। বড্ড বেসুরো তালে নতুন সম্পর্কগুলোও কয়েকদিন পর কেমন পাশ কাটাইয়া চলিয়া যায়, দেখা হইলে তাহাদের চাহনি দেখিয়া এরূপ প্রতীয়মান হয় যে আমারে তাহারা প্রথমদর্শন করিতেছে।
বছরশতেক এই বোষ্টমীর একতারায় কোন নতুন সুরও উঠেনা, এই বোষ্টমী কোন নতুন সুর বাধিঁবার পারে না। তবে কি বোষ্টমীর চেষ্টায় কোন ত্রুটি ছিল?
ছবি: গুগল
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মে, ২০২২ রাত ১:২৯