অরিত্রী তোমাকে নিয়ে আজ লাখো মানুষের ভাবনা। কোটি কোটি চোখে জল। শত শত প্রশ্নের জবাব নেই যেন। কেনো কেনো কেনো শুধুই প্রশ্নগুলি ঘুরে ফিরে জাগছে মনে মনে। সুষ্ঠ সমাধান বা সদুত্তর জানা নেই কারো। আমিও ভেবেছি। ভেবে ভেবেও যেন জবাব পাইনি কেনো? কেনো মানুষ এমন করে পালিয়ে যায় কেউ কেউ এই জীবন থেকে, এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে? এটাই আমার প্রথম প্রশ্ন। একটু ধৈর্য্য ধরে যে কোনো ভুল বা প্রতিকূলতার সাথে যুঝতে শিখে গেলেই আর নেই কোনো ভয়। ভুল তো হতেই পারে। মানুষ মাত্রই ভুল তবে তার মানে এই নয় যে সেই ভুলের মাশুল গুনতে হবে ভেবেই জীবন থেকে পালিয়ে যেতে হবে। বরং অরিত্রীরা আরও একটু ভাবো। খুঁজে নাও সফলতার সঠিক চাবিকাঁঠিটিকে।
আমিও একটি স্কুলে জব করি। আমার স্কুল ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল। এই স্কুলকে আমি দারুণ ভালোবাসি। আমার ধারণা আমাদের চাইতে বেশি কেউ স্টুডেন্টদেরকে এত কেয়ার করতে পারবেনা। আমাদের স্কুলেও মোবাইল আনা আলাউড না। শুধু ক্লাস ইলেভেন এবং টুয়েল্ভএর স্টুডেন্টরা মোবাইল আনতে পারে। তার আগে না। তবুও অনেকেই এনে ফেলে। এটাই স্বাভাবিক।
আমাদের পূর্বপুরুষ বা আমাদের পেছনের কথা যদি ভেবে দেখি তো দেখতে পাবো তখনও স্কুল পালানো অপরাধ ছিলো। সিগারেট খাওয়া বা পাঠ্য বহির্ভূত বই আনাও ছিলো মহা অপরাধের সামিল। এমন ধরনের নানা রুলস থাকার পরেও সেসব কিন্তু অনেকেই করতো। মার খেত, বকা খেতো। প্যারেন্টসদেরও অত্যাচার চলতো। রিতীমত অমানবিক ব্যাপার স্যাপার। যা চাইল্ড সাইকোলজীতে একেবারেই নিষিদ্ধ আজকাল।
গবেষনায় দেখা গেছে বাচ্চাদেরকে এমন অবান্তর অত্যাচারের কোনো মানেই নেই যা মোটেও ফলপ্রসু নয় বরং তাদেরকে বুঝিয়ে বলা ও বুঝাতে পারানো একটি রুলের সুফল বা কুফল সম্পর্কে বা নিয়ম মানতে শেখার অভ্যাসটাই আসল। এর দায়িত্ব প্রথমত পরিবার নামক বিদ্যালয়ের। তারপর স্কুল। কিন্তু প্রায়শই পরিবার সেখানে ব্যার্থ হয়, আজকাল তো কর্মজীবি মা বাবার কারনে এর আধিক্য আরও বেড়েছে। যাইহোক এই সব ক্ষেত্র প্রায়ই স্কুল তা শেখাতে পারে। এরপরও সমাজ থেকেও মানুষ অনেক কিছুই শেখে।
এই জন্য প্রয়োজন, প্যারেন্টস এবং টিচারস কো অপারেশন। একটা বাচ্চার ভালোর জন্য, তাকে কিছু শেখানোর জন্য দু'পক্ষের সহযোগীতার প্রয়োজন। মোবাইল না নেওয়া একটা রুল। তা পরিবার শেখাবে এবং বাচ্চা সেটা মানছে কিনা তা লক্ষ্যও রাখবেন। এরপর স্কুল তা পেলে তা বাজেয়াপ্তও করবে তবে বাচ্চা বা প্যারেন্টসকে অপমান বা অভিযোগের সূরে নয়। শুধুই বুঝাতে হবে এটা রুল আর কেনো রুল আর কেনো তা করা যাবেনা সেটাই। মেজাজ গরম করে বা অপমান করে নিজেদেরকে সুপিরিওর ভেবে নয়। এখানে আসল স্বার্থ বাচ্চাটার। বাবা মা এবং টিচার দুপক্ষের মনোবৃত্তিই হবে শিশুর উন্নয়ন! তার মানসিক ও শাররিক সুস্থ্য বিকাশ।
এখানে কিছু গড়বড় হয়ে যায় বলেই কিছু স্কুল ও টিচারদের নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
অরিত্রীর তোমার ঘটনায় আমার বার বার মনে হচ্ছিলো তুমি আর তোমার প্যারেন্টসের সাথে আসলে আমার কথা বলাই উচিৎ ছিলো তাহলে এমন ঘটনা হয়তো ঘটত না। আমি জানি এই কথা শুনে আমাকে অনেকেই ওভার কনফিডেন্ট ভাববে। এও সত্যি আমার স্কুল আর আমার শিক্ষার বিষয় আমাকে এটাই শিখিয়েছে হাউ টু কনভিন্স আ চাইল্ড এন্ড প্যারেন্টস ইন পজিটিভ ওয়ে।
আমি আমার স্কুল এবং আমার প্যারেন্টসের কাছে কৃতজ্ঞ এই কারণেই। তবে হ্যাঁ এই কো অপারেশনে যখন এক পক্ষের ঘাটতি থাকে তখনই ঘটে অনর্থ। আমি আমার অভিজ্ঞতাতে এমনও দেখেছি। হাজার বুঝিয়েও বুঝানো যায়না যখন কোনো প্যারেন্টসকে যে ঘাটতিটা আসলে কোথায় এবং আমাদের পরস্পরের প্রতি কি সহযোগীতা প্রয়োজন তখন সবই ভেস্তে যায়।
যাইহোক আমার স্কুলেও অনেক বাচ্চাই মোবাইল আনে। আমরা বাজেয়াপ্ত করি এবং প্যারেন্টকে অযথা ডাকিনা যদি না তারা একদম শিশু শ্রেনীর হয়। বড় বাচ্চারা নিজেরা বললেই শুধু প্যারেন্টস আসবে এবং তাদেরকে সেটা ফেরৎ দেওয়া হবে উইদাউট এনি ব্যাড বিহেব। সোজা কথা তাদেরকে এটা ফেস করতে হবে। সুন্দরভাবে , সুষ্ঠ কনভারসেশনের মাধ্যমে। এছাড়াও বেশিদিন হয়ে গেলে আমরা প্যারেন্টসকে জানাবো তাদের বাচ্চার মোবাইলটি ফেরৎ নিয়ে যেতে। টিচার আর প্যারেন্ট সমপর্যায়ের রেসপেক্টের অধিকারী। সুন্দর আলোচনা ও রুলের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে শেখানো আমাদের দুপক্ষেরই দায়িত্ব। তাই আমাদের বাচ্চারা বেড়ে উঠছে কমফোর্টেবল এনভায়রনমেন্টেই।
সমাজ, শিক্ষার স্থান এবং পরিবার সকলেরই দায়িত্ব আছে । গুরু দায়িত্ব আছে ....
করুণাধারা আপুর পোস্ট পড়ে কিছু চিন্তা মাথায় এলো।
আপুর পোস্টে জিজ্ঞাস্য ছিলো-
এই মৃত্যুর জন্য দায়ী কে? সিস্টেম, শিক্ষক, নাকি ব্যাড প্যারেন্টিং!
আমার মতে কেউ দায়ী নয়... আবার দায়ী সবাই.....দায়ী আমাদের মানসিকতা, শিক্ষা, সমাজব্যবস্থা এবং আবেগ....
একটা বাচ্চাকে ভূতের ভয় না দেখালে সে জীবনেও ভূতের ভয় পাবেনা। কারণ সে জানবেই না ভূত বলে আসলেও কিছু আছে। যা নাই তাই দিয়ে ভয় দেখানো মানেই তার মনে ভয় পেতে শিখিয়ে দেওয়া। পরিবার থেকে সমাজ থেকে মানুষ শেখে ভূত আছে।
তেমনই রাগ করে বা কষ্ট পেলে আত্মহত্যা করতে হয় বা করা যায় এটাই সঠিক যারা ভাবে এবং জীবন থেকে পালিয়ে যাওয়ার মত কাপুরুষতা শেখে... এখানে প্রথম দায়টা পরিবারের । যেসব পরিবারে এসব ইতিহাস আছে কেসহিস্ট্রী নিলে দেখা যাবে সেসব পরিবার বার বার বাচ্চাদের সাথে সেই সব আত্মহত্যা বা তার কারণগুলো নিয়ে গল্প করেছে। এবং তাকে পরোক্ষভাবে শিখিয়েছে কষ্ট পেলে আত্মহত্যা করে জীবন থেকে কাপুরুষের মত পালাতে হয়।
টিভি, সিনেমাও এখানে আবেগ নিয়ে খেলা করেছে। একটি শিশুকে শিখিয়েছে কষ্ট পেলে আত্মহত্যা করলে পরিবার কাঁদে, শিক্ষক অনুতপ্ত হয় হেন তেন আবেগী ফাঁদ। তাই শিক্ষা দেবার জন্যও অনেকেই এই পথ বেঁছে নেয়। তবে যে যেভাবেই নিক। কিছু মানুষের মাঝে আত্মহত্যার প্রবনতা বলে একটা বিষয় কাজ করে যা টিইন এইজে শুরু হয়। এটা এক রকম মানসিক বৈকল্য। তারা সব সময় সুযোগ খোঁজে আত্মহত্যা করে জীবন থেকে পালাতে। এরা এসকেপিং টেন্ডেন্সীর মানুষ। যাই হোক আত্মহত্যার কারণের জন্য তাই নিজেও সে দায়ী থাকে।
এসব দেখবার বা বুঝাবার দায়িত্ব প্রথমত পরিবারের। তারপর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। পরিবার ও সমাজের যেমন রুল থাকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরও আছে। নকল করা বা নকলের সরঞ্জাম বহন করা অপরাধ। মোবাইল সেটার মাঝে নকল থাকুক বা না থাকুক পরীক্ষার হলে নেওয়া যাবেনা হেতু সেই রুল ফলো করতে হবেই। এবং যে না করবে তা বাজেয়াপ্ত করার অধিকার শিক্ষকের আছে। তার জন্য সে দায়ী না। দায়ী সিস্টেম। হয় পরীক্ষা বন্ধ করে দাও, নয় মোবাইল নিয়ে যেতে দাও নয়তোবা শিক্ষককে দায়ী করা যাবে না।
এরপর তো আগেই বলেছি.....
এই বিষয়টা নিয়ে আমি স্থম্ভিত! কিভাবেই বা একটা বাচ্চা এতটুকু ঘটনায় আত্মহত্যা করে , কেনোই বা করে আমি খুঁজে পাই না। আমার জীবনেও আত্মহত্যার মত ঘটনা বার বার ঘটেছে। আমি ততবার রুখে দাঁড়িয়েছি। তবে হ্যাঁ আমি সদা ও সর্বদা নিয়মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলাম। আমি যাই করেছি জিদ করে বা রাগ করে আমি নিয়ম খুব একটা ভাঙ্গিনি। আর তাই আমার ধারণা আমার মত একটি সফল ও
সুখী জীবন আমি পেয়েছি। আমিও আমার বাচ্চাদেরকে এটাই বলি। জীবন থেকে পালিয়ে যাওয়া নয়। লড়াই করাই আসল জীবন....
গোলাম রাব্বানী ভাইয়ার পোস্টও আমাকে ভাবিয়েছে। উনার পোস্টেও আমি কিছু উত্তর খুঁজেছি।
১)
শিক্ষিকার দিকে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ তোলার আগে প্রশ্ন করুন নিজের বিবেককে...
১. আত্মহত্যার জন্য কারণ হিসাবে এইটা কতটুকু যৌক্তিক?
উঃ ১%। সেটা শিক্ষিকার জন্য নয়। যেই রুল বা সিস্টেমের কারণে সে সেটা নিয়ে নিয়েছেন সেটার জন্য। তিনি রুল পালন করেছেন।
২. শিক্ষিকার কারণেই কি সে আত্মহত্যা করেছে? শিক্ষিকা কি অনৈতিক কিছু করেছেন? আত্মহত্যার প্ররোচনার মত কি আসলেই কিছু ছিল?
উঃ - না । না। না, তিনি রুল পালন করবেন এটা তার জবেরই একটা পার্ট।
৩. আপনার মতে শিক্ষিকা কি পদক্ষেপ গ্রহণ করলে আপনার কাছে যথার্থ মনে হতো। বা আপনি শিক্ষিকার জায়গায় হলে কি করতেন?
উঃ- মোবাইলটা দেখার পর, চুপচাপ দেখে এসে সেটা কর্তৃপক্ষকে জানানো যে সে মোবাইল ক্যারি করছে। যদি সে দেখতো কোন প্রশ্নের নকল করছে সেইটা কোট করে রাখা ও পরীক্ষা যেহেতু স্কুলের আন্ডারে তাই সেই উত্তরের মার্ক কেটে রাখা। পরীক্ষা বন্ধ করা নয় এবং কোনো ভাবেই পরীক্ষার মাঝে তাকে জানিয়ে দিয়ে তার মানসিক অবস্থার অবনতি নয়। পরীক্ষার পর তাকে জানানো সে রুল মানেনি এবং নেক্সট ডে তে ফোন আর যেন না আনে। এটা ফার্স্ট ভারবাল নোটিস হতে পারতো। তারপর প্যারেন্টস কল এবং তাদের সহযোগীতা চাওয়া যেন এইভাবে বাচ্চা রুল না মানার ব্যাড প্রাকটিস করে।
৪. অরিত্রীর আত্মহত্যা কোন কারণে-
তার বাবা মাকে অপমান করা হয়েছিল সে কারণে? - জানিনা তবে হতে পারে
নাকি বাবা মার ভয়ে? জানিনা তবে হতে পারে
নাকি সে নিজে, "এই মুখ কিভাবে দেখাব" এর মতো ভাবনা থেকে? হতে পারে... আবেগী প্যারেন্টরা এভাবেই বলেন আমি হলে আত্মহত্যা করতাম, তুই কেমনে এটা করলি? অনেক বাংলা সিনেমাতেও এমন ডায়ালগ দেখা যায়।
৫. যদি অরিত্রী আত্মহত্যা না করতো, তবে কি এখন যারা এটাকে সমর্থন করছেন তখনও করতেন? বা যে ভাবে ভাবছেন, সেভাবেই ভাবতেন?
উঃ- হয়ত অনেকেই অনেক কিছু ভাবে আসলে না ভেবেই ভাবেন।
৬. অরিত্রীর আত্মহত্যা কোন ভাবে কি সমর্থন যোগ্য?
উঃ - না ।
৭. অরিত্রীর আত্মহত্যাকে সমর্থনের পরিণাম বা ভবিষ্যৎটা কি হতে পারে?
উঃ- ভীষন খারাপ
অন্যায় বা রুল ভাঙ্গার অধিকার পেতে শেখানো। ইমোশনাল ব্লাকমেইল করতে শেখানো। তবে সাথে টিচারদেরকেও আরও কিছু ভাবতে ও শিখতে হবে।
২)
অরিত্রীর আত্মহত্যায় আমার সহানুভূতি নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলতে পারেন। তাদের জন্য বলে রাখা দরকার, কোন ভাবেই চাই না এভাবে কোন প্রাণ ঝরে যাক। তার মানে এটাও না যে, তার আত্মহত্যা অন্য একটি অন্যায় কাজকে সমর্থন করার অনুমতি দিয়েছে।
উঃ - ঠিক তাই। সহমত।
অরিত্রীর আত্মহত্যা যদি শুধুমাত্র এই ঘটনাকেই কেন্দ্র করে হয়ে থাকে, তবে আমি আত্মবিশ্বাসের সাথে বলতে পারি,
যদি মেয়েটার সাথে অন্তত একটা দিন তার মা বা অন্য কেউ পাশে থাকতেন, তবে এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটা হতো না।
কারণ মানুষ হয় দীর্ঘদিনের হতাশা, কষ্ট, যন্ত্রণা থেকে মুক্ত হতে আত্মহত্যা করে;
উঃ- একদম সঠিক আমার মতেও। হুট করে কেউ জানেনা তাকে আত্মহত্যা করতে হবে।
নাহয় কোন আকস্মিক ঘটনার আকস্মিকতায় সাময়িক ভাবে কোন পথ খুঁজে পায় না, মানসিক ভাবে অতি আবেগপ্রবণ এবং হয়ে একটা ঘোরের মধ্যে থাকে। আবেগ, মানসিক অস্থিরতা এবং অনেক বেশি জেদ কাজ করে, ঠিক সেই মুহূর্তে এরকম একটি দুর্ঘটনার জন্ম হয়।
সেই মুহূর্তটা কেটে গেলে, একটু শান্ত করতে পারলে আর এরকম আত্মহত্যা হয়না।
উঃ- হ্যাঁ সিজোফ্রেনিয়া রোগীদের মাঝেও এমন প্রবনতা থাকে। কি হবে ? কে কি বলবে? কেমনে সামলাবো? ভেবেই পায়না তারা। বাট ইচ এন্ড এভরী প্রবলেম হ্যাজ স্যলুশন.... শুধু ভেবে বের করতে হবে। আত্মহত্যা সেই পথ বন্ধ করে।
৩) একবার চিন্তা করে দেখেছেন কি-
১. এরকম একটা ঘটনা ঘটার পর অরিত্রীর পরিবারের এর কি উচিত ছিলনা, যে কারো এক জনের অরিত্রীর সঙ্গে থাকা? কেন থাকলো না?
উঃ- কেনো থাকলো না এটা চিন্তা করে মনে হয়েছে তারাও বিরক্ত হয়েছিলেন। ভেবেছেন যা ইচ্ছা তাই করুক বেয়াদপ মেয়ে। মানে তারা নিজেরাই মনে হয়েছে মেয়েটাকে অন্যায়কারী মনে করিয়েছেন। এমন মনে হবার কারন আমাদের দেশের মা বাবারা এমন ঘটনায় এমনই করে থাকেন অজ্ঞতার কারণে বা অধিক ভালোবাসার অধিকারে।
২. কেনো এরকম একটা ঘটনার পর, একা রুমে যেতে দিলেন তার বাবা মা?
উঃ- তারাও বিরক্ত ছিলেন মনে হয়েছে। তার কাছে থাকেন নি।
আপনার কি কোন ভাবে মনে হয় না, অরিত্রীর আত্মহত্যার প্রথম দায়ভার তার পরিবারের! (যদি অরিত্রীর ছাড়া অন্য কাউকে এর দায়ভার দিতেই চান কেবল সে ক্ষেত্রে)।
উঃ- প্রথমত মনে হয়। একমাত্র নয়।
৪)
১. অরিত্রী কি জানতো না, পরীক্ষার সময় মোবাইল রাখা নিষিদ্ধ। অথবা ধরা পরলে তার পরিণাম সম্পর্কে?
উঃ- অবশ্যই জানতো। তবুও এ বয়সে জেনে বুঝে এমন কাজ সবাই বলতে গেলে আমরাও অনেকেই করেছি, ওরাও করবে।
২. অনেকেই বলছে মোবাইলে যা পাওয়া গেছে সেগুলা আসে নাই। তখন আসলে কিছু বলার থাকে না। তার মানে শুধু মাত্র সেগুলা আসলেই সম্পূর্ণ ব্যাপারটা সমর্থন যোগ্য হতো?
উঃ- কি পাওয়া গেছে না গেছে সেটা বড় ব্যপার নয়। ব্যাপার রুল ভাঙ্গতে শেখা। ভুল করা এবং একই সাথে বাচ্চারা এমন ভুল করলে কিভাবে শোধরাতে হবে তার পজিটিভ ওয়ে খুঁজে বের করা সেটা শিক্ষকের দায়িত্ব।
৩.অরিত্রীর বাবা মার সাথে শিক্ষিকার আচরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে, তার বিচার স্বাভাবিক ভাবে যেটা হবার সেটা হবে। সেটার সাথে অরিত্রীর আত্মহত্যার ব্যাপারটা গুলিয়ে বিচার করাটা অনেক অযৌক্তিক বলেই মনে করি। বরখাস্ত করে তদন্ত করা পর্যন্ত ঠিক ছিল। এখানে আদালত, পুলিশ আসবে কেন? এখানে কি দুর্নীতি হয়েছে? এখানে কি অনৈতিক কিছু হয়েছে?
উঃ- ভাবতে হবে। যদিও মোবাইল আনা রুল না হলে, টিচার তা নিয়ে নিতে পারে যারা আরও পজিটিভলি এখনও ভাবতে শেখেননি।
৪. অরিত্রীর বাবা মা এর জায়গায় নিজেদের ভাবছেন, বসাতে বলছেন। কিন্তু কেউ কি শিক্ষিকার জায়গায় নিজেদের বসিয়েছেন।
উঃ- হ্যাঁ আমি নিজে একজন শিক্ষক। শুধু পড়ালেখারই নই নানা রকম এক্সট্রা কারিকুলার একটিভিটিজেরও।
৫. শিক্ষকদের আচরণ নিয়ে শুধু কথা বললে হবে না, এখানে অভিভাবক, শিক্ষার্থী সবার আচরণ নিয়েই কথা বলা উচিত। আমরা এখন প্রত্যেকেই প্রত্যেককে অনেক বড় মনে করি। আর বিপত্তি সেখানেই। বাবা মা হিসাবেই কতজন আছেন, এখনকার বাচ্চাদের উপরে নিয়ন্ত্রনে সক্ষম?
উঃ- খুব কম! তাই আগের দিনের তরিকায় আর চলবে না । নতুন নতুন কনভিন্সিং অস্ত্র বাবামাকেও খুঁজে বের করতে হবে। সবচেয়ে বড় অস্ত্র পজিটিভ ফ্যামিলী ডিসকাশন।
টিচারের সাথেও ওয়ান টু ওয়ান ডিসকাশন হতে পারে। যেখানে টিচারকে সহানুভূতিশীল হতে হবে। সমস্যার সমাধানের পথ বাতলাতে হবে। দরকারে সুন্দর প্রমিজ করাতে হবে।
৬. সমস্যার মূল নিয়ে ভাবিনা। শুধু স্রোতে গা ভাসিয়েই চলেছি। এর কারণেই আমাদের নতুন কোন ইস্যু আসলে পুরাতন গুলো সহজেই হারিয়ে যায়।
উঃ- হুম
৭. শিক্ষিকাদের আমরা শিক্ষিত মানুষেরাই এত নোংরা ভাষায় গালি দিচ্ছি, এত বাজে কথা বলছি যা মুখে নেবার মতন না। আবার নিজেদের শিক্ষিত দাবি করছি। আসলে যে দেশে এরকম ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষিকার হাতে হাতকরা পরে, সে দেশে আমাদের মতো গালিবাজ জন্ম নেবে সেটাই স্বাভাবিক।
উঃ- ভাবনার বিষয় কিন্তু ভাবছি না
৮. সব থেকে যে বিষয়টা দুঃখজনক এবং হতাশার সেটা হল, আমরা শিক্ষকদের শাসন এবং দায়িত্ব কর্তব্য পালনের অধিকার হনন করছি, সেই সাথে শিক্ষার্থীদের আহ্লাদের সাথে অন্যায় করার অনুমতি দেবার পাশাপাশি অভয়ও দিচ্ছি!!
উঃ - হুম
৯. একটা ঘটনাকে আবেগ দিয়ে ভাবছেন তাতে আমার কোন সমস্যা নাই,
কিন্তু তাই বলে বিবেকটাকে ঘুমিয়ে রাখবেন!!!
উঃ- না কাম্য নয়।
১০. যারা শিক্ষিকার ফাঁসি চাচ্ছেন, তাদের কাছে আমার শেষ প্রশ্ন-
আপনার সন্তান অপরাধ করলে, আপনি যখন শাসন করবেন,
তখন যদি সে আত্মহত্যা করে, তখন আপনি তার দায়ভার নিয়ে জেলে যেতে প্রস্তুত আছেন তো?
উঃ- এমনটা অনেক হয়েছে। মায়ের সাথে অভিমান করে আত্মহত্যা। বাবা সাইকেল দেয়নি, বড়ভাই মোবাইল দেয়নি তাই আত্মহত্যা তার জন্য কোনো মা বাবা বড়ভাই জেইলে যায়নি বলেই এতদিন শুনেছি ....
পোস্টটা করুণাধারা আপু এবং গোলাম রাব্বানী ভাইয়ার পোস্টের কমেন্টের উত্তর দিতে গিয়েই লিখতে বসা। যদিও ব্যাপারটা নিয়ে ভেবে কূল কিনারা না পাবার পরেও কিছু ভাবা।
যাইহোক ভালো থাকুক অরিত্রী ঐ না ফেরার দেশে। যে প্রশ্নের উত্তর সে খুঁজে পায়নি, যে সমস্যার সমাধান তার জানা ছিলো না, যে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে লড়াই এর সাধ্য ছিলো না তার সেসব সামনে নিয়ে হলেও লড়াই করে বেঁচে থাকতে শিখুক আরও শত অরিত্রীরা এ সমাজের বুকে। আমরাও টিচারস এবং প্যারেন্টসরা আরও একটু কেয়ারফুলী হ্যান্ডেল করি এই কোমলমতী শিশুগুলিকে.... আমরাও ভাবি...আর একটু বেশি.... সুন্দর নতুন প্রজন্ম গড়ে তোলার দায়িত্ব তো আমাদেরই কাঁধে .....
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৪৪