"আগার আগার" এই শব্দটা যেদিন শুনি একটু খটকা লেগেছিলো এটা আবার কি কিন্তু এই আগার আগার খানাটা দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম! ঠিক তালের শাস বা নারকেল শাসকেই যেন কেউ অপরিসীম বুদ্ধিমত্তায় চৌকোনো করে কেটে কেটে প্লেটে বসিয়ে দিয়েছে। তার এক টুকরো যখন মুখে দিলাম চোখ বুঁজে এলো। সেদিন ছিলো গরমের দুপুর মানে বৈশাখী অনুষ্ঠানেরই রিহার্সেল চলছিলো সেই ভয়াবহ অগ্নিঝরা দুপরে সেই এক টুকরো আগার আগার যেন শরীর জুড়িয়ে দিলো, মনও ভরালো। বাড়ি ফিরতি পথেই নেমে গেলাম গুলশান ২ ডিসিসি মার্কেটের ঢালী ডিপার্টমেন্ট স্টোরে কারণ সেই ছোট্টবেলা থেকেই জানি পৃথিবীর যে কোনো দূর্লভ ইনগ্রিডিয়েন্সই হোক না কেনো এখানে আমি পাবোই পাবো।
সেখানে গিয়েই পেয়ে গেলাম আগার আগার। এর আরেক নাম যে চায়না গ্রাস সেদিনই আমার জানা হলো। কিন্তু চায়না গ্রাস দেখে আমার তো আক্কেল গুড়ুম। মনে হচ্ছিলো সাদা পলিথিন চিকন করে কেটে কেটে কেউ আবারও সেটাকে পলিব্যাগে ভরে রেখেছে। আমার সন্দেহ হলো এসব কি? শেষে ঢালীর লোকজন আমাকে আশস্ত করলো এটাই চায়না গ্রাস সাথে তারা আগার আগার ফ্লেক্সও এনে দিলো। আমি এক বোতল আগার আগার ফ্লেক্স আর এক প্যাক চায়না গ্রাস নিয়ে ফিরে আসছিলাম। তখনই ঢালীর সবুর আংকেল বললেন, মামনি আগার আগার বানাবে আর এই কোকোনাট মিল্ক নেবেনা? আমি বললাম কেনো বাাসাতেই কোকোনাট মিল্ক, ওয়াটার সবই করে নেবো তবুও উনি বললেন কোকোনাট ওয়াটার পাওয়া সহজ কিন্তু এমন ক্রিমি কোকোনাট মিল্ক পেতে হলে ক্যানের মিল্কটাই ইউজ করা বুদ্ধিমানের কাজ এতে নাকি আগার আগার পুডিং দেখতে আরও সুন্দর হবে।
আগার আগার ফ্লেক্স
চায়না গ্রাস
কোকোনাট মিল্ক ক্যান
যাইহোক সব কিছু নিয়ে আমি চললাম বাড়ির পথে। ফেরার পথে ডাবও নিয়ে আসলাম ৬ টা। মানে ২টা ফেইল করলে আরও ২টার এক্সপেরিমেন্ট চালাবো আরও ২ টা ফেইল করলে আরও দুইটা মানে না হয়ে যাবে কই! একবার না পারিলে দেখো কোটিবার আমি এই তত্বে বিশ্বাসী মানুষ।
বাসায় ফিরেই ইউ টিউব! আর সেখানে সহজ তরিকা দেখেই আরও উৎসাহিত হয়ে উঠলাম!
১. ২টা ডাবের পানি আর এক চা চামচ আগার আগার ফ্লেক্স। এটা ঠান্ডা ডাবের পানিতেই গুলাতে হবে।
২. এরপর কোকোনাট মিল্ক এক ক্যানের ভেতর এক চা চামচ আগার আগার ঠান্ডা অবস্থাতেই গুলাতে হবে।
৩. দুই চুলায় দুই প্যান চাপিয়ে দিয়ে বলক ওঠা পর্যন্ত ওয়েট করা।
৪. কোনো ডিজাইন না চাইলে এটাই পাত্রে ঢেলে ফ্রিজে কোকোনাট জেলো পুডিং জমানো যায় তবে ইউটিউবের ঐ ডিজাইন দেখে আমার মত শিল্পরসিক মানুষ কি ডিজাইন না করে পারবে! তাই......
৫. আমি প্রথমে কোকোনাট মিল্ক কিছুটা ঢেলে ৫ মিনিট ফ্রিজে জমালাম। আবার বের করে কোকোনাট ওয়াটার। আবার ৫ মিনিট ফ্রিজ। আমার মিল্ক .....
৬. এভাবেই মাত্র ৬ স্টেপেই বানিয়ে ফেললাম আমি পৃথিবীর সব চেয়ে সহজ এবং মাইন্ড ব্লোইং ডেজার্ট কোকোনাট জেলো পুডিং।
লাগবে.........
ডাবের পানি ২টা
কোকোনাট মিল্ক ১ ক্যান
একটু চিনি মানে ২ টেবল চামচ
আগার আগার ফ্লেক্স বা চায়না গ্রাস ১ চা চামচ
একটা সুদৃশ্য পাত্র বা ছাঁচ
একটা ফ্রিজ
একটা ইউটিউব
আর টাকা
যাইহোক যে ইউটিউব আমাকে শিখিয়েছিলো সেই প্রিয় লিঙ্ক
শুধু এক লেয়ার কোকোনাট ওয়াটার আরেক লেয়ার কোকোনাট মিল্কে বানানো আগার আগার!!!!!
চৌকোনো ডিজাইন ছাড়াও আমি সিলিকন মোল্ডে নানা ডিজাইন করে বানিয়েছি। সিলিকন মোল্ড সে আরেক মজার জিনিস। না থাক আরেকদিন বলবো না হয় তার কথা.......
সিলিকন মোল্ড
আপাতত সবাই ট্রাই করো
কোকোনাট জেলো পুডিং বা আগার আগার রসনা বিলাস । পেয়ে যাও আসন্ন গরমে প্রসন্ন আমেজ........
আমার কথার সত্যতা কতখানি শুধুই যারা পরখ করে দেখতে চায় তারাই বানিয়ে ফেলো কুইক কুইক.......
সবাইকে আসন্ন বৈশাখী শুভেচ্ছা.........
আরও কিছু ডেকোরেটিভে অসাধারন সৌন্দর্য্যের জেলো পুডিং বা কেক বানাবার লিঙ্ক......
রোজ জেলী পুডিং
কোকোনাট মিল্ক জেলী পুডিং
গ্রীন জেলো
রেইনবো জেলো
নেক্সট প্রজেক্ট ..........
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৯:৫৫