ফাল্গুন আসে, বাতাসে ভাসে আমের বউল, কৃষ্ণচূড়ার ঘ্রান... মৌ মৌ, মধুকর গুঞ্জনে মুখরিত চারিদিক.....প্রকৃতিতে বাজে মন কেমন করা উদাসী অশ্রুত বাঁশির সুর, এ যেন এক অজ্ঞাত অচেনা আহ্বান!! তবু বহু চেনা। ফেলে আসা দিন, ফেলে আসা ক্ষণ, মনে পড়ে সেই সোনা রঙ দিনগুলি ....মনে মনে গাই .....
গন্ধে উদাস হাওয়ার মত উড়ে তোমার উত্তরী
কর্ণে তোমার কৃষ্ণচূড়ার মঞ্জরী.......
তরুন হাসির আড়ালে কোন আগুন ঢাকা রয়
এ কি গো বিস্ময়!!!!!!
অস্ত্র তোমার গোপন রাখো কোন তূনে!!!!!!!!!!!
সে এক বিস্ময়! সে এক ঘোর লাগা ক্ষণ! অদৃশ্য লুকানো তূণে অদৃশ্য অস্ত্রে ক্ষত বিক্ষত হয়ে যাবার বেলা। এমন ফাগুন দিনেই তো তাহার সাথে দেখা! প্রকৃতিতে তখন বসন্তের হাওয়া। স্নিগ্ধ ভোরের নম্র আলোতে প্রথম চোখাচোখি, প্রথম বিস্ময়, প্রথম ভেঙ্গে যাওয়া । কলেজ গেইটে সেই জারুল গাছের নীচে দাঁড়ানো অফহ্যোয়াইট পাঞ্জাবী আর মোটা ফ্রেমের চশমার মাঝে গভীর অন্তর্ভেদী স্থির দৃষ্টি সারা জীবনের জন্য স্থির চিত্র হয়েই বিঁধে রইলো বুকের মাঝে। অকথিত ভাষাতেও দুটি হৃদয়ের দ্বারে দুটি হৃদয়ের কথা!!
প্রকৃতিতে নিয়ম করেই আসে ফাল্গুন! কবিতা গানে আর গল্পে ফাগুন, মন উতল করা অনুভুতির ছড়াছড়ি আর আমার কাছে ফাগুন মানেই উনিশ বছর, ফাগুন মানেই প্রথম দেখা, প্রথম প্রহরের স্মৃতি!
এমন করেও বুঝি ভালোবাসা হয়! মানুষ প্রেমে পড়ে! ফেলে আসা সোনারঙা দিন আর স্বপ্নে ভেসে যাওয়া রাত্রীগুলির একটি মুহুর্তও এই জীবনে আর কখনও ফিরবেনা তবুও অচ্ছুত স্মৃতিগুলি নিয়েই ফিরে যাই বারেবার সেই উথাল পাথাল দিনগুলিতেই।
বালক বীরের বেশে তুমি করলে বিশ্বজয়!!!!!!!
এ কি গো বিস্ময়!!!!!!!!!
অবাক আমি তরুণ গলার গান শুনে!!!!!!!
দেখা পেলেম ফাল্গুনে.......
সেই বালকবীর! সেই ফাল্গুন আর সেই অদৃশ্য তূণে লুকিয়ে রাখা অস্ত্রবাণ ! যাতে বিঁধে রইলাম সারাটা জীবন!!! বার বার ফেরে ফাল্গুন, ফেরে ঝরঝর বরিষন মুখর শ্রাবণ রাতগুলিও।
বসন্ত আর শ্রাবণ এই সম্পূর্ণ বীপরিত স্বভাবী সময় দুটি মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকে স্মৃতির এলবামে। দুজনে মুখোমুখি গভীরও দুখে দুখী.....স্মৃতির প্রদীপ হয়ে জ্বলে ক্ষীন আলোয়......
ঝরঝর বরিষণ মুখরিত সেই মেঘলা দুপুরে বিশাল মন্দিরের আলো ঝলমলে চাতাল যেন রহস্যময়ী গ্লিটারে আঁকা কোনো ভ্যালেনটাইন গ্রীটিং কার্ডে দেখা ছবি হয়ে যায়। সেই ছবিতে মন্দিরের অনিশ্বেষ সিড়িতেই ফিরে আসার পথে নামে হঠাৎ ঝুপঝুপ বৃষ্টি। সদ্য কৈশোর পেরুনো সে ছবির ছেলেমেয়ে দুটি দৌড়ে গিয়ে দাঁড়ায় এক কোনের খুপরী মত ডিজাইনের ভেতরে। আচমকা বৃষ্টির কারণে দুদ্দাড় সেদিকটা জনশূন্য হয়ে পড়ে ততক্ষনে।
চারিদিকে ঝুমঝুম অবারিত বৃষ্টির কলতান! মৌন মুখর নীরবতায় চারিদিক দিগবিদিকশূন্য! শুধু পথহারা দুটি পাখি দুজনে দুজনার! অধরের কানে জাগে অধরের ভাষা!
সে দৃশ্যপট, প্রকৃতি ও মানবমানবী, যে কোনো অস্কার পাওয়া চলচিত্রের বাণীও বুঝি মৃত হয়ে যায় তার কাছে।
নিয়ম করে প্রকৃতিতে আসে ফাগুন.....বাতাসে তারই গন্ধ ভাসে ...... ছিটকে পড়া সময়, বুকের জমিনে ধুলো জমা স্মৃতি, উঁকি দেয় অযথা হঠাৎ.......
জানিনা আজ কোথায় আছে সে..... কেমন আছে....... তবুও ফাগুনের বাতাসে আজও ভেসে আসে ফেলে আসা গান....হারানো দিনের কুহুতান....ফুরিয়ে যাওয়া কলহাস্যের রিনরিনে সুর......
গন্ধে উদাস হাওয়ার মত উড়ে তোমার উত্তরী
কর্ণে তোমার কৃষ্ণচূড়ার মঞ্জরী.......
তরুন হাসির আড়ালে কোন আগুন ঢাকা রয়
এ কি গো বিস্ময়!!!!!!
অস্ত্র তোমার গোপন রাখো কোন তূনে!!!
দেখা পেলেম ফাল্গুনে ....
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:১৮