এমনিতে আমি খুব বেশী ধার্মিক নই তবে রোজা রাখাটা কেনো যেনো সেই ছেলেবেলা থেকেই অভ্যাসে পরিনত হয়ে গিয়েছে। মনে পড়ে সেই ছেলেবেলার রমজানের সন্ধ্যাগুলো। ছেলেবেলা থেকে যতই অঘটনঘটন পটিয়সী হইনা কেনো সবকিছুতেই উৎসাহ উদ্দিপনার আমার কোনো ঘাটতি ছিলোনা তাই বাড়ীর কাজের মানুষগুলোর সাথে সাথে মাও যখন ব্যাস্ত হয়ে উঠতেন ইফতার তৈরীতে তখন আমিও সকল কাজের কাজী, তার চাইতে শতগুন ব্যাস্ত হয়ে উঠতাম নানা রকম কর্মকান্ডে।
কাঁচা ছোলা ছিলে শাস বের করে দেওয়া, শশাগুলো ছিলাচাকু দিয়ে ঝটপট কেটে ফেলা তাতে কাঁটাচামচ দাবিয়ে নক্সাদার স্লাইস বের করা এসব তো সেই ছেলেবেলা থেকেই আমার কাছে নস্যি। এমনকি টম্যাটো গোলাপ বা টম্যাটো টিউলিপ বানিয়ে ছোলার ঘুগনীর মাঝে বসিয়ে দেওয়া সেও আমার কাছে একি রকম মজাদার স্মৃতি হয়েই রয়েছে।আজো মিস করি আমি সেইসব দিনগুলোকে।
তবে মোটেও বসে থাকিনা শুধুই স্মৃতি নিয়ে।আমার আর ফুপির সংসারটা দুজন মানুষের হলেও লোকসংখ্যা নেহায়েত কম নয়। বুয়া, তার পিচ্চি ছেলে, দারোয়ান, ড্রাইভার সব মিলে জনা দশেক মানুষের ইফতার। এছাড়া তো আছেই প্রায় রোজ ই কোনো না কোনো গেস্ট শহুরে অথবা গ্রাম থেকে আগত। যাইহোক সবাইকে নিয়ে ও সব কিছু নিয়েই ইফতারীটা ছেলেবেলা থেকে খুব একটা কম আকর্ষনী্য নয় আমার কাছে।
এবারেও আমি ইফতারীতে নিত্যদিন নিত্য নতুন একটা কিছু স্পেশাল আইটেম রাখার চেষ্টা চালিয়েছি।
চিরাচরিত পেয়াজু, বেগুনী আর ছোলা আর এসবের সাথেই ছিলো একেকদিন একেক স্পেশাল আইটেম, যেমন
চিকেন কেজুনাট সালাদ বা
স্রিম্প ককটেইল
আমার প্রিয় ফ্রায়েড চিকেন ও ফ্রেনচ ফ্রাইস এসব অবশ্য আমি বানাইনি।
চিকেন স্যাটে ও ফ্রুট ভেজিটেবল সালাড । এসব কিন্তু আমার কারিগরি
স্যুপ ও প্রন বলস। স্যুপটা বাসায় বানানো আর প্রনবল গুলো ফ্রোজেন প্যাকের।
মুড়ি , শরবৎ আর জিলাপী এসব ছাড়া কি ইফতারী হয়???
আজকের শরবৎটা ছিলো আনারসের।
এছাড়া হালিম, কাবাব ও চাওমিনের ছবি তোলা হয়নি হালিম ও কাবাবটা দোকানের কাজেই ছবি দেবার কোনো দরকারও নেই।তবে চাওমিনটা আমার বানানো তাই ছবি তুলতে ভুলে যাওয়ায়
এসব তো গেলো রমজান ও ইফতারের আনন্দ তবে আমি ঈদ উপলক্ষ্যে সবসময় আমার প্রিয়জনদেরকেও উপহার দিতে ভালোবাসি। রমজানে তাই আমার আরো একটা কাজ থাকে নিজে হাতে বানানো উপহার ।সব সময় নিজে হাতেসবার জন্য সব কিছু বানানো সম্ভব হয়ে ওঠেনা তবে যতদূর পারি চেষ্টা চালিয়ে যাই। এবছরে এক গ্রুপের জন্য তো পরের বছরে আরেক গ্রুপের জন্য।এবারে কাজিন বোনদের জন্য বানিয়েছি তাঁত খাদির কাপড়ে নিজে হাতে হান্ড পেইন্ট ও স্টিচ দিয়ে নক্সাদার দেশাল স্টাইল সেলোয়ার কামিজ।
নীলা আপুর জন্য নীল নীল জামাটা।
এটা ছোটবোনটার জন্য
এই ছাইরঙা জামাটা আমার সবচেয়ে বড় কাজিন আপুটার জন্য।
পিংকী আপু আমার মামাত বোন( ব্লগের পিংকী না কিন্তু) জন্য তার নামের সাথে মিলিয়ে বানালাম পিংক জামাটা
এটা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড অতসীর জন্য
এটা বানালাম নিজের জন্যই
মজার মজার ইফতারী খেয়ে পেট ভরিয়ে আর কাজিনদের জন্য জামা বানিয়েই কিন্তু আমি ভুলে যাইনি তাহাদের কথা। আমাদের বাসায় বুয়ার যে পিচকি বাবুটা আছে তার জন্য আর আমাদের ড্রাইভারের একি বয়সী ছেলেটার জন্য কিনেছি এই দুটো জামা
আর বুয়ার নতুন শাড়ীটাতেও নিজে হাতে একে দিতে চাই আমার ভালোবাসার উপহার।
ঈদের আনন্দটা নাহয় সবার সাথেই ভাগ করে নিলাম। আমার আশেপাশে যারা রয়েছে তাদের সবার মুখেই একটু হাসি ফোটাবার চেষ্টা তো করতে পারি।