সেই ছেলেবেলা থেকে এত খুটিনাটি জিনিষ গভীর মনোযোগে দেখতাম।আর এই দেখায় একটা লাভ ছিল, যা দেখতাম তা হুবুহু একে ফেলতে পারতাম। সেই থেকেই বুঝে গেলাম ছবি আকার প্রথম শর্ত মন দিয়ে জিনিসটাকে দেখতে পাওয়া।
লালের মধ্যে কালো ছোপ ছোপ ছোট্ট গুটিপোকার সবুজ পাতার উপরে গুটি গুটি হেটে যাওয়া দেখে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দিতাম, কখনওবা দুপুর বেলা জানালা দিয়ে চোখ চলে যেত দুর আকাশে, যেখানে সাদা সাদা মেঘগুলো পন্ঙ্খীরাজ ঘোড়া হয়ে যায় বাতাসে ভেসে ভেসে, একটার সাথে আরেকটা মিশে মিশে কখনও বা হয়ে যায় তলোয়ার হাতে রাজপুত্র, কখনও বা ব্যাঙমা অথবা ব্যাঙমী। এইভাবে দেখতে দেখতে কবে থেকে যেন আশপাশের মানুষজন, ঘটনাবলী দেখা শুরু করলাম।
গত শনিবার বসুন্ধরা সিটি তে ঈদ সপিং অভিযানে গিয়েছিলাম। আগেই বলেছি যত না কিনি তার চাইতে ঘুরাঘুরি আর দেখাদেখিতেই বেশী সময় নস্ট করি। অবশ্য সময়টা এজনয় ও করি কম না।
সেদিন হঠাৎ দেখা একটি দৃশ্যপটে আমি ফিরে গেলাম যেন আমার ছেলেবেলার অতীতে।একটি মধ্যবিত্ত ফ্যামিলীকে দেখলাম ।একটি ১০/১২ বছরের মেয়ে ও ২/৩ বছরের একটি ছেলে নিয়ে এক মা বাবা এসেছেন ঈদের কেনাকাটা করতে। দোকানীর আকাশছোয়া দরদামে বাবা হিমসিম খাচ্ছিলেন। অনেক দরাদরির পরেও বাবা কিছুতেই কন্যার পছন্দের জামাটি কিনে দিতে না পেরে উঠে গেলেন।দোকানের বাইরে পা দিতেই, মেয়েটি লজ্জাজড়িত মুখে বাবার হাত চেপে ধরে বল্ল "বাবা আমার ঠিক এই জামাটাই খুব পছন্দ।ঠিক এমন একটা জামাই আমাদের ক্লাসের শিলা কিনেছে।এটা কি তুমি আমাকে কিনে দিতে পারবে?"
আমি দুজনের মুখের দিকে তাকিয়ে, দেখলাম দুই রকমের অভিব্যক্তির যন্ত্রনাকাতর ছবি। কন্যার মুখে ছিলো, বাবার নিশ্চিত ব্যর্থতার কথা জেনেও শখের বশে জামাটি চেয়ে ফেলার লজ্জা।আর বাবার ছিলো অক্ষমতা ব্যার্থতা বিজড়িত পিতৃত্তের ভালোবাসার যন্ত্রনাক্লিস্ট মুখ।
আমার কখনও বাবার কাছে কিচ্ছু চাওয়া হয়নি।কিন্ত কি করে যেন আমি এক নিমিষেই দেখতে পেলাম ঐ মেয়েটির মাঝে নিজেকে।
আমার ঠিক ঐ বয়সটাতে যে কস্ট টা ছিলো, সে কস্টটাই ঐ এক মুর্হুতে মনে পড়ে গেলো। আমার লুকোনো কস্ট টা কি করে যেন ওর কস্টের সাথে মিলে মিশে এক হয়ে গেলো।দুটি কস্ট এক করে ফেললাম আমি। আজীবন বুকের মধ্যে পুষে রাখা একটি গোপন কস্ট বারবার মনে পড়ে যায়।