somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অবস্থা থেকে ফায়দা নেওয়া

১৫ ই মার্চ, ২০১৭ সকাল ৮:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কৃষক বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করছে। বৃষ্টি না হলে মাটিও নরম হবে না; চাষও করা হবে না। মেঘ দেখে তার বড় আশা হচ্ছে। আর মনে আনন্দ যে বৃষ্টি হবে, আমি চাষ করতে পারবো। তারই পাশে আরেকজন ইট তৈরি করছে; তার ইট শুকাতে হবে। মেঘ দেখে তার মনে বড় ভয় আর দুঃশ্চিন্তা যে সব ইট ভিজে নষ্ট না হয়। আপাতদৃষ্টিতে একই ধরণের জিনিস দেখছে, মেঘ। কিন্তু ওদের মনের ভিতরে সম্পূর্ণ ভিন্ন বিপরীত অনুভূতি সৃষ্টি হচ্ছে। একজন এর মধ্যে ভয় দেখছে, আরেকজন আশা দেখছে। দুনিয়াতে দুনিয়াদাররা দেখে আর বিভিন্ন ভয়, দুঃশ্চিন্তা, অবস্থা দেখে। আর আল্লাহওয়ালারাও দেখে এবং সব অবস্থায় বলে আলহামদুলিল্লাহ। সাহাবীদেরকে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে, আমাদেরকেও শিক্ষা দেওয়া হয়েছে যেন সব অবস্থায় বলি আলহামদুলিল্লাহ। “الحمد لله على كل حال.” এটা শুধু মুখের কথা বলা নয়; এই আলহামদুলিল্লাহ বলা মানে হচ্ছে প্রত্যেক অবস্থার ভাল জিনিস খুঁজে বের করা। আল্লাহ দিয়েছেন আর এর আড়ালে বহুত বড় নিয়ামত আছে।

কখনও দেখতে পাই , কখনও দেখতে পাই না। দুনিয়ার মানুষ কখনও দেখে কখনও দেখে না। কখনও দেখে কিন্তু ভুল দেখে। অনেক সময় নেয়ামতের মধ্যে মুসিবত দেখে, মুসিবতের মধ্যে নিয়ামত দেখে। আসলে যেটা নিয়ামত; ও ভাবছে মুসিবত। আসলে মুসিবত; ও ভাবছে নিয়ামত। উল্টো যদি দেখে তো সব চলাও উল্টো হবে। সব করা উল্টো হবে। আল্লাহ তাআ’লা কারও জন্য কোন খারাপ অবস্থা দেন না। ওর বুঝা এবং করা উল্টো। কেউ জাহান্নামে যাবে না খারাপ অবস্থায় পড়ে যাওয়ার কারণে। যেই জাহান্নামে যাবে কোন ব্যাতিক্রম ছাড়াই, যে অবস্থায় ছিল সেই অবস্থার উপযুক্ত আমল না করার কারণে। আর যেই জান্নাতে যাবে, যে অবস্থায় সে ছিল ঐ অবস্থার উপযুক্ত আমল করার কারণে। ফজরের ওয়াক্ত হল; ঐ সময় দুই রাকাত পড়ে নেওয়া; ঐটা তার ঐ সময়ের উপযুক্ত আমল এবং ঐটাই তার শোকর। যে করল ঐ ভোর বেলার ফায়দা সে নিল। যে মাগরিবের নামায পড়ল, সন্ধ্যাবেলার ফায়দা সে নিল। অভাবের মধ্যে যে পড়ল, অভাবে যা করণীয় আছে সেটা যদি করে তো ঐ অবস্থার ফায়দাগুলো সে পাবে। দেখা যাচ্ছে বড় লোকসান হচ্ছে কিন্তু ফায়দাগুলো সে পাচ্ছে।

তারপর প্রাচুর্যে পড়ল। প্রাচুর্য নিজে থেকেই কোন লাভের জিনিস নয়। তার করণীয় করতে পারলে ওটা লাভের, না পারলে ক্ষতির। অভাবের সময় যা করণীয় তা যদি করতে পারে তাহলে লাভবান হবে; না পারলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। প্রাচুর্যের সময় যা করণীয় তা করলে লাভবান হবে না করলে ক্ষতি গ্রস্ত হবে। রোগে পড়ল আবার স্বাস্থ্য পেল। রোগও খারাপ নয় আবার ভালও নয়, স্বাস্থ্যও খারাপ নয় আবার ভালও নয়। বেশুমার (প্রচুর) রোগী মানুষ জান্নাতে যাবে আবার বেশুমার রোগী মানুষ জাহান্নামেও যাবে। বেশুমার স্বাস্থ্যবান মানুষ জান্নাতেও যাবে আবার বেশুমার স্বাস্থ্যবান মানুষ জাহান্নামেও যাবে।

স্বাস্থ্য যদি মাপকাঠি হত তাহলে শুধু স্বাস্থ্যবানরাই জান্নাতে যেত; (কিন্তু) তা নয়। (জান্নাতে) যাবে তারাই যারা অবস্থাকে ঠিকমত বুঝতে পেরেছে আর করণীয় করতে পেরেছে। রোগকে যে বুঝতে পেরেছে এবং কদর করতে পেরেছে তার জন্য বিরাট লাভের আবার স্বাস্থ্যকে যে বুঝতে পেরেছে এবং কদর করতে পেরেছে তার জন্যও বিরাট লাভের। প্রত্যেক অবস্থায় আল্লাহর শুকুর। الحمد لله على كل حال “সর্বাবস্থায় আল্লাহর শোকর” ।আল্লাহ তাআ’লা আমাদেরকে প্রত্যেক অবস্থাকে বুঝা এবং সেই অনুযায়ী আমল করার তৌফিক নসিব করুক। [আমিন] আর ঐটাই শোকর, ঐটাই আলহামদুলিল্লাহ। আর যে করতে পারল তার জন্য তো এখন থেকেই লাভবান হওয়া শুরু হয়ে গেল। একজন রোগী, হাসপাতালের মধ্যে পড়ে আছে, বড় খারাপ অবস্থা; আর ওর কাছে যদি এই অবস্থা ভাল লাগে তো ওর আত্নীয় স্বজনের কাছে কি আর লাগবে। ওকে যদি জিজ্ঞেস করে কেমন আছ? আর ও যদি দিল থেকে বলে আলহামদুলিল্লাহ, তাহলে ওর ছেলে মেয়ে আত্নীয় স্বজন সবাই স্বস্তি পাবে।

আরবে প্রচলন ছিল কথায় তারা অবস্থাকে ব্যক্ত করত। আমাদের দেশে প্রচলন আপনজন অসুস্থ হলে চুপ থাকা, কিন্তু আরবরা এমনিতে বকবক করত না, কিন্তু কথা দিয়ে অবস্থাকে প্রকাশ করত। বেলাল রাঃ এর ইন্তেকালের সময় ওনার পরিবারের লোক; সম্ভবত উনার স্ত্রী বলছিলেন- হায় দুঃখ, হায় দুঃখ। বেলাল রাঃ এর উত্তরে বলছেন- কি আনন্দ, কি আনন্দ।

আমি এখনই সাক্ষাত করতে যাচ্ছি আমার প্রিয় মুহাম্মাদ সঃ এবং অন্যদের সাথে। উনি মরতে যাচ্ছেন আর বলছেন কি আনন্দ; কিছুক্ষন পরে মারাও গেছেন। কিন্তু মৃত্যুর আগেও কবিতা ছাড়ছেন না। নিয়ামত দেখছেন। যদি নিয়ামত দেখতে পারেন তাহলে মৃত্যুই কি আর অন্য কিছুই বা কি? দুনিয়ার মানুষের জন্য মৃত্যুই হল সবচেয়ে বড় মুসিবত। আর উনি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছেন। আল্লাহ তাআ’লা মেহেরবানী করে আমাদেরকে দ্বীন দিয়েছেন যেন আল্লাহকে চিনতে পারি। আল্লাহকে যদি চিনতে পারি তাহলে আল্লাহ তাআ’লা যে অবস্থাকে নাযিল করেন ঐ অবস্থাকেও চিনতে পারব। আর আল্লাহ তাআ’লা এর ভিতর দিয়ে যা বলছেন তাও বুঝতে পারব।

আল্লাহ আমাদেরকে তৌফিক দান করেন। আমিন।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মার্চ, ২০১৭ সকাল ৮:১৬
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানালেন ড. ইউনূস

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:১০





যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।শুভেচ্ছা বার্তায় ড. ইউনূস বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ের জন্য আপনাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×