কৃষক বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করছে। বৃষ্টি না হলে মাটিও নরম হবে না; চাষও করা হবে না। মেঘ দেখে তার বড় আশা হচ্ছে। আর মনে আনন্দ যে বৃষ্টি হবে, আমি চাষ করতে পারবো। তারই পাশে আরেকজন ইট তৈরি করছে; তার ইট শুকাতে হবে। মেঘ দেখে তার মনে বড় ভয় আর দুঃশ্চিন্তা যে সব ইট ভিজে নষ্ট না হয়। আপাতদৃষ্টিতে একই ধরণের জিনিস দেখছে, মেঘ। কিন্তু ওদের মনের ভিতরে সম্পূর্ণ ভিন্ন বিপরীত অনুভূতি সৃষ্টি হচ্ছে। একজন এর মধ্যে ভয় দেখছে, আরেকজন আশা দেখছে। দুনিয়াতে দুনিয়াদাররা দেখে আর বিভিন্ন ভয়, দুঃশ্চিন্তা, অবস্থা দেখে। আর আল্লাহওয়ালারাও দেখে এবং সব অবস্থায় বলে আলহামদুলিল্লাহ। সাহাবীদেরকে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে, আমাদেরকেও শিক্ষা দেওয়া হয়েছে যেন সব অবস্থায় বলি আলহামদুলিল্লাহ। “الحمد لله على كل حال.” এটা শুধু মুখের কথা বলা নয়; এই আলহামদুলিল্লাহ বলা মানে হচ্ছে প্রত্যেক অবস্থার ভাল জিনিস খুঁজে বের করা। আল্লাহ দিয়েছেন আর এর আড়ালে বহুত বড় নিয়ামত আছে।
কখনও দেখতে পাই , কখনও দেখতে পাই না। দুনিয়ার মানুষ কখনও দেখে কখনও দেখে না। কখনও দেখে কিন্তু ভুল দেখে। অনেক সময় নেয়ামতের মধ্যে মুসিবত দেখে, মুসিবতের মধ্যে নিয়ামত দেখে। আসলে যেটা নিয়ামত; ও ভাবছে মুসিবত। আসলে মুসিবত; ও ভাবছে নিয়ামত। উল্টো যদি দেখে তো সব চলাও উল্টো হবে। সব করা উল্টো হবে। আল্লাহ তাআ’লা কারও জন্য কোন খারাপ অবস্থা দেন না। ওর বুঝা এবং করা উল্টো। কেউ জাহান্নামে যাবে না খারাপ অবস্থায় পড়ে যাওয়ার কারণে। যেই জাহান্নামে যাবে কোন ব্যাতিক্রম ছাড়াই, যে অবস্থায় ছিল সেই অবস্থার উপযুক্ত আমল না করার কারণে। আর যেই জান্নাতে যাবে, যে অবস্থায় সে ছিল ঐ অবস্থার উপযুক্ত আমল করার কারণে। ফজরের ওয়াক্ত হল; ঐ সময় দুই রাকাত পড়ে নেওয়া; ঐটা তার ঐ সময়ের উপযুক্ত আমল এবং ঐটাই তার শোকর। যে করল ঐ ভোর বেলার ফায়দা সে নিল। যে মাগরিবের নামায পড়ল, সন্ধ্যাবেলার ফায়দা সে নিল। অভাবের মধ্যে যে পড়ল, অভাবে যা করণীয় আছে সেটা যদি করে তো ঐ অবস্থার ফায়দাগুলো সে পাবে। দেখা যাচ্ছে বড় লোকসান হচ্ছে কিন্তু ফায়দাগুলো সে পাচ্ছে।
তারপর প্রাচুর্যে পড়ল। প্রাচুর্য নিজে থেকেই কোন লাভের জিনিস নয়। তার করণীয় করতে পারলে ওটা লাভের, না পারলে ক্ষতির। অভাবের সময় যা করণীয় তা যদি করতে পারে তাহলে লাভবান হবে; না পারলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। প্রাচুর্যের সময় যা করণীয় তা করলে লাভবান হবে না করলে ক্ষতি গ্রস্ত হবে। রোগে পড়ল আবার স্বাস্থ্য পেল। রোগও খারাপ নয় আবার ভালও নয়, স্বাস্থ্যও খারাপ নয় আবার ভালও নয়। বেশুমার (প্রচুর) রোগী মানুষ জান্নাতে যাবে আবার বেশুমার রোগী মানুষ জাহান্নামেও যাবে। বেশুমার স্বাস্থ্যবান মানুষ জান্নাতেও যাবে আবার বেশুমার স্বাস্থ্যবান মানুষ জাহান্নামেও যাবে।
স্বাস্থ্য যদি মাপকাঠি হত তাহলে শুধু স্বাস্থ্যবানরাই জান্নাতে যেত; (কিন্তু) তা নয়। (জান্নাতে) যাবে তারাই যারা অবস্থাকে ঠিকমত বুঝতে পেরেছে আর করণীয় করতে পেরেছে। রোগকে যে বুঝতে পেরেছে এবং কদর করতে পেরেছে তার জন্য বিরাট লাভের আবার স্বাস্থ্যকে যে বুঝতে পেরেছে এবং কদর করতে পেরেছে তার জন্যও বিরাট লাভের। প্রত্যেক অবস্থায় আল্লাহর শুকুর। الحمد لله على كل حال “সর্বাবস্থায় আল্লাহর শোকর” ।আল্লাহ তাআ’লা আমাদেরকে প্রত্যেক অবস্থাকে বুঝা এবং সেই অনুযায়ী আমল করার তৌফিক নসিব করুক। [আমিন] আর ঐটাই শোকর, ঐটাই আলহামদুলিল্লাহ। আর যে করতে পারল তার জন্য তো এখন থেকেই লাভবান হওয়া শুরু হয়ে গেল। একজন রোগী, হাসপাতালের মধ্যে পড়ে আছে, বড় খারাপ অবস্থা; আর ওর কাছে যদি এই অবস্থা ভাল লাগে তো ওর আত্নীয় স্বজনের কাছে কি আর লাগবে। ওকে যদি জিজ্ঞেস করে কেমন আছ? আর ও যদি দিল থেকে বলে আলহামদুলিল্লাহ, তাহলে ওর ছেলে মেয়ে আত্নীয় স্বজন সবাই স্বস্তি পাবে।
আরবে প্রচলন ছিল কথায় তারা অবস্থাকে ব্যক্ত করত। আমাদের দেশে প্রচলন আপনজন অসুস্থ হলে চুপ থাকা, কিন্তু আরবরা এমনিতে বকবক করত না, কিন্তু কথা দিয়ে অবস্থাকে প্রকাশ করত। বেলাল রাঃ এর ইন্তেকালের সময় ওনার পরিবারের লোক; সম্ভবত উনার স্ত্রী বলছিলেন- হায় দুঃখ, হায় দুঃখ। বেলাল রাঃ এর উত্তরে বলছেন- কি আনন্দ, কি আনন্দ।
আমি এখনই সাক্ষাত করতে যাচ্ছি আমার প্রিয় মুহাম্মাদ সঃ এবং অন্যদের সাথে। উনি মরতে যাচ্ছেন আর বলছেন কি আনন্দ; কিছুক্ষন পরে মারাও গেছেন। কিন্তু মৃত্যুর আগেও কবিতা ছাড়ছেন না। নিয়ামত দেখছেন। যদি নিয়ামত দেখতে পারেন তাহলে মৃত্যুই কি আর অন্য কিছুই বা কি? দুনিয়ার মানুষের জন্য মৃত্যুই হল সবচেয়ে বড় মুসিবত। আর উনি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছেন। আল্লাহ তাআ’লা মেহেরবানী করে আমাদেরকে দ্বীন দিয়েছেন যেন আল্লাহকে চিনতে পারি। আল্লাহকে যদি চিনতে পারি তাহলে আল্লাহ তাআ’লা যে অবস্থাকে নাযিল করেন ঐ অবস্থাকেও চিনতে পারব। আর আল্লাহ তাআ’লা এর ভিতর দিয়ে যা বলছেন তাও বুঝতে পারব।
আল্লাহ আমাদেরকে তৌফিক দান করেন। আমিন।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মার্চ, ২০১৭ সকাল ৮:১৬