দুই ধরণের প্রিয় জিনিস আছে। এক ধরণের প্রিয় জিনিস হল যে আমার কাছে আছে। অপর দিকে মানুষের কাছে অনেক ধরণের কাল্পনিক প্রিয় জিনিসও থাকে। কাল্পনিক প্রিয় জিনিস যেমন থাকে তেমনি কাল্পনিক ভয়ের জিনিসও আছে। ভবিষ্যতে রাজা হবে- তার একটা কল্পনা। এই যে কল্পনা- সে উপভোগ করে। বর্তমান রাজা হওয়ার চেয়ে রাজা হওয়ার স্বপ্ন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অনেক বেশি উপভোগ্য। রাজা যখন হয়ে যায় তখন অত মজা লাগেনা। নানান সমস্যা তার মধ্যে আছে। কিন্তু রাজার স্বপ্ন দেখার মধ্যে কোন সমস্যা নেই। মনে মনে আনন্দ করা যায়। ওরকম বর্তমান মুসিবতও অনেক ক্ষেত্রে কাল্পনিক মুসিবতের চেয়ে সহজ। অভাবের কারণে মানুষ যত কষ্ট পায়, সম্ভবত তার চেয়ে বেশি কষ্ট পায় ভবিষ্যতের কাল্পনিক বা সম্ভবপর অভাবের কারণে। “হায় কি হবে?! কি হয়ে গেছে প্রায়ই ঐটা তত বড় সমস্যা না। কিন্তু কি হবে বা ভবিষ্যতে কিছু একটা হয়ে যেতে পারে কল্পনা করেই মানুষ যত ভয় পায়।
ওরকমই বর্তমানে একটা সম্পদ আছে আর এইটাও আল্লাহকে দিয়ে তার মোকাবেলায় হেদায়াত চাওয়া, আর কল্পনার সম্পদ দিয়েও আল্লাহর কাছে হেদায়াত চাওয়া; এইটাও বহুত বড় কুরবানি। যেমন আমি কিছু একটা চাই মনে মনে, দু’আ করলাম ইয়া আল্লাহ এই জিনিস আমার মন বড় বেশি চায়, তুমি এইটা না দিয়ে আমাকে হেদায়াত দিয়ে দাও। আসলে আমার পকেট থেকে কিছুই যাচ্ছে না, কিন্তু সহজও নয়।
এইটুকু একটু ভূমিকা ছিল। এখন একটু তশকিলে আসতে চাই।
বর্তমান সম্পদ দিতে নাই বা পারলাম, কল্পনার সম্পদ দিয়ে দু’আ করি। যদি ঠিকই দু’আ করতে পারি, ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তাআ’লা বহুত বড় সম্পদ দিবেন। আর প্রত্যেকের কাছেই নিজ নিজ কল্পনা অনুযায়ী তার কিছু আছে। ছাত্র ভাল রেজাল্ট চায়, চাকরিজীবি প্রমোশন চায়, ব্যবসায়ী লাভ চায়, বন্ধু বান্ধবের কাছে সম্মান চায়, আত্মিয় স্বজনের কাছে কদর চায়। এরকম আরও কত নানান ধরণের জিনিস আছে। কিছু জিনিস আছে অনেক দিন ধরেই মনের মধ্যে আছে আর কিছু আছে অদল বদল হতে থাকে। এই যে আমার মনের মধ্যে অনেক কিছু আছে, আমি অনেক কিছুই চাই- খোঁজ করলে দেখা যাবে কিছু এমন আছে যার প্রাধান্য বেশি। অন্যান্য ছোট খাটো চাওয়ার মোকাবিলায় কিছু কিছু চাওয়া একটু বড় ধরণের, যেগুলো লেগেই থাকে। অনেকগুলোই ছিল যা সকালে চেয়েছি এখন ভুলে গেছি। আর কিছু আছে আজকেও চেয়েছি, গতকালকেও চেয়েছি, আগের দিনও চেয়েছি, লেগেই আছে। আর এইজন্য মনের মধ্যে প্ল্যান-পরিকল্পনা অনেক কিছুই আছে। যত বেশি বড় জিনিস আমার মনের মধ্যে আছে, ঐটার মোকাবিলায় যদি আল্লাহর কাছে দু’আ করতে পারি, যে আল্লাহ এই যে এই একটা জিনিস আমি অনেকদিন থেকে চাই, আমার মন বড় বেশি চায়, আর এজন্য আমি স্বপ্ন দেখি, কল্পনা করি, এই চারপাশে কল্পনার জগৎ গড়ে তুলেছি; এইটা আমি কুরবান করে দিলাম। আর এর বদলে তুমি আমাকে হেদায়াত দিয়ে দাও, তোমার সম্পর্ক নসিব কর, তোমার নৈকট্য দান কর, পথ দেখাও এই ধরণের…।
আবার বলছি, যদিও বাস্তবে কিছুই দিচ্ছি না, কিন্তু আমরা এতই কৃপণ যে কাল্পনিক জিনিসও সহজে দেওয়া যায়না। দিতে রাজি হইনা বরং ঘুরে ফিরে দু’আ করি, ‘হে আল্লাহ, দিয়ে তো দিলাম, তুমি আবার ফিরিয়ে দিও। ওরকম নয়. বরং একেবারে যত বেশি সাফ দিলে পারা যায়। কিন্তু ব্যাপারটা যেহেতু মনের ওপরে আঘাত নিয়ে আর সম্পূর্ণ দ্বীনই মনের ব্যাপার, এই জন্য এই দেওয়াও কিন্তু ছোট দেওয়া নয়। আর আল্লাহ তাআ’লা তো এই রকম কাল্পনিক জিনিসকে বড়ই কদর করেন।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে প্রিয় জিনিসের বেশির থেকে বেশি কুরবানি করারা তৌফিক দান করেন। আমিন!
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১২:৪২