আপডেট ২ (বুধবার ২৭ মার্চ): শিশুটির সহযোগিতায় সাড়া দেয়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। এখন প্রশ্ন হলো আমরা কিভাবে সহযোগিতা করতে পারি? প্রথমে তার হাত ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা যায় কি না? কৃত্রিম হাত লাগানোর বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছি। এ বিষয়ে কারো কোনো তথ্য জানা থাকলে সহযোগিতা করুন। তার আগে পঙ্গুর সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলতে হবে। আর কীভাবে ফান্ড গঠন করা যায় সে সম্পর্কে মন্তব্য করলে ভালো হয়।
তবে সর্বোপরি পোস্টটা স্টিকি হলে কাজটি করতে সুবিধে হতো।
আপডেট (১): আজ (সোমবার ২৫ মার্চ) পঙ্গু হাসপাতালে শান্তকে দেখতে গিয়েছিলাম। নিচতলায় জরুরী বিভাগের বাইরে একটি কক্ষের বেডে রাখা হয়েছে শান্তকে। একটা দৃশ্যের কথা বলি। শান্ত বার বার তার শরীরের বিভিন্ন অংশ চুলকিয়ে দিতে বলছিল। মা তাই করছিলেন। কিন্তু এমন হয় যে ঠিক যে জায়গাটা চুলকাচ্ছিল শান্তর মা সেটি ধরতে পারছিলেন না। শান্ত তার দুই হাতর অবশিষ্টাংশ (সামান্য অংশ) দিয়ে চেষ্টা করল। পরে উঠে গিয়ে দেয়ালে একবার মাথা ঘষলেন একবার ঘাড়ের একটা অংশ ছোঁয়াল। তারপর আবার ফিরে এসে বসল।
এই দৃশ্য যারা দেখছিল তাদের চোখ ভিজে এল মুহুর্তেই। একটা সামান্য দশ টাকা দামের চিপসের জন্য ছেলেটির এমন হাল করেছে তার পাষন্ড সৎ পিতা, যার জন্য সারাটা জীবন এমন দুর্বিষহ জীবন যাপন করতে হবে।
গতকাল প্রায় এক ঘণ্টা শান্তর সঙ্গে কাটিয়েছি। তার সঙ্গে বল খেলেছি হাসপাতালের করিডরেই। এত চঞ্চল একটি শিশু। দুই হাত নেই, তবু একটু শান্ত থাকছে না সে। একবার এদিক ছুটে যায় তো আরেকবার ওদিকে। শান্তর মা নাসিমা বেগম বলছিলেন, ও এমনই। কে একজন একটা প্লাস্টিকের বল কিনে দিয়ে গেছে। তা বের করে বল খেলা চাই তার। বল নিয়ে দৌড়াচ্ছে...কথা বলছে...হাসছে....কিন্তু সেই হাসিতে কী যেন একটা নেই। নিষ্প্রাণ...আমরা কি শিশুটির হাসিতে প্রাণ ফিরিয়ে দিতে পারবো না।
জানতে পারলাম গতকাল অনেকেই শিশুটিকে দেখতে গিয়েছিলেন। আমার সামনেই এক আমেরিকা প্রবাসী একহাজার টাকা দিয়ে আসলেন। আরো কিছু তরুণ সহযোগিতা করার জন্য কথা বলছে। কিন্তু এসব আসলে বিচ্ছিন্ন...এতে হয়তো তার দৈনন্দিন ব্যয় মিটবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের রোকসানা ম্যাডাম তার নিয়মিত খোঁজখবর নিচ্ছেন বলে জানতে পেরেছি। কিন্তু শান্তর কৃত্তিম হাত লাগানোর উদ্যোগটা বড় জুরুরী।
বাবা বাবাই। সে হোক সৎ কিংবা আসল। অবুঝ একটি শিশু সৎ কিংবা আসল বাবার মর্ম হয়তো ততটা বোঝে না। সে বোঝে যেহেতু বাবা বলে তাক ডাকছে হয়তো সে তার সব আব্দার পূরণ করবেই। এজন্য সৎ পিতার কাছে একটি চিপস চেয়েছিল। বিনিময়ে সে এমন নির্মমতা পেয়েছে, যা শুনলে যে কারো পক্ষে বিশ্বাস করা কঠিন হবে। পাষন্ড বাবা শিশুটির দু'টি হাতই কেটে দিয়েছে। তার নাম রবিউল ইসলাম শান্ত (৮)। এমন ভয়ানক নিমর্মতার ঘটনা ঘটেছে খোদ রাজধানীতে। অভিজাত এলাকা গুলশান-বনানীর গলার কাটা মহাখালীর কড়াইল বস্তিতে। ঘটনা দেড় মাস আগের। কিন্তু মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচারিত হয়নি। আজ ইত্তেফাক একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়িছে, শিশুটির দুই হাত কেটে পঙ্গু বানিয়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে নামিয়ে টাকা আয় করতেই তার সত্ পিতা জাহাঙ্গীর এ ঘটনা ঘটিয়েছে। শিশু শান্ত'র মা নাসিমা বেগম এ বর্বরতার জন্য তার দ্বিতীয় স্বামী জাহাঙ্গীরকে দায়ী করেছেন।
শিশু শান্ত ও তার এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আট বছরের শিশু রবিউল ইসলাম শান্ত তার মা গৃহকর্মী নাসিমা বেগম ও সত্ পিতা হোটেল কর্মচারী জাহাঙ্গিরের সঙ্গে মহাখালী কড়াইল বস্তিতে থাকত। গত ১২ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টার দিকে শান্ত বস্তিতে খেলছিল। মা নাসিমা বেগম রান্নার কাজে ব্যস্ত ছিল। এ সময় শান্ত তার পিতা জাহাঙ্গীরকে দেখে চকিনে দেয়ার জন্য বলে। সত্ পিতা জাহাঙ্গীর চিপস কিনে না দিয়ে উল্টো তাকে ধমক দেয়। ঐ সময় শান্ত তার পিতাকে বলে উঠে, 'তুমি কোন দিন কিছু কিনে দেও না? একটি চিপস চাইলাম তাও দেও না। তুমি কিসের বাবা।' এ কথায় ক্ষিপ্ত হয়ে জাহাঙ্গীর 'তোরে জনমের মত চিপস খাওয়াচ্ছি' বলতে বলতে শান্তর হাত ধরে তাকে তেজগাঁও এলাকায় একটি মসজিদের কাছে জংগলে নিয়ে যায়। তারপর শান্তর দুই পা চেপে ধরে বটি দিয়ে তার ডান হাতটি কনুই পর্যন্ত কেটে ফেলে। এ সময় শান্ত চিত্কার দেয়া শুরু করলে তার মুখ চেপে ধরে জাহাঙ্গির। পরে পাষণ্ড জাহাঙ্গীর তার বাম হাতটিও কেটে ফেলে। এরপর শান্ত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পরে মাথা ও দেহের বিভিন্ন স্থানে বটি দিয়ে আঘাত করে তাকে ফেলে চলে যায় জাহাঙ্গীর।এদিকে শিশুটির মা নাসিমা বেগম বেলা ২টা পর্যন্ত শান্ত বাসায় ফিরে না আসায় খোঁজাখুজি শুরু করেন। এক পর্যায়ে মাইকিং ও পরদিন বনানী থানায় জিডি করেন। ঘটনার পর থেকে তার দ্বিতীয় স্বামী জাহাঙ্গীর বাসায় যায়নি। তবে ঘটনার রাতে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে নাসিমার দেখা হয়। তখন শান্ত নিখোঁজ থাকার কথা বলা হলে, জাহাঙ্গীর আসছি বলে আর আসে নি। তার ভূমিকা প্রথম থেকেই সন্দেহজনক ছিল বলে নাসিমা জানান। তিনি আরো জানান, 'জাহাঙ্গীর একজন নেশাখোর। তাকে দিয়ে পুত্রের দুই হাত কাটা কেন, খুন করাও সম্ভব বলে নাসিমা জানান। তিনি স্বামীর বিরুদ্ধে বনানী থানায় পুত্র শান্তর দুই হাত কেটে নেয়ার ঘটনায় মামলা করেছেন।
পুলিশ ও চিকিত্সক সূত্র জানায়, স্থানীয় থানার পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় শান্তকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। তখন তার বাম হাতটি দেহের সঙ্গে ঝুলছিল। ডাক্তাররা হাতটি রাখার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ইনফেকশন দেখা দিলে হাতটি দেহ থেকে অপসারণ করতে বাধ্য হন । দুই সপ্তাহ পর শান্ত মোটামুটি সুস্থ হয়ে ওঠে। অল্প অল্প কথা বলা শুরু করলে শিশুটিকে নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে 'সচিত্র প্রতিবেদন' প্রকাশিত হয়। পত্রিকা দেখে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা রোকশানা বেগম শিশুটিকে দেখার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যান। বিস্তারিত জেনে তিনি শান্তকে পঙ্গু হাসপাতালে স্থানান্তর করার ব্যবস্থা করেন। গত ১৬ মার্চ তাকে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে অনেকটাই সুস্থ হয়ে ওঠেছে শান্ত।
পুলিশ ধারণা করছে, ভিক্ষাবৃত্তিতে নামানোর কৌশল হিসাবেই জাহাঙ্গীর ও তার সহযোগীরা শিশুটির হাত কেটেছে বলে প্রাথমিক ভাবে ধারণা করছে পুলিশ। ঘটনার পর থেকে জাহাঙ্গীর পলাতক রয়েছেন। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে তিনি জানান।
প্রসঙ্গত, শান্তর মা নাসিমার প্রথম স্বামী কামাল ছিলেন গুলশান এলাকার সিকিউরিটি গার্ড। তার ঘরে শান্তসহ দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে রিয়াজ গুলশান ২ নম্বরে একটি ক্রোকারিজের দোকানে কাজ করে। জাহাঙ্গীরের ঘরে নাসিমার আরো একটি কন্যা সন্তান হয়। তার নাম রিচান, বয়স ৯ মাস।
শিশুটির এই অপলক তাকিয়ে থাকা কি আমাদের বিবেককে নাড়া দিবে? অসহায় এই শান্তর জন্য আমরা কিছু কি কিছু করতে পা
তথ্যসুত্র: দৈনিক ইত্তেফাক দৈনিক ইত্তেফাক
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৬