আমাদের উৎসব উদযাপন গুলো কেমন যেন শুধু খাওয়া খাদ্যতেই সীমাবদ্ধ। ঈদ উদযাপন মানে,
নিজ বাসায় ভাল-মন্দ খেলাম,
আত্মীয়-স্বজনের বাসায় খেলাম,
বন্ধু-বান্ধব নিয়ে রেস্টুরেন্টে খেলাম। এইতো।
ইদানীংকালে এর সাথে যোগ হয়েছে খাওয়া খাদ্যের সাথে নিজেদের সেল্ফি তুললাম সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করলাম।
ইভেন বাঙালি মুসলিম বিয়েবাড়ির মেইন উৎসব মানেও ওই এক খাওয়া খাদ্যই। বরপক্ষ মেয়ের বাড়িতে গিয়ে খাবে, মেয়েপক্ষ ছেলের বাড়িতে এসে খাবে। ছেলের বাড়িতে খাওয়া খাদ্য উৎসবের নাম 'বৌ ভাত!' । মেয়ে বাড়িতে খাওয়া খাদ্য উৎসবের ফিক্সড কোনো নাম নেই, বিয়ে পড়ানো বা আক্দ নামে এ উৎসব পাড়ি দেয়া হয়।
পশ্চিমা বিশ্বে প্রতিটি উৎসবের যেমন নির্দিষ্ট কিছু ইলেমেন্টস থাকে আমাদের এদিকে সেরকম কিছু নেই। আসলে নেই বলাও যুক্তি সঙ্গত না, বলা যায় এখন নেই।
বাঙালি মুসলিম সমাজের অতীত ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় আমাদের এদিকে অনেক কায়দায় উৎসব পালন করা হতো। ইভেন ঊন-বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগেও ঈদ উৎসব উদযাপনের বিভিন্ন ইলেমেন্টস ছিল; যেমন: সজ্জিত হাতি-ঘোড়া-পালকি সমেত আনন্দ মিছিল, সন্ধ্যায় নবাব বাড়িতে নৃত্য, গীত, গ্রামে যাত্রা-পালা বা পুঁথি পাঠ উৎসব ইত্যাদি।
বিয়ের উৎসব গুলোও শুধু পোলাও-রোস্টে সীমাবদ্ধ ছিল না। বিয়ে উপলক্ষে ঘটা করে পুকুরে জাল ফেলা হত। সাত দিন আগ থেকে নায়রীরা বিয়ে বাড়িতে আসা শুরু করত।
কাঁচা হলুদ, আদা মুখে নিয়ে গীত গাইতে গাইতে বর বা কনের কানে ভাপ দিত। পান, সুপারি, দূর্বা ঘাস দিয়ে মুখ বরণ করত। নতুন বউকে কেন্দ্র করে বাড়ির উঠানে ছোটরা পালা আয়োজন করত। এলাকার বউ-বেটি সবাই ভিড় জমায়ে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি করত। কনের মুখে আলতা আর ঝিনুক চূর্ণ পেস্ট করে ফোটা-ফুটি দেয়া ছিল সবচেয়ে কমন। এই ফোটা-ফুটি দেয়া মুখই বলে দিত কনে কে। এ সব কিছুই ছিল উৎসবের ইলেমেন্টস।
হিন্দুয়ানা বলে,
কিংবা আধুনিকতার ছলে,
বাঙালি মুসলিম উৎসব গুলো আজ বড় পানসে, বড় একঘেয়েমি। পানসে ভাব দূর করার জন্য বাঙালি খায় আর সেল্ফি দেয়।
(পুনশ্চ: আমিও বাঙালি মুসলিম সমাজের অন্তর্গত।)
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০২০ রাত ১১:২১