"আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সাধ ছিল পবিত্র "কোর আন" শরীফের বাঙলা পদ্যানুবাদ করা। সময় ও জ্ঞানের অভাবে সময়মতো তা করে উঠতে পারি নি..."
-কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
সাধারণ মানুষের সাথে জ্ঞানী-গুণী মানুষের পার্থক্য এখানেই যে আমার মত অতীব তুচ্ছ সাধারণ মানুষের মাথায় হের দিনে যা নিয়ে প্রশ্ন এসেছে আমাদের জাতীয় কবি বিদ্রোহী কবি বহু বছর আগেই তা নিয়ে ভেবেছেন এবং করেও গেছেন।
বলছিলাম কাজী নজরুলের লিখা কাব্য আমপারা নিয়ে (১৯৩৩)। আমি পবিত্র কুরআন শরীফ ছোটবেলায় আরবি উচ্চারণে একবার খতম দিয়েছি, এখন মাঝে মাঝে যেখান থেকে ইচ্ছা হয় বঙ্গানুবাদ পড়ি। সেদিনও পড়ছিলাম। পড়তে পড়তে হঠাৎ মনে হলো আমাদের বাংলা ভাষার প্রথম নিদর্শন চর্যাপদ নিয়ে। চর্যাপদের ভাষা সান্ধ্য ভাষা এবং মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত অর্থাৎ চর্যাপদ মূলত পদ্য। ভাবতে ভাবতে ইংরেজি সহ ফ্রেঞ্চ, জার্মান ভাষার আদি নিদর্শন গুলোর চেহারা দেখছিলাম আর ইতিহাস ঘাঁটছিলাম, দেখলাম সব গুলো ভাষার প্রথম নিদর্শন মূলত পদ্য-ই ছিল।
আমি বিশ্বাস করি পবিত্র কুরআন আল্লাহর বাণী। আরবি সাহিত্যের প্রথম দিকের সুন্দরতম নিদর্শন হিসাবে পবিত্র কুরআন শরীফের আশে পাশে কিছু নেই। পবিত্র কুরআন শরীফ গদ্য নাকি পদ্য তা বিশ্লেষণ করার সামান্যতম যোগ্যতাও আমার নেই। তবে সেদিনই কেন যেন মনে হলো পবিত্র কুরআন শরীফের প্রথম বঙ্গানুবাদ ভাই গিরিশ চন্দ্র সেন গদ্য দিয়ে না করে পদ্য দিয়ে করলে কেমন হতো?
আল্লাহর রহমত আমাদের জাতীয় কবি এই কাজটি কিছুটা হলেও করে গেছেন। তাঁর লিখা "কাব্য আমপারা" এক কথায় অসাধারণ। কবি পবিত্র কুরআন শরীফের ৩৮ টি সুরা বঙ্গানুবাদ করেছেন। সম্পূর্ণ অর্থ ঠিক রেখে কিন্তু ছন্দ দিয়ে। কাব্যের ছন্দে ঐশী কিতাব ভাবা যায়! তাঁর অনুবাদ পরীক্ষা ও সত্যায়িত করেন তৎকালীন সময়ের খ্যাতনামা আলেম দ্বারা গঠিত একটি কমিটি। তাঁর রচিত সুরা ফাতিহা -এর অনুবাদ শেয়ার করছি।
সুরা ফাতেহা
(শুরু করিলাম) ল'য়ে নাম আল্লার
করুণা ও দয়া যাঁর অশেষ অপার।
সকলি বিশ্বের স্বামী আল্লার মহিমা,
করুণা কৃপার যাঁর নাই নাই সীমা।
বিচার-দিনের বিভু! কেবল তোমারি
আরাধনা করি আর শক্তি ভিক্ষা করি।
সহজ সরল পথে মোদেরে চালাও,
যাদের বিলাও দয়া সে পথ দেখাও।
অভিশপ্ত আর পথভ্রষ্ট যারা, প্রভু,
তাহাদের পথে যেন চালায়ো না কভু।
কবি ৩৮ টি সুরায় বিভিন্নভাবে "বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম" অনুবাদ করেছেন এবং প্রতিটি অনুবাদই অনবদ্য।
পরিশেষে, এই অধমের একটি আকাঙ্ক্ষা ও আংশিক কাজের কথা দিয়ে শেষ করছি।
আকাঙ্ক্ষা:
নিতান্ত গুণহীন মূর্খ এই অধমের আকাঙ্ক্ষা যদি প্রভু তৌফিক ও হিম্মৎ দেন তবে পবিত্র কুরআন শরীফে বর্ণিত ২৫ জন নবী-রসূলের জীবনের ক্ষুদ্র বিশেষ অংশ যা তাঁদের পরিচয় বহন করে তা নিয়ে একটি পূর্নাঙ্গ কবিতা রচনা করা।
আংশিক কাজ:
"কুন-ফায়াকুন" কহিলেন প্রভু,
সৃষ্টি করিবার বাসনা,
ছ'দিনে হইলো সমাপ্তি
আসমান-জমিন রচনা।
এখন হইবে সৃষ্টির খেলা
ধরায় যাইবে নতুন জাত,
মাটির তৈরি মানুষ হইবে
আশরাফুল মখলুকাত।
ফেরেশতারা জিজ্ঞাসে,
"আমরা কেন না?"
হুংকার ছেড়ে কহিলেন প্রভু,
"আমি যা জানি তোমরা তা জানো না।"
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ২:৩১