“অ” বর্ণটি দু’টি কারণে আমার খুব পছন্দের। প্রথম কারণ, “অ” বর্ণটি দিয়ে আমার লিখা-লিখির হাতে খড়ি । আমার লিখা প্রথম বাক্যে
“অ- তে অজগরটি ঐ আসছে তেড়ে”।
দ্বিতীয় কারণটি কিছুটা স্বভাব-কেন্দ্রিক। আমার ছোটবেলা থেকেই কিছুটা “না” বলা স্বভাব। সব কিছুতেই না। ভাল কিছুতেও না, খারাপ কিছুতেও না। আর এখানেই “অ” বর্ণটি অসাধারণ। যেকোনো শব্দের সামনে “অ” বসে দিলেই ব্যাস, “না” না বলেই হয়ে গেলো না। দারুণ না!
জানা, চেনা, অরুচি ইত্যাদি শব্দের প্রথমে “অ” বর্ণটি বসে শব্দের অর্থ বদলে জানান দিয়েছে অজানা মানে জানা নেই, অচেনা মানে চেনা নেই, অরুচি মানে রুচি নেই।
কিন্তু “সময়” শব্দটির বেলায় এমনটি ঘটেনি। অসময় মানে খারাপ সময় বা অনাকাঙ্ক্ষিত সময়। যদিও হওয়া উচিত ছিল, “অসময়” মানে সময় নেই বা সময়ের অস্তিত্ব নেই।
আজকের লিখার বিষয় “সময়” এর অস্তিত্ব নেই এমন একটি সময় নিয়ে।
সময়ের অস্তিত্ব নেই এমন কিছু চিন্তা করার আগে বুঝতে হবে সময় জিনিসটা আসলে কি?
মহামতি আইজ্যাক নিউটনের মতে, “সময় হচ্ছে মহাবিশ্বের মৌলিক কাঠামোর একটি অংশ যেটি একটি বিশেষ মাত্রা এবং যেখানে ভৌত ঘটনাসমূহ একটি ক্রমধারায় ঘটে।”
সহজ ভাষায়, সময় হচ্ছে কালেকশন অফ ইভেন্টস অর্থাৎ ঘটনার সমষ্টিই হচ্ছে সময়। ঘটনা থাকলে সময় থাকবে, সময় পরিমাপ করতে হলে ঘটনার পুনরাবৃত্তি থাকতে হবে।
যেকোনো ঘটনার পুনরাবৃত্তি দিয়ে সময় নির্ধারণ করা হয়। যেমন: পৃথিবী তাঁর নিজ অক্ষে একবার আবর্তন পূর্ণ করলে তা এক দিন। পৃথিবী সূর্যকে একবার সম্পূর্ণ প্রদক্ষিণ করলে এক বছর। ঘড়ির সেকেন্ডের কাঁটা এক চক্কর দিলে এক মিনিট ইত্যাদি।
এখন মূল প্রসঙ্গে আসা যাক,
কল্পনা করুন, এমন একটি পৃথিবী যেখানে সময় বলতে কিছু নেই। কেমন হবে সেই পৃথিবী? কেমন হবে সেখানকার প্রত্যেকদিনের জীবন-যাপন?
মনে হয় একটু ভুল বলে ফেললাম, সময়হীন পৃথিবীতে প্রত্যেকদিন বলে কিছু থাকার কথা নয়। কারণ, রিপিটেড কোন ঘটনা থাকলেই সেখানে সময় পরিমাপ করা যাবে অর্থাৎ সময়ের অস্তিত্ব থাকবে।
তাহলে যা দাঁড়াচ্ছে তা হলো-
সময়হীন পৃথিবীর ১ম কন্ডিশন: দিন বা রাত বলে কিছু থাকা যাবে না। শুধু আলো বা শুধু আঁধার থাকতে পারে কিন্তু আলো-আঁধার জাতীয় কোন রিপিটেড ইভেন্ট থাকতে পারবে না।
সময়হীন পৃথিবীর ২য় কন্ডিশন: কোন সামষ্টিক ঘটনা থাকবে না। কারণ ঘটনা থাকলে সময় থাকবেই। সময়ের গণনা শুরু হয় বিগ-ব্যাং থেকে কারণ বিগ-ব্যাং এর পর থেকেই ঘটনার শুরু। সময়হীন পৃথিবীর রূপ কিছুটা বিগ-ব্যাং এর আগে ব্রহ্মান্ যে রকম ছিল সেরকম থাকবে।
এখন কথা হচ্ছে, ঘটনাই যদি না থাকে তাহলে সেখানে প্রাণের অস্তিত্ব বোঝা যাবে কিভাবে?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে যেতে হবে ধর্ম গ্রন্থগুলোতে। ধর্ম গ্রন্থে বলা হয় মত্যু পরবর্তী জীবন অনন্তকালের। আপনি দোজখে যান বা বেহেশতে সেখানে থাকবেন অনন্তকাল। অর্থাৎ ওখানে সময় বলতে কিছু নেই। সময় ওখানে মৃত।
কিন্তু ধর্ম গ্রন্থ গুলোর বর্ণনায় বেহেশত বা দোজখের যে বর্ণনা পাওয়া যায় তাতে ইভেন্টস বা ঘটনা উপস্থিত থাকে। ইভেন, রিপিটেড ইভেন্টসও থাকে।
তাহলে সত্য আসলে কি? সত্য জানতে হলে আপনাকে যেকোন একটি তত্ত্ব সঠিক ধরে সামনে যেতে হবে এবং যুক্তি দিয়ে তত্ত্বের বিশুদ্ধতা যাচাই করতে হবে।
আমি সম্পূর্ণ আস্তিক একজন মানুষ। তাই ধর্ম গ্রন্থ গুলোকে সত্যি হিসেবে ধরে যদি আগাই তাহলে যা দাঁড়াচ্ছে তা হলো,
ঘটনা বা রিপিটেড ইভেন্টস থাকা সত্ত্বেও সময়হীন জায়গায় "সময়" অনুপস্থিত থাকতে পারে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এইটা কিভাবে সম্ভব?
এই প্রশ্নটির উত্তর আমি গত বেশ কিছুদিন হয় ভাবছি। কিন্তু কিছুতেই মিলাতে পারছিলাম না। অবশেষে আজ দুপুরে মনে হল আমি উত্তরটি পেয়েছি।
উত্তরটি হচ্ছে,
আপনি যখন স্বপ্ন দেখেন তখন কি আপনি সময়ের অস্তিত্ব টের পান? স্বপ্নের মধ্যেও ঘটনা থাকে রিপিটেড ইভেন্টস থাকে কিন্তু আপনি স্বপ্নে সময়কে কখনো পরিমাপ করতে পারবেন না। এখন আপনি বলতে পারেন সময় পরিমাপ করা না গেলেও কি সময় আসলে যাচ্ছে না?
না।
কারণ, স্বপ্নের ইভেন্টস গুলোর সময় "সময়" নামক মাত্রা দিয়ে পরিমাপযোগ্য না। আর যেই মাত্রা ব্যবহারযোগ্য না তাঁর অস্তিত্ব থাকা না থাকা অমূলক। উদাহরণ স্বরূপ, আপনার হাতে একটি উচ্চতা মাপার ফিতা দিয়ে, একটি অন্ধকার হল ঘরে ঢুকিয়ে দেয়া হল। এবং আপনাকে ঘরটির তাপমাত্রা বের করতে বলা হল। আপনি আপনার উচ্চতা মাপার ফিতা ব্যবহার করে কখনো ঘরের তাপমাত্রা বের করতে পারবেন না। কারণ এই যন্ত্র তাপমাত্রা পরিমাপযোগ্য না।
শেষ কথা
আমার ধারনা “অসময়” বা “সময় হীন” যদি কোন বিশ্ব থেকে থাকে তা হবে অ-পরিমাপযোগ্য, এবং পৃথিবীর ফিজিক্সের ধারণা গুলোর সম্পূর্ণ বিপরীত। ঐ বিশ্বে ২+২= ১ থেকে শুরু করে ইনফিনিটি পর্যন্ত, এবং প্রতিটিই সঠিক।
পুনশ্চঃ আমার লিখার ভাষা একটু কঠিন হয়। আসলে কিছু বিষয় সহজ ভাবে লিখলে অর্থ ভিন্ন হয়ে যায়। আর আমার কাছে মনে হয়, ভিন্ন অর্থ হয় এমন সহজ ভাষায় লিখার চেয়ে ইক্সাক্ট অর্থ হয় এমন ভাষায় লিখা উত্তম, তা একটু কঠিন হলেও ক্ষতি নেই।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১:০৫