অনেক ছোট বেলায় কোলকাতার এক লেখকের একটি গল্পের বই পড়ে ছিলাম " রাত্রি যখন দু'টো " । গল্পের মূল বিষয় এক রক্তপায়ী মানব (ভ্যাম্পায়ার আর কি) রাত দু'টো র দিকে এসে নিয়ম করে গল্পের নায়িকার রক্ত পান করে। আমার সাথে ঐ রক্তপায়ী মানবের কোন মিল নেই, তবে আমিও নিয়ম করে রাত দু'টো বাজে হাবি জাবি চিন্তা করতে বসি...চিন্তা গুলো কেমন জানি মাঝে মাঝে রক্তপায়ীর ঐ নেশার মত কাজ করে।
"জেনেটিক মেমোরি" বলে মনোবিজ্ঞানে একটা বিষয় আছে, "জেনেটিক মেমোরি" বলতে বোঝায়, মানুষের এমন এক স্মৃতি যা জন্মের আগে থেকেই মানুষের মস্তিষ্কে থাকে অর্থাৎ ভ্রুন অবস্থাতেই থাকে। এই "জেনেটিক মেমোরি" থেকেই আমরা জানতে পারি, জন্মের পরপরই খাবার কিভাবে খেতে হয়, কিভাবে ভাষা বা সংকেত দিতে হয় ইত্যাদি। জেনেটিক মেমোরি কাজ করে মানুষের অবচেতন মনে।
পৃথিবীর সব মানুষ একে অন্যের সাথে সম্পর্কযুক্ত ডি এন এ এর মাধ্যমে। আমদের প্রতিটি নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয়িত হয় আমদের ডি এন এ তে, এবং বংশ পরম্পরায় তা ছড়িয়ে পড়ে অন্যের মাঝে। এই "জেনেটিক মেমোরি" র কারনেই অনেক সময় দাদা বা পর দাদার আচার আচরন নাতি নাত্নির ভেতরে দেখা যায়। দেখা যায়, কেউ হয়ত তার দাদা-দাদি বা নানা-নানি কে দেখেনি কিন্তু আচার-আচরণ ঠিক তার দাদা বা নানার মত। আমাদের আদি পুর্বপুরুষের কিছু জেনেটিক মেমরি আমাদের ভেতর জন্ম থেকেই আছে যেমন, অন্ধকারকে ভয় পাওয়া বা একা চলা ফেরা করার সময় গা ছম ছম করা।
এখন আসি আমার কথায়, আমাদের এই মেমোরীর অনেক কম অংশ সম্পর্কে আমরা জানতে পেরেছি। আর এই বিষয়ে গবেষনাও হয়েছে অনেক কম। আমার কেন জানি মনে হয়, আমরা পৃথিবীর সব মানুষ সব মানুষের সাথে সম্পর্কযুক্ত এবং কিছু জটিল সংকেত আমরা প্রতিনিয়ত আদান-প্রদান করি আমাদের ডি এন এ -এর মাধ্যমে। বিজ্ঞানী সেমন কিরলিয়ান তার বিখ্যাত "কিরলিয়ান ফটোগ্রাফী" -তে দেখিয়েছেন কিভাবে দুইটি মুদ্রার মধ্যে তড়িৎ প্রবাহের ফলে সংকেতের বিকিরন ঘটে। আমার মনে হয় যদি মুদ্রার অনু থেকে প্রতিনিয়ত সংকেত বের হয় তাহলে আমাদের ডি এন এ থেকেও তা হতে পারে।
ধরুন, আমাদের এই জেনেটিক মেমোরি কিছুটা গাছের মত, সবার মেমোরি আলাদা হলেও শিকড় এক। সবার জেনেটিক মেমোরি একত্রিত হচ্ছে এক জায়গায়। কারো কোন কিছু জানার বা শেখার দরকার হলে ব্যাস যে জানে তার মেমোরী থেকে পার করে নিয়ে নিলেই হলো (বি. দ্র. "মার্কেটিং রিসার্চ" নতুন করে পড়তে হতো না মালহোত্রা সাহেবের জেনেটিক মেমোরী থেকে পার করে নিলেই চলতো পৃথিবী অনেক দ্রুত পরিবর্তন হতো, সবাই নতুন কিছু করার চেষ্টা করত, নতুন অভিজ্ঞতা নিতে চেষ্টা করত, "জেনেটিক মেমোরি" সমৃদ্ধ করতো। নোবেল পুরষ্কার দেয়া হতো "জেনেটিক মেমোরি" -র সাইজের উপর। মোবাইলে কথা বলার দরকার হতো না, ডি এন এ সংকেত ব্যবহার করে যোগাযোগ করা যেত।
কেউ চাইলেও কারো জীবন থেকে দূরে সরে যেতে পারত না, এমন কি মরে গেলেও না…
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৩:০৭