♠ ১৫ই আগস্ট, ২০১৫
সময়: ভোর ৫টা ৪০ মিনিট
আজানের শব্দে ঘুম ভেঙ্গেছে অনেকক্ষণ আগে। কিন্তু বিছানা ছেড়ে চট্ করে উঠতে পারছেন না। ইদানীং কেমন জানি শরীরটা বেশিই দুর্বল লাগছে। আসলে বয়সটাও তো আর কম হল না। ঠিক করে হিসাব করলে ৯৫ বছর ৪ মাস ২৮ দিন ৯ ঘণ্টা ৪০ মিনিট। আর কিছুদিন শরীরটা টানতে পারলে কে জানে হয়ত গিনেস বুকেই নাম উঠে যাবে “পৃথিবীর সব থেকে বেশি বয়সের বুড়ো”।
অনেক চেষ্টার পর বিছানা ছেড়ে নামার চিন্তা বাদ দিয়ে দিলেন। মাথার পাশের দিকটার টেবিলে রাখা ছোট্ট মাটির দলা হাতে নিয়ে তাইমুম করে বিছানায় আধা-বসা হয়েই ফজরের দু-রাকাত ফরজ নামাজ পড়ে নিলেন। ইদানীং নামাজের রাকাত মনে থাকে না। দু-রাকাতের জায়গায় এক রাকাত অথবা তিন রাকাত হয়ে যায়। আসলে মনের আর দোষ কি; বয়স তো আর কম হল না।
নামাজ এর সালাম ফিরতেই পাশে তাকিয়ে দেখলেন রমা এক বাটি মুড়ি আর এক কাপ চা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রমা ধানমন্ডির এই ৩২ নাম্বার বাড়িতে কাজ করে সেই ১৯৬৯ সাল থেকে। রমার বয়সও কম হয়নি, মুখের সব দাঁত পড়ে গেছে। হাসলে ভয়ংকর লাগে।
বঙ্গবন্ধু চায়ের কাপ হাতে নিয়েই রমা কে একটা দিয়াশলাই আনতে বললেন। অনেক দিন হয় পাইপ টানা হয় না, আজকে কেমন জানি খুব পাইপ টানতে ইচ্ছে হচ্ছে। রমা বলল, “হুজুর ডাক্তার-সাব বলেছেন, আপনার জন্য পাইপ টানা আর আজরাইলরে দাওয়াত দিয়া খানা-খাদ্য পেশ করা সমান কথা। ফুসফুসে আর দম নাই, জয় সাহেব শুনলে আমার আর রক্ষা নাই।”
বঙ্গবন্ধু বললেন, “যা বলছি তাই শোন, একটা দিয়াশলাই দিয়ে যা।”
ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপে এক চুমুক দিয়েই বিছানার পাশে রাখা ল্যাপটপের অন বোতামে চাপ দিলেন। ভারী আজব জিনিস ছোট্ট একটা জিনিসের ভেতর গোটা পৃথিবীর সব খবর পাওয়া যায়, বিজ্ঞান আসলেই বেশ এগিয়েছে।
ইন্টারনেটে লগ ইন করে প্রথমেই ঢুকলেন একটা নিউজ পোর্টালে। ইদানীং কিছুই মনে থাকে না। এক খবর পড়ে অন্য খবরে গেলেই আগের খবরের কথা মনে থাকে না। লিখা পরতেও বেশ কষ্ট হয়। তবুও ভোরে খবরের কাগজ আসার আগেই একবার তাজা খবর গুলোয় চোখ বুলিয়ে নিতে মন্দ লাগে না।
শুরু করলেন খেলার পাতা দিয়ে। ছোট বেলা থেকেই ফুটবল তার প্রিয় খেলা, প্রিয় খেলোয়াড় স্টানলি ম্যাথুস আর আলফ্রাদো ডি স্তাফ্যানো, ১৯২০ এর দশকের মাঠ কাঁপানো ফুটবলার। ইদানিং ক্রিকেট টাও অতটা খারাপ লাগেনা। বিশেষ করে পাকিস্তানের সাথে খেলা থাকলে তো কথাই নেই। মনে হয় আবার একাত্তরে ফিরে গেছি।
যাইহোক, খেলার পাতা খুলেই মনটা আনন্দে ভরে গেলো বঙ্গবন্ধুর।
শিরোনাম: “ভারতকে হারিয়ে বড় স্বপ্ন”
বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবল দল ভারতকে হারিয়েছে ২ঃ১ গোলে। বঙ্গবন্ধু মনে মনে বললেন, “শুকুর আলহামদুলিল্লাহ”।
এর পর ক্লিক করলেন অর্থনীতির পাতায়। চোখ আঁটকে গেল প্রথম শিরোনামেই
“বাংলাদেশ আজ উচ্চবিত্ত আয়ের দেশের সমানে সমান।”
স্টাফ রিপোর্টার: গতকাল জাতিসংঘ অধিবেশনের শেষ দিনে জাতিসংঘের
অধিভুক্ত দেশ গুলোর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে মানদণ্ড রেখে সদস্য রাষ্ট্র
গুলোকে বিভিন্ন তালিকায় ফেলা হয়েছে। এই তালিকায় গত ৫ বছরে
সবচেয়ে বেশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ার
মধ্যে প্রথম উচ্চবিত্ত বা উন্নত দেশ হিসাবে বাংলাদেশের নাম ঘোষণা
করা হয়েছে। ...এরপর পৃষ্ঠা ২ কলাম ১
বঙ্গবন্ধুর চোখে পানি এসে গেল। তার বহু আকাঙ্ক্ষিত সোনার বাংলা আজ ২৪ ক্যারেট খাঁটি সোনার দেশ, কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের চরণ আজ সার্থক হয়েছে। দেশে দারিদ্রের হার ১০ ভাগেরও নিচে নেমে এসেছে, বেকারত্ব নেই, উৎপাদন প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ আজ শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় নয় গোটা এশিয়ার মধ্যে প্রথম অবস্থানে। মানুষের মাঝে আজ অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের হাহাকার নেই। তার হাতে গড়া দেশ ও গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা দেশের আপামর-জনসাধারণের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
উনি ক্লিক করলেন, আন্তর্জাতিক পাতায়,
বঙ্গবন্ধুকে মাহাথির মহম্মদ বা নেলসন ম্যান্ডেলার থেকেও মহান নেতার মর্যাদা দিয়ে আমেরিকার টাইম ম্যাগাজিন ইয়া-বড় এক কাভার স্টোরি ছেপেছে এবারের সংখ্যায়।
শিরোনাম: “The Greatest Leader of this Century”
“এই শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ নেতা”
যেখানে বলা হয়েছে, মাথা-থির মহম্মদ ২৫ বছর একচ্ছত্র ভাবে ক্ষমতায় থেকে আজ মালোশিয়াকে যে পর্যায়ে নিয়ে গেছেন বঙ্গবন্ধু তার রাজনৈতিক জীবনে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তাঁর থেকেও কম সময়ে বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত করতে পেরেছিলেন। হয়ত কিছু সময় তিনি দেশে একছত্র ভাবে ক্ষমতায় থেকেছেন কিন্তু তা একটি যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশকে নতুন করে বিনির্মাণের স্বার্থেই। ঐতিহাসিকগণ মনে করেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট যে বীভৎস হত্যা পরিকল্পনা করা হয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারকে নিয়ে তা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আগেই আঁচ করতে পেড়েছিলেন তাঁর বিচক্ষণতা ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন মানসিকতার কারণে সেদিন হত্যার ষড়যন্ত্রকারীরা তাঁর কোন ক্ষতি করতে পারেনি। তবে উনি এই যড়যন্ত্রের কারণে এটুকু উপলব্ধি করতে পেড়েছিলেন দেশের সব মানুষ তাঁর উপর আস্থা ও সন্তুষ্টি রাখলেও তাঁর পা চাটাদের উপরে অসন্তুষ্ট। কিছু পরিবর্তন তো আনতেই হবে। তিনি শক্ত হাতে গোটা দেশকে একতা বদ্ধ করলেন আর যারা তাঁর নাম ভাঙ্গিয়ে অন্যায় অত্যাচার করছিল তাদের কে দ্বিতীয় কোন সুযোগ দিলেন না কারণ মীর জাফরা আজীবনই মীর জাফর।
রাষ্ট্র বিজ্ঞানীগণ আরও বলেন, ব্যক্তি মুজিব যখন জাতীয় মুজিবে পরিণত হলেন তখন থেকেই দেশ উন্নতি লাভ করছিল। বঙ্গবন্ধু দেশকে ভালবাসতেন বিশ্বাস করতেন তার প্রতি দেশের মানুষের অকৃত্তিম ভালবাসা কিন্তু এই ভালবাসা বা ঔদার্য কখনো ছাপিয়ে যায়নি দৃঢ়চিত্ত কে। সকল দেশেই সুবিধাবাদী পা চাটা মানুষ থাকে, এদের সংখ্যাও সব সময় বেশিই হয়, কিন্তু বঙ্গবন্ধু যেমন দেশের মানুষকে জান দিয়ে ভালবাসতেন ঠিক সেভাবে মানুষকে চিনতেও পারতেন। তার সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপের জন্যই আজকের বাংলাদেশের এই অগ্রগতি। নেলসন ম্যান্ডেলা নিঃসন্দেহে দক্ষিণ আফ্রিকার মহান নেতা। উনি কাল-সাদা তথা জাতি বৈষম্য দূর করেছেন। উনার আন্দোলনে উনি চর্ম চক্ষু ব্যবহার করেই বুঝতেন কারা মিত্র আর কারা কপটচারী শত্রু। কিন্তু বাংলাদেশের সব মানুষ এক জাতির সেখান থেকে কপটচারীদের আলাদা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া চারটি খানি কথা নয়। মুজিব, বাঙালি জাতির জনক, সর্বকালের পৃথিবীর মহান নেতাদের একজন...
(চলবে...)
(বিশেষ দ্রষ্টব্য ১ঃ লিখাটি সম্পূর্ণই কাল্পনিক ইহা নিঃসন্দেহে আপনারা ইতিমধ্যে বুঝিয়া গিয়াছেন। এই নিমিত্ত, নতুন করিয়া তাহাদিগকে বলিবার আদিখ্যেতা দেখাইতে ছিনা।
বিশেষ দ্রষ্টব্য ২ঃ শুধু মাত্র তাহাদের জন্য, যাহারা একটু-আকটু রহস্য পছন্দ করেন এবং ইহাকে সম্পূর্ণ কাল্পনিক ভাবতে নারাজ, তাহাদের জ্ঞাতার্থে কিছু বিষয়:
“বিজ্ঞানের একটি অতীব আলোচিত বিষয় কোয়ান্টাম-মেকানিক্স (বিস্তারিত জানতে গুগল)। কোয়ান্টাম-মেকানিক্স এর ভাষ্যমতে, প্রতিটি সম্ভাবনার ভিত্তিতে একটি করে ইউনিভার্স তৈরি হতে পারে। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে আমাদের এই ইউনিভার্সে হয়ত বঙ্গবন্ধু শাহাদাৎ বরণ করেছেন, কিন্তু হতে পারে আরেকটি ইউনিভার্সে উনি ঠিক জীবিত আছেন। বেঁচে আছেন আমাদের মাঝে, তাঁর প্রিয় মাতৃভূমিতে... এই বাংলাদেশে।)
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৫:২০