somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তাঁকে শান্তিতে ঘুমাতে দিই, শাকুর মজিদ

০৫ ই আগস্ট, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শান্তিপ্রিয় মানুষটি মরে গিয়েও আর শান্তি পাচ্ছেন না। ১৬ হাজার মাইল থেকে উড়ে এসেও খুব সহজে ঠাঁই পাননি মাটির আশ্রয়ে। এত টানাহেঁচড়ার পর সব যখন শান্ত হবে, সবাই যখন বলতে শুরু করবে ‘তোমার কীর্তির চেয়ে তুমি মহৎ/ তাই তব জীবনের রথ/ পশ্চাতে ফেলিয়া যায় কীর্তিরে তোমার, বারংবার’—তখন শুরু হলো নতুন নাটক।
প্রথমে এক ঘণ্টার, তারপর দীর্ঘ ধারাবাহিক, এখন শুরু হয়েছে ডেইলি সোপ। প্রতিদিনের নাটক। নতুন নতুন নাটকের কাহিনি তৈরি হচ্ছে আর উদ্ধার করা হচ্ছে নতুন করে তাঁর মৃত্যুরহস্য। কথা উঠছে, তাঁর একান্ত স্বজনেরাই নাকি তাঁকে অবহেলায় মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, অত্যন্ত ব্যয়বহুল হাসপাতাল থেকে সাশ্রয়ী হাসপাতালে লেখক সুস্থ অবস্থায় স্বেচ্ছায় কেন স্থানান্তরিত হলেন, সেটা নিয়েও এসব মায়াকান্নাকারীর বিলাপের শেষ নেই। অথচ অন্তর্বর্তীকালীন চিকিৎসা-ছুটিতে লেখক যখন দেশে আসেন, তখন তো নিজের মুখেই হাসপাতাল স্থানান্তরিত হওয়ার বিষয়টিকে যথাযথ সিদ্ধান্ত বলেই বহুবার তাঁর বন্ধুমহলে বলেছিলেন।
স্লোয়ান-ক্যাটারিং মেমোরিয়াল নামের সবচেয়ে ব্যয়বহুল এই ক্যানসার হাসপাতালে এই লেখককে যদি সম্পূর্ণ চিকিৎসা নিতে হতো, তাহলে পুরো সময়ের জন্য এর বিল আসত বাংলাদেশি টাকায় ২০ থেকে ৩০ কোটি। এ তথ্য জানা গেছে জ্যোতিপ্রকাশ দত্তের কাছ থেকে, সেখানে বাংলাদেশের একজন লেখকের পক্ষে তাঁর সমূহ সঞ্চয় খরচ করেও এর চিকিৎসা ব্যয় মেটানো সম্ভব হতো না। আর যেহেতু তিনি মানুষের কাছে হাত পাতার মতো কেউ ছিলেন না, এমনকি সরকারি সাহায্যও ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন, সেখানে যদি হাসপাতালের কোনো বিশেষ ব্যবস্থায় তিনি সাশ্রয়ী চিকিৎসাসেবা নিয়েও থাকেন, সে জন্য কেন তাঁকে অভিযুক্ত করা হবে? ছোটখাটো রাগ-অভিমান-অনুযোগ নিয়ে কেউ কেউ বিষোদ্গার করেছেন ফেসবুক-ব্লগে। প্রিয় মানুষের হারিয়ে যাওয়ার এই শোক ভুলতে গিয়ে একে অন্যকে দোষারোপও হয়তো করেছেন, কিন্তু তাঁর একান্ত প্রিয়জনেরা ‘ষড়যন্ত্র করে’ তাঁকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেবে এবং এ কথা আমাদের বিশ্বাস করতে হবে—এমন কেন?
একজন লেখক, তিনি যতটা না তাঁর পরিবারের, তার চেয়ে বেশি পাঠকের। কিন্তু আমরা কয়েক দিন ধরে এই লেখককে একটি পারিবারিক গণ্ডির মধ্যে ফেলে সেই লেখকের মহান সত্তাকে অনেক বেশি খেলনা বানিয়ে ফেলছি। আমরা আর কত ফেলনা হতে দেব এই মহান লেখককে?

এই ডিজিটাল বিশ্বপাড়ায় নাগরিকেরা এখন কেউ কারও চেয়ে কোনো দূরত্বেই অবস্থান করেন না। সামান্য আবেগ প্রকাশ করতে গিয়ে কেউ হয়তো নিজের অজান্তেই এমন ধূম্রজাল সৃষ্টি করে থাকেন, সেটা কী পরিমাণ ভয়াবহ পরিণতি নিয়ে আসতে পারে, তা হয়তো চিন্তাও করেন না।
প্রয়াত লেখক হুমায়ূন আহমেদ তাঁর মৃত্যুচিন্তার কথা বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে প্রকাশ করেছিলেন। ১৯৯০ সালে প্রকাশিত চাঁদের আলোয় কয়েকজন যুবক উপন্যাসের শুরুতে ‘আলেকজান্ডার পোপ’-এর কয়েক ছত্র ব্যবহার করেছিলেন। লাইনগুলো ছিল এমন—
‘When I am dead, dearest
Sing no song for me,
Plant thou no roses at my head
Nor shady cypress tree.’
বোঝাই যাচ্ছে, খুব নীরবে, নিভৃতে, একান্তে শুয়ে থাকতে চেয়েছিলেন তিনি।
তাঁর শেষের দিকে আত্মজৈবনিক গ্রন্থ কাঠপেন্সিল—এও ‘অসুখ’ নামক একটা অধ্যায়েও তাঁর এই চিন্তার প্রকাশ ঘটেছিল। (পৃষ্ঠা-৭৫)
‘...আমার উচিত, কাগজ-কলম নিয়ে এপিটাফ লিখে ফেলা। কল্পনায় দেখছি, নুহাশপল্লীর সবুজের মধ্যে ধবধবে শ্বেতপাথরের কবর। তার গায়ে লেখা—
‘চরণ ধরিতে দিয়োগো আমারে
নিয়ো না, নিয়ো না সরায়ে।’
আসুন, লোকটিকে আমরা শান্তিতে ঘুমাতে দিই।


শাকুর মজিদ: স্থপতি ও লেখক।

View this link
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×