বাংলাদেশের রাজনীতিতে পরবর্তী সময় যেসব রাজাকার আল-বাদর ও ঘাতক দালালরা পুনর্বাসিত হয়েছে, মুসলিম লীগ নেতা আয়েন উদ্দীন তাদের অন্যতম। ১৯৮৬’র স্বৈরাচার সরকারের সংসদে মুসলিম লীগের সংসদীয় দলের নেতা ছিলো সে। ১৯৭১এ উত্তরবঙ্গের ত্রাস হিসেবে পরিচিত আয়েন উদ্দিন তথাকথিত শান্তিকমিটির রাজশাহী শাখার অন্যতম নেতা ছিলো। ৯ জুন আয়েন উদ্দিনের অন্যতম সহযোগী রাজশাহী মুসলিম লীগের (কাউন্সিল) সেক্রেটারি আব্দুল মান্নান রাজশাহীর পরিস্থিতি সম্পর্কে বিবৃতি দেয় যে, ‘দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর আগমনের পর এখানকার জনমনে পূর্ণ নিরাপত্তা ফিরে এসেছে।’ রাজশাহীতে তখন কি পরিস্থিতি ছিল তার প্রমাণ পদ্মাপারের বধ্যভূমি আর বিশ্ববিদ্যালয় রেলস্টেশনের কাছের গণকবর।
১৯৭১এর মার্চ থেকেই স্বাধীনতাকামী শ্রমিকরা কলকারখানায় অসহযোগ আন্দোলন শুরু করে। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিরা চেষ্টা চালায় কলকারখানার পরিস্থিতি স্বাভাবিক দেখানোর। এরই সূত্র ধরে ৯ জুন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি পাক বাহিনীর সহযোগী ঘাতক সাইফুর রহমান শ্রমিকদের কাজে যোগ দেয়ার নির্দেশ দেয়।
একটি শ্রেণী এ সময় ‘আওয়ামী অ্যাকশান কমিটি’ গঠনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে। অ্যাকশান কমিটির সভাপতি মীর ওয়াইজ মুহম্মদ ফারুক দেশের সার্বিক অবস্থার জন্যে মুক্তিযোদ্ধাদের দায়ী করেন। তাদের চিহ্নিত করেন খুনি, বিচ্ছিন্নতাবাদী, অগ্নিসংযোগকারী হিসেবে।
এই দিন কাজী তসাদ্দক আলী ও এএফএম ইসাকের নেতৃত্বে সংগঠিত হয় ময়মনসিংহের নান্দালে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র। আর পাকিস্তানি বাহিনীর গুণকীর্তন করে বিবৃতি দেয় মাগুরা আওয়ামী লীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট মীর তয়ীদ হোসেন।
দেশের ভেতর তখন এ দেশের নিরীহ অসহায় মানুষ গণহত্যার শিকার। অন্যদিকে পাকিস্তানের দালালরা মেতে উঠেছে ক্ষমতা ভাগাভাগির ষড়যন্ত্রে। এদিন খাজা খয়ের উদ্দিন এবং শফিকুল ইসলাম রাওয়াল পিন্ডিতে পাকিস্তানের অখ-তা ও আদর্শের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ শাসনতান্ত্রিক ফর্মুলা উদ্ভাবনের উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনার কথা তুলে ধরে।
(তথ্যসূত্র: দৈনিক পাকিস্তান ও আজাদ ৯, ১০, ১১ও ১২ জুন, ১৯৭১ ঈসায়ী।)