somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জানি হাত বাড়ালেই পাবো না

০৬ ই জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৯:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আপু,
যতোদিন বাসায় ছিলাম আমার ততোদিন এই অবাধ্য নষ্টছেলে টাকে ছায়া দিয়েছিলি তুই।
তোর বইয়ের ভাজে জমানো টাকা কখনো চুরি করে আর কখনো তোর কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে কিনেছি ---তিন গোয়েন্দা,মাসুদ রানা আরো কত্তো বই।বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাওয়ার বেলায় যখন আমার হিটলাররুপী বাবার পারমিশন পেতাম না তখন উকিল বাবার কাছে আমার উকিল ছিলি তুই।আমার সবজি খেতাম না তাই আমার জন্য আলাদা করে দুই টুকরা মাছ/মাংস তুলে রাখতিস তুই।রাত জেগে একা পড়তে ইচ্ছে করতো না তাই তুই জেগে থাকতিস আমার সাথে আর একটু পর পর আমার জন্য চা করে নিয়ে আসতি।আম্মুর সাথে রাগ করে যখন খেতাম না তখন প্লেটে করে ভাত এনে খাইয়ে দিতি তুই।আমার জেদ গুলোকে আস্কারা দিস আব্বু-আম্মুর এই অপবাদ কখনো তোর ভালোবাসা কমাতে পারেনি।ঈদের সময় আমার ডিমান্ড মিটতো শুধু তোর জন্য,তুই নিজের জামা সেক্রিফাইজ করে বলতি,"আম্মু প্লিজ আমার দুইটা লাগবে না আমার ভাইটাকে একটা সুন্দর পানজাবী কিনে দাও।"
এখন এসব শুধুই অতীত।তোকে লাল টুকটুকে বেনারসী কিনে ঋণ শোধ করার সুযোগটা আমাকে দিলি না।শেযবার বলেছিলি ভাই আমি তো জীবনে কিছু পেলাম নার।আমি তোকে কঠিন ঝারি দিয়ে বলেছিলাম এসব আজাইরা প্যাচাল আমার সাথে পাড়বিনা।আমি জানতাম নারে তুই আমার বুকে দাগ রেখে যাওয়ার জন্য কথাটা বলেছিলি।আমার অনেক আফসোস তোর কাছে ক্ষমা চাউয়া হয়নি আমার।
জানি, এখন তোকে " হাত বাড়ালেই পাবো না"।

বন্ধু রসি,
উচ্চতা কম ছিলো তোর তাই তোকে "লিটল ওয়ান" বলে অনেক খেপিয়েছি।
টুয়েন্টি নাইন খেলার সময় জোড় করে তোকে সরিয়ে নিজে বসেছি।রাতে একসাথে এক বিছানায় ডাবলিং করার সময় নিজের অজান্তে তোর ছোট্টো শরীরের উপর পা তুলে দিয়েছিলাম।ইনটারভিউ দিতে যাওয়ার জন্য সকালে ডেকে দিতে বলেছিলাম তুই সারারাত জেগে আমাকে কল দিয়ে ঘুম ভাঙিয়েছিলি আমার ঘুম ভাঙানো নিশ্চিত করার চট্টগ্রামে বাসার টিএনটি তে কল দিয়ে আম্মুকে বলেছিলি আমি ঘুম থেকে উঠতে না পারলে চাকরীর ইনটারভিউ মিস করবো।এটা নিয়ে তোর সাথে অনেক রাগারাগি করেছিলাম।কিন্তু পরে বুঝেছি তুই আমাকে কতো ভালোবাসিস। হঠাৎ কেনো "আলবিদা,আলবিদা' মেসেজ পাঠিয়েছিলে তা বুঝতে না পেরে একচোট হেসে বলেছিলাম "লিটল ওয়ান,তুই পুরাই আজাইরা কেনো কি করিস তা আজো আমি ধরতে পারলাম না"। সত্যি বলছি আমি আজো বুঝতে পারিনি কেনো তুই আত্মহননের পথ বেচেঁ নিয়েছিলি।জানি এখন সব অতীত।


জানি, তোকে আর "হাত বাড়ালেই পাবো না"।


প্রিয় খুকী,
ক্লাস ফাইভে সেন্টমেরীসের কনক্রিট মাঠে দৌড়নোর সময় যখন পড়ে গিয়ে রক্তাক্ত হয়েছিলাম তখন তুমি কাদঁছিলে আর চিৎকার করে সবাইকে ডাকছিলে।আমি যখন ক্লাস এইটে বৃত্তি পেলাম তখন তুমি তোমার জামনো ঈদি দিয়ে আমাকে ক্রিকেট খেলার ব্যাট কিনে দিয়েছিলে।আমি যখন পাড়ার গলিতে ক্রিকেট খেলতাম তখন আমার সবচে বড় ফ্যান ছিলে তুমি।আমি আমি ছক্কা মারার পর তোমাকে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করাটা আজো আমার কানে বাজে।আমি যখন মেট্রিকে ভালো করলাম আবার তুমি বাসা থেকে টাকা চুরি করে আমার জন্য আড়ং এর পানজাবী কিনেছিলে।আমাকে তুমি "টিউবলাইট" বলে অনেক ক্ষেপাতে।কিন্তু আমি তখন এর অর্থ জানতাম না।আমি বুঝতে পারিনি ভালোবাসা প্রকাশে এরচে বেশী কিছু করার ছিলো না তোমার।বুয়েটে বসে একদিন খবর পেলাম তোমার বিয়ে।সত্যি বলতে কি তখনো আমার গাঁয়ে লাগেনি।এখন আমি সঙ্গীহীন তাই হয়তো তোমার কথা খুব বেশী মনে পড়ে।জানি এখন হয়তো তোমার মনে আমর জন্য কোনো ভালোবাসা নেই কারণ ঈদের বন্ধে তুমি আমকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলেছো তোমার সব ভালোবাসা তোমার খোকা-খুকুর জন্য।জানি আমি তোমার কাছে অতীত ছাড়া কিছু নই।
জানি, হাত বাড়ালেই তোমাকে পাবো না

ইতি
নষ্টছেলে

বিঃদ্রঃ বন্ধু ডক্টর আলাউদ্দীন শরীফের স্ট্যাটাস "জানি, হাত বাড়ালেই তোমাকে পাবো না" আমার কাছে এলিজি হয়ে ওঠে।
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ বিপ্রতীপ পাপ্পু
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫৬
৫৭টি মন্তব্য ৫০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শেখ হাসিনার পালানো ও নতুন ষড়যন্ত্র: জনগণ কি এবার তার বিচার দেখবে?

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ২৫ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ৮:০৯

শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে। অথচ এখন আবার দেশে ফেরার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। এক সময় নিজেকে দেশের একমাত্র অভিভাবক দাবি করা এই স্বৈরাচার এখন কলকাতার বাবুদের সঙ্গে বসে নতুন খেলার ছক... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার মিশন কিংস পার্টির

লিখেছেন sabbir2cool, ২৫ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৩



মুহাম্মদ ইউনূসের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল রাজনৈতিক দল গঠন করার। নব্বই দশক থেকে শুরু করে অদ্যাবধি সরাসরি পেরে উঠতে পারেননি। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি সরাসরি না করলেও তার অধীনস্থরা এটা করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

=খন্ড কাব্য ১-৪=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৫ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ২:৫৮


১।মনের অসুখ, মন আকাশ বৃষ্টির ভারে নুয়ে পড়েছে
চোখে বৃষ্টি নামার আগেই তুমি, বলো ভালোবাসি
অথবা চোখে তাকিয়ে বলো এ কাজল চোখে মানায় না বৃষ্টি
বলো, তুমি হাসো মন খুলে
ব্যস! চাই না কিছু... ...বাকিটুকু পড়ুন

“বিবেকহীনদের জন্য কিছু প্রশ্ন”

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ২৫ শে মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:১০

ফেসবুকে দেখি কিছু মানুষ “আপা আপা” বলে চাটুকারিতার নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। মনে হয় তাদের আত্মা পর্যন্ত বেরিয়ে যাবে, তবু তারা অন্ধভক্তি ছাড়বে না! প্রশ্ন হলো—আপনারা কি সত্যিই অন্ধ, নাকি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সারজিস আলম : শূন্য থেকে কোটিপতি বনে যাওয়া একজন স্বপ্নবাজ তরুণ

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৫ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:৫০


জুলাই অভ্যুত্থান বাংলাদেশের তরুণদের জন্য একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। বাংলাদেশের অগণিত তরুণ তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের উদ্দেশ্যে রাস্তায় নামলে সৃষ্টি হয় নতুন উপাখ্যান। বিগত সরকারের আমলের ঘুষ, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির বলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×