শাহরুখ এবং তার ভক্তদের নিয়ে কিছু বলার নেই। একজন সেলিব্রেটি প্রফেশনাল এনটারটেইনার হিসেবে তার নিজের কাজটুকু করেছে আর ভক্তকূল তা প্রান ভরে উপভোগ করে নিজেদের ধন্য করেছে। আমার সমস্যা ভাষা নিয়ে। আমি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে শেয়ার করি।
ঘটনাঃ১ টিউশনীতে ছাত্রীকে পড়াচ্ছি হঠাৎ ছাত্রীর কল আসলো। ছাত্রী কল রিসিভ করে অনর্গল ৫ মিনিট হিন্দীতে কথা বললো তার বান্ধবীর সাথে।
ঘটনাঃ২ বাসায় ছোটো খালা বেড়াতে আসল সাথে আসলো ৩ বছর বয়সী ছোট্টো ফুটফুটে নাহিদ। আমাকে দেখেই ছোটো খালা নাহিদকে বললো সোনামনি ভাইয়াকে একটু রণবীরের গানটা গেয়ে শোনাও.....সাথে সাথে ছোট্টো নাহিদ গেয়ে উঠলো "বাচনা এ হাসিনো নো মে গায়া.... "। সত্যিকথা বলতে কি আমার তখন নাহিদকে অনেক কিউট লেগেছিলো।
ঘটনাঃ৩ ঈদের ছুটিতে বাসায় আরাম করে শুয়ে বসে খেলা দেখার প্রস্তুতি নিচ্ছি ঠিক তখনি ছোটো বোন এসে ঘোষণা দিলো "সিরিয়াল টাইম"। বাসা ছেড়ে হল লাইফ শুরু করার পর বাসার অনেক কিছু থেকে অধিকর হারিয়ে ফেলেছি তবুও ছোটো বোনের সাথে কিছুক্ষণ ব্যর্থ যুদ্ধ চালিয়ে রিমোর্ট ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছি কারণ মিত্রপক্ষ (আম্মু এবং বুয়া) শক্তিশালী ছিলো।
ঘটনাঃ৪ ফেসবুকের হোমপেইজে প্রতিদিন ২/৪ টা হিন্দী স্ট্যাটাস খুব নরমাল ঘটনা। সবচে মজার ব্যাপার হলো এসব স্ট্যাটাসের কমেন্টসগুলো অবধারিতভাবে হিন্দীতে থাকত। দেখে মনে ভারচুয়াল ইন্ডিয়ায় এসে পড়েছি। দু' একবার হিন্দীভাষীদের কাছে অনুবাদ চেয়ে নাকাল হয়েছি। একদিন আমি নিজে একটা হিন্দী স্ট্যাটাস দিয়ে হিট হওয়ার ট্রাই দিলাম..
"মেরা হিন্দী বহুত দূরবল হে, বাট মেরে আশপাশ মে পোলাপান যেমনে হিন্দী স্ট্যাটাস দেতা হে এ্যান্ড হিন্দী মে বলতা হে মুজে বি হিন্দী শিখলেনা বহুত জরুরী হে"
কিন্তু বিধিবাম আমার হিন্দী নাকি বিন্দী(বাংলা + হিন্দী = বিন্দী) হইসে(হিন্দীভাষী ফ্রেন্ডদের দাবী অনুযায়ী)...এজন্য সবাই মিলে আমাকে অনেক তিরষ্কার করলো...বললো আমি এ ধরণের স্ট্যাটাস দিয়ে হিন্দী ভাষার রিয়েল সৌন্দর্যটা নষ্ট করেছি।
এবার আসি আমার ছোটোবেলার স্মৃতিকথায়-----
আমার শৈশব এবং কৈশোর যে পাড়ার কেটেছিলো সে পাড়ায় কিছু বখাটে বড় ভাই ছিলো (মা বলতেন বখাটে কারণ এরা পাড়ার এখানে সেখানে আড্ডাবাজী করে বেড়াতো এবং পড়ালেখার কোনো ঠিক ঠিকানা (এদের দু'একজন ভার্সিটিতে,কলেজে পড়লে ও বেশীরভাগ আন্ডার মেট্রিক ছিলো) ছিলো না। প্রতিবছর ডিসেম্বর মাসে বখাটে ভাইয়ারা বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান আয়োজন করতেন। এ অনুষ্ঠান দেখে আমার গায়ের লোম খাড়া হয়ে যেতো। কারণ এ অনুষ্ঠান মু্ক্তিযুদ্ধ নিয়ে নাটক হতো এবং মু্ক্তিযুদ্ধ নিয়ে গানগুলো যেমন "মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো যুদ্ধ করি, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে, সবকটা জানালা খুলে দাও না...ওরা আসবে চুপি চুপি..যারা এই দেশটাকেভালোবেসে দিয়ে গেছে প্রাণ,মাগো আমরা তোমার শান্তিপ্রিয় শান্তছেলে....ভয় নেই মা আমরা শত্রু এলে অস্ত্র হাতে ধতে জানি, পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে...রক্ত লাল..রক্ত লাল...রক্ত লাল ,.......এরকম আরো অনেক গান পরিবেশন করা হতো। এ অনুষ্ঠান যখন দেখতাম তখন মনে হতো পাকি শুয়োরগুলোকে এক্ষুনি গিয়ে মেরে ফেলি।
বাসা চেঞ্জ করার পর অনেক বছর পুরনো পাড়ায় যাওয়া হয় না। জানি না আমি যেভাবে দেখেছিলাম সে পাড়া এখন আর আগের মতো আছে নাকি অনেকখানি বদলে গেছে। সে যাই হোক আমাকে দেশপ্রেমের সুশিক্ষায় সুশিক্ষিত করার জন্য আমি আমার ছোটোবেলার বখাটে বড় ভাইদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি এবং শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।
এবার আসি বিজয় দিবস ২০১০
২০১০ সালে আমি ফ্যামিলি থেকে দূরে পুরোস্তুর একজন ব্যাচেলর মানুষ। এখন আর পাড়া প্রতিবেশী ও নেই পাড়ার সেই বখাটে ভাইয়ারা ও নেই। তাতে কি অন্তর শো বিচের মালিকের মতো বখাটে মানুষ তো আছেন।যারা আমাদের গ্লোবালাইজড বিজয় দিবসের স্বাদ দিলো। হয়তো আমার কাজিন ছোট্টো ফুটফুটে নাহিদ ২০ বছর পর ব্লগ লিখবে
"দো হাজার দাশ খা ভিক্টরি ডে"
কাই কেলিয়েরে ভাই........................................................................শাহরুখ কে লিয়েরে ভাই।
ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অপসংস্কৃতির করাল গ্রাস থেকে বাচাঁনোর জন্য কি কিছুই করার নেই আমাদের? ইদানীং হিন্দী সিনেমা দেখলে মনে হয় ইন্ডিয়ানদের রাষ্ট্রভাষা ইংলিস হয়ে যাচ্ছে।অর্থাৎ ইন্ডিয়ানরা ইংলিসকে প্রায়োরিটি দিচ্ছে।তাছাড়া উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করার জন্য আমাদের ইংল্যান্ড,আমেরিকা যাওয়ার দরকার হতে পারে কিন্তু ইন্ডিয়া যাওয়ার প্রয়োজন হবে না।হিন্দী ভাষাটা লালন করে হিন্দী সিরিয়ালগুলো।বস্তাপচা সিরিয়ালগুলো থেকে পজিটিভ কিছু শেখা পসিবল না। আসুন নিজেদের সংস্কৃতিকে কাদা মুক্ত রাখার জন্য আমরা হিন্দী ভাষায় কথা বলার প্র্যাকটিসটা (অনেকে হয়তো নতুন উদ্যমে হিন্দী রপ্ত করা শুরু করেছেন যাতে নেক্সট টাইম বলিউড স্টারদের সাথে স্টেজে উঠে বিব্রত হতে না হয়) নিরুৎসাহিত করি এবং যারা বলেন তাদের বুঝিয়ে শুনিয়ে সুপথে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করি।
আমি আমার হিন্দী সিরিয়াল আক্রান্ত মা,খালা,বাবা,চাচা এবং ভাইবোনদের মিনতি করে বলছি।
দ্য়া করে নিজের সংস্কৃতির উপর কাদা লেপ্টাবেন না
বিঃদ্রঃ বিংলিশ পাব্লিক (বাসস্থান সূত্রে বাংলাদেশী কিন্তু ইংলিশ মিডিয়াম কালচারে বড় হয়েছেন এবং বিকৃত বাংলা উচ্চারণে কথা বলেন)এই পোস্টটি তাদের জন্যে ও প্রযোজ্য। দয়া করে বাংলা ভাষাকে রেহাই দিন।আপনারা বাংলা না বললে বাংলাভাষার কোনো ক্ষতি হবে না বরং ভাষা তার সৌন্দর্য হানি থেকে বেচেঁ যাবে।