কারো জন্য অপেক্ষা নেই, প্রতীক্ষাও
কারো জন্য একদিন ছিলো গোলাপদিন
কারো জন্য একদিন আমি ক্ষয় করেছিলাম পাথরের পথ
কেউ একদিন শিশিরভেজা গোলাপ দিনে গুনেছিলো দিন
একদিন কারো মনে আমি ছিলাম পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব।
অভিমান করার লোক ছিলো একদিন
জবাবদিহি করারও লোক ছিলো
হৃদয়ের পাশে এক তাজা হৃদয় নিয়ে শুয়েছিলো একদিন একজন
চোখের জল ছিলো, ভালোবাসার ছল ছিলো,
বর্ষায় কদমভেজার দিন ছিলো একদিন
এখন কারো জন্য অপেক্ষা নেই, প্রতীক্ষাও।
একদিন এই সোনা মুখে সোনালী স্পর্শ ছিলো
লকলকে চুলের বিন্যাসে ফুটতো শতশত কাশফুল
একদিন ভরপুর ছিলো হৃদয়ের উপকূল
একদিন আমার তুমি ছিলে, আমি তোমার ছিলাম
অামরা ছিলাম শঙ্খচিল, তোমার আমার মাঝে ছিলো কত অন্তমিল।
এখন কারো জন্য কারো অপেক্ষা নেই, প্রতীক্ষাও।
০৮.০৭.২০১৪ অনধিকারে প্রবেশ //
শাফিক আফতাব //
অনধিকারে প্রবেশ করিনি কারো সংরক্ষিত এলাকায়
চর্চা করিনি কাউকে নিয়ে।
এমনকি কথা বলতে কাউকে থামিয়েও দেইনি।
বাক স্বাধীনতা হরণ করিনি, এমনকি প্রিয়তমার।
যদি বলেছে দিন, আমিও বলেছি দিন,
দিন বলেছে রাত, আমি বলেছি রাত
যদি বলেছে দুয়ে দুয়ে পাঁচ, আমিও বলেছি পাঁচ
বিপরীতে তাকালে আমি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছি,
কারো পাকাধানে দেইনি মই
যুবতীর বুকে ছুঁড়িনি দৃষ্টির ঢিল
আপন চরকায় তেল দিয়েছি দিনরাত
অথচ তবু মানব সন্তানগুলো ইটপাটকেল ছুঁড়ে
ককটিল মারে, ডাকনামের উপর লেপে দেয় কাদা
জীবনে যাকে কোনোদিন দেখিনি সে নাকি আমার দাদা !
কারো সংরক্ষিত এলাকায় অনধিকারে প্রবেশ করিনি
তবু নাকি আমি সবার কাছে ঋণী।
০৮.০৭.২০১৪
ফেরা //
শাফিক আফতাব //
ফেরাতে চেয়েছি, পারিনি। সমুদ্রের জল কি ফিরে ?
যদি ফেরে মেঘের বিন্দু।
ফেরাতে চেয়েছি, পারিনি,
সময় কি ফিরে, যদি ফেরে মৃত্যুর পর
তখন তো সময় স্থবির পড়ে থাকে পাষাণ পাথরের ওপর।
মূলত ফেরে না কিছু। যদি ফেরে সাইকুলিকর্ড়ারের রূপান্তর।
তুমিও ফিরে এলে
তোমার মসৃণ দেহে নখের আঁচর, জমাট জখম, কালচে রক্ত
তোমার সোনাবুকে তামাট গন্ধ
তুমি নিজেও রুপান্তিরিত এক ভিন্ন মানবী
এই তোমাকে কোথায় রাখি ?
কী করে ভালোবাসি আগের মতোন ?
০৮.০৭.২০১৪
তাকে উড়তে দাও, অথই আকাশ ছুঁইতে দাও //
শাফিক আফতাব //
তারে কেনো বাঁধতে চাও সীমান বাঁধনে
তুমি তো নিজেই বৃত্ত ভেঙে চাও অবাধ বিস্তার
তবে তার কেনো দুঃখ দাও মধুর লগনে
তবে তারে দাও না কেনো একটু নিস্তার।
পৃথিবীর প্রতিটি বস্তুর আছে এক স্বতন্ত্র ধর্ম
নদীর তরঙ্গ যথা নিজের মতোন বেগে বেগে ধায়
সে যেমন কোনোদিকে কখনো নাহি তাকায়
এখানে যে যার মতোন করুক না কর্ম।
প্রাণকে কী করে তুমি বন্দি করবে খাঁচায়
একদিন সে নিজেই চলে যাবে অনন্তে
পরিত্যক্ত দেহখানি তোমার পড়ে রবে মধু বসন্তে
তবে তারে কেনো কষ্ট দাও নিয়মের খোঁচায়।
তাকে উড়তে দাও, অথই আকাশ ছুঁইতে দাও
সে নিজেই ফিরে আসবে উৎসে, কষ্ট কেনো পাও ?
০৮.০৭.২০১৪
চলো ফিরে যাই পূর্বপুরুষের বাস্তভিটায়, লাঙলে মুঠি ধরি //
শাফিক আফতাব //
চলো মাটির ঘরে যাবো, শানকির জলে তৃষ্ণা মেটাবো
নদীর জলে ধুয়ে দেবো ভালোবাসার ব্যবহারিক শরীর
কদমবনে বর্ষার জলে ভিজে নিবেদিতো হবো
লতায় পাতায় বানাবো আমাদের ভালোবাসার নীড়।
ইটপাথরের ঘরে, পিচঢালা পথে আছে পাষাণ দানবের আঁচ
আছে মানুষের মিথ্যা অলিক আর অভিনয়ে স্বচ্ছ সুন্দর কাচ
আছে ভাষার দহনে ভালোবাসার আদায়ের বিবিধ ফন্দি
অন্যায় আর অসত্যের সাথে চুক্তি, সন্ধি।
পোড়া মাটির মতোন পুড়ে ঝামা হয়েছে মানুষের মন
কারো চোখের জল এতটুকু করুণা নিয়ে আসেনা এই শহরে
এখানে আছে জীর্ণ আস্তানা, বেগানা, নগ্ননারীর রমণ
অজস্র কীট বাস করে এই শহরের গহবরে।
চলো ফিরে যাই পূর্বপুরুষের বাস্তভিটায়, লাঙলে মুঠি ধরি
আবহমান বাংলার রূপ হৃদয়ে ধারন করি, হে অভিসারি।
০৮.০৭.২০১৪
ঋণ //
শাফিক আফতাব //
আমি তো দীনহীনই ছিলাম, তুমিই ভালোবাসা ঋণ দিয়েছিলে
জলবতী করেছিলে ভালোবাসার মরা নদী
বৃষ্টির জলে ধুয়ে দিয়েছিলে অন্তর্গত সুন্দরের শরীর
তোমাকে পেয়ে হয়েছিলাম অপার অনাদী।
আমি ছিলাম চৈত্রের চোচির মাঠ
তুমি দিয়েছিলে বৃষ্টির স্পর্শ
মনে বর্ষার কদমের ঘ্রাণ হয়েছিলো জমাট
তুমি হয়ে উঠেছিলে বিশেষ দিন, উৎসব অার নববর্ষ।
আমার দৈন্যতা ছিলো উপবাসে কতদিন আমি কেটেছি রাত
প্রতিবেশীর আভিজাত্য দেখে কোনোদিন হিংসায় জ্বলেনি আমি
মানুষের দিন যেতো আনন্দে, কামনার অবিরাম জলপ্রপাত
তুমি বড় প্রাঞ্জল করেছিলে, কত উর্বর করেছিলে মনোভূমি।
সাধের সাধ্য ছিলো না, স্বপ্ন দেখিনি কোনোদিন অপরূপা সুরঞ্জনার
তুমিই ভালোবাসায় ভরিয়ে দিয়েছিলে, কত সুষমা দিয়েছিলে বর্ষার।
০৮.০৭.২০১৪