হাটের শেষবেলা আলতু পাগলা অধ কেজি গরুর মাংস কিনেছে। মাংস কিনে ডানে-বামে না তাকিয়ে সোজা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল। এই দুনিয়াতে আলতু পাগলার কেউ নেই, সে একা। যৌবনে পদার্পনের সাথেই তার বাবা মা মারা যায়।
বাবা-মা তার নাম রেখেছিল আলতাফ হোসেন, মানুষ স্বভাবতই অন্য মানুষের নাম একটু বিকৃত উচ্চারণ করতে পছন্দ করে , আর সেই কারণেই আলতাফ হোসেনের নাম হয়ে গেল আলতু। আর পাগলা ব্যাপারটা চলে এসেছে বংশগতভাবে। আলতুর বংশে পাগল হওয়ার একটা বিশেষ প্রবণতা দেখা যায়। আলতুর মধ্যেও সেই প্রবণতা আছে। প্রতিবছর ভাদ্র মাসে তারে পাগলামির পরিমাণ বাড়ে। এছাড়াও খুব অল্প বয়সে বাবা মা হারানোর কারণে তার মনের উপর একটি বিরূপ প্রভাব পড়ে। সে প্রায়শই ছোটখাটো বিভিন্ন ধরনের পাগলামী করে বেড়ায়।
গ্রামের কেউই তার নাম শুদ্ধভাবে উচ্চারণ করে না, শুধুমাত্র মসজিদের বড় হুজুর বাদে। এই গ্রামে শুধুমাত্র এই হুজুরী তাকে তার সম্পূর্ণ নাম ধরে ডাকে। হুজুরের মুখে নিজের সম্পূর্ণ নাম শুনতে আলতাফ হোসেনের খুব ভালো লাগে।
আলতাব হোসেন অত্যন্ত দরিদ্র লোক। তার সম্পদ বলতে ওই বাড়ি টুকুই, সে কাজ বিশেষ কিছু করে না। বাবা মারা যাওয়ার পরে একটু একটু কাজ করতো, পরে সে কাজকর্ম করাও বন্ধ করে দেয়। খাওয়ার জন্য সে ঠিক দুপুর বেলা কারো বাড়ি গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো অথবা বসে গল্প শুরু করে দিত, এটা খাওয়ার সময় তাই হয়তো বাড়িওয়ালা তাকে খাবার জন্য ডাকত। ঠিক রাতের বেলায় ওই একই বাস কাজ করত অন্য কারো বাড়িতে। প্রথমদিকে প্রায় সবাই তাকে খাবার দিত, কিন্তু ধীরে ধীরে তা বন্ধ হয়ে যায়।
এখনো সে মানুষের বাড়ি গিয়ে দাড়িয়ে থাকে, কেউ খাবার দিলে খায় না দিলে অসুবিধা নেই, না খেয়ে থাকার একটা অভ্যাস করে ফেলেছে সে। সে কখনো কারো কাছ চেয়ে কিছু খায় না, কেউ যদি তাকে নিজ থেকে বলে তাহলে সে না করে না।
টাকা-পয়সার তার খুব একটা দরকার হয় না। যখন দরকার হয় তখন কারো বাড়ি থেকে কোনো একটা জিনিস না বলে নিয়ে দূরের কোন হাটে বিক্রি করে দিয়ে অর্থের যোগান দেয়।
অসুখ-বিসুখ খুব একটা হয় না। যাও একটু একটু অসুস্থ হয় তখন সে গ্রামের কুদ্দুস ফকিরের কাছ থেকে পানি পড়া বা একটু ঝাড়ফুক করিয়ে নিলেই সুস্থ হয়ে যায়। এই কারণেই কুদ্দুস ফকির কে সে খুব ভালো চোখে দেখে। কুদ্দুস ফকির তার পাগলামির চিকিৎসা ও করে। যখন ভাদ্র মাসে তার পাগলামী বাড়ে তখন কুদ্দুস ফকির নিয়মিত তাকে ঝাড়ফুঁক করে।
গত তিন বছর যাবত সে গরুর মাংসের স্বাদ পায়নি। এমনকি কুরবানী ঈদের সময়ও কুদ্দুস ফকির নিষেধাজ্ঞা থাকায় সে গরুর মাংস খেতে পারনি। কুদ্দুস ফকির তার পাগলামির চিকিৎসা করে বলে, প্রায়ই তাকে বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা পালন করতে হয়, এরমধ্যে খাবার ব্যাপারটা অন্যতম। কুদ্দুস ফকির তার চিকিৎসায় সর্বপ্রথম যে জিনিসটা নিষেধ করেন, সেটা হচ্ছে গরুর মাংস খাওয়া। আলতু পাগলার মাথায় এখন ঠিক আছে, এই সময় তার ওপর কুদ্দুস ফকিরের কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। আর এ কারণেই সে নিশ্চিন্ত মনে আধা কেজি গরুর মাংস কিনেছে।
গরুর মাংস কেনার টাকা পেয়েছিস লেহাজ মিয়ার ধানের গোলা থেকে। সেখান থেকে সে অল্প কিছু ধান লেহাজ মিয়াকে না বলে নিয়ে হাটে বিক্রি করেছে।
আলতু পাগলা সন্ধ্যা হওয়ার আগেই বাড়ি পৌঁছে যায়। ঘর থেকে তার পুরাতন দুটি হাড়ি বের করে । সে বাড়িতে রান্নাবান্না করে না, তাই হাড়ি দুটিতে ময়লা লেগে আছে। পাশের বাড়ির টিউবওয়েল থেকে হাড়ি দুটিকে ধুয়ে নেয়। এরপর বাড়িতে এসে তার চালের হাঁড়িতে হাত দিতেই দেখে চাল গুলো তে পোকা ধরেছে। এই চাল দিয়ে ভাত রান্না করলে, কোনোভাবেই তা খাওয়া যাবেনা।
এখন অন্যের বাড়ি থেকে না বলে কোন কিছু আনার সময় নেই, তাই সে কোন কিছু চিন্তা না করে মসজিদের বড় হুজুরের বাড়ির দিকে রওনা দিল। সে হুজুরের কাছে গিয়ে চাল চাইতে হুজুর জিজ্ঞাসা করল চাল দিয়ে কি হবে? আলতু পাগলা নির্ভয় হুজুরকে সবকিছু খুলে বলল, এই গ্রামের মধ্যে একমাত্র এই হুজুরকেই কম ভয় পায়। হুজুর আলতু পাগলার সব কথা শুনে শুধু চাল নয় মাংস রান্না করার জন্য যা কিছু লাগে সব কিছুই দিয়ে দিল।
সন্ধ্যার আজান দিয়ে দিয়েছে অনেক আগেই। আলতু পাগলা খুব তাড়াতাড়ি ভাত বসিয়ে মাটিতে গর্ত করা চুলের মধ্যে। এরপর সে মনোযোগ দিল মাংসের মধ্যে। মাংস কিভাবে রান্না করতে হয় সেটা সে জানেনা। সে সবকিছু একবারে মাংসের সাথে মাখিয়ে নিয়ে হাঁড়ির মধ্যে তেল দিয়ে সরাসরি মাংস রান্না করতে বসে দিল। কোন প্রকার কষানো ছাড়াই সে মাংসের মধ্যে ঝোল হিসেবে পানি দিয়ে দিয়েছে।
তার ভাত মাংস রান্না শেষ, এখন শেষ করে খাবে। কিন্তু তার আগে পুকুর থেকে একটু দুধ দিয়ে আসলে মন্দ হয় না। এতে শরীর ও মন দুটোই ভালো হবে, তাছাড়া আজকে সারাদিন সে অনেক পরিশ্রম করেছে এতে শরীর একটু ঠান্ডাও হবে।
খাওয়ার জন্য আলতু পাগলার আর দেরি সইছিল না। সে তাড়াতাড়ি গোসল সেরে এসে ভাত মাংস নিয়ে বসে পরলো।
আজ অনেকদিন পর সে গরুর মাংস দিয়ে ভাত খাচ্ছে। তার কাছে এই খাদ্য স্বর্গীয় কোন খাদ্যের মত মনে হচ্ছে। আর মনে মনে ভাবছে সে খারাপ রান্না করেনি, সে ভালোই রান্না করতে পারে। সে পেটপুরে পাতিলে থাকা সবগুলো ভাত শেষ করে ফেলল। মাংসের পাতিলে থাকা মাংসের সমস্ত ঝোল পারলে সে চেটেপুটে খেয়ে নিত।
খাওয়া শেষে আলতু পাগলার উঠে দাঁড়াতে খুবই সমস্যা হচ্ছিল। আজ মাংসের স্বাদে অনেক বেশি ভাত খেয়ে ফেলেছে। এখন তার অস্বস্তি হচ্ছে। খাওয়াটা অনেক বেশি হয়ে গেছে। আলতু পাগলা অতিরিক্ত খাওয়ার কারণে হাঁটতে পারছিল না, মনে হচ্ছিল হাঁটলেই তার পেট ফেটে যাবে। তাই সে নিজের বিছানার ওপর শুয়ে পড়ল। তার খুবই অস্বস্তি হচ্ছিল, সে শুধু এপাশ ওপাশ করছিল রাত্রিতে, বারবার তার গলা শুকিয়ে যাচ্ছিল, পানি খাওয়ার মত জায়গা টুকুও তার পেটের মধ্যে নেই।
এরপর দুই দিন চলে গেল, গ্রামের কোথাও আলতু পাগলা কে দেখা গেল না, কেউ তার খবর নিল না।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: আমি গল্প লেখক নই। তাই এটাকে কি গল্প বলা যাবে না। দুপুরে শুয়ে শুয়ে মনে হচ্ছিল কিছু একটা করি। এরপর মনে মনে ভাবলাম গুগলের ভয়েস কমান্ড দিয়ে কোন কিছু লিখলে কেমন হয়? যেইভাবা সেই কাজ। গুগোল ভয়েস কমান্ড দিয়ে লিখে ফেললাম, অনেকগুলো বানান ভুল আছে হয়তোবা, আমার দোষ বলতে আমি বানান ঠিক করিনি।