BEKAS মুিভর পোস্টার
কিছু মুভি আছে যেগুলো নিজের অজান্তেই মনের গভীরে দাগ কেটে যায়। হয়তো বা কোন জটিল বা তাত্ত্বিক কোন কাহিনী বা কথার মারপ্যাচ নয়, খুবই সাধারণ সহজবোধ্য একটা গল্প নিয়ে তৈরি। এই মুভিগুলোতে যেমন বাস্তবতা থাকে ঠিক তেমই থাকে ভালবাসার ছোঁয়া।
আমি বেশ কিছু দিনে আগে ঠিক এমনই একটি মুভি দেখেছিলাম, অনেক দিন ধরেই ভাবছিলাম এটার একটা রিভিউ লিখব কিন্তু হয়ে উঠে নি, আজ নিজের সাথে এক রকম যুদ্ধ করেই বসে গেলাম রিভিউ লিখতে। এই সিনেমাটি ইরানী সিনেমার ধারার এক কেন্দ্রীক একটি কাহিনীকে উপজীব্য করে নিমার্ন করা হলেও সিনেমাতে রায়েছে এই এক কেন্দ্রীক কাহিনীর পারিপাশ্বিকতা যেটা এই সিনেমায় আপনাকে দেখাবে না তবে অনুভব করতে সাহায্য করবে। সিনেমার নাম Bekas (2012)
এই মুভির গল্পের প্রেক্ষাপট রচিত হয়েছে ইরাকের কুর্দিস্তানে। BEKAS কুর্দি শব্দ এর বাংলা অর্থ অনেকটা এরকম- এতিম, আশ্রয়হীন বা গৃহহীন বা অভিবাবক শূণ্য। মুভিটি সম্পূর্ণ চিত্রায়িত হয়েছে কুর্দি ভাষায় এবং এই মুভির পিছনে যে মূল কারিগর হিসেবে কাজ করেছেন তিনি হলেন- Karzan Kader. এই মুভির পরিচালনা ও এর মূল গল্পের রচয়িতা তিনি। Karzan Kader ইরাকের কুর্দিস্তানে জন্মগ্রহণকারী সুইডিশ নাগরিক। বলা হয়ে থাকে এটি তার সেমি-অটোবায়োগ্রাফি।
এই মুভিতে যে সময়ের কথা বলা হয়েছে সেটি হলো ১৯৯০, যখন ইরাকে সাদ্দাম হোসেন ক্ষমতায়। ইরাকের কুর্দিদের প্রতি সাদ্দাম হোসেনের যে অত্যাচার করেছেন সেই বিষয়টি না দেখালেও দেখিয়েছেন তার ফলাফল। সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে অনেক কুর্দিই নিহত হয়েছেন তার মধ্যে আবার অনেকেই সপরিবারে আবার অনেকেই রেখে গেছন তার পরিবারের দুই একজন সদস্য। এই সিনেমায় দেখানো হযেছে- একটি পরিবারের সাবাই সাদ্দাম হোসেনের অত্যাচারে বলি হয়েছেন শুধু মাত্র দুই জন ছাড়া- দুই জন বালক- দুইজন ভাই । এরা হলেন বড় ভাই দানা (Dana) বয়স ৯ এবং ছোট ভাই যানা (Zana) বয়স ৭। সিনেমাতে এই দুইটি চরিত্রের চিত্রায়ন করেছেন Sarwal Fazil দানার চরিত্রে ও Zamand Taha যানার চরিত্রে। সিনেমার এই চরিত্র দুইটি সম্পর্কে যদি বলতে যাই তাহলে বলতে হয় এই দুইটি চরিত্রই এমন ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যা দেখে আপনি অভিভূত হয়ে যাবেন। এক্ষেত্রে আপনি এর পরিচালক ও দুই অভিনেতাকে ধন্যবান না দিয়ে পারবেন না। এর মধ্যে দানা একটু বয়সে বড় হলেও তার মধ্যে বালক সুলভ চরিত্রটি তখনো যায় নি। আর যানার কথা কি বলব- এই মুভির মধ্যে ওর প্রত্যেকটি ডায়ল ও তার ভঙ্গি আমার কাছে অসম্ভব সুন্দর লেগেছে এবং ওর মুখ দিয়ে যতগুলো ডায়ালগ বেরিয়েছে তার অধিকাংশই উচ্চস্বরের ডায়ালগ। আমি হয়তো ওর কথা এই রিভিউতে বলতে পারব না, যদি একবার মুভিটি দেখেন তাহলে বুঝতে পারবেন বিষয়টি সত্যিই অসাধারণ ছিল।
এই বার আসি কাহীনিতে- সুপার হিরো টাইপের মুভিগুলোর প্রতি প্রত্যেক বাচ্চারই আকর্ষন বেশিই থাকে। এখানেও ঠিক তেমনই হয়েছে। ১৯৯০ সালের দিকে সুপারম্যান সিরিয়াল হতো- এই দুই ভাইও সুপারম্যনের ভক্ত। তখন যারা সুপার ম্যান দেখতে চাইতো তাদের ১ দিনার করে দিয়ে সুপার ম্যন দেখতে হতো । দুই ভাই এতিম ও দরিদ্র হওয়ার কারণে টাকা দিয়ে আরাম করে সুপারম্যান দেখতে পারত না। তারা চুরি করে সুপারম্যন দেখার চেষ্টা করলে একবার ধরা পড়ে এবং মালিকের হতো মার খায়। এই প্রসঙ্গেই ধীরে ধীরে চলে আসে সুপার ম্যন কোথায় থাকে? সুপারম্যান আমেরিকায় থাকে , তারা দুই ভাই সিদ্ধান্ত নেয় তারা আমেরিকা যাবে সুপারম্যানের সাথে দেখা করতে, তারা সুপার ম্যনকে নিয়ে আসবে এবং সাদ্দাম হোসেনের অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাবে এবং বন্ধু-বান্ধবদের দেখাবে। এই তো শুরু হলো তাদের আমেরিকা যাওয়ার পরিকল্পনা । আমেরিকা যেতে কত টাকা বা কত দিন লাগবে , কি কি লাগবে ইত্যাদি হিসেব করতে থাকে। কিন্তু হিসেবে দেখা গেল- তারা জুতা পালিশ করে যে টাকা পায় তা দিয়ে আমেরিকা যেতে গেলে অনেক দিন টাকা সংগ্রহ করতে অনেক দিন লেগে যাবে। যাই হোক এ ভাবেই তারা টাকা সংগ্রহ করতে থাকে। তারা একটি পৃথিবীর ম্যপ এনে আমেরিকার দূরত্ব নির্ণয় করে তাদের ভাষ্য মতে গাড়িতে গেল এক থেকে দেড় দিন এবং হেটে গেলে ৩ -৪ দিন লাগবে। তারা এভাবেই আমেরিকা যাওয়ার জন্য প্রস্তত হতে থাকে। এর মাঝে তারা জমানো টাকা দিয়ে একটি গাধা কিনে যাতে তাদের পায়ে হেটে কষ্ট করে আমেরিকা যেতে না হয়।
তারা আমেরিকা যাত্রা শুরু করে । তাদের এই যাত্রা পথে অনেক কাহিনী অনেক ঘটনা রয়েছে। তারা কিভাবে বর্ডার পার হয়, কিভাবে তারা একে অন্যের কাছ থেকে হারিয়ে যায় এবং আবার কিভাবে একত্রিত হয়।
মুভির শেষ দৃশ্যে দেখায় তারা দুই ভাই হেটেই আমেরিকাতে যাচ্ছে কিন্তু পথে- বড় ভাই দানা একটি স্থল মাইনে পাড়া দিলে ঘটনার বিপত্তি ঘটে। বড় ভাই যথন বুঝতে পারে যে সে স্থল মাইনে পাড়া দিয়েছে তখন-সে ছোট ভাইকে বলে তুই একাই আমেরিকা চলে যা আমি যাব না ,কিন্তু ছোট ভাইও নাছোরবান্দা সে একা আমেরিকা যাবে না। এর পরের অংশ জানতে হলে আপনাকে মুভিটি দেখতে হবে। কারণ সিনেমার মূল বিষয় এর পরেই রয়েছে।
এই সিনেমাতে খুব সহজ সরল ভাবে ভাতৃত্ত্বের একটি সুন্দর রূপ অসাধারণ ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। মাঝে মাঝে মনে আপনার কাছে এই দুই ভায়ের চিন্তা একটি কমেডি মুভির মতো মনে হতে পারে কিন্তু আপনি যদি ঐ বয়সটার কথা চিন্তা করেন এবং নিজে কি কি ধরনের চিন্তা করতেন ঐ বয়সে তাহলে আর বিষয়টি কমেডি মনে হবে না। অসম্ভব মজার কিছু ডায়ালগ আছে সেই সাথে অসাধারণ কিছু শর্ট নিয়েছেন পরিচালক।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৪:০৮