মাইনুদ্দীন ছেলেটা ক্রমাগত থুতু ফেলছে, আমার পাশেই বসেছে কিছুটা ঘেষে। একেকবার সামান্যের জন্য ওর নিজের প্যাণ্ট, আমার প্যাণ্ট আর হাতে ধরা মোবাইল থুতুর সংস্পর্শ থেকে মিস হচ্ছে। মাইন আমার ফ্রেন্ড। বারকয়েক ওকে বলেছি এরকম না করতে। হয়ত ইচ্ছে করে কানে তুলছে না ব্যপারটা।
কিছুক্ষণ চুপ করে একটা ফন্দি এঁটে ফেললাম। আস্তে করে বললাম বেশি থুতু ফেলা এইডস রোগের অনেক গুলো কারণের মধ্যে একটি। ও তো কথাটা শুনে হতবাক। আর আমি মনে মনে খুশি … যাক কাজে দিছে তাহলে। ও যা শুনল তা নিশ্চিত করার জন্য আবার আমার দিকে মাথা ঘুরিয়ে বললঃ 'সত্যি!?'
এবার আমি কিছু বলার আগেই ও ডানদিকে বসা আমাদের আরেক ফ্রেন্ড বললঃ 'হুম'। এই ফ্রেণ্ডটির নাম আদনান। মাইন সাথে সাথে পণ করে ফেলল আর থুতু ফেলবেনা। আদনান সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন করল, তাহলে তুই থুতু খেয়ে ফেলবি? বলেই একটা দাঁত কেলিয়ে হাসি দিল।
আমি দেখি মাইন আসলেই ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে কোন থুতু ফেলল না। তার মানে থুতু খেয়ে ফেলতে শুরু করেছে। ব্যাপারটা ধরে ফেললাম, ডাল মে কুচ কালা হ্যায়। আমি ওকে আস্তে করে জিজ্ঞাসা করলাম, দোস্ত তোর কি বিশেষ কিছু হয়েছিল? ও বেশ স্বাভাবিকভাবেই বলল, আমার একটা গার্লফ্রেন্ড ছিল। ওর সাথে একবার করছিলাম। ঈদের দিন তোরা তো ঘুরতে যাস। আমি একটু ওর সাথে ছিলাম। আমি বললাম, খালি করছিলি? তাইলে তো শেষ। ও বলে,
নাহ ... চকলেট দিয়া করছি। ব্লাড ও আসছিল। মনে মনে আমি বলি, মিয়া বৃষ্টিস্নাত এই সন্ধ্যায় পাইছি তোমারে। তোমারে লইয়া আমি হাস্পাতাল পর্যন্ত যামু। আবার ও বলল, আচ্ছা দোস্ত প্রায়ই জ্বর জ্বর থাকে এই রোগে, না? আমিঃ হুম তা তো থাকবেই। আদনান বলে উঠল, দোস্ত ২০০৯এর ঈদের ঘটনা?? ও বলে হ্যাঁ। আদনান বলে, আরে আমিও ঐ ঈদে যা করছিনা মাম্মা.........আমিঃ দোস্ত এই রোগ কিন্তু কয়েক বছর পরি প্রকাশ পেতে শুরু করে।
ঘটনা এবার আসল দিকে নেবার পালা। আমি বললাম, দোস্ত এই রোগ তো একা হয় না। তোর গার্লফ্রেণ্ড এখন কই? মাইনঃ ওর সাথে এখন সম্পর্ক নাই। কথা কাটাকাটির পর সব ভেঙ্গে গেছে। আমিঃ কোথায় পড়ে? মাইনঃ ঢাবিতে ম্যানেজমেণ্টে । আমার মনে মনে ইচ্ছা হল একটা ধড়াম করে থাপ্পড় মারতে। কিছুই করলাম না। আমি ঘটনা সামনের দিকে নিতে থাকলাম। বললামঃ দোস্ত এইসব তো একার হয়না, তুই ওর নাম্বার টা দে। দেখি যোগাযোগ করে কিছু বের করতে পারি কিনা, মেয়েরা কিন্তু অনেক নরম আর ভীতু হয়, আমি জিজ্ঞাসা করতেই সব বলে দিবে। কোন কলেজে পড়ত? ও একটু মোড়ামুড়ি করে বললঃ সিটি কলেজ। বুঝলাম নাম্বারটা এত সহজে দিবেনা।
মাইন উঠে সিগারেট আন্তে গেল পাশের দোকানে। কিছুক্ষন পরে সিগারেট টা ধরিয়ে বেশ ভাব নিয়ে এল। এসে আবার আমার পাশে বসল। থুতুর ঝামেলা টা গেছে। এখন আমার দিকে তাকিয়ে বলে, আম্মু এক ফার্মাসীর দোকানিকে বলছিল থুতুর ব্যাপারে। ঐ দোকানি বলছিল নাকি কৃমির ট্যাব্লেট খাওয়াতে হবে। আমি বললাম, ঠিক আছে কৃমি হওয়ার একটু আগে এরকমটা হয়। কিন্তু তোর যেমন বেশি বেশি হচ্ছে ঘটনা তো খারাপ মনে হচ্ছে। ও বেশ চিন্তিত মুখে সিগারেট টানছে........কিছুক্ষন পর জিজ্ঞাসা করে আমি তো সরাসরি করি নাই আর বেশিও করি নাই। আমিঃ ব্লাড দেখছস? মাইনঃ হ।আমিঃ তাহলেই হয়ে গেছে। দোস্ত তোর এখন ঐ মেয়ের সাথে যোগাযোগ করা দরকার। দেখ যদি তুই কোন সমস্যায় পড়স আমারে অই মেয়ের নাম্বার দিস লজ্জা না কইরা। মাইনঃ লজ্জ্বা শরমের মাথা অনেক আগেই খাইছি। দেখি যোগাযোগ করে।
আমি কাল কিছু করব বলে আজকে ওখানেই ক্ষান্তি দিয়ে বাসায় ফিরে আসলাম।