চট্টগ্রামের কেন্দ্রস্থল জামাল খান প্রেস ক্লাবে চলছে কাদের মোল্লা সহ সকল যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবীতে সমাবেশ এবং কর্মসূচী।বিকাল ০৩.৩০ থেকে শুরু হওয়া এই কর্মসূচী চলবে মাঝরাত পর্যন্ত।প্রেস ক্লাবের পাশাপাশি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারেও কর্মসূচী পালিত হয়েছে।বিকাল প্রায় সাড়ে পাঁচটার দিকে শহীদ মিনারে অবস্থিত জনতার মিছিল এসে মিলিত হয় প্রেস ক্লাবে অবস্থিত প্রতিবাদী জনতার সাথে।
আজ হাজার হাজার প্রতিবাদী মানুষের ঢল নেমেছিল প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গনে।আমি নিজেও সেই জনসমুদ্রের একটি অংশ ছিলাম।প্রতিটা মানুষের চোখে ছিল ক্ষোভের আগুন।কণ্ঠে ঝরে ঝরে পড়ছিল রাজাকারদের প্রতি তীব্র ঘৃণা।প্রকাশ পাচ্ছিলো রাজাকারদের ফাঁসি বাস্তবায়নের জন্য হৃদয়ের চিৎকার।জামায়াত শিবিরের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং তাদের বাংলার মাটি থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার প্রকল্প ও দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছিল দেশের সকল স্তরের মানুষ।বাংলার সাধারণ মানুষ ঐ রাজাকার এবং তাদের সমর্থনকারী জামায়াত শিবিরদেরকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে,হাজার বাঙালী যখন এক হয়,তখন যে কোন অসম্ভবকে তারা সম্ভব করতে পারে!দেখ বেজন্মারা,১৯৭১ এ যেমন লাখো বাঙালী নিজের জীবনের পরওয়া না করে নিজের মাতৃভূমিকে স্বাধীন করার জন্য যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো,ঠিক তেমনি আজ ৪২ বছর পর লাখো বাঙালী আবার এক হয়েছে নিজের দেশ থেকে যুদ্ধাপরাধী মুক্ত করতে।নিজের মা বোনদের ধর্ষণকারীদের,নিজের বাবা-ভাইদের হত্যাকারীদের,নিজের দেশকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কাছে নিলামকারিদের বিচারের দাবীতে।তাদের ফাঁসির দাবীতে।এইবার তোরা কোথায় পালাবি?তোদের তো আর নিস্তার নাই!
শিক্ষার্থী,ব্যাবসায়ী,চাকরিজীবী,ব্লগার,ফেসবুক অ্যাক্টিভিস্ট থেকে শুরু করে সমাজের সকল স্তরের মানুষের সমারোহ ঘটেছে রাজপথে।সকলের হাতে ছিল ব্যানার,মাথায় বাঁধা ছিল জাতীয় পতাকা এবং কণ্ঠে ছিল অগ্নিঝরা সব স্লোগান।“একাত্তরের হাতিয়ার,গর্জে উঠুক আরেকবার!”,“রাজাকারের চামড়া,তুলে নেবো আমরা!”,“একটা দুইটা শিবির ধর,ধরে ধরে জবাই কর!”,“জামায়াত শিবির রাজাকার,এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়!”,“রাজাকারের আস্তানা,জ্বালিয়ে দাও!পুড়িয়ে দাও!” ইত্যাদি স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠেছিল পুরো পরিবেশ।ঠিক যেন ফিরে এসেছে ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ।আসলেই তো!এই যুদ্ধ তো মুক্তির জন্যই!দালালদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্যই এই আন্দোলন,এই যুদ্ধ! রাজাকারের কুশপুত্তলিকা বানিয়ে জুতাপেটা এবং পরবর্তীতে তাতে আগুন জ্বালিয়ে নিজের অন্তরে দগ্ধ হতে থাকা ক্ষোভ এবং ঘৃণার বহিরপ্রকাশ করেছে সাধারণ মানুষ।বাঙালী চাইলেই যে একটি বিপ্লব ঘটাতে পারে,তার উদাহরণ হল এই আন্দোলন।
১৯৫২ সালে সংঘটিত ভাষা আন্দোলনের মাস,এই ফেব্রুয়ারী মাস।আজ এতো বছর পর ঠিক এই পবিত্র মাসে সুচনা হল একটি বিপ্লবের।এই বিপ্লব বাংলার মাটিকে শুদ্ধ করার জন্য।এই বিপ্লব রাজাকারদের বিনাশের জন্য।এই বিপ্লব রাজাকারদের সঙ্গে রাজনীতিতে লিপ্ত মুক্তিযুদ্ধবিরোধী সেই অপশক্তির বিরুদ্ধে।
বাংলার সাধারণ মানুষ একত্রিত হয়ে প্রমাণ করে দিয়েছে যে,দেশের সাথে দালালী করার আগে রাজাকারদের লক্ষ বার চিন্তা করতে হবে।৩০ লক্ষ শহীদ,২ লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রম এবং জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া সকল মুক্তিযুদ্ধাদের কষ্টার্জিত স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেওয়া এত্ত সহজ নয়!মানবতাবিরোধী অপরাধকারীরা দেশ শাসন করবে?!তা হবে না!তা হবে না!
আজ বিকাল চারটা থেকে প্রেস ক্লাবে ছিলাম।রাত প্রায় সাড়ে নয়টায় ঘরে ফেরার পরও মন পড়ে আছে প্রতিবাদী জনতার ভীরে।কানে বারবার ধ্বনিত হচ্ছে কিছুক্ষণ আগেই হাজার খানেক মানুষের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে দেওয়া অগ্নিঝরা সব স্লোগানগুলো।ঢাকার শাহবাগ স্কয়ারেও চলছে রাজাকারদের ফাঁসির দাবীতে গণআন্দোলন।লাখো মানুষ রাজপথে নেমেছ রাজাকারদের ফাঁসির দাবীতে।রাজাকারদেরকে নিয়ে গঠিত রাজনৈতিক দলগুলোর নোংরা রাজনীতি বন্ধ করার দাবীতে।এই আন্দোলন ততদিন পর্যন্ত চলবে,যতদিন পর্যন্ত না আমাদের সোনার বাংলা কলঙ্কমুক্ত হবে।যতদিন পর্যন্ত না এই রাজাকারদের ফাঁসি হবে।মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রকল্পে আন্দোলনে রত তরুণ প্রজন্মের সকল মানুষই এই যুগের মুক্তিযোদ্ধা।১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধারা এনে দিয়েছিলেন আমাদের প্রিয় স্বাধীনতা।এবার আমাদের পালা তাদের ঋণ শোধ করার।কথা দিলাম,আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করেই ছাড়বো!
হে দেশ মাতা!তুমি ৪২ টা বছর নিজের শরীরে কলঙ্কের অসহনীয় বোঝা বয়ে বেড়িয়েছ।এবার তোমার দুঃখ দূর করার পালা।অনেক কেঁদেছ তুমি।আর না।তোমার সন্তানেরা তোমাকে আর কাঁদতে দিবে না!
ওরে বেজন্মার দল জামায়াত শিবিরেরা,তোদের উদ্দেশ্যে একটা কথাই বলি—
“জামায়াত শিবির রাজাকার,
এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়!”
জয় বাংলা!জয় বাংলা!