'শ'এর সাথে পরিচয়টা হয়েছিল খুব অদ্ভুত ভাবে। আমার জন্য সেটা অদ্ভুত ছিল, ওর জন্য কি ছিল সেটা জানিনা। দিনটা ছিল বৃহস্পতিবার, তখন হাফ অফিস হত। অফিস থেকে ফিরে লান্চ করে রেস্ট করছি, যেই ঘুম ভাবটা আসল তখনি ফোন বাজার শব্দ। আমাদের বাসার টিএন্ডটি ফোনে ফোন করে খুব কম মানুষি হ্যালো ডাক শুনেছে, কারন ফোনের পাশে বসে থেকেও ফোন বাজলে সবাই নির্বিকার মুখে থাকি, কেউ ফোন ধরিনা। এমন ভাব যেন ফোন ধরার মত কষ্টকর কাজ আর দুটা নাই। সেদিন কি মনে করে যে এই কষ্টের কাজটা করলাম, এখনো আমার কাছে রহস্য।
ফোন ধরলে ওপার থেকে 'নাজিম' নামে একজনকে চাইল। জানালাম, উনি আমার বাবার অফিসে কাজ করেন আর এটা বাসা। অফিসের নাম্বারটা দিয়ে সেদিনের মত ফোনটা রেখে দিলাম। পরদিন আবার সেই মানুষ, সেদিন করেছে গতদিনের ভুলের জন্য স্যরি জানাতে। সেই শুরু। এরপর প্রায়ই ফোন করে, ফোন ধরার কষ্ট করতে আমারি আগ্রহ তখন দেখা দিল। সারাদিন অফিস, সন্ধ্যার পর কথা, এভাবেই দিন কাটছে।
এরপরে আরো এক বৃহস্পতিবারের ঘটনা। অফিস থেকে বের হব, অফিসের ফোনে ফোন করে 'শ' জানাল 'আমি এয়ারপোর্ট রেল স্টেশনে আছি, আসো দেখা করি", তখন আমার অফিস উত্তার হওয়াতে এই স্টেশন আমার আসা যাওয়ার পথেই পরে। আমিও কি মনে করে রাজি হলাম। মাঝে মাঝে অবাক হই সেই সময়টার কথা ভেবে। এভাবে লুকিয়ে কথা বলা দেখা করার বয়স তো অনেক আগেই পার করে এসেছি, বয়স থাকতে এগুলির দিকে মন দেবার সময় পায়নি আর যখন বাসার সবাই, আত্মীয়-স্বজন আমার জন্য পাত্র দেখতে ব্যস্ত বা বলা যায় এক জনকে মোটামোটি সিলেক্ট করা হয়ে গেছে তখনি কিনা আমি এসব ছ্যাবলামো করছি।
প্রথম দেখা করার দিনেই আমি জানালাম খুব ক্ষিদা পেয়েছে, লান্চ করব। 'শ' দুষ্টামি করেই প্রস্তাব দিল, রেল স্টেশনের পাশের দোকানে লান্চ করানোর আর আমিও রাজি। খুব অবাক হয়েই আমাকে সেখানে নিয়ে গেল। আমিই অর্ডার করলাম সাদা ভাত আর মুরগি। 'শ' জানাল সে খাবেনা, আমি জানার চেষ্টাও করিনি কেন খাবেনা। প্রথম ডেটিং এর দিনে ছাপরা দোকানে বসে আমি মজা করে ভাত খাচ্ছি আর হাড্ডি চিবাচ্ছি। 'শ' এর নাকি সেদিন আমাকে আরো ভালো লেগেছিল। আমাকে নাকি খুব সহজ সরল মনে হয়েছিল । আসল ব্যপার ছিল ভিন্ন, আমার যখন ক্ষিদা লাগে মাথা ঠিক থাকেনা, কিছু একটা খেতে পারলেই হল, সেটা যেখানেই হোক। এই কথা তো আর বলা যায়না । এই ভাত খাওয়ার দিনের ঠিক তিন মাস পরেই আমাদের বিয়ে হয়ে গেল। এখন আমার ভাত খাওয়া দেখে 'শ'এর আর সহজ সরল মনে হয়না, বরং বলে আমার চিন্তা ভাবনা নাকি জটিল । তখন সেই দিনকার তার মনোভাবের কথা মনে করিয়ে দিতে চাই কিন্তু ভাব ধরে সব ভুলে গেছে ।
কেন যেন কদিন ধরেই সেই দোকানের লাল ঝোল দেয়া মুরগির মাংস দিয়ে ভাত খাওয়ার ইচ্ছা হচ্ছে কিন্তু 'শ' এখন আর নিতে রাজিনা, তার এখনকার বক্তব্য হল, এসব দোকানে মরা মুরগি রান্না করে আর অপরিষ্কার পরিবেশ, তাই ওখানে খাওয়া যাবেনা। কিন্তু সেদিন কেন খাওয়ালো জিগ্গেস করলে কোন উত্তর নাই। আর এতেই স্পষ্ট বোঝা যায় বয়ফ্রেন্ড আর হাসব্যান্ডের পার্থক্য ।
সেই লাল ঝোলের মুরগির মাংস দিয়ে আমার আর কখনোই হয়ত ভাত খাওয়া হবেনা ।