somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"আমি নির্বাক চেয়ে রই"

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৩:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কয়দিন আগে কাজ সেরে বাসায় ফিরতে হয়ে গেল রাত প্রায় ১০টা। ফেরার পথে দেখি আগে যেখানে রেংগস্ ভবন ছিলো সেখানে ১০/১২ জন মহিলা আর প্রত্যেকের সাথে একটা করে বাচ্চা নিয়ে দাড়ানো। বুঝলাম, এরা ওই সিগন্যালে বা এর আশেপাশে ভিক্ষা করে বাচ্চা নিয়ে। টাইম শেষ তাই সবাই এক জায়গায় জড়ো হয়েছে। আরেকটু খেয়াল করতেই দেখি, একজন বেশ ভালো স্বাস্থ্যের মহিলাকে ঘিরে সবাই দাড়িয়ে আছে। হয়ত সে তাদের লিডার, সারাদিনের ইনকামের হিসাব নিকাষ নিচ্ছে। কিছুক্ষন পরেই লক্ষ করলাম সবাই সবার সাথের বাচ্চা সেই মহিলার কাছে দিচ্ছে, সে সব বাচ্চাকে একত্রিত করে গুনল এরপর বাচ্চাগুলিকে নিয়ে হাটা দিল আর বাকি মহিলারা যে যার মত করে চলে গেল। প্রথমে ব্যাপারটায় অবাক হলাম কেন মায়েরা তাদের সন্তানকে অন্যজনের কাছে দিয়ে খুশি মনে চলে যাচ্ছে!! বুঝলাম এইসব বাচ্চা তারা সারাদিনের জন্য ভাড়া করে আনে ভিক্ষা করার জন্য। কে জানে এইসব মহিলারা বাচ্চাদের ঠিকমত খাওয়া দেয় কিনা। বিজয় সরনির কাছে একটা ল্যাংড়া মহিলা সাথে একটা বাচ্চা নিয়ে বসে থাকত। বেশ কয়দিন খেয়াল করেছি, যখনি সিগন্যাল পড়ত মহিলাটা বাচ্চাটাকে মারত যাতে কেঁদে উঠে আর কান্না করলেই তাকে কোলে নিয়ে বিভিন্ন গাড়ির সামনে হাত পেতে দাঁড়াত।

এরি পরিপ্রেক্ষিতে শুনা একটা ঘটনা এখানে শেয়ার করছি।

আমার সেজো খালার অফিসে হাসব্যান্ড ওয়াইফ দুজনি চাকরি করত। তাদের এক মেয়ে, বয়স এক বছরের মত। ঢাকায় তাদের কাছের কেউ থাকেনা যে তারা দুজন অফিসে চলে গেলে বাচ্চাকে দেখবে। তাই একটা কাজের মেয়ের কাছেই সারাদিনের খাবার বুঝিয়ে দিয়ে দুজন অফিসে চলে যায়। অফিস শেষে বাসায় গেলেই মা দেখে যে তার বাচ্চা খুব টায়ার্ড হয়ে ঘুমাচ্ছে বা জেগে থাকলেও কেমন ঝিম ধরে থাকে, আর দিন দিন বাচ্চাটা শুকিয়ে যাচ্ছে। মহিলা ১০দিনের ছুটি নিয়ে বাচ্চার সাথে থাকলেন, তখন বাচ্চা সুস্থ, ঠিকমত খাওয়াদাওয়া করে, অন্য বাচ্চাদের মতই খেলাধুলা করছে, তার সমস্ত টায়ার্ডনেস উধাও। ছুটি শেষে অফিস শুরু হলে বাসায় ফিরলে মা দেখে তার বাচ্চা আবার আগের মতই চুপচাপ, ভাবে হয়ত সারাদিন মা বাবা কে কাছে পায়না তাই হয়ত মনমরা থাকে।

এরমাঝে একদিন, বাবা অফিসের কাজে অফিসের গাড়ি নিয়ে বের হয়েছে, একটা সিগন্যালে গাড়ি দাড়ালে একটা ফকির বাচ্চা কোলে নিয়ে ভিক্ষার জন্য দাড়ায়, কোলের বাচ্চাটা খুব জোড়ে জোড়ে জানালায় ধাক্কা মারছে আর অনেক শব্দ করছে। লোকটাতো বিরক্ত হয়ে ফকিরটাকে ধমক দিলে সে অন্য গাড়ির দিকে চলে যায়। লোকটার হঠাৎ কি মনে হওয়াতে সে ফকিরটার কোলে বাচ্চাটার দিকে তাকাল, তার কেমন যেন পরিচিত মনে হল। সে গাড়ি একসাইডে দাড় করিয়ে নেমে ফকিরটাকে ডাক দিলে ফকিরটা তার দিকে তাকিয়ে হঠাৎ বাচ্চাটাকে ফুটপাথে বসিয়ে দৌড় লাগাল। ব্যাপারটা দেখে লোকটা খুব অবাক হয়ে বাচ্চার কাছে গেল, বাচ্চাটা তাকে দেখে খুব খুশি আর কোলে উঠার জন্য হাত বাড়িয়ে দিল। লোকটা বাচ্চাটার দিকে ভালো করে খেয়াল করে দেখে, এটা তারি বাচ্চা। বাচ্চাটার সারা গায়ে কালি লাগানো, পরনে ছেড়া জামা। সে তো হতভম্ব। মহিলাটা বাচ্চার অবস্থা যেনে পাগলের মত হয়ে গিয়েছিল, সে এরপর চাকরি ছেড়ে দেয়, সারাদিন বাচ্চাকে কোলে নিয়ে থাকত, কাউকে ধরতে পর্যন্ত দিতনা।

ঘটনা পড়ে জানা যায়, কাজের মেয়েটা প্রতিদিন বাচ্চকে ২০টাকার বিনিময়ে এক ফকিরের সাথে দিয়ে দিত। তাকে যখন জিগ্গেস করা হল কেন সে এমন করেছে, সে খুব স্বাভাবিক ভাবেই নাকি বলেছিল, "কোন সমস্যা তো নাই, তার কাছে তো আমি সারাদিনের খাবার দিয়ে দিতাম"।

ঘটনাটা শুনে নির্বাক হয়ে গেলাম। ভয় পেলাম, নিজের বাচ্চার জন্যেও উদ্যিগ্ন হলাম। কাজের মেয়েটা কেমন মানুষ যে সামান্য কিছু টাকার জন্য এত জঘন্য কাজ করতে এতটুকুও খারাপ লাগেনি বা পরেও তার কোন অনুতাপ জাগেনি!! হায়রে!!

সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৩:৩৯
২৫টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×