অফিসে আসা যাওয়ার পথে ছোট খাট অনেক কিছু চোখে পড়ে। এর বেশিরভাগই প্রতিদিনের ঘটে যাওয়া একি চিত্র। আবার কিছু কিছু মনে দাগ কাটে, প্রশ্ন রেখে যায়।
ক্রিসেন্ট লেকের রাস্তা আর মোহম্মদপুর রাস্তার লিঙ্ক সিগন্যালে প্রায়ই একটা পরিবারকে দেখি, বাবা মা দুজনি অন্ধ আর তাদের এক ছেলে আর এক মেয়ে। বাচ্চা দুটা আবার দেখতে পায়। সকালে বাচ্চা দুজন ফুটপাথে দৌড়াতে ব্যস্ত থাকে, এটাই হয়ত তাদের একপ্রকার খেলা। আর মা বাবা দুজন গালে হাত দিয়ে চুপচাপ বসে থাকে। মাঝে মাঝে দেখি একটা টিনের বাটিতে ভাত মাখিয়ে একসাথে চারজন বসে খাচ্ছে, কখনও মা কখনও বাবা সন্তানদের মুখে ভাত তুলে দিচ্ছে। এত সুন্দর লাগে এদের এই ভালবাসা দেখতে। গতকাল দেখি, মেয়েটা মাকে জড়িয়ে বসে আছে আর বাবা তার ছেলেকে চুমুতে ভরিয়ে দিচ্ছে। কি এক অসাধারন দৃশ্য। এদের কাওকে কখন ভিক্ষা চাইতে দেখিনি। জানিনা এদের ইনকামের পথ কি, হয়ত অন্য কোন এলাকায় ভিক্ষা করতে যায়। দুর থেকে দেখতে এদেরকে অনেক সুখি মনে হয়। এত কষ্টের মধ্যে থেকেও একে অপরের প্রতি যে ভালবাসা, সেটা আমি দুর থেকেই অনুভব করতে পারি।
আরেকদিন চোখে পড়ল, এক বিদেশী ফুটপাথে বসে থাকা একটা ছোট বাচ্চার ছবি তুলছে, তার মা রাস্তায় ফুলের মালা বিক্রি করছিল। একটু পরেই দেখি মা দৌড়ে এসে বাচ্চাটাকে জড়িয়ে ধরে বিদেশীটাকে আকার ইঙ্গিতে তাদের দুজনের একসাথে ছবি তোলার জন্য বলছে। সেই সময় মা আর তার বাচ্চার যে হাসিটা দেখলাম, এর সাথে কিসের যে তুলনা করি। এত সুন্দর, এত নির্মল আর এত পবিত্র। প্রদর্শনিতে এ ধরনের ছবি দেখেছি অনেক, কিন্তু সামনা সামনি যে এটা আরো কত সুন্দর সেদিন বুঝলাম। সামান্য একটা ছবি তুলবে, সেজন্য যে ওদের মাঝে কত আনন্দ না দেখলে বিশ্বাস হতনা।
আমি কেন এত কিছু পাবার পরও ওদের মত হাসি দিতে পারিনা, কেন বড় কিছু পেয়েও অল্পকিছুক্ষনের জন্য হলেও ওদের মত সত্যিকারের খুশি হতে পারিনা। নিজেকে ওই সময় কাঙ্গালের মত মনে হয়। ইচ্ছে হয়, ছুটে যেয়ে ওদের এই ভালবাসা, ভালথাকা, খুশির একটু ছোঁয়া নিয়ে আসি, পারিনা। অদের সাথে চোখে চোখ রাখতে তখন ভয় পাই, যদি ধরে ফেলে আমার এই দীনতা!!
খুব অল্পতেই ভাল থাকার রহস্য কি কারও জানা আছে অথবা আছে কি কারও কাছে আনন্দ পাবার জন্য কোন ঝারফুঁক করা শিকর বাকর? আমাকে কি একটু দিবেন।
জানার অপেক্ষায় আছি।