যশোর ক্যান্টনমেন্ট এসেছি একটা পার্টি এটেন্ড করার জন্য। এর আগেও এই একি কারনে ঘুরে গেছি, সেবার ছিলাম মাত্র একদিন। তাই চারপাশ ঘুরে দেখতে পারিনি। এবার তাই কিছুদিন সময় নিয়ে এসেছি ঘুরব ফিরব বলে। গতকাল সন্ধ্যায় বের হলাম 'শ' এর সাথে। ক্যান্টনমেন্টটা অনেক বড়, এখানকার কোয়ার্টারগুলি বেশ পুরানো তাই সাইজেও পুরান বাড়ির মত বড়। অনেকগুলি ডুপ্লেক্স বাড়ি আছে। প্রতিটাতেই কেউ না কেউ থাকে। একটা ডুপ্লেক্স শুধু দেখলাম অন্ধকার, কারন জিজ্ঞেস করতে জানতে পাড়লাম, ওটাতে কেউ থাকেনা কারন ওটাতে ভুত থাকে। কথাটা শুনে অবাক হলাম, এই একবিংশ শতাব্দিতেও ভুত !!! এর আগেও এক ভাবীর কাছে শুনেছিলাম চিটাগং আর বগুরা ক্যান্টনমেন্টে ভুত থাকার কথা। আমার এক ফ্রেন্ডের কাছে শুনেছিলাম তার নিজের ভুত দেখার কাহিনী, সেটাও একটা ক্যান্টনমেন্টের বাড়িতে। এক রাতে কিসের একটা আওয়াজে 'সি' এর ঘুম ভেঙ্গে গেলে যখন তাকায়, সামনে দেখে কেউ একজন সাদা শাড়ি পড়ে দাড়িয়ে আছে। আমার মনে হয়েছিল হঠাৎ ঘুম ভাঙ্গার কারনে তার হেলুসিলেশন হয়েছিল।
এখন আসি আরেকটা সত্যিকারের কাহিনীতে। এই ঘটনা ঘটেছিল আমাদের বাসায়, এক বুয়ার সাথে। আমি তখন ৪/৫ বছরের হব, বাবার চাকরীসুত্রে থাকি কাপ্তাই। আমার জন্মের আগে থেকে এই বুয়া আমাদের বাসায় কাজ করে, এখনো আমার মায়ের বাসায় আছে। তার বাড়ি চাঁদপুর। একবার বাড়ি থেকে ছুটি কাটিয়ে কাপ্তাই ফিরল, সেই রাতে আমার বাবার এক বন্ধু চিটাগং থেকে বেড়াতে এসেছে, অনেক রাত পর্যন্ত উনারা গল্প করছিলেন। রাত প্রায় বারোটার দিকে দুজনে খেয়াল করলেন, কোথা থেকে যেন একটা শব্দ আসছে, মনে হচ্ছে দেয়ালে কেউ ভারি কিছু দিয়ে বার বার বাড়ি মারছে। শব্দের উৎস খুজে দেখেন সেটা আসছে রান্নাঘর থেকে। দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। দুজন মিলে বুয়াকে দরজা খোলার জন্য অনেক ডাকাডারি পরও কোন সাড়া না পেয়ে সেটা ভেঙ্গে ফেললেন। রান্নাঘরে ঢুকে দেখেন, বুয়া নিজেই নিজের কপাল দিয়ে জোরে জোরে দেয়ালে বাড়ি মারছে, তার কপাল ফেটে রক্ত ঝরছে, কিন্তু সেদিকে খেয়াল নেই। বাবা কাছে যেয়ে অনেক ডাকাডাকি করল কিন্তু কোনো হুশ নাই। শেষে বাধ্য হয়ে দুজন মিলে জোর করে দেয়াল থেকে সরিয়ে আনলেন আর সাথে সাথে বুয়া জ্ঞান হারাল। আমাদের বাসার পাশে একজন টিচার থাকতেন, উনি অনেক দোয়া কালাম জানতেন। উনাকে খবর দিলে উনি এসে কিছু দোয়া দরুদ পড়লেন। এরপর বুয়াকে হসপিটাল নিয়ে ড্রেসিং করানো হল। যখন জ্ঞন ফিরল তার এসব কথা কিছুই মনে পড়লনা।
এরও দুদিন পরে বুয়াকে আবার জিজ্ঞেস করা হল কেন সে এমন করছিল, কিন্তু তাও সে কিছুই বলতে পারেনি। সে শুধু বলল, চাঁদপুর থেকে ফেরার দিন লন্চ ঘাটে যখন অপেক্ষা করছিল তখন পানিতে একটা হাড়ি ভেসে যেতে দেখেছে। হাড়িটা পাড়ের কাছে আসতেই বুয়া সেটার ঢাকনা খুলে উঁকি দিয়ে দেখে সেটার ভিতর রুটি আর কিছু হালুয়া রাখা। এরপর ঢাকনা দিয়ে উপরে উঠে আসে। রাতে ঠিকঠাক মতই ঘুমায়, কিন্তু আর কি কি করেছে সেটা মনে নেই। এই ঘটনা শুনে অনেকেই মন্তব্য করে, তার উপর কিছু একটা ভর করেছিল যেটা তাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল।
এসব কথা চিন্তা করলে বা এধরনের ঘটনা শুনলে ভয় পাই ঠিকি কিন্তু মনে আবার প্রশ্ন জাগে, ভূত কি সত্যি আছে?
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০০৯ ভোর ৬:৪১