খাজা ভাই, “কথা আছে”!
আচ্ছা বলো। “মাস্টার্স তো শেষ হয়ে যাচ্ছে, রেজাল্টও ভালো। এখন কী করবো, বুঝতে পারছি না!” ঢাবির অর্থনীতির ছাত্রী। ইংরেজির ছাত্রটারও একই কথা। পাশ করছি, কিন্তু ক্যারিয়ার কোনটা নিবো – বুঝতে পারছি না।
অর্থ্যাৎ ১৭/১৮ বছর পড়াশুনা করার পরে এমন এক পয়েন্টের দাঁড়িয়ে আছে – রাস্তাতা ঠিক দুই দিকে নয়, তার কাছে বহুদিকে গেছে। এই বহুদিক থেকে একটা দিক বাছাই করা তো আসলেই এক মহা কঠিন কাজ।
আচ্ছা অর্থনীতিটা কেন নিয়েছিলা? ইংরেজিটা কেন নিয়েছিলা? ক্যারিয়ার কোন দিকে নিবা সে তো বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢোকার সময় ঠিক করেছো। এখন আবার প্রশ্ন কেন!
আচ্ছা, তোমার প্লান বলো! “বিসিএস আমার ফার্স্ট টার্গেট!” এখানেও ভেজাল। যখনি বলি বিসিএসেরও তো ৩৫-৪০ রাস্তা আছে! কোন রাস্তায় যাবা ঠিক করেছো! সেই গৎবাঁধা উত্তর – অ্যাডমিন, না হয় ফরান আফেইয়ার্স, অথবা পুলিশ! বিসিএস মানে মনে হয় এই ২/৩টাই। কয়েক কোটি তরুণ-তরুণীর কাছে চাকুরি মানেই এই তিনটা।
অর্থ্যাৎ পা কিন্তু দুই নৌকায় নয় – বহু নৌকায়! তোমার পা তো দুইটা, বহু নৌকায় কীভাবে পা রাখবা! তাহলে তো সারাক্ষণ লাফাতে হবে! মানে তুমি এবার সব নৌকায় উঠতে চাও!! কোন নৌকা কোন দিকে নিবে তুমি জানতে চাও না!
মানে তোমার নৌকা কোনটা তুমি জানো না। কয়েকদিন আগে, মাওয়া যাচ্ছি। তো বাসে, এক মহিলা উঠেছেন, উনি যাবেন গাজিপুর! মাঝপথে যখন ভাড়া নিতে গেলো, তখন জানা গেলো! আমাদের ক্যারিয়ার কিন্তু এমনই। ৯৫% বুঝে তার ক্যারিয়ার যেটা দরকার ছিলো, সে সেটায় নেই।
ক্যারিয়ারের অনেক নৌকা আছে। ভুল নৌকায় উঠলে সারা জীবন সেই ভুলের কিন্তু ঘানি টানতে হবে।
তুমি কি মনে করে সব অ্যাডমিন দারুণ আনন্দে আছে? তুমি কি মনে করো সব প্রকৌশলী দারুণ আছে? সব ডাক্তার দারুণ আছে? বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হলেই সব পেয়ে গেলা?
আর মেয়েরা? বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করা মেয়েদের সম্ভবত ৯০% রান্না ঘরেই কাটাচ্ছে এই যুগেও। আগামীদিনে স্বামীর ঘুষের টাকা না থাকলে একজনের আয়ে ৯৫% পরিবার চলতে পারবে না। নারীদের কর্মসংস্থানে আসতেই হবে। স্বামীর উপর যারা নির্ভরশীল হওয়ার চিন্তা করছে, তাদের বেশিরভাগের জন্যই আগামীতে বড় দুঃসংবাদ আছে। একটা ডাক্তার স্বামী পেয়ে গেলাম! আহা, কী আনন্দ আকাশে বাতাসে! সেই দিন কিন্তু নেই! ঘর কিন্তু ভাঙছে বিপুল, এবং তা বহু বহু বাড়বে।
সমাধান কী হতে পারে?
একটা হলো যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন নতুন, ক্যারিয়ারের চিন্তাটা আগেই করতে হবে - পাশ করার পরে নয়। দুনিয়ার চাকুরির বাজারের খবর রাখতে হবে।
আগামীদিনের লোভনীয় চাকুরির মধ্যে আছে বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার, ডাটা অ্যানালিস্ট।সেগুলোও কিন্তু ভালো চাকুরি। একজন ভালো গ্রাফিক্স ডিজাইনারের আয় কিন্তু বিপুল! কনটেন্ট রাইটারদের আয় শুনলে মাথা ঘুরে যেতে পারে অনেকেরই। বলছি, তোমার যা ভালো লাগে, সেই চাকুরির ক্ষেত্রগুলো এখন আগের চেয়ে অনেক প্রসারিত। আর মার্কেটিং এর জব মার্কেট বাংলাদেশেই পুরো ফাঁকা। এখন যা চলছে তা হলো ধরে ধরে কিছু ছেলেমেয়েকে মার্কেটিয়ার বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। আসলে মার্কেটিয়ার অনেক বড় ব্যাপার – চাকুরি বিপুল সম্ভাবনা আছে।
আর হ্যাঁ, ২০১৫-২০২৫ বাংলাদেশ কিন্তু ব্যবসার স্বর্ণযুগ। চোখ কান খোলা রাখা খুব দরকার!
তুমি মানুষ একা? এক জীবনে কয়টা হতে চাও?
যা হতে চাও, তাই হও। এবং তা সম্ভব।
সেই পুরনো আমলের ছেলেমেয়েদের মতো হয়ো না। যেমন ,
বাবা, কী হতে চাও? ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই। কী ইঞ্জিনিয়ার হবা? আর কিন্তু উত্তর নাই! কেন ইঞ্জিনিয়ার হবা, সেই উত্তর তো পরের কথা।
মা, কী হতে চাও? ডাক্তার হতে চাই। কীসের ডাক্তার হবা? আর উত্তর নাই! কেন ডাক্তার হতে চাও? সেই গৎবাঁধা উত্তর!
কে কী হলো, সেটি তোমার জন্য একদমই গুরুত্বপূর্ণ নয়। আবারও বলছি, সেটি তোমার জন্য একদমই গুরুত্বপূর্ণ নয়।
ক্যারিয়ার প্লানের আগে দুটো প্লান করতে হয় –
১। আমার জীবনের প্লান, মানে আমি আমার জীবনটা কীভাবে কাটাতে চাই (Plan for my life),
২। আমার পরিবারকে আমি কীভাবে দেখতে চাই (Plan for my family life)
এই দুটো প্লানের মধ্যেই আমার আসলে কী হওয়া উচিত সেই অজানাটা বেরিয়ে পড়বে। না, কেউ আপনাদের বলে নি। সবাই সমস্যার কথা বলে। ১৫ বছর এসব নিয়ে কাজ করেছি আমি। আমার কাছে সমাধানটা এখানেই।
উপরের দুটো প্লান আগে করতে হবে, তাহলেই ক্যারিয়ার প্লান বের হয়ে আসবে।
প্রচুর মানুষ না বুঝেই ক্যারিয়ারে পেছনে ছুটছে। ৯৫% মানুষ ৩৫ এর পরে বুঝতে পারে, হায় হায় – আমি তো এই জীবন চাই নি, এই ক্যারিয়ার চাই নি! আমি চেয়েছিলাম ওটা, হলাম এটা!
ফেরার পথ থাকে না, ঘানি টেনেই জীবন কাটাতে হয়।
তুমিও কি তাই করতে চাও? প্রচুর টাকা আছে কিন্তু আনন্দ নেই কাজে? প্রাণ নেই?
প্রাণহীন একটা বোগাস ক্যারিয়ার চাও (ইঞ্জিনিয়ারিংটাও তোমার জন্য একটা বোগাস ক্যারিয়ার যদি তুমি তাতে আনন্দ না পাও, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়াও একটা বোগাস ক্যারিয়ার যদি তাতে আনন্দ না পাও)?
চারপাশের কে কী হলো, সেই চিন্তা ঝেড়ে ফেলো মাথা থেকে।
দুটো প্লান করো আগে –
তুমি তোমার জীবন কীভাবে কাটাতে চাও এই নশ্বর দুনিয়ায় আর তোমার ফ্যামিলি নিয়ে তোমার স্বপ্ন কী? আগে এই দুটো ঠিক করো, ক্যারিয়ার কোনটা নেয়া উচিত, উত্তর পেয়ে যাবা।
জীবনের জন্য ক্যারিয়ার, ক্যারিয়ারের জন্য জীবন নয়।
বহু নৌকায় নয়, তোমার নৌকাটা ঠিক করো।
আর সেই নৌকায় জীবন কাটাও। জীবন হবে এক আনন্দযাত্রা। আর হ্যাঁ, সাধের জীবন কিন্তু একটাই
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১৭ সকাল ১১:৫৫