বাংলাদেশে ব্যবসার সোনালী সময়: সুযোগ বার বার আসে না!
বাংলাদেশে ব্যবসামুখী এক দারুণ তরুণ প্রজন্ম গড়ে উঠেছে যারা অদম্য, দূরদর্শী, ঝুঁকি নিতে জানে, খবর রাখে সারা দুনিয়ার। আলোর মশাল নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে ওরা। যেন দুর্গমগীরী কান্তার মরু পারি দেয়ার অভিযাত্রা শুরু করেছে – Unstoppable Generation. প্রচলিত মাছিমারা কেরানির কনসেপ্ট থেকে বের হওয়ার একটা প্রজন্ম বাংলাদেশের খুব দরকার ছিলো - প্রজন্মটা বাংলাদেশ পেয়েও গেছে।
অনেকেই নেমে পড়েছে, খেয়াল করেছেন? ভালো জব করে , তার মানিব্যাগে এখন দুটো বিসনেস কার্ড থাকে! দুটোর মধ্যে – ১টা যেখানে জব করে, আরেকটা তার নিজের, যেখানে সে বিনিয়োগ করছে! একটা সময় সে প্রথমটা ফেলে দিবে এবং দ্বিতীয়টাতেই পরিচয় দিতে গর্ববোধ করবে।
বুয়েটের ছোট ভাই, ভালো বেতনে এবং দায়িত্বশীল পজিশনে জব করে, পিউর ইঞ্জিনিয়ারিং। কিন্তু জানি জবটা বেশি দিন করবে না, একদিন বলেছিলো, “খাজা ভাই, ট্যুরিজম হচ্ছে বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা এবং সেটা করে দেখাতে চাই”। ভীষণ ব্যস্ত প্রকৌশলী – কিন্তু শুক্রবার আর শনিবার দেশটা চষে বেড়ায়, বিভিন্ন টিম নিয়ে। দুবছরেই এগিয়ে গেছে বহুদূর। আল্লাহ সুস্থ রাখলে, সে যে এটাকে বিশাল ব্যবসায় পরিণত করবে বয়সটা ৪০ এ যাওয়ার আগেই, কোন সন্দেহ নেই!
ও কিন্তু একা না! এমন মেধাবী, কিন্তু স্বপ্ন দেখে বাংলাদেশকে নিয়ে, এবং দিনরাত পরিশ্রম করছে, কয়েক হাজার তরুণ-তরুণী আছে এখন বাংলাদেশ। কে ডাক্তার, কে ইঞ্জিনিয়ার, কে কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করছে – এগুলো গৌণ হয়েছে ওদের টিম গঠনে, ওদের টিমের একটাই কোয়ালিটি – ওরা স্বপ্ন দেখতে জানে, স্বপ্নকে বাস্তবায়নের যোগ্যতা ওদের আছে। এরকম কয়েক হাজারই যথেষ্ট।
স্ট্রিট ফুডের ব্যবসাটা সবার চোখে পড়ছে এখনই। একটু হাইজিন নিশ্চিত করে এটি এখন বিশাল থেকে বিশালতর হচ্ছে।আরও ১০ বছর এটি বাড়তেই থাকবে। এর ব্যবসা এখন উপজেলা ছাড়িয়ে ইউনিয়নেও ছড়িয়ে পরেছ! হাজার কোটি টাকার ব্যবসা – এই স্ট্রিট ফুডের ব্যবসা। এবং এটা কর্মসংস্থানের এক বিশাল ক্ষেত্র হয়ে উঠছে।
দেশি ফুডের ব্যবসা অন্তত আগামী ১০ বছর দারুণ ব্যবসা করবে, দই, মিষ্টি, মধু, ঘি, নারকেলের নারু, বিস্কিটসহ এসবের ব্যবসা কিন্তু হাজার কোটি টাকার! আইটি খাত, গার্মেন্টসের লিংকেজ ব্যবসা, চামড়া, পোশাক, অনলাইন শপিং, ডোর স্টেপ নানা সার্ভিস, মোটর সাইকেল তৈরি, গাড়ী ভাড়ায় দিয়ে বিপুল আয় – আচ্ছা এসব বড় বড়গুলোতো জানিই!
গবাদি পশুর খামার এটা কেমন? হুম, বছরে ২ লাখ কোটি টাকার ব্যবসা আছে মিনিমাম! আরও বড় হবে। আমরা কি রেডি? নাক সিটাকাচ্ছেন না তো! শাকশব্জির ব্যবসা? ফুলের ব্যবসা? ফলের ব্যবসা? লক্ষ কোটি টাকার ব্যবসা! ইয়েস!
আরেকটা দারুণ ব্যপার শুরু হয়েছে, যার প্রভাব হবে দারুণ। সেটা হলো জেলা ব্র্যান্ডিং। কার জেলার সেরা জিনিসটা কী, সেটার ব্র্যান্ডিং করা – আইডিয়াটা জোশ। আমাদের Unstoppable Generation এটা থেকে দারুণ দারুণ ব্যবসার পথ বের করে ফেলবে।
হাজার সমস্যা আছে এই মুহূর্তে। এই তরুণদেরই একটা বিশাল অংশ কোন ধরনের প্রস্তুতির ধার ধারে না, শুধু চাকুরি চাই, চাকুরি চাই! এই বলতে বলতে চাকুরির জন্য একটা দারুণ প্রস্তুতি লাগে, সেটাও নিবে না! কিন্তু সম্ভাবনা, সে তো আকাশচুম্বী – বাংলাদেশে ব্যবসার সম্ভাবনা এখন আকাশচুম্বী।
সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগে ঝাঁপিয়ে পড়েছে হাজারো সম্ভাবনাময় তরুণ। আপনার খবর কী?
ভারতের কর্পোরেটের একটা বড় চ্যালেঞ্জ কী এই মুহূর্তে? একটা বড় চ্যালেঞ্জ হলে, তাদের ৩৫% সবচেয়ে হাই পার্ফরমারদের বেতন বহু বাড়িয়েও তাদের চাকুরিতে রাখা যাচ্ছে না! কেন জানেন?
এইসব হাইপারফর্মার অদম্য তরুণ, মাঝ বয়সীরা আর অন্যের চাকুরি করতে চায় না! নিজেরাই গড়তে চায়, দেখিতে দিতে চায়! এবং এবং তারা তা করছে।
মাত্র ১৪৬৬ ডলারের পার ক্যাপিটার এই দেশে ব্যবসার যে বিপুল প্রসার ঘটা শুরু হয়েছে, ভাবুনতো আমাদের পার ক্যাপিটা আয় যদি ৩০০০ ডলার আয় হয়, ব্যবসাটা কি দ্বিগুণ হয়ে যাবে না? না, দ্বিগুণ হবে না, ব্যাবসা হবে বহুগুণ। এটাকে বলে ‘মোমেন্টাম’। আস্তে আস্তে বাংলাদেশের জনসংখ্যার বৃদ্ধির মোমেন্টামটা ‘বিসনেস/ইকোনোমিক মোমেন্টাম’ এ পরিণত হচ্ছে।
চোখটা খুলে ঠিকভাবে দেখতে পারলে খুব পরিষ্কার – এক বিশাল সম্ভাবনার পথে যাত্রা শুরু করেছে বাংলাদেশ। চালকের আসনে বাংলাদেশে তরুণ প্রজন্ম।আমার এই লেখা লিখতে লিখতে যে সময় লেগেছে, ওই তরুণরা সেই সময়টাতেও দেশটাকে একটু এগিয়ে দিয়েছে।একটু একটু করে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
জয় হোক এই তরুণ ব্যবসামুখী প্রজন্মের, শুধু ক্রিকেটের বাঘ নয় – বাংলাদেশ অর্থনীতিতেই ইমার্জিং টাইগার। নিঃসন্দেহে এবং নিশ্চিতভাবে।
কপিরাইট: Engr. Khaza Nizam Uddin, Cell: 01932 698672
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫১