২.৭৪ সিজিপি এ নিয়ে বিসিএস এ ফার্স্ট হওয়ার গল্পটি তো সবাই জানেন। তার আগে অন্য কিছু দেখে নেই।
পত্রিকায় হেডলাইন এলো, “শীর্ষ সন্ত্রাসী সাদা সেন্টুর লাশ পড়ে আছে রেল লাইনে”! লাশটা কার ছিলো জানেন? সাদা সেন্ট্রু সাথে চেহারায় মিলা থাকা সেই লাশটি ছিলো প্রচন্ড মেধাবী এক বুয়েটিয়ানের। স্কুল কলেজে তার মেধার কথা ছিলো রূপকথার মতো। থাকতেন আহসান উল্লাহ হলে। ছাত্রলীগের হল শাখার সভাপতি ছিলেন।ছাত্ররাজনীতি তার রেজাল্টের বড় একটা সমস্যা করে। আওয়ামীলীগ তখন ক্ষমতায়।তবুও কোথাও তার চাকুরি হলো না। ট্রেনের সামনে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে সেই বুয়েটিয়ান ছেলেটি।
কেউ কি জানেন যাদের সিজিপিএ ডাউন হয়ে যায়, তাদের হৃদয়ের কথা? কিংবা কত ফুল ঝরে যায় বুয়েট থেকে, মেডিক্যাল থেকে। এই যে স্বপ্নের বুয়েট – সেখানে থেকে অনেকে পাশ করেই বেড়োতে পারে নি। অথবা মেডিক্যালের এমন আছে -৩/৪ বছর পড়ার পরে আর ভালো লাগে না। তারা কেমন আছে? তারা কেমন থাকে? না পারে কাউকে বলতে, না পায় কাউকে পাশে। জানি না এবং আমি দেখি নাই, কোন স্যার এই ড্রপ আউটদের পাশে কখনো দাঁড়িয়েছেন। কেউ পাশে থাকে না।
নিঃসঙ্গতা তাদের কুড়ে কুড়ে খায়। ওদিকে ডিগ্রী পাশ করা ছেলেটি সোনালি ব্যাংকের ম্যানেজার হয়ে ভালোই আছে। আর যে বেড়োতে পারলো না বুয়েট থেকে অথবা মেডিক্যাল থেকে অথবা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে! তার অবস্থা কী হয়!
এই যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ অথবা ধরুন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ! থার্ড ক্লাস পেয়ে সেই সেরা সাবজেক্টের ক্যারিয়ারের কী অবস্থা হয়, জানি না আমরা। অর্থনীতি বিভাগের প্রথম বছরে ১২০ ভর্তি হলে শেষ পর্যন্ত ৬০/৬৫ ক্লাস করে। বাকিরা কই যায়? বুঝে অর্থনীতি তার জন্য নয়। এক বছর লস করে অন্য সাবজেক্টে চলে যায়। যারা থেকে যায়, তাদের মধ্যে যারা ২/৩ বছর পরে বুঝে যে তাদের জন্য এই সাবজেক্টটি নয়, তখন তাদের কী অবস্থা হয়, কেউ কি তাদের খবর রাখে ?
কত ফুল ফোটে আর ঝরে, সে কথা কি তোমাদের কখনো মনে পড়ে?
অথচ সিজিপিএ ডাউন অথবা ড্রপ আউট মানেই তো লাইফ ডাউন বা ক্যারিয়ার আউট নয়। ১৬/১৭ বছরের সময় একটা ভুল সিদ্ধান্ত অথবা ৩/৪ বছরের ভুল পড়াশুনা করলেই কি বাকি ৫০ বছর (গড় আয়ু ধরে বললাম) ধুঁকে ধুঁকে বাঁচতে হবে? কে বলেছে?
এই ড্রপ আউটদের একটা অংশ দুর্দান্ত ক্যারিয়ার গড়ে ফেলে। দেশের সবচেয়ে বড় ব্র্যান্ডের অভিজাত মিষ্টির মালিক তো বুয়েট থেকে ড্রপ আউট করা! দেশের সবচেয়ে বড় ইংলিশ মিডিয়ামের কোচিং সেন্টারের মালিকও ড্রপ আউট। দেশের বিখ্যাত শিল্পিও আছেন ড্রপ আউট। কারো নাম বলছি না। দেশের বেশ কয়েকজন বড় ব্যবসায়ী আছেন, যারা ড্রপ আউট স্টুডেন্ট। দেশের অনেক বড় রিয়েল অ্যাস্টেট ব্যবসা চালান ড্রপ আউট!
জীবন কয়টা? জীবনটা একটাই ।এই এক জীবনের সাথে সিজিপিএ বা ড্রপ আউটের রিলেশনটাই আউট করে দেয়া যায়। জীবনে নিজের মতো করে বাঁচতে হবে। আজকের দুনিয়ায় নিজের পছন্দমতো কিছু করার জন্য বয়স আর ফ্যাক্টর নয়। জীবন থেকে ৩-৫ বছর লস এই তো! সেটা যেনো ৩০-৫০ বছর লস না হয়।সেই লস চাইলে আপনিও ঠেকাতে পারবেন।
আপনি যে বিষয়ে সিজিপিএ ডাউনে আছেন অথবা ড্রপ আউট করেছেন ,সেটা আসলে আপনার সাথে যায় না, সিজিপিএ ডাউন আপনাকে সেই মেসেজ দিচ্ছে, বলছে, “ওরে আমি তো তোর জন্য নই, তোর জন্য অন্য কিছু অপেক্ষা করছে, বেছে নে ঠিকমতো, এখনো সময় আছে!”
ড্রপ আউট মানে লাইফ আউট নয়, ক্যারিয়ার আউট নয়। এটি হবে ভুল ক্যারিয়ার থেকে আপনাকে ফিরিয়ে এনে আপনার জন্য যুৎসই ক্যারিয়ারে যাত্রার নতুন দিগন্ত।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৮:৩৯