সরকারি চাকুরিজীবীদের বেতন বাবদ এবছর বরাদ্দ ৫২ হাজার কোটি টাকা (গত বছর ছিলো ২৪ হাজার কোটি টাকা)। আমাদের ব্যবসায়ীরা কয়েক লাখ বিদেশিকে বেতন দেন বছরে ৬০ হাজার কোটি টাকা (আসল হিসাব এর চেয়ে বেশি)।
সরকারি চাকুরির সংখ্যা আর বাড়ার সম্ভাবনা কম, সব মিলে ২৩ লাখ সংখ্যাটি বরং ২০৩০ এর পরে কমে যেতে পারে। এখন যেমন লাখ লাখ শিক্ষক লাগছে, ২০৩০ এর পরে নাও লাগতে পারে।
তো বাড়ছে কোন সংখ্যাটা? বাড়ছে বেসরকারি চাকুরির সংখ্যা। একটা সমস্যা সেখানে আছে – সরকারি চাকুরির ধরন আর বেসরকারি চাকুরির ধরন আলাদা। বেসরকারি চাকুরিতে আজে চ্যালেঞ্জ, প্রতিনিয়ত চাকুরি বদল বা চাকুরি যাওয়ার টেনশন। বিনিময় আছে ভালো বেতন, সৎভাবেই বেশ ভালোভাবে চলার ব্যবস্থা হতে পারে। একটা স্মার্ট লাইফ আছে সেখানে।
প্রতিবছর সব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কতো বের হয়? ৩/৪ লাখ! প্রতিবছর এসএসসি এবং তার উপরে পাশ করেছে এমন ৮/১০ লাখ ছেলেমেয়ে কর্মবাজারে আসছে। সরকারি চাকুরি কয়টা হচ্ছে বছরে?
যে পরিমাণ বিনিয়োগ হচ্ছে বাংলাদেশে, তাতে কর্মবাজার বিশাল থেকে বিশালতর হচ্ছে। যেখানে দেশে প্রচুর শিক্ষিত বেকার, সেখানে কেন লাখ লাখ বিদেশি এই দেশে আনতে হচ্ছে?
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যৌক্তিকভাবে আনছে। ছোটো একটা উদাহরণ দেই – বাংলাদেশে হাজার হাজার দক্ষ আইটি ডেভেলপার দরকার। আছে? একদমই নেই। এতো দিলাম ছোটো একটা উদাহরণ। আইটিতে আমরা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আয় করতে পারি, অন্যতম প্রধান বাঁধা, দক্ষ ছেলেমেয়ের অভাব।
সবাই তো ছুটছে সরকারি চাকুরির পেছনে, কর্মবাজার বলতে তারা বুঝে সরকারি চাকুরি, প্রস্তুতি নেয় সরকারি চাকুরির জন্য।
খুব পরিষ্কার ভাষায় – বেসরকারি চাকুরিগুলো স্কিলস বেইজড। সেখানে জবে ঢুকার জন্য প্রস্তুতিটাও আলাদা হতে হবে। খেলতে পারি বলে অন্য জায়গায় পার পাওয়া যায়, কিন্তু বেসরকারি চাকুরিতে মাঠে খেলে দেখাতে হবে আপনি খেলতে পারেন – মানে কাজটি পারলে আপনার বেতন হবে, না পারলে হবে না।
বিল্ডিং ডিজাইন করতে পারলে আপনি আছেন, নাইলে নাই! প্রোগ্রাম করতে পারলে আপনি আছেন, নাইলে নাই। মার্কেটিং এ সেলস করতে পারলে আপনি আছেন, নাইলে নাই। নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট প্রোডাকশন দিতে পারলে আপনি আছেন, নাইলে নাই। বায়ারের সাথে নেগোসিয়েশন করতে পারলে আপনি আছেন, নাইলে নাই!
তারমানে কোন দেশের রাজধানী কোনটা, অথবা কয়টা অংক কয় মিনিটে সলভ করলেন, দেশ বিদেশের রাজনীতি নিয়ে লিখলেন এসবের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো যা শিখেছেন তা করে দেখাতে হবে।
বেসরকারি চাকুরি চ্যালেঞ্জিং এবং দক্ষতা আর জ্ঞানভিত্তিক। একবার চাকুরি পেলেই চাকুরি থাকবে তার নিশ্চয়তা নেই – তবে যদি দক্ষতা সত্যিই থাকে, চাকুরি প্রচুর আছে, আগামীতে আরও থাকবে।
ছেলেমেয়েদের প্রস্তুতি এখন ১০০% সময় দেয় সরকারি চাকুরির জন্য। যুগ যুগ ধরে সেই কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, গাইড! বেসরকারি চাকুরি যে বিশাল বাজার আছে, তার জন্যও ব্যাপক প্রস্তুতি দরকার।
বেসরকারি চাকুরির জন্য যারা নিজেদের তৈরি করবে, দেশ বিদেশে চাকুরি কোন অভাব হবে না। এই বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে বড় সংকট পর্যাপ্ত সংখ্যায় দক্ষ লোক খুঁজে পাওয়া। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের চাকা তো আর থেমে থাকবে না। বিদেশি এনে চালানো হচ্ছে।
এই বাংলাদেশেই যারা জীবনের শুরুতে স্মার্ট ছিলো, জবের জন্য নিজেদের দক্ষভাবে তৈরি করেছে, তাঁরা এখন বিদেশিদের সাথে সমানতালে কর্পোরেটে দুর্দান্ত ক্যারিয়ার গড়ে ফেলেছে। এখনকার যারা স্মার্ট তাদের জন্য অপেক্ষা করছে আর বড় ভবিষ্যৎ।
তবে কথা একটাই, যা শিখেছেন, তা করে দেখাতে হবে। করে দেখাতে পারলে, দক্ষতার প্রমাণ দিতে পারলে, বেসরকারি চাকুরি হবে আপনার জন্য দুর্দান্ত ক্যারিয়ার গড়ার জায়গা।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১২:৫০