যেসব কারণে নারীদের এখন স্বাবলম্বী হওয়া উচিত (আসলে সবারই হওয়া উচিত)-
১। কোন ধর্মের কোথাও নারীকে স্বাবলম্বী হওয়ার কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। বিবি খাদিজা (রাঃ) বড় ব্যবসায়ী ছিলেন।
২। আপনি, আমি যখনই অন্যের টাকা নেই – তা সে মালিকের টাকা নেই আর যার টাকাই নেই না কেন, তাদের আমরা বস বস করি এবং এটাই স্বাভাবিক। স্বামীর টাকায় চললে অজান্তেই একটা পরনির্ভরশীলতা চলে আসে। একজন নারী পরিপূর্ণ ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষ। সে তো লেখাপড়া করেছে, সে কেন নিজেকে ছোটো ভাববে?
৩। অধিকাংশ পুরুষই এই টাকা দেয় বলেই যতো বাহাদূরি করে। বউকে নির্যাতন, অবহেলা করা, ঘরের কোন সিদ্ধান্তের গুরুত্ব না দেয়া ইত্যাদি – লাখ লাখ মামলা আছে এ নিয়ে, আর মামলার বাহিরেও আছে লাখ লাখ নির্যাতিত নারী। পুরুষের যতো ক্ষমতা তা ওই টাকা দেয় বলেই।
৪। স্বামীরা অধিকাংশই কোন ধরনের জবাবিদিহিতা করে না স্ত্রীদের কাছে, এ নিয়ে বহু স্ত্রীরা চিল্লাচিল্লি করলেও স্বামীরা এক কান দিয়ে ঢুকিয়ে আসলে অন্য কান দিয়ে বের করে দেয়।
৫। সমাজ সংসার দ্রুত বদলে যাচ্ছে। ডিভোর্স বাড়ছে ব্যাপক হারে।ঢাক সিটি কর্পোরেশনের তথ্য অনুযায়ী তা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। কোন বিয়েই এখন আর নিশ্চিন্ত কিছু নয়। ১০ বছর প্রেম করে বিয়ে করা স্বামীও অন্য নারীর সাথে জড়িয়ে পড়ছে। ভাঙছে বিয়ে। ৩০ পরে যেসব নারীর ডিভোর্স হয়, তাদের দুর্দশা কিন্তু বাড়তেই থাকে।
৬। বিচ্ছেদী নারীর কাছ থেকে সুবিধা নিতে ওত পেতে থাকে হাজারো লোভী পুরুষ।এ সময় যে সব মেয়ে স্বাবলম্বী, তাদেরই এই পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমসিম খেতে হয়, আর যে স্বাবলম্বী নয়, তার অবস্থান হয়ে পড়ে খুবই ঝুকিপূর্ণ। আরে সাথে যদি সন্তান থাকে, তবে তো আর ভোগান্তির শেষ থাকে না।
৭।কোন নারীরই এখন ভাবা উচিত নয়, বিয়ে মানে আমৃত্যু নির্ভরশীলতা। আপনার চারপাশেই অনেক নারী দেখবেন ডিভোর্সী ছাড়াও – স্বামীহীন। বিভিন্ন রোগব্যাধী বিশেষ করে হার্ট অ্যাটাক করে অনেকেই মারা যাচ্ছেন ৪০-৪৫ বছর বয়সে।স্বামী যথেষ্ট রেখে না গেলে ভয়াবহ দুর্গতির মধ্যে পড়তে হয়।
৮। প্রতিবছর দুর্ঘটনায় হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। কে কখন মারা যাবে বলা যায় না এসব দুর্ঘটনায়। কাজেই একটা অবলম্বন থাকতেই হয়।
৯। একজন নারী যখন স্বামীহারা হয় যে কারণেই হোক, তখন একটা অবলম্বনের জন্য সে কী না করে! সেটা ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ জানেন না। কতো কমপ্রোমাইজ যে করতে হয়, তার সীমা নেই।
১০। অধিকাংশ পুরুষই আজ দুর্নীতিবাজ। দুর্নীতিবাজদের জন্য বহুগামীতার অজস্র দূয়ার খোলা। স্ত্রীর বয়সটা যখন ৩০-৩২ পার হতে থাকে, পুরুষের বহুগামীতার সম্ভাবনাও বাড়তে থাকে। লক্ষ লক্ষ নারী আজ হোটেল, গেস্ট হাউস, রেস্ট হাউস, ফ্লাটে – অপেক্ষা করছে দুর্নীতিবাজ পুরুষদের মনোরঞ্জনের জন্য। স্ত্রীরা এক সময় ঠিকই বুঝতে পারে, কিন্তু তার স্বামীর অপকর্ম মেনে নেয়া ছাড়া কোন উপায় থাকে না। সংসার হয়ে পড়ে এক জঘণ্য দোজখ। আর এ ধরনের দোজখে লাখ লাখ নারী মুখ বুঝেই পুড়ে পুড়েই সংসারের ঘানি টেনে যাচ্ছেন। এ ধরনের ঘানি টানতে না হলে স্বাবলম্বী হতেই হবে।
১১। সৎভাবে যদি সংসার চালাতে চায়, ছেলেমেয়েদের হালাল টাকায় মানুষ করতে চায়, তবে একজনের আয়ে এখন তা অধিকাংশ পুরুষের জন্য কঠিন। আর স্বামী যদি দুর্নীতিবাজ হয়, আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন, সে অন্য নারীর কাছে যাবেই এখনকার দিনে। দুর্নীতিবাজ স্বামী কখনোই বিশ্বস্ত স্বামী নয়।
১২। ঘরের কাজের একই যুক্তি দেয়ার সময়টা এ যুগে নেই। নারীর আরো অনেক বড় অবদান রাখার সামর্থ্য আছে। রাষ্ট্রকে তার দেয়ার ক্ষমতা পুরুষের চেয়ে কোন অংশেই কম নয়। তো সেটা থেকে রাষ্ট্র কেন বঞ্চিত হবে?
আগের সেই দিন আর নেই। মেনে নিতে হবে বাস্তবতা – নিজের জীবন নিয়ে ভাবতে হবে বহুদূর পর্যন্ত। একটা রাষ্ট্রের দ্রুত এবং টেকসই উন্নয়ন (এবং টেকসই পরিবারও) করতে হলে অর্ধেক জনগোষ্ঠীকেও সমান তালে ভূমিকা রাখতে হবে।
হতে হবে সমানে সমান – তবেই না সংসারের সমতা আসবে প্রকৃতপক্ষে।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০১৬ দুপুর ২:৩৯