পড়ুন প্রথম আলোতে -----
‘দেশের মালিক’ ভয়াবহ মানসিক রোগে ভুগছেন। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলছে তাঁর। চিকিৎসকেরা বলছেন, অনর্গল কথা বলে এখন কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েছেন তিনি।
গতকাল রোববার দুপুর ১২টার দিকে সচিবালয়ের নিজ কার্যালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত যখন ঢাকায় নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার হিদার ক্রুডেনের সঙ্গে সাক্ষাত্ করছিলেন, ঠিক তখনই তাঁর কক্ষে ঢুকে পড়েন সাকির নামের ওই ব্যক্তি। নিজেকে পরিচয় দেন ‘দেশের মালিক’ হিসেবে। বলেন, তিনি সাধারণ কেউ নন, কারণ তিনি দেশের মালিক। অর্থমন্ত্রীর কাছে একটি যন্ত্রের খোঁজে এসেছেন। হাসপাতালেও নিজেকে তিনি সাকির বলে পরিচয় দিয়েছেন।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক ওয়াজিউল আলম চৌধুরী প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, সাকির গুরুতর মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। চিকিত্সকেরা ধারণা করছেন, তাঁর ‘মেজর সাইকোসিস’। এ সমস্যার আওতায় রোগীরা সাধারণত বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডার বা সিজোফ্রেনিয়ায় ভোগেন। এসব রোগী সব সময় বাস্তবতা থেকে দূরে অবস্থান করেন, নিজেদের খুব গুরুত্বপূর্ণ ভাবেন, বেশি কথা বলেন। চিকিত্সকেরা আরও বলেছেন, এ রোগীরা যেসব কথা বলেন তা অসত্য নয়, তবে বাস্তববর্জিত। যেমন এ ব্যক্তি বলছেন তিনি দেশের জনগণ, তাই তিনি দেশের মালিক। টাকা-পয়সার সংকটে তিনি আছেন, এ-সংকট অর্থমন্ত্রীই ঘোচাতে পারেন।
আনুমানিক ৩০ বছর বয়সী এ মানুষটির ওপর প্রথমে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেও পরে তাঁকে মানসিক হাসপাতালে চিকিত্সার জন্য পাঠান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। রাত আটটার দিকে সাকির হাসপাতালে পৌঁছলে তাঁর চিকিত্সা দেন ফজলুল কবির। প্রথম আলো ডটকমকে ফজলুল বলেন, সাকির তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসায় খুব রেগে যান। তিনি বারবার চিকিত্সকদের বোঝানোর চেষ্টা করেন যে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ, তবু তাঁকে তাঁর ভাষায় ‘পাগলা গারদে’ নিয়ে আসা হয়েছে। চিকিত্সকেরা হাসপাতালে তাঁর কোনো ক্ষতি হবে না বলে আশ্বস্ত করেন। সাকির জানান, তিনি বাড়ি যেতে চান। তাঁর কাছে কোনো অর্থ নেই। সে কারণেই তিনি অর্থমন্ত্রীর কাছে গিয়েছেন। অর্থমন্ত্রী ছাড়া আর কেউ তাঁর আর্থিক অনটন ঘোচাতে পারেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাকিরকে প্রথমে হাতকড়া পরিয়ে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। পরে চিকিত্সকদের নির্দেশে হাতকড়া খুলে ফেলা হয়। সাকিরকে আটক বা গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ। তাঁর স্বজনদের খুঁজে পাওয়া গেলে পুলিশ সরে যাবে। অর্থমন্ত্রী সাকিরকে গ্রেপ্তার বা আটক করতে নিষেধ করেছেন। তিনি চিকিত্সা করার নির্দেশ দিয়েছেন।
খোঁজ মিলেছে স্বজনদের: গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিক, পুলিশদের জেরার মুখে হকচকিয়ে গিয়েছিলেন সাকির। গ্রামের বাড়ি একবার কুমিল্লা, আর একবার কিশোরগঞ্জ বলে জানিয়েছিলেন। তবে চিকিত্সকদের কাছে তিনি তাঁর বাড়ি নরসিংদীর মনোহরদী বলে জানান। ‘জাহান’ নামে একজনের কথাও বলেছেন বেশ কয়েকবার। এই সূত্র ধরে মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুর রহমান ভূইয়া খুঁজে পেয়েছেন সাকিরের স্বজনদের।
আজ দুপুরে সাকিরের চাচাতো ভাই মো. রমজান আলীর সঙ্গে কথা হয়। প্রথম আলো ডটকমকে তিনি বলেন, ‘সাকিররা তিন ভাই। ছয়-সাত বছর ধরে সে মানসিক রোগে ভুগছে। এক সময় সে সুস্থ ছিল। মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করত। স্ত্রীও ছিল। স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ির পর তার দুই ভাই দেখাশোনা করেন। প্রায়ই সাকির নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। ভাইয়েরা খুঁজে আনেন, সাকিরের হয়ে লোকজনের কাছে ক্ষমা চান।’