সেন্ট মার্টিনে আহ্ছানউল্লাহ ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের দুঃখজনক মৃত্যুর পরে, সেন্ট মার্টিনের মাথা বা কোনার দিকের কিছু ছবি সহ বেশ কিছু স্ট্যাটাস পড়লাম যেখানে জানতে পারলাম এলাকার লোক জানিয়েছে এই এলাকাটায় ঘন ঘন মৃত্যু ঘটে।। লেখাগুলোতে দেখলাম, সেন্ট মার্টিন দ্বীপের একটা ছবি যেইটায় একটা কোনার মত অংশ বেরিয়ে আছে।
আমার মনে হয়েছে। একটা দ্বীপের মাথা বা কোনা যদি রিস্কি হয়, তাহলে নিশ্চয়ই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দ্বীপ বা সমুদ্র সৈকত যেখানে একই ধরনের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য আছে সেখানে একই রকম দুর্ঘটনা হবে এবং নিশ্চয়ই এর কোন প্যাটার্ন থাকবে। এই ব্যাপারে আরও কিছু স্টাডি করে কিছু জানলাম, সেইটা শেয়ার করছি।
বাংলাদেশের সাথে পৃথিবীর অন্য সৈকতের মানুষ মারা যাওয়ার একটা পার্থক্য হোল, ভাটার সময় কোন দেশে আপনাকে নামতেই দিবেনা। কিন্তু, বাংলাদেশে অনেক মানুষ, ভাটার সময় পানিতে নেমে ভেসে যায়, এই অজ্ঞানতার কারনে অনেক জীবন বিনষ্ট হচ্ছে। এই জন্যে কক্সবাজার বা কুয়াকাটায় যাওয়ার আগে গুগল করে। কক্সবাজারের জোয়ার ভাটার একটা লিঙ্ক আমি দিচ্ছি, যা বুকমার্ক করে রাখতে পারেন, যাওয়ার আগে নিয়ে যেতে পারেন।
কিন্তু পড়তে পড়তে জানলাম, ভাটার সময় মানুষের ভেসে যাওয়া বাদেও আর একটা বিপদজনক ইস্যু আছে। এইটা সম্পর্কে আমাদের সচেতনতা অনেক কম।
একে বলা হয়, রিপ কারেন্ট। বাংলায় আমরা সুবিধার জন্যে এর নাম দিতে পারি উলটো স্রোত।
সমুদ্র সৈকতে ৮০% মৃত্যু এই রিপ কারেন্ট বা উলটো স্রোতের জন্যে হয়। এমনকি অস্ট্রেলিয়াতেও প্রতি বছর গড়ে ২২ জন মারা যায় রিপ কারেন্টের কারণে।
আমাদের দেশেও সমুদ্র সৈকতে যেই সব মৃত্যু হয়, তার বেশীর ভাগ এই রিপ কারেন্টের জন্যেই হওয়ার কথা। এবং সেন্ট মার্টিনের মাথার দিকে যে সরু অংশ তাও রিপ কারেন্টের একটা বৈশিষ্ট্যের সাথে মিলে।
বলে রাখা ভালো রিপ কারেন্ট পৃথিবীর সব সৈকতে হয় এবং এই জন্যে সতর্কতা নিতে হয়। রিপ কারেন্টের ভয়ে সমুদ্রযাত্রা বন্ধ করার দরকার নাই। কিন্তু সতর্কতা গুলো নিতে হবে।
রিপ কারেন্ট বা উলটো স্রোত কি জিনিষ?
রিপ কারেনট বা উলটো স্রোত
এইটা এক ধরনের ঢেউ যা সমুদ্রের তটে ধাক্কা খেয়ে, উলটো দিকে প্রবাহিত হয়। অনেক ক্ষেত্রে, এই ধাক্কা খেয়ে ফিরে যাওয়া ঢেউ বাতাসের কারনে বা প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের কারণে চিকন একটা পথ ধরে, সমুদ্রে ফিরে যেতে পারে। এবং এর ফলে সেই সরু পথে যদি কেউ থাকে তবে ঢেউ তাকে ধাক্কা দিয়ে গভীর সমুদ্রে নিয়ে ফেলতে পারে। এই সরু পথের ঢেউটাকেই বলা হয়, রিপ কারেন্ট বা উলটো স্রোত।
আমি রিপ কারেন্টের কিছু ছবি দিচ্ছি,
উলটো স্রোতের ছবি
উলটো স্রোতের ছবি
উলটো স্রোতের ছবি
এইটা যে কোন স্থানে হতে পারে। যে কোন সমুদ্রে হতে পারে, কিন্তু কিছু কিছু জায়গায় প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের কারনে নিয়মিত রিপ কারেন্ট বা উলটো স্রোত নিয়মিত হতে পারে।
কিভাবে রিপ কারেন্ট বা উলটো স্রোত চিনবেন?
রিপ কারেন্ট বা উলটো স্রোতের একটা ভয়ঙ্কর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এইটা দেখতে মনে হয় খুব শান্ত। এবং উপর থেকে একে গাঢ় নীল দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রে রিপ কারেন্ট বা উলটো স্রোতের সময়ে দেখবেন কিছু না কিছু ভেসে সাগরের দিকে যাচ্ছে বা আশে পাশের ঢেউ এর মধ্যে ঢেউ এর মাথা দেখা যাচ্ছে না। ছবিগুলো খেয়াল করেন, রিপ কারেন্ট যখন প্রবাহিত হয় তখন সে ফেরার পথে ঢেউয়ের মাথা ভেঙ্গে দেয়।
ফলে এই স্থানটা বেশী শান্ত দেখায়।
রিপ কারেন্ট বা উলটো স্রোতে পড়লে কি করবেন?
উলটো স্রোতে কিভাবে বাচতে হবে?
যারা সাঁতার জানেন তারা রিপ কারেন্টে পড়লে, উলটো দিকে তীরের দিকে না গিয়ে সৈকতের সমান্তরাল ভাবে উলটো স্রোত থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করতে হবে। কারণ, সাগরের স্রোত যখন টান দিবে তখন শক্তি দিয়ে স্রোতের বিপরীতে ফেরা যাবেনা।
কয় ধরনের রিপ কারেন্ট আছে?
আমি পড়লাম, তিন ধরনের রিপ কারেন্ট আছে। একটা ফিক্সড আর একটা হঠাৎ আর একটা টপোগ্রাফিক যার মধ্যে অন্যতম একটা হচ্ছে হেডল্যান্ড এর কারনে রিপ কারেন্ট। ফিক্সডটা হয় কিছু কিছু এলাকায় যেমন যেইখানে ব্রিজ আছে, যেইখানে কোন গভীর গর্ত আছে। হঠাৎ যেইটা হয়, সেইটা যে কোন জায়গায় বাতাসের কারনে হতে পারে।
আর টপোগ্রাফিক রিপ, যেইটার মধ্যে হেডল্যান্ড একটা অন্যতম কারণ- সেইটাই সেন্ট মার্টিন দ্বীপের কোনার মত অংশে দেখা যায়। এইটা একটা হ্যাডল্যান্ড। এইটা রিপ কারেন্ট হওয়ার জন্যে টিপিকাল জায়গা। যেইটা আমি অনেকগুলো লেখায় পাইছি।
সেন্ট মার্টিনের এই অংশটা একটা হেডল্যান্ড বৈশিষ্ট্যের এলাকায় যেইখানে রিপ কারেন্ট ঘন ঘন হবে প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের কারণে।
কারণ বাতাসের কারণে দুই দিকের পানি ধাক্কা দিয়ে এর মাথায় বা তার দুই পাশেই একটা রিপ কারেন্ট তৈরি করতে পারে। এইটা একটা মৃত্যুফাঁদ। এইখানে প্রাকৃতিক অবস্থানের কারণে অনেক বড় বড় চ্যানেল তৈরি হয়েছে যেইগুলো দিয়ে ঘন ঘন উলটো স্রোত বা রিপ কারেন্ট প্রবাহিত হওয়ার চান্স বেশী। যা শান্ত পানি দেখে নামা পর্যটকদের ভাসিয়ে নিয়ে যায়।
এইখানে আমি দুইটা ছবি দিলাম। প্রথম ছবিটা নেটে ব্যাপক প্রচার হইছে। কিন্তু আহ্ছানউল্লাহ ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা বলছে, তাদের বন্ধুরা ভেসে গেছে ভিন্ন জায়গায়, হেডল্যান্ডের ত্রিকোণের মুখে নয়, বরং পাশের জায়গায়। রিপ কারেন্ট নিয়ে আমার স্টাডিও সেইটাই বলে রিপ কারেন্ট হেডল্যান্ডের মুখে এবং পাশে উভয় দিকেই হতে পারে, যা আমি এই নোট এর প্রথম সংস্করণেই লিখছি। তবুও সবার বোঝার জন্যে আবার জোর দিলাম। এইটা জীবন মৃত্যুর বিষয় এইটা নিয়ে হেলা করার কোন সুযোগ নেই।
সেন্ট মার্টিনের এলাকাবাসি জানে এই এলাকায় সাঁতার কাটতে নাই। তাই সামনে কাউকে দেখলে এরা মানা করে। কিন্তু সেইটা সবার জানার সুযোগ হয় না। এই ভাবেই সামান্য অসাবধানতার কারণে অনেক পর্যটক মারা যায়।
আহ্ছানউল্লাহ ইউনিভার্সিটির এতগুলো ছাত্র মারা গেলো ,তারা খুব সম্ভব এই এলাকায় ফিক্সড হেডল্যান্ড রিপ কারেন্টের কারণেই পানিতে ভেসে গেছে। বেশ কিছু লিঙ্ক পেলাম, যাতে জানতে পারলাম প্রতি বছর এই এলাকায় অনেকেই ভেসে যায়। বাংলাদেশে এতো বছরে ধরে এই এলাকায় এতো মানুষ মারা গেল, এলাকার লোক জানে যার কথা সেই জায়গায় প্রশাসন কেন সাতারকাটা নিষিদ্ধ করছেনা? এবং জনসচেতনতা সৃষ্টি করছেনা? সেই প্রশ্ন আমাদেরকে করতেই হবে।
এইটা একটা বেসিক জিনিষ যেইটা অল্প আধ ঘন্টার গুগুল সার্চে জানা যায়।
এইটা কেন আমাদের সরকার জানতে পারবে না এবং জনগনের নিরাপত্তার জন্যে কক্সবাজার এবং সেন্ট মার্টিনের জন প্রতিনিধি এবং প্রশাসন কেন একটা ওয়ার্নিং দিয়ে রাখতে পারে না?
রিপ কারেন্ট একটা দুর্ঘটনা কিন্তু সেন্ট মার্টিনের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের কারণে হেডল্যান্ড ধরনের টপোগ্রাফিক রিপ কারেন্ট কিন্ত নিয়মিত একটা বৈশিষ্ট্য। এই স্থানে যদি একটা মৃত্যুও ঘটে আমরা তাকে দুর্ঘটনায় বলতে পারিনা, এইগুলো হত্যা। এর জন্যে দায়ী এই অদক্ষ রাজনীতিকিকৃত প্রশাসন এবং অপরাজনীতি।
রিপ কারেন্ট বা উলটো স্রোত যে কোন সৈকতে হতে পারে। এবং শান্ত অংশ যেইখানে মনে হবে, সেই খানেই এইটা বেশী দেখা যায়। এর জন্যে সমুদ্র যাত্রা বন্ধ করার দরকার নাই। কিন্তু, এই ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। কিন্তু সেন্ট মার্টিনের এই হেডল্যান্ডের কথা আলাদা। এই দিকে নামাই উচিত নয়।
আমি অল্প পড়াশোনা করে যা জানলাম তা শেয়ার করলাম। যেই লিঙ্কগুলো থেকে এই বিষয়ে জানতে পেরেছি সেই গুলো দিলাম যাতে আরও জানতে চাইলে আপনেরা আরও গভীরে যেতে পারেন।
আহ্ছানউল্লাহ ইউনিভার্সিটির যেই সব ছাত্র সাগরের ভেসে তাদের পরিবারকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে মারা গেছেন, তাদের রূহের মাগফেরাত কামনা করছি।
(View this link
View this link
View this link
View this link
View this link
View this link
View this link
View this link)
লেখকঃ জিয়া হাসান
♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা পোস্ট হতে পারে এটি। সাম্প্রতিককালে ঢাকার আহ্ছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু মেধাবী ছাত্রের অপরিণামদর্শী অথচ মর্মান্তিক অকালমৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে জিয়া হাসান ভাইয়ের লিখা এই আর্টিকেলটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সবাই জানুক এই উদ্দেশ্য নিয়েই লিখাটি এখানে দেওয়া। উপরে যা কিছু দিয়েছি সবই জিয়া হাসান ভাইয়ের আর্টিকেল থেকে নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ সমস্ত কৃতিত্ব ওনার একার। এখানে আমি জাস্ট কপি-পেস্ট পদ্ধতি অনুসরণ করেছি মাত্র। অতএব উপরের আর্টিকেলের জন্য ১০০% ধন্যবাদ পাওয়ার দাবীদার জিয়া ভাই।
♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣
এইবার আমি একটা ইউটিউব লিঙ্ক দিই যেখান থেকে আমরা সবাই জানতে এবং শিখতে পারবো, কি করতে হবে যখন উলটো স্রোতে গা ভাসানোর কারণে বিপদ আসে...
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা এখানে যা বলতে চেয়েছেন...
১/ উলটো স্রোতে পড়লে আতংকিত না হওয়া;
২/ উলটো স্রোত আমাদের পানির নিচে তলিয়ে নিয়ে যাবে না। যা করবে তা হল সমুদ্রের একটু ভিতরে নিয়ে যাবে;
৩/ কিছু ক্ষেত্রে উলটো স্রোত আপনাকে জায়গামতো ফিরিয়েও দিয়ে যেতে পারে;
৪/ ভালো সাঁতারু হলে সৈকতের সমান্তরালে সাঁতার কাটা যাতে উলটো স্রোতের দুই পার্শ্বের ফেনিল অংশে চলে যেতে পারেন। এই অংশটাকে হোয়াইট ওয়াটার বলা হয়েছে।
৫/ উলটো স্রোতের উলটো দিকে কোনোভাবেই সাঁতার না কাটা। ৪ ও ৫ নাম্বার পয়েন্ট কিন্তু জিয়া ভাই তার আর্টিকেলে বলেছেন।
৬/ উলটো স্রোতের একটা খারাপ দিক হল- এটার গতি সাঁতারুদের সাঁতার কাটার গতির চেয়ে বেশি থাকে, এমনকি অনেক সময় অলিম্পিক সাঁতারুদের থেকেও বেশি হয়ে থাকে।
৭/ আর উলটো স্রোতকে সবচেয়ে খারাপ বলার একটা কারণ হল এই যে, সাধারণ পর্যটকের কাছে এই উলটো স্রোতের জায়গাটিই সবচেয়ে নিরাপদ মনে হয়। কারণ তারা তো দেখে এটা স্রোতহীন এক শান্ত স্থান। অতএব ঝাঁপ দিই এইখানেই।
৮/ উলটো স্রোত বোঝার সবচেয়ে ভালো জায়গা হচ্ছে হেডল্যান্ড, যাকে বাংলায় বলে অন্তরীপ।
৯/ যদি আশেপাশে লাইফগার্ড বা সতর্কতা চিহ্নযুক্ত কোন পতাকা না থাকে তাহলে সাগরে না নামা।
♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣
ফেসবুকের একটা স্ট্যাটাস দিয়ে শেষ করছি আমার আজকের কপি-পেস্ট মার্কা পোস্টটি...
এ্যাডভেঞ্চার করতে সাধারণ যেসব জিনিস শেখা প্রয়োজন।
১ সাতার।
২ সাইকেল চালানো।
৩ গাছে ওঠা।
৪ সাধারণ খাবার খাওয়া।
৫ সাধারণ যায়গায় ঘুমানো।
৬ সাধারণের সাথে ভাল ব্যবহার।
এছাড়াও ছবি তোলা, ভারি ব্যাগ বহন করা, দুরের রাস্তায় হেটে যাওয়া এসব সাধারণ জিনিস না শিখেই যেসব পোলাপাইনে তথাকথিত এ্যাডভ্যাঞ্চারে বের হয় তারা এক কথায় গবেট।
-Tinku ভাই