somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাসিনা না খালেদা??

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১০:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশে দুই উজ্জ্বল নক্ষত্র হলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপ্ন দ্রষ্টা, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা গণতন্ত্রের মানস কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ও মহান স্বাধীনতার ঘোষক (বঙ্গবন্ধুর পক্ষে), মুক্তিযুদ্ধকালীন জেড ফোর্সের প্রধান, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা, সফল রাষ্ট্র নায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান (বীর উত্তম) এর সহধর্মীনি আপষহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।

একজন দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকার পর দিশাহীন আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নিয়ে দলকে সুসংগঠিত করেন, অন্যজন স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের প্রলোভনে ভঙ্গুর বিএনপিকে রক্ষ করার জন্য গৃহকোণ ছেড়ে রাজনীতিতে এসে বিএনপিকে সঠিক পথে পরিচালনা করেন।

এই দুই মহিয়সী রমনীর রাজনীতি গতি পায় মূলত স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে। আমি যখন থেকে রাজনীতি একটু একটু বুঝি এবং পত্রিকা পড়া শুরু করি তখন থেকে আমার দেখা, পড়া এবং জানা কিছু ঘটনা তুলে ধরলাম আপনারা পড়ে বিচার করুন এই দুই রমনীর কে ক্ষমতা লোভী:

স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলন: (১৯৮১-১৯৯০) দীর্ঘ ৯ বছর:

তখন আমি অনেক ছোট, রাজনীতি ঠিক কি বুঝি না, সবে মাত্র পত্রিকা পড়তে শিখেছি। পরবর্তীতে আরো ভালো করে পড়ে জেনেছি।
১৯৮৬ সাল এরশাদ সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন:
আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামে এক জনসভায় বলেছিলেন- এরশাদ সরকারের অধীনে যারা নির্বাচন করবেন তারা জাতীয় বেঈমান হিসেবে পরিচিতি পাবেন, তার পরের ঘটনা রাজনীতি সচেতন সবাই জানেন।
আজকের বিরোধী দলের নেত্রী খালেদা জিয়া বলেছিলেন এরশাদের অধীনে কোন নির্বাচনে যাবেন না, এবং ওনি সেটাই করেছিলেন।
১৯৮৬সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ না গেলে এরশাদ সাহেব হয়তো আগেই পদত্যাগ করতে বাধ্য হতেন।

১৯৯১ সালের সাধারন নির্বাচন:
সেই নির্বাচনে বিএনপি জয়ী হলে আজকের প্রধানমন্ত্রী নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগ তুলেন এবং ঐ সময়ের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কড়া সমালোচনা করেন। বিএনপি রাজাকার জামাতের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করার পর তিনি আরো বলেছিলেন সরকারকে ১মিনিটও শান্তিতে থাকতে দিবেন না।

খালেদা সরকার মাগুরার উপ নির্বাচনে ভোট কারচুপি করলে শেখ হাসিনা নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে জামাতকে পাশে নিয়ে আন্দোলন করেন, হরতাল, জ্বালাও পোড়াও অবরোধ করেন।

১৯৯৬ সালের সাধারন নির্বাচন:
ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য খালেদা জিয়া ১৯৯৬সালের ১৫ই ফ্রেব্রুয়ারী নিজের অধীনে এক বিতর্কিত নির্বাচন করেন, তীব্র আন্দোলনের মাধ্যমে ১ মাসের মাথায় নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল জাতীয় সংসদে পাশ করতে বাধ্য হোন এবং ক্ষমতা ছেড়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারে অধীনে নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতাচ্যূত হোন। খালেদা জিয়াও সেই নির্বাচনের সূক্ষ কারচুপির অভিযোগ করেন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মুন্ডপাত করেন।
সেই নির্বাচনে হাসিনা এরশাদের জাতীয় পার্টিসহ আরো দুই একটি দলকে নিয়ে জাতীয় সরকার নামে মূলত আওয়ামী ঘরনার সরকার গঠন করে এবং ১৯৯১সালের নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারে প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্টপতি নিয়োগ করেন। সরকারের শেষ সময় এসে হাসিনা সরকার ক্ষমতা ছাড়তে গড়িমসি করেন এবং সরকারের শেষ দিনে বিএনপি নয়াপল্টনে বিশাল শোডাউন করেন। রাজনৈতিক অস্থিরতা কেটে যায় এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা নেয় এবং নির্বাচনের ব্যবন্থা কর, জাতী স্বস্তি পায়। একটা চিরস্থায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানের সংযোজিত হয়।

২০০১ সালের সাধারন নির্বাচন:
বিএনপি জামাতের সাথে জোট গঠন করে নির্বাচনে জয়লাভ করে এবং রাজাকারদের মন্ত্রীত্ব প্রদান করে বিতর্কিত হোন।
আওয়ামী লীগ পরাজিত হলে শেখ হাসিনা রাষ্ট্টপতি সাবেক প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিনের মুন্ডপাত করেন এবং নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি বলে আন্দোলনের হুমকি দেন এবং সরকারের বিরুদ্ধে ১৭৩ দিন হরতাল পালন করেন, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে রেকর্ড পরিমাণ হরতাল ছিল।
২০০১ সালে নির্বাচনে বিএনপি নিরঙ্কুশ আসনে জয়ী হয়ে স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠেন, ২০০৬ সালের নির্বাচনে নিজেদের পছব্দের লোককে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারে প্রধান করার জন্য বিচারপতিদের চাকরীর অবসর বয়স বৃদ্ধি করেন। এতে বিচারপতি কে এম হাসান (বিএনপি পন্থি) এর নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারে প্রধান হওয়ার সম্ভাবনা নিশ্চিত হলে রাজনৈতিক পরিবেশ ঘোলাটে হয় যায়।

২০০৬ সালের সাধারন নির্বাচন:
বিএনপি নিজেদের রাষ্ট্টপতিকে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারে প্রধান করে ১০জন উপদেষ্টা নিয়োগ করে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন, যেটা আওয়ামী লীগ প্রতিহত করার জন্য আন্দোলন শুরু করেন।
হরতাল, অবরোধ, লগি বৈঠার মাধ্যমে মানুষ পিটিয়ে হত্যা এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে রাষ্ট্টপতি ইয়াজউদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সরিয়ে সেনা বাহিনী তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করেন। সেই সময় হাসিনা এটা তাদের আন্দোলনের ফসল বলে দাবী করেন।
সেনা বাহিনী নিয়ন্ত্রণাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচন দিতে বিলম্ব করতে থাকেন এবং রাজনীতিবিদদের উপর নির্যাতনের স্ট্রীমরোলার চালান। ২০০৯ সালে নির্বাচনের তারিখ ঘোষনা আগ থেকেই হাসিনা বলতে থাকেন ক্ষমতায় গেলে সেনা নিয়ন্ত্রণাধীন সরকারের সব কাজের বৈধতা দিবেন।
২০০৯সালের সাধারণ নির্বাচন:
বিএনপির দুঃশাসনে অতিষ্ট মানুষ আওয়ামী লীগ জোটকে ভোট দিয়ে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসনে জয়ী করে।
মানুষের মনে নতুন আশার সঞ্চার হয় কিন্তু সংবিধান পরিবর্তন করে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা তুলে দিয়ে বর্তমান সরকার নতুন সমস্যা তৈরি করে। বিরোধী দল দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষনা দেয়।
২০০৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপি পন্থী সাবেক বিচারপতির নি্যন্ত্রণাধীন সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে না চেয়ে যে পরিস্থিতির জন্ম দেয়, সেই বিএনপি কেন হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারকে মেনে নেবে?
বাংলাদেশের পরিস্থিতিতে নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের কোন বিকল্প নেই। ৪টি নির্বাচন সুস্ঠু ভাবে হওয়ার পর কেন সরকার সেটা বাতিল করলো বোধগম্য নয়।

১৯৯৬সালে খালেদা সরকার আওয়ামী লীগ, জামাত ও অন্যান্য দলের আব্দোলনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে যে নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিল সেটা কেন বর্তমান সরকারের গাত্রদাহের কারণ হলো জনগণ কী বুঝতে পারছেনা??

ক্ষমতায় টিকে থাকার বা ক্ষমতা ফিরে পাবার দৌড়ে কে বেশী লোভী সেটা বিচারের দায় পাঠক আপনাদের উপর ছেড়ে দিলাম।

নোট: আমি অতি সংক্ষেপে বিষয়টা তুলে ধরলাম মাত্র। কোন দলীয় আনুগত্য আমার উদ্দেশ্য নয়, কোন দলের প্রতি আমার সমর্থনও নেই। লিখতে গিয়ে যদি কিছু বাদ পরে থাকে সেটা অনিচ্ছাকৃত এবং সময় সংক্ষিপ্ততার কারণে হয়েছে। আশা করি ভুলভ্রান্তি ক্ষমা করে নিরপেক্ষ ভাবে মতামত প্রদান করতে সচেষ্ট হবেন।

একটি সুন্দর এবং সর্বোগ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক সমাধানে আশা রেখে বিদায় নিচ্ছি।

সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

২৩-১০-২০১৩
সকাল: ১০:০১মিনিট







০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×