বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি, স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার, স্বপ্নদ্রষ্টা, কারিগর, বাংলাদেশের জনক (আমি জাতির জনক মানতে পারি না যেহেতু আমরা জাতি হিসেবে বাঙালী এবং বাঙালী জাতী শেখ মজিবুর রহমানের জন্মের আগে থেকেই বিদ্যমান) যেটাই বলি না কেন ওনার সমতুল্য বাংলাদেশে কেউ নাই। স্বাধীনতা উত্তর শেখ মুজিব একজন অগ্নিপুরুষ ছিলেন, যার শরীরের অগ্নি স্ফুলিঙ্গ সাড়ে সাত কোটি মানুষের হৃদয়ে মূহুর্তে ছড়িয়ে যেত। হাজার লক্ষ কোটি মানুষ তাঁর জন্য রোজা থেকে শুরু করে মসজিদে মন্দিরে দোয়া প্রার্থণা করত। কেন সেই মানুষ গুলো আজ দ্বিধা বিভক্ত সেই দিকে না গেলাম। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশীদের যে পরিচয় দিয়েছে, যে পতাকা দিয়েছে, সে সীমনা দিয়েছে, যে মানচিত্র দিয়েছে, সে মুক্ত আকাশ দিয়েছে, যে সবুজ মাঠ দিয়েছে তার জন্য এই মহান নেতাকে আজন্ম সবার সম্মান, শ্রদ্ধা নিবেদন করা উচিত এবং তার জন্য রাষ্টিয় ভাবে সব সময় প্রার্থণা করা উচিত।
কিন্তু কেন সেটা হচ্ছে না বাংলাদেশ আওয়ামী কি একবারও ভেবে দেখেছে?? কেন দেশের একটা বৃহৎ অংশ শেখ মুজিবের প্রতি সম্মান দেখাতে বা তার জন্য দোয়া করতে ইচ্ছুক না, সেটাও কি ওনারা ভেবেছেন?? কেন শেখ মুজিবর রহমান শুধু আওয়ামী লীগের নেতা হবেন?? কেন তিনি সর্বজন শ্রদ্ধেয় নেতা হলেন না সেটাও কি ওনারা ভেবে দেখেছেন। ওনারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কেন আওয়ামী রাজনীতি সীমানায় বন্দী করে রাখলেন সেটা কি ভেবে দেখছেন?
ওনাকে আওয়ামী চাটুকারের দল অতিমাত্রায় বিশেষনে বিশাষায়িত করে জনগণের কাছে বারংবার ভুল বার্তা পাঠিয়েছেন। আমাদের দেশের নাম বাংলাদেশ, শেখ মুজিবুর রহমানের পছন্দের নাম, হৃদয়ের নাম বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের জন্ম, সেই সূত্রে আমরা বাংলাদেশী, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে মায়ের ভাষা পেয়েছি, সেই সূত্রে বাংলা আমাদের মাতৃভাষা এবং রাষ্ট ভাষা। তাহলে কেন আওয়ামী চাটুকারের দল শেখ মুজিবুর রহমানকে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী বলেন? এর পেছনের কারণটা কি কেউ জানাবেন?? দয়া করে আবেগ তাড়িত এবং দলীয় দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে বলবেন না।
বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা, বাংলাদেশের রূপকার, বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা, সেই সূত্রে ওনি আমাদের দেশের জনক। কেন চাটুকারেরা বাঙালী জাতির জনক বলেন??? বাংলা ভাষা ভাষীর মানুষ কি শুধু বাংলাদেশেই আছেন?? অন্য দেশে নাই?? তারা কি তাহলে আমাদের দেশের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবুর রহমানকে তাদের জাতীর পিতা মানবে?? আর বাংলাদেশে কি শুধু বাংলা ভাষার লোকই থাকেন? অন্য ভাষার লোক কি এখানে নেই??? বাঙালী জাতি ছাড়া কি বাংলাদেশের ৫৬হাজার বর্গ মাইলে আর কোন জাতি বসবাস করে না?? যদি করেন তাহলে কি এই বিশেষন গুলো অতিরঞ্জিত না?? শেখ মুজিবুর রহমানের জন্য কি অতি রঞ্জিত কোন বিশেষণের প্রয়োজন আছে?? কোন অতিরঞ্জিত উপমার প্রয়োজন আছে?? আমরা কি বলেন, আছে প্রয়োজন??
শেখ মুজিবুর রহমানকে দয়া করে আমাদের সকলের মনের মণি কোঠায় থাকার ব্যবস্থা করুন। শেখ মুজিবুর রহমানের দল হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের এই দায়িত্বটা পালন করা দরকার। বাংলাদেশের ৩৫%-৪১% লোকের শেখ মুজিবুর রহমান আমরা দেখতে চাই না, আমরা ১০০% লোকের শেখ মুজিবুর রহমান দেখতে চাই। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বুকে হাত দিয়ে বলুক তারা কি এটা করতে পারবে?? যদি না পারে তাহলে কে কেক কাটল আর কে ফূর্তি করল সেটা নিয়ে মাথা ঘামানোর কোন দরকার নাই। জোড় করে শ্রদ্ধা, সম্মান, ভালবাসা পাওয়া যায় না, সেটা আচরণ দিয়ে, ব্যবহার দিয়ে , কর্ম দিয়ে, আস্থা দিয়ে, বিশ্বাস দিয়ে অর্জন করতে হয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কি সে চেষ্টা কখনো করেছে?? অন্য দলের বা জনগণের দোষ দেবার আগে কি নিজেদের দোষ আওয়ামী লীগ খোঁজে বেড়ায়?? সব দোষ নন্দ ঘোষ এই সংস্কৃতি থেকে, এই হীন মনোমানসিকতা থেকে, এই নিকৃষ্টতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। তাহলেই শেখ মুজিবুর রহমান সবার মুজিবুর রহমান হতে পারবেন। অন্যথায় বিভাজন প্রবাহমান থাকবে। দেয়ালে দেয়ালে একটা চিকা লেখা দেখা যায় - "যত দিন রবে পদ্মা-মেঘনা-যমুনা প্রবাহমান, ততদিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।" এর সাথে আমি বলবো- "যতদিন রবে তোমাদের আওয়ামী লীগের শেখ মুজিব বানানোর চেষ্টা প্রবাহমান, ততদিন এই দেশে বিভাজন থাকবে বহমান।" এই ধারা থেকে দয়া করে বের হয়ে আসুন।
খালেদা জন্মদিন করলো না বিবাহবার্ষিকী করলো সেটার দিকে নজর না দিয়ে, সেটা নিয়ে মুখরোচক মন্তব্য না করে, কাজ করুন কি ভাবে ১৫ই আগষ্টকে বাংলাদেশের প্রতি ঘরে ঘরে শোকের আবহ তৈরি করা যায়। কি করে বাবা মা ১৫ই আগষ্ট বাচ্চা প্রসবের সিদ্ধান্ত না নেয়। আপনারা সমালোচনা করে, পত্রিকায় নিউজ করে, বুদ্ধিজীবিরা কলম লিখে হয়তো খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালনের উৎসবকে বন্ধ করবেন, বাংলাদেশের কোটি কোটি ঘরের যে কত মানুষ তার বাচ্চাদের জন্মদিন পালন করছেন, তাদেরটা কি করে বন্ধ করবেন?? এর জন্য দরকার সর্বজন শ্রদ্ধেয় শেখ মুজিবুর রহমান, আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবুর রহমান নয়। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জনক শেখ মুজিবুর রহমানকে ফিরিয়ে আনুন, সবাই ঘরে ঘরে শোক দিবস পালন করবে, বাবা- মা ১৫ই আগষ্টে বাচ্চা প্রসবের আগে যেন ১০০বার ভাবে, নেহায়েত জীবনের ঝুঁকি না হলে যেন জন্ম বিলম্বিত করায়।
পরিশেষে ছোড কথাটা বলে যাই, আমাদের বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশের জনক শেখ মুজিবর রহমানের শাহাদত বার্ষিকীতে বিএনপি তাদের নেত্রীর বিতর্কিত জন্মদিন পালন করে এবং এই নিয়ে আওয়ামী লীগ সমালোচনার তীর ছুড়ে, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আস্রাফুলতো বলেই বসলেন -"যারা বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত বার্ষিকীর দিনে কেক কাটে, তাদের সাথে কোন আলোচনা নয়।" (টিভির চ্যানেল গুলোর ব্রেকিং নিউজ থেকে সংগৃহীত) রাজনীতিতে আবেগ চলে না, দেশের স্বার্থ নিয়ে আবেগ চলে না, আপনি বঙ্গবন্ধুর শাহাদত বার্ষিকী দিনে কেক কাটছে বলে আলোচনা না করে সংঘাত, সহিংসতা ডেকে আনবেন, সাধারণ মানুষ জীবন দিয়ে, ভোক্তভুগী হবে, সেটা কি গ্রহন যোগ্য?? এটা কি শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনীতির দর্শন? মোটেও না। শান্তি, সম্পীতি আর নিরপেক্ষতা ছিল তার আদর্শ (যদিও প্রধানমন্ত্রী পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি হবার পর সেই আদর্শ হারিয়ে গেছিলো এবং আপনি মনে হয় সেখান থেকেই শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ খোঁজেন?)। ক্ষুয়িষ্ণু এবং ভুল নীতি মনে না রেখে ভালো গুলো আকড়ে ধরেন লাভ আপনাদরই হবে, আমরা আমজনতা যা ছিলাম তাই থাকবো।
শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনে বিএনপি শ্রদ্ধাতো দেখায় না, উল্টো ভুয়া কেক কেটে উৎসব করে। অন্য দিকে ৩০শে মে জিয়ার শাহাদত বার্ষিকীতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কি করে?? যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করে কি?? জানি এখানে অনেকে অনেক কথা বলবেন, অতীত নিয়ে টানবেন, আমি সেই দীর্ঘ পথে যাচ্ছিনা, দেশের দুইটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের একটির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে এবং একজন প্রাক্তন রাষ্টপতি ও খেতাব প্রাপ্ত (জীবিত অবস্থায় সর্বোচ্চ খেতাব বীর উত্তম) মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের জন্য কি করেন?? (ও ভুলে গেছি অনেক নব্য আওয়ামী চাটুকার ও তোষামোদ কারিরাতো জিয়া কে মুক্তিযোদ্ধা মানতে নারাজ) আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলে বিটিভিতে তার অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ আলোচনা অনুষ্ঠানও হয় না। ইদানিং জাসদের নেতাদের নিয়ে আলোচনা হলেও জিয়া থাকে অবহেলিত, কর্নেল তাহের কে নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয় অথচ জিয়াকে নিয়ে কিছুই হয় না। যে সংবাদপত্র গুলো বিএপনি আমলে হেড নিউজ করে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা ভরে ফেলে সেই পত্রিকা গুলো আওয়ামী লীগের সরকারের আমলে ভেতরের পাতায় অথবা প্রথম পাতায় ছোট করে একটি কোণায় একটি দায়সারা গুছের রিপোর্ট করে, এটা কার নির্দেশে?? মানুষ কি জানে না?? মানুষ কি বুঝে না?? কেক কাটা বন্ধ কি ভাবে হবে আমজনতা আপনারাই বলুন???
বিচার মানি তাল গাছ আমার, এই গ্রাম্য নীতির থেকে যতদিন আমাদের রাজনীতিবিদরা বের না হবেন, ততদিন কেক কাটা চলবে আর জিয়ার চোদ্দগোষ্ঠী উদ্ধারও চলবে। সব খেতাব প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে আলোচনা হলেও জিয়া থাকবেন উপেক্ষিত।
সমাধান খোঁজতে হলে একজনের দোষ খুজলে হবে না, সবার দোষ খুঁজতে হবে। সবাইকে সহমর্মিতা প্রদর্শন করতে হবে, পারস্পারিক শ্রদ্ধা থাকতে হবে, যার যা প্রাপ্য তাকে তাই দিতে হবে। শ্রদ্ধা জানাতে হবে সবাইকে, কথায় লাগাম টানতে হবে, বাক্য ব্যবহারে সংযত হতে হবে। যার যার কর্মসূচী তার কাছে থাক, আপনারা মন ও মানসিকতা পরিবর্তন করুন, কর্মসূচীর ধরন ও গঠন পরিবর্তীত হয়ে যাবে। আমরা আমজতা সেই শুভদিনের আশায় থাকলাম, যে দিন দুই নেতার জন্য দুই দলের নেতা কর্মীরাই হাত তুলে দোয়া করবে। আল্লাহ আমাদের সেই দিন উপহার দিন। আমীন, সুম্মা আমীন।