somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কওমী মাদ্রাসা : প্রাসঙ্গিক কিছু কথা

১৯ শে মার্চ, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাদ্রাসা শিক্ষার সাথে বাংলাদেশের মানুষের ধর্মীয় আবেগ আর অনুভূতিই শুধু জড়িত নয়, শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসার একটি সম্পর্কও রয়েছে।
এখানে কুরআন হাদিস শিক্ষা দেওয়া হয়। শিক্ষা দেওয়া হয়, জীবনে চলার পথের নীতি-নৈতিকতা। আদর্শ শিক্ষার একমাত্র পথ হচ্ছে এই মাদ্রাসাসমূহ। মানুষ ইসলামের শিক্ষা গ্রহণ করে এবং তা ছড়িয়ে দেয় দেশ থেকে বিশ্বময়। ইসলামের মহিমা-গুণগান প্রচার ও প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত আলেম-উলামারা। যা সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার একমাত্র পথ। আর তাই এ সমাজের মানুষের কাছে আলেম-উলামাদের এতো সম্মান, এত শ্রদ্ধা। বাংলাদেশের ধর্মভীরু মানুষের এই হচ্ছে ইয়াক্বিন, বিশ্বাস। আর তাই এদেশের আনাচে-কানাচে গড়ে উঠেছে মাদ্রাসা, মক্তব। যেখানে গরীব-ইয়াতিম বাচ্চারা দ্বীনী শিক্ষা গ্রহণ করে।
আর এরই সূত্র ধরে, ধর্মীয় শিক্ষা এবং গরীব-ইয়াতিমদের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে কোন কোন মাদ্রাসা, মক্তবের প্রধান ব্যক্তিরা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে উঠতেও দেখা যায়। সাধারণ মানুষের বিশ্বাস ও ধর্মীয় মুল্যবোধকে পুঁজি করে, এমনও দেখা যায় মাদ্রাসার দেওয়ালে ইটের গাথুনী লাগার আগেই মাদ্রাসার প্রধান ব্যক্তির বাসার জায়গা হয়, বিল্ডিং উঠে। বাংলাদেশের শতকরা প্রায় নব্বুই ভাগ মাদ্রাসার এটিই হচ্ছে প্রকৃত চিত্র।
নীতি-নৈতিকতা শিক্ষার সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে যে মাদ্রাসাসমূহ জন্ম লাভ করে, তাদেরই অনৈতিক কার্যকলাপের কিঞ্চিত আলোকপাত উপরোক্ত বক্তব্যে উঠে এলেও চরম নিকৃষ্টতম কাজও চলছে এইসব মাদ্রাসা সমূহে। লিল্লা বোডিং, যাকাতের টাকা, কোরবানীর চামড়া সংগ্রহকারী মাদ্রাসা সমূহে আইয়ামে জাহিতিয়াতের সবনিম্ন কাজকর্ম চলছে দেদারছে।
পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ পড়ে কেবলই আতকে উঠতে হয়। দৈনিক প্রথম আলোয় কিছুদিন আগে এমনই একটি সংবাদ ছাপা হয়। মাদ্রাসার আশি বছর বয়স্ক মাওলানা দশ বছরের ছাত্রীর সাথে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। মেয়েটি গর্ভবতী হলে ঘটনাটি জানাজানি হয়। মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক, মাদ্রাসা পরিচালনা বোর্ডের সভাপতি আপোষরফা করে দশ বছরের মেয়েটির সাথে আশি বছরের বৃদ্ধের বিয়ের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু এখানে মাওলানার অনৈতিক কাজের কোন শাস্তির ব্যবস্থা তারা করেনি। আর এর পেছনে রয়েছে তাদেরও এমন অনৈতিক কাজের সুপ্রসন্ন ইঙ্গিত। মেয়েটির বাবা বিয়েতে রাজি না হওয়ায় ঘটনার সংবাদ পত্রিকায় ছাপা হয়। মামলা হয় মাওলানার বিরুদ্ধে। পুলিশ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এবং ধর্ষক মাওলানাকে গ্রেফতার করে।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার দৈনিক সিলেটের ডাকে একটি সচিত্র সংবাদ ছাপা হয়। সংবাদটির শিরোনাম, ‘১০ বছরের ছাত্রী পাশবিকাতর শিকার, অভিযুক্ত মাদ্রাসা শিক্ষক আটক।’
নগরীর আখালিয়া নোয়াপাড়ায় নাজাতুল উম্মাহ মহিলা মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা তোফায়েল আহমদ ওসমানী কর্তৃক মাদ্রাসার ১০ বছরের এক ছাত্রী পাশবিকতার শিকার হয়েছে। রক্তাক্ত অবস্থায় ঐ ছাত্রীকে ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ অভিযুক্ত ওসমানীকে গ্রেফতার করেছে। রাত সাড়ে ৯টায় ঘটনাটি ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আখালিয়া নোয়াপাড়ায় জনৈক আব্দুল মুনিমের বাসার নীচতলা ভাড়া নিয়ে প্রায় ৮ মাস আগে মাওলানা ওসমানী জামেয়া ইসলামিয়া নাজাতুল উম্মাহ মহিলা মাদ্রাসা ও এতিমখানা গড়ে তুলেন। রাত সাড়ে ৯টায় হঠাৎ করে মাদ্রাসার অভ্যন্তরে এক শিশু কন্যার আর্তচিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে যান। লোকজন মাদ্রাসার দরজা ভেতর থেকে বন্ধ দেখে দরজা না খোলায় তারা লাথি শুরু করলে এক পর্যায়ে অনেকটা অসহায় অবস্থায় দরজা খুলেন ওসমানী। পরক্ষণেই দেখা যায় শিশু কন্যাটি মেঝেতে বিছানায় ছটফট করছে এবং লজ্জাস্থান দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। স্থানীয়রা ওসমানীকে টেনে হেচড়ে ঘর থেকে বের করে গণধোলাই দেন। পরে পুলিশে খবর দেয়া হয়। খবর পেয়ে কতোয়ালী থানার পিএসআই খায়রুল ইসলাম ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এসময় পুলিশ ওসমানীকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত ওসমানী দিরাই উপজেলার জনদল ইউনিয়নের রাজনাও গ্রামের ইবরাহিম আলীর পুত্র। পরে তাকে থানায় নিয়ে আসা হয়। এর আগে পাশবিকতার শিকার শিশু কন্যাকে উদ্ধার করে ওসমানী হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। শিশু কন্যাটি এয়াতিম এবং তার গ্রামের বাড়ি সিলেট সদর উপজেলার সিরাজপুর কালিরগাও এলাকায়।
জানা গেছে, এ মাদ্রাসায় নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে বসবাস করতেন ওসমানী। রাতে ঘটনার সময় ৩ যুবতী ও ৫ শিশু কন্যা মাদ্রাসায় উপস্থিত ছিল। এ ঘটনায় রাতেই কতোয়ালী থানায় একটি এজহার দেয়া হয়েছে। কতোয়ালী থানার ওসি খন্দকার নওরোজ আহমদ এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
ঘটনাটি একটি প্রকাশিত সংবাদ। কিন্তু এ ধরনের ঘটনা প্রতিনিয়ত চলছে মাদ্রাসা সমূহে। বেশ কিছুদিন আগে এরকম আরেকটি সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। মাদ্রাসার একটি ছেলে দীর্ঘদিন যাবত যৌনসঙ্গী হচ্ছে প্রিন্সিপালের। কিন্তু ছেলেটি এখন দাখিল পরীক্ষার্থী। তাই প্রিন্সিপালের আর যৌনসঙ্গী হতে রাজি না-হওয়ায় প্রিন্সিপাল প্রকাশ্যে তাকে পিটিয়েছেন, ছাত্রটি পরে সংবাদিকদের ঘটনাটি সবিস্তারে বর্ণনা করে। কওমী নামধারী এইসব মাদ্রাসাসমূহ জঙ্গীবাদের পৃষ্ঠপোষক বলেও মাঝেমাঝে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
এবার প্রশ্ন হচ্ছে, নীতি-নৈতিকতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধের দোহাই দিয়ে এইসব মাদ্রাসায় এখন কি চলছে। মানুষের আবেগ আর বিশ্বাসকে পদদলীত করে আইয়ামে জাহিলিয়াতকেও ওরা হার মানাচ্ছে। আর পদশ্চাতপদ একটি জাতি উপর দিচ্ছে তারা। যেখান থেকে হাজার হাজার ছেলে-মেয়ে সমাজের অনুপযোগী শিক্ষা নিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে আর নীতি-নৈতিকতাকে পদদলীত করছে অহরহ। কারণ তারা এইসব অনৈতিকতাই শিখেছে তাদের উস্তাদদের কাছ থেকে।
তাই এমন একটি পদশ্চাতপদ শিক্ষা-ব্যবস্থা আদৌ চালু রাখা কতটুকু যৌক্তিক তা বর্তমান সরকারকেই ভেবে দেখা উচিত। অভিজ্ঞ মহল মনে করেন, অযোগ্য জাতি তৈরির কারখানাকে সরকারী আলিয়ার সাথে একীভূত করা এখন সময়ের দাবি। যেখানে একটি যুগোপযোগী ধর্মীয় শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে আধুনিক শিক্ষার সমন্বয় থাকবে। এখান থেকে ছেলে-মেয়েরা ধর্মীয় শিক্ষাও পাবে, সাথে পাবে আধুনিক শিক্ষা। শিখবে নীতি-নৈতিকতা।
এ দেশ, এ জাতি আরেকটি অন্ধকারের দিকে ক্ষমান্বয়ে ধাবিত হচ্ছে। এখনই এর লাগাম টেনে না ধরলে ভবিষ্যতে এ থেকে উত্তরনের কোন উপায় থাকবে না। মানুষের বিশ্বাসের শেষ আশ্রয়স্থলটুকু হারিয়ে যাচ্ছে। তাই এসব পশ্চাতপদ শিক্ষা-ব্যবস্থা ও অনৈতিক কার্যকলাপ এখনই শক্ত হাতে বন্ধ করা প্রয়োজন।
১২টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×