বিশ্বের বৃহত্তম প্রাণী তীল তিমি। এই সামুদ্রিক প্রাণীটি লম্বায় ৩০ মিটার বা ৯৮ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে, ওজন হতে পারে ১৮০ টন বা এর বেশি হতে পারে।
উনিশ শতকের প্রথমে প্রায় প্রত্যেক মহাসাগরে, উপসাগরে এর প্রাচুর্য ছিল। এক শতাব্দীর ব্যাবধানে শিকারীদের উৎপাতে এই প্রাণীটি এখন প্রায় বিলুপ্তির মুখে। ১৯০০ সালের দিকে নীল তিমির তৈল সংগ্রহে মানুষের আগ্রহের কারনে বিপুল সংখ্যক তিমি নিধন করা হয় যেকারনে নীল তিমি বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে চলে গিয়েছিল। তবে ১৯৯৬৬ সালে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্যোগে নীল তিমি শিকারের উপর নিষেধাজ্ঞা জ্ঞাপন করা হয়। ২০০২ সালের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী সারবিশ্বে নীল তিমির সংখ্যা ধরা হয়েছিল ১২০০০ টি, তবে এ সংখ্যা কমতির দিকে। নীল তিমির সবচেয়ে বেশি দেখা মিলে এন্টার্ট্টিক মহাসাগরে, এরপর প্রশান্ত মহাসাগর এবং ভারত মহাসাগরে। আন্তর্জাতিক বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ইউনিয়ন নীল তিমিকে বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীর তালিকায় স্থান দিয়েছে।
আসুন জেনে নেই নীল তিমি সম্পর্কে মজাদার কিছু তথ্যঃ
১। নীল তিমি বিশ্বের দীর্ঘতম প্রাণী হিসেবে স্বীকৃত। তবে অনেকের মতে লম্বায় বিশ্বের দীর্ঘতম প্রাণী বুটলেস ওয়ার্ম।
২। নীল তিমি স্তন্যপায়ী প্রাণী বা তারা বাচ্চাদের দুধ পান কড়ায়।
৩। শুধু নীল তিমির এক জিহ্বাই একটা হাতির থেকে ওজনে বেশি হতে পারে, হৃদপিণ্ডের ওজোন একটা গাড়ির ওজোনের চেয়ে বেশি হতে পারে।
৪। তারা মুলত জলের নিচে ডাইভ বা ঝোপ মেরে শিকার ধরে। এক ডাইভে তারা ৫০০ মিটার পানির গভীরে চলে যেতে পারে।
৫। নীল তিমি যদিও গভীর জলে শিকার ধরে কিন্তু নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য পানির উপরিভাগে আসতে হয়। পানির উপরিভাগে আসার সময় তাদের প্রকান্ড শরীরের চাপে পানির এক বিশাল পিণ্ড তৈরি হয়। এই জলপিণ্ডের মধ্য থেকেই তাদের অক্সিজেন গ্রহন করতে হয়।
৬। এই দীর্ঘতম প্রাণীটি একা থাকতেই বেশি পছন্দ করে, দলবেঁধে চলতে তাদের কমই দেখা যায়।
৭। অত্যধিক ওজন থাকা সত্বেও ঘন্টায় ৮ কিলোমিটার বা তার বেশি বেগে সাতার কাটতে পারে এবং সর্বোচ্চ গতিসীমা ৩০ কিমি উঠাতে সক্ষম।
৮। যদিও আমরা তাদের আওয়াজ শুনিনা। নীল তিমি বিশ্বের উচ্চ আওয়াজি প্রাণীদের মধ্যে একটি। তারা একে অপরের সাথে উচ্চ ধ্বনির ফ্রিকুয়েন্সি ব্যাবহার করে যোগাযোগ স্থাপন করে। ধারনা করা হয় যে নীল তিমি ভাল অবস্থায় ১৬০০ কিমি দুরুত্বের মধ্যেও একে অপরের সাথে যোগাযোগ রক্কাহ করতে পারে।
৯। নারী নীল তিমি ৩ বছরে মাত্র একটি বাচ্চা দেয় এবং গর্ভকালীন সময় ১১-১২ মাস।
১০। একটি বাচ্চা তিমির জন্মকালীন ওজন প্রায় ২৭০০০ কেজি এবং লম্বায় ৮ মিটারের উপরে হতে পারে।বাচ্চা তিমিকে পানির উপরিভাগে নিঃশ্বাস নেয়ার জন্য মা তাকে সাহায্য করে।
১১। বাচ্চা তিমি তার মায়ের স্তন থেকে দৈনিক ৬০০ লিটার দুধ পান করে।
১২। মানুষ ছাড়া নীল তিমির শত্রু শিকারী নেই, তবে তারা মাঝে মাঝে হিংস্র হাঙ্গর এবং ঘাতক তিমির আক্রমনের শিকার হয়। সমুদ্রের জাহাজ মাঝে মাঝে নিল তিমির আক্রমনের শিকার হয়।
১৩। ধারনা করা হয় যে তিমির মানুষের মতই আবেগ, অনুভূতি রয়েছে এবং তারা সংগীতপ্রিয়।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:১৯