somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আনন্দ ভ্রমণঃ লক্ষীপুর মোতির হাট

১৬ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ১২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অরণ্যে ঘেরা সবুজময় অপরূপ লীলাভুমির নাম লক্ষীপুর। সুপ্রাচীনকালে প্লাবন সমভূমির মাধ্যমে গড়ে উঠা এই অঞ্চলের মাটি বেশ উর্বর। মাটির উর্বরতা এবং আবহাওয়া অনুকূল থাকার কারনে এই অঞ্চলে রয়েছে বৃক্ষরাজির বিশাল সমারোহ এবং বিস্তৃর্ন মাঠে রয়েছে ফসলের শোভা। লক্ষীপুরের এই অপার সৌন্দর্যমাখা প্রাকৃতিক দৃশ্য অবলোকন করে যে কেউ বিমুগ্ধ চিত্তে তাকিয়ে থাকবে। কবি জসিম উদ্দিনের কবিতায় বাংলাদেশের গ্রাম প্রকৃতির যে ছবি অংকিত হয়েছে তা আমাদের প্রিয় লক্ষীপুরের দিকে তাকালে সহজেই অনুধাবন করা যায় –

“গলাগলি ধরি কলা বন; যেন ঘিরিয়া রয়েছে তায়,
সরু পথ খানি সুতায় বাঁধিয়া
দূর পথিকেরে আনিছে টানিয়া,
বনের হাওয়ায়, গাছের ছায়ায়, ধরিয়া রাখিবে তায়,
বুকখানি তার ভরে দেবে বুঝি, মায়া আর মমতায়!
ঘন কালো বন - মায়া মমতায় বেঁধেছে বনের বায়।“

লক্ষীপুরের এই রূপের কথা আমরা যারা এই জেলার বাসীন্দা তার প্রায় সবার কমবেশি জানি। এত জানার মধ্যেও লক্ষীপুরের একটা সৌন্দর্য আমাদের কাছে অজানা এবং নিরবে নিভৃতে থেকে গেছে। সে কথায় এখন আসা যাক।
বাংলাদেশের ১৯ টি উপকূলীয় জেলার মধ্যে লক্ষীপুর অন্যতম। মেঘনা, ডাকাতিয়া, কাটাখালি, রহমতখালিসহ আর কিছু নদীর প্রবাহ রয়েছে লক্ষীপুরে। জেলার আয়তনের প্রায় ২৩% বা ১১৮ বর্গ কিলোমিটার দখল করে আছে নদীগুলো। বাংলাদেশের প্রশস্ততম নদী মেঘনার বিশাল অংশ লক্ষীপুরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। লক্ষীপুরের রামগতি এবং কমলনগর উপজেলার কোল দিয়ে বহমান মেঘনা নদী এই স্থানকে দিয়েছে অনন্য রূপ লাবন্য। কিন্তু এই রূপ লাবন্যই ছিল আমাদের কাছে অচেনা।

রবিন্দ্রনাথের ছোট কবিতাটি সহজেই মনে পড়ে-

‘বহু দিন ধরে বহু ক্রোশ দূরে
বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে
দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা
দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু।
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
ঘর হতে শুধু দু পা ফেলিয়া
একটা ধানের শীষের উপরে
একটি শিশির বিন্দু।’

ভ্রমনের তৃষ্ণার্থ হৃদয় এবং আকাঙ্ক্ষা নিয়ে মানুষ দেশ-দিদেশ ঘুরে বেড়ায়। ক্ষীণ সামর্থ্য আমাদের এই দুর্বার আকাঙ্খাকে সীমা টেনে দেয়। কিন্তু দেখতে জানলে যে আমাদের জীবনের কাছাকাছি যে বিপুল সৌন্দর্য নিহিত রয়েছে তার সন্ধান সহজে পাওয়া যায়।

আমরা রামগঞ্জ ছাত্র-ছাত্রী কল্যাণ পরিষদের সদস্যগণ, বড় ভাই এবং বন্ধুগণ মিলে একবার সে সুযোগটি গ্রহন করেছিলাম। মেঘনার পাড়ে গিয়ে নিজের জেলার সৌন্দর্য সম্পর্কে আমরা অভিভূত হলাম। লক্ষীপুর যে পর্যটনের জন্য এক বিশাল সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র সেটা সেদিনই পুরোপুরি টের পেয়েছি।

সিদ্ধান্তটি হয়েছিল কোন একদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে রামগঞ্জ ছাত্র-ছাত্রী কল্যান পরিষদের সাধারণ বৈঠকে, যে ঈদুল আযহা উপলক্ষে রামগঞ্জ থেকেই কোন এক জায়গায় আমরা আনন্দ ভ্রমণে যাব। একেকজন একেক স্পটের নাম প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু সময় স্বল্পতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং আর্থিক সমস্যার কারনে নিকটবর্তী একটা স্পটকে বেচে নিতে সভাপতি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করলেন। সবার সম্মতিক্রমে লক্ষীপুর মেঘনার মোহনায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। ভ্রমনের দিনক্ষন ঠিক করা হয় ঈদের তৃতীয় দিন ১৮ অক্টোবর ২০১৩। পরিকল্পনা অনুযায়ী সবাইকে সকাল ৬ টার মধ্যে রামগঞ্জ জিয়া শপিং কমপ্লেক্স এর সামনে উপস্থিত থাকতে বলা হয়।

ঐ দিন ভোর ফজর নামাজ পড়ে আর ঘুমালাম না। উদয়মান সুর্যের মৃদু মৃদু আলো আর পাখির মিষ্টি গান, সকালের চেনা পরিবেশ। হালকা কুয়াশা আর দুর্বা ঘাসে জমে থাকা শিশির কনা শীতের আগমনী বার্তা জানান দিচ্ছে। যাওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে আর দেরি করলাম না। আমাদের বাড়ি রামগঞ্জ থেকে ৫ কিলোমিটার পশ্চিমে ৪নং ইছাপুর ইউনিয়ন নারায়ন পুর গ্রামে। সুতরাং রামগঞ্জ শহরে যেতে কিছুটা সময়ও লাগবে। ব্যাগটা রেডি করে হালকা নাস্তা খেয়ে বের হয়ে স্থানীয় বাজারে রিক্সা খুঁজতে চললাম। এতো সকালে বাজারে রিক্সাওয়ালা তো দুরের কথা একটা কাঁক-পক্ষীও খুঁজে পেলাম না। সরাসরি চললাম একজন কাছের রিক্সাওয়ালার বাড়িতে, তাকে টেনে হিঁচড়ে উঠিয়ে নির্ধারিত ভাড়া থেকে একটু উপরির আশ্বাস দিয়ে যেতে রাজি করালাম।

রামগঞ্জ শপিং এর সামনে নামতে না নামতেই চোখে পড়ল বড় ভাই এবং বন্ধুদের। দল উপদলে দাঁড়িয়ে একেকজন একেজায়গায় আড্ডায় ব্যাস্ত। সবাই বাসের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছে । আমিও তাদের সাথে যোগ দিলাম। অপেক্ষার সময়টুকু আড্ডায় আর খোশগল্পে পার হল।
বাসের জন্য অপেক্ষা করতে করতে সবার মাঝে মাঝে একটা বিরুক্তির ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। যাইহোক অবশেষে বাস এসে থামল ঠিক আমাদের সামনে। সবাই ঢাকার লোকাল বাসের মত টেনে হিঁচড়ে উঠতে আরম্ভ করলেন। সংখ্যায় বেশি হওয়ায় বাসে বসার জায়গা হচ্ছিল না। কেউ বসলেন, কেউ বা দাঁড়িয়ে থাকলেন। বাস সংখ্যা ছিল ২ টি, আমাদের সংখ্যা ছিল প্রায় ১০০। এ যেন বিশাল ১০০ জনের উৎসবমুখর আনন্দ যাত্রা।

চলমান বাসের মধ্যে ব্যাপক বিনোদন উপভোগ করলাম আমরা। বিশেষ করে সিনিয়র বড় ভাইরা হাঁক-ডাক, হাসি-তামাশায় সরগরম করে তুললেন। কেউ গান, কেউ কৌতুক, নিজের প্রেম কাহিনী শুনিয়ে সবাইকে আনন্দে মাতিয়ে রাখলেন। বাসের মধ্যে এই ভ্রমনে একমাত্র রমনী আমাদের এক ভাবীর সাথেও হাস রসাত্যক কম হয়নি। আমাদের সভাপতি ভাবীকে একবার তো ‘I love you’ ও বলে ফেলেছিলেন। কেউ আবার ভাবীর সামনে ১৮+ কৌতুক বলতেও ভুলেননি।

তবে এতো কিছুর মাঝেও আমি ছিলাম নীরব দর্শক। বসেছিলাম ডান দিকে জানালার পাশে। চমৎকার আলো এসে পড়েছে। সকাল বেলার সোনালি রোদটুকু এখনই যেন কেমন ভাল লাগতে শুরু করেছে। নীল আকাশের এখানে ওখানে বৃষ্টিহীন মেঘের ভেলাগুলো ভেসে বেড়াচ্ছে দেখে মনটা উতলা হয়ে যায়। বাসের জানালায় বাহিরে তাকিয়ে দুইটি জিনিস বেশি দেখা হল- গ্রামের মানুষের কর্মচঞ্চলতা; আর প্রকৃতির নয়নভিরাম দৃশ্যগুলি। ১,৫৫৫.০৭ বর্গ কিলোমিটারের এই জেলাটিকে সৃষ্টিকর্তা অপরূপ সাঝে সাজিয়েছেন। যে দিকে তাকাই সে দিকেই সবুজের বিচিত্র সমারোহ। প্রকৃতির শান্ত ভাব। শান্ত জীবনের বৈশিষ্ট্য যেন প্রকৃতিই দান করেছে। বিশাল বিশাল বৃক্ষ আকাশের দিকে তাকিয়ে স্বদম্ভে দাঁড়িয়ে আছে। প্রকৃতির এই গ্রাম্য পরিবেশ স্বভাবতই আমার বেশ ভালো লেগেছে। কারন, আমি আরও অনেক বাঙ্গালীর মতই একজন প্রকৃতি প্রেমিক মানুষ। প্রকৃতি আমাকে টানে খুব। শহরে থাকি কিন্তু মন পড়ে থাকে বাংলাদেশের সবুজে, মেঠো পথে। গ্রামে না গেলে, অবারিত সবুজে চোখ না ভেজালে আমি অস্থির হয়ে উঠি।

লক্ষীপুর জেলা হিসেবে কম বড় নয়। যেতে যেতে যেন শেষ হচ্ছিল না। গন্ত্যব্য ছিল মোতির হাট, কমলনগর। বাসটি কমলনগরে ঢুকল। বাসচালক অত্যান্ত সতর্কভাবে খাল পাশে উঁচু রাস্তা দিয়ে চালাতে লাগলেন। হঠাত খালে জোয়ার-ভাটার পানির চিহ্ন দেখে বুঝেছিলাম ঘাটে পোঁছতে আর বেশি দূর বাকি নেই।
বাস ঘাটের কাছে এক বাজারে আসে পোঁছল। সবাই তড়িগড়ি করে নামতে লাগলেন। বাস থেকে নেমে সামনে দু পা না বাড়াতেই ব্যাকুল চোখে ধরা পড়ল এক দৃশ্য- মনেহয় যেন সাগর পাড়ে এসে পোঁছেছি। মেঘনার যৌবন রূপালী পানিতে থই থই করছে। দেশের অন্যান্য অংশ থেকে মেঘনার লক্ষীপুরের এই অংশ অনেক প্রশস্ততর। এই কারনে দূর পাড়ে কিনারা দেখা যাচ্ছিলোনা, এ যেন দিগন্তের অপরিমাপযোগ্য সীমা-পরিসীমা। ধরে নিলাম পানির ওই পাড়ে ভোলা জেলারই অবস্থান হবে। মানচিত্রে তো এমনটাই দেখেছিলাম।



পাড়ে এসে সবাই আর দেরি করলনা। তীর্থের কাকের মত নেমে পড়ল, হাটুজল ভেজাল। এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেল ফটো সেশন।
আমি আর আমার এক বন্ধু তীরে ঘুরতে শুরু করলাম। কখনো এদিক কখনো ওদিক। নদীর তীরে অনেক বাতাস। কেমন যেন শীতল ঠান্ডা অনুভূতি। ছোট-বড় ঢেউ পাড়ে এসে আছড়ে পরছে। ঝরের সময় কেমন বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে তা এ থেকে ধারনা করা যায় । প্যান্টা উঠিয়ে সবার মত এবার জলে নামলাম। না নামতেই ঢেউয়ের স্ফীত পানিতে প্যান্টের অনেকাংশ ভিজে গেল। নদীর পানি ঠান্ডা এবং স্রোতের কারনে কিছুটা ঘোলাটে।

মেঘনার পাড়গুলো অনেকাংশ কনক্রিটের চতুর্ভুজ আকৃতির ভিম দিয়ে সাজানো। ভাঙ্গন রোদের জন্যই প্রশাসন এই ব্যাবস্থা করেছে। এই ভিমগুলো পাড়কে আরো সৌন্দর্য দিয়েছে। একটা জিনিস বলা দরকার- নদীকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে অনেক সভ্যতা। আমাদের দেশের সভ্যতাও পদ্মা, মেঘনা, যমুনা নদীকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে। নদীর জল-তরঙ্গের সাথে বাংলার মানুষের একটা সম্পর্ক রয়েছে, কারন নদীকে ঘিরেই নদীর পাড়ের মানুষদের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক জীবন গড়ে উঠে। নদী মানুষকে স্বপ্ন দেখায় আবার নিঃস্ব ও করে দেয়; নদীর ভাঙ্গা গড়ার খেলা অনেক খেটে খাওয়া মানুষদের আশ্রয়চুত করে। নদীর এই ভাঙ্গার চিত্র লক্ষীপুরেও কম দেখা যায় না। নদীর এই সর্বগ্রাসী ভুমিকা মাথায় নিয়েই কবি লিখছেন-
“নদীর এ কূল ভাঙ্গে ও কূল গড়ে
এইতো নদীর খেলা
সকাল বেলা আমির যে ভাই
ফকির সন্ধ্যা বেলা”

আমার যেখানে ঘুরছিলাম তার কিছু দূরে একটা চর পাড় থেকে দেখা যায়। অসংখ্য গরু আর মহিষের বিচরন রয়েছে সেখানে। সেখানে যাওয়ার জন্য স্থল কোন পথ নেই। ট্রলার বা নৌকায় যাওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। আমাদের ভ্রমনের পরিকল্পনা অনুযায়ী সেখানে যাওয়ার কথা ছিল।
তীরের বিভিন্ন দিকে ছুটে বেড়ানো সবাইকে সভাপতি ডেকে একজায়গায় করলেন। এবার চরে ছুটে যাবার প্রস্তুতি। চরে যাওয়ার জন্য নৌকা ভাড়া করা হল। ভায়া নৌকা তার ধারন ক্ষমতা অনুযায়ী ধাপে ধাপে আমাদের পোঁছে দিল। এই প্রথম নদীতে নৌকায় উঠার অভিজ্ঞতা আমার। নদীর ভুক তখন শান্ত। ছোট ছোট বীচীমালা যেন পাড়ের দিকে ছুটছে। আমারাও যেন পানিতে মিশে যাচ্ছি। নদীর ভুকে আমাদের নৌকা ছাড়া মাত্র দু একটি নৌকা দেখা যায়। তখন ইলিশ মাছ ধরা নিষিদ্ধ বলেই হয়তো কোন মাছ ধরার নৌকা চোখে পড়েনি। অবশেষে আমরা স্বল্প জলপথ পাড়ি দিয়ে চরে এসে পোছলাম।

নদীর ঢাল থেকে চরে নেমে এলাম। এরপর চরের মধ্যে শুরু হলো ছুটে বেড়ান। চরের মাটি কিছুটা কাঁদাময় আর যেন দুর্বাঘাসের মাদুর বিছানো। প্যান্ট হাটু পর্যন্ত উঠিয়ে হাটতে লাগলাম। সবাই দল উপদলে বিভক্ত হয়ে একেকজন একেকদিকে ছুটছে। আমি আর আমার বন্ধু এগোচ্ছি; সামনে ছোট্র একটা জলস্রোত যেতে হলে হাটুজল ভেজানো লাগবে, ঐ পাড়ে সবাই লাফ দিয়ে পার হচ্ছিল। আমিও লাফ দিলাম কিন্তু পা পিছলে আঁচড়ে পড়ে গেলাম; শরীর অর্ধেক ভিজে গেল, সবাই আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। কিছু দূর না যেতেই সামনে পড়ল গরুর এক বিশাল পাল। গরুগুলো রজ্জুবিহীন কি সুন্দর বন্য প্রানীর মত স্বাধীনভাবে গুরে বেড়াচ্ছে।
কিছুক্ষন পরে আমাদের মধ্যে অধিকাংশই মেতে উঠলেন ফুটবল খেলায়। বিশাল মাঠের সীমানা তারপরও ছিল মাঠ পরিপুর্ন , একদলে প্রায় ৩০ জন করে খেলছেন। খেলোয়ায়গণ ভিজা এবং কর্দমাক্ত শরীর নিয়ে যেন একেকজন যেমন খুশি তেমন সেজেছেন। সবমিলিয়ে একটা আনন্দঘন মুহুর্ত বিরাজ করেছিল।

একটু পরেই আশ্চার্যজনকভাবে এক জিনিস লক্ষ্য করলাম- নদীর পানির স্তর যেন ফুলে ফেপে উঠছে। কারন, চরের মধ্যে আকস্মিকভাবে পানি আসতে শুরু করলো; চরের পাড় কিনারা ডুবতে লাগল। জোয়ারের লক্ষন বলে মনেহয়। গরু-মহিষগুলো আস্তে আস্তে তাদের আশ্রয়স্থলের দিকে ছুটছে। এরপর ২০-২৫ মিনিট না যেতেই পুরো চরটি পানিতে আবৃত হয়ে গেল। সবুজ ঘাসের বদলে পুরো চরটি পানির দখলে। নিজেকে নতুন এক জায়গায় আবিষ্কার করলাম।
সবাই এই পানিতেই ছেলেবেলার দুরন্তপনার ন্যায় ধপাতে শুরু করে দিল। এ যেন বর্ষার প্রথম ফসলা বৃষ্টির জলে মাছের আনাগোনা। সবার এরকম হৈচৈ দেখে আমারো নামতে ইচ্ছে হল। কিন্তু নদীর পানি অত্যান্ত ঘোলাটে এবং ঠান্ডা হওয়ায় নামতে সাহস হচ্ছিল না। প্রথম মনে হল থাক না ভিজি। কিন্তু কবির সে কথাটি মনে পড়ে গেল “নদীর পানি ঘোলাও ভাল, জাতের মেয়ে কালো”। কারন নদীর যে পানি সবসময় চলিষ্ণু, তার দূষিত হওয়ার সম্ভাবনা কম। আমার মন ও কম চঞ্চল নয়, কে ধরে রাখবে দুরন্ত এই মন; নদীতে ঝাপ দিয়েই দিলাম যা হওয়ার হবে। জীবনে প্রথম নদীতে সাঁতার কাটার অভিজ্ঞতা। নদীর পানিতে সাঁতার কাটা যে অনেক কষ্টকর সেদিনই বাস্তবিকভাবে সেটা টের পেলাম।


পানিতে আস্তে আস্তে ডুবছে চরটি। এবার পাড়ে ফিরে যাবার পালা। আর কিছুক্ষন থাকলে পানি গলা সমেত হবে। সভাপতি সবাইকে পাড়ে ফেরার প্রস্তুতি নিতে বললেন। একটি মাত্র নৌকা সবাইকে ধাপে ধাপে পাড়ে দিয়ে আসছিল। আমরা গেলাম সবার পরে।
এই অপেক্ষার সময়টুকু কাটল বড় ভাইদের সাথে ছবি তুলে। বড় ভাইরাও দুষ্টুমিতে আমাদের থেকে কম যান না। পানিতে একজন আরেক জনের সাথে খুনসুটিতে বেশ মজালেন; পরস্পর গাঁয়ে কাঁদা মাকামাখি, পিছন দিকে দিয়ে বন্ধুত্তসুলব ঠেলা দিয়ে পানিতে ফেলে দেওয়া -এর মাধ্যমে যেন তাদের ছেলেবেলার অদম্য দুরন্তপনার প্রকাশ পেল। এরপর আমরা সবাই মিলে একসাথে চরের উচ্চ ভুমিতে দাঁড়িয়েছিলাম, তারপরও পানি হাটুপর্যন্ত উঠে পড়ল। এখান থেকেই ফিরতি নৌকার জন্য অপেক্ষা। অপেক্ষার সময়টুকু যদিও যন্ত্রণার এবং দীর্ঘ হয়, কিন্তু এখাণে অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করতেছিল। মনেহয় যেন বিশাল এক নদীর মাঝখানে আমরা দাঁড়িয়ে আছি।
এই আনন্দ ভ্রমণ শুধুমাত্র আনন্দের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকেনি; এই ভ্রমনে সঞ্চিত হয়েছে অন্যরকম অভিজ্ঞতা, অভিজ্ঞতা নতুন কিছু আবিষ্কারের, নতুন কিছু জানার।
পরিষেশে বলব, লক্ষীপুরের এই সৌন্দর্যটিই আসলেই নিরবে নিভেৃতে এখনও অনেকের কাছে অজানা। লক্ষীপুরের এই সৌন্দর্যকে ঘিরে রয়েছে পর্যটন শিল্পের জন্য অপার সম্ভাবনা। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং আধুনিক মানের অবকাঠামো নির্মানের মাধ্যমে লক্ষীপুর মেঘনার তীরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠতে পারে বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র।
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×